Select Page

ভালো গল্পের দুর্বল নির্মাণ

ভালো গল্পের দুর্বল নির্মাণ

আপনি একটা ভালো গল্পকে নির্বাচন করে ভালোভাবে পরিবেশন করতে পারলে তবেই দর্শকের প্রতি সুবিচার করা হয়। কাজটা অনেকেই পারে না। দর্শককে অনেক অপেক্ষা করিয়ে হাবিবুল ইসলাম হাবিব মুক্তি দিয়েছেন ‘রাত্রির যাত্রী‘ ছবি। একটা ভালো গল্প নির্বাচন করেও দুর্বল নির্মাণ করেছেন।

রাতের ঢাকাকে আমরা অনেকভাবেই চিনি। বিভিন্ন টেলিভিশন প্রোগ্রামে ক্রাইম বিষয়ক প্রোগ্রাম হয় সেগুলোতে খোঁজখবর রাখলে বোঝা যায় রাতের ঢাকা কতটা অনিরাপদ ও অপরাধমূলক কাজের আড্ডায় ভরা থাকে। ইনডিপেনডেন্ট টিভির ‘তালাশ’ প্রোগ্রামটিতেও রাতের ঢাকার বিচিত্র সব ঘটনাবলি নিয়ে চমৎকার পর্ব আছে। সেই প্রোগ্রামটি দেখার সময়ও দর্শক সিনেমাটিক ফিল পাবে কিন্তু ‘রাত্রির যাত্রী’ ছবিটি তার থেকেও পিছিয়ে থাকল। রাতের ঢাকায় আসা একটা গ্রামের মেয়ের বিভিন্ন অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার শিকার হওয়া দেখানো হয়েছে। এর মধ্যে আছে ছিনতাইকারীর কবলে পড়া, হিজড়ার সাথে দেখা, রিকশাওয়ালার উদ্দেশ্যমূলক আচরণ, পতিতার সাথে দেখা, পুলিশের অনৈতিক কর্মকান্ড, খুন, গোয়েন্দার সামনে পড়া, হিরোইনখোরের শিকার হওয়া ইত্যাদি। ঘটনাগুলো বাস্তবসম্মত কিন্তু প্রেজেন্টেশন দুর্বল।

নব্বই দশকের অভিনেত্রীদের মধ্যে মৌসুমী এখনো কাজ করে যাচ্ছে কিন্তু তাকে কাজে লাগাতে পারছে না নির্মাতারা। ‘রাত্রির যাত্রী’ ছবিতে মৌসুমী নিজের অভিনয়ের জায়গায় চমৎকার কিন্তু পরিচালক তাকে নিজের কার্যকারিতায় দেখাতে পারেনি। মাল্টিস্টারার ছবি তাই অনেককে দেখা গেছে বিভিন্ন চরিত্রে যেমন – আনিসুর রহমান মিলন (মৌসুমীর প্রেমিক), রেবেকা (মৌসুমীর মা), এটিএম শামসুজ্জামান (মিলনের বাবা), শিমুল খান (খুনের শিকার), শহীদুল আলম সাচ্চু (গোয়েন্দা), মারজুক রাসেল (মৌসুমীর ঢাকার আত্মীয়), সোনিয়া হোসেন (মারজুকের স্ত্রী), সালাহউদ্দিন লাভলু (ছিনতাইয়ের শিকার), ঝাড়ুদার (অরুণা বিশ্বাস), হিরোইনখোর (চিকন আলী)।

ছবির প্রধান চরিত্রে মৌসুমী নিজের অভিনয় করে গেছে। তার জায়গায় সে ঠিক। পরিস্থিতি অনুযায়ী অভিনয় ছিল। তার মুখে রংপুরের আঞ্চলিক ভাষা শুনতে ভালো লেগেছে। ঢাকা শহরের নতুন পরিবেশে বিভিন্ন ঘটনা দেখে তার মুখের এই সংলাপটা ভালো ছিল-‘ভালোয় তো। ঢাকা শহরত দিনত কাম আইতোতও কাম! খালি কাম আর কাম।’ ছবির শেষে মৌসুমীর চূড়ান্ত একটা বাস্তবতায় পড়তে হয়। তাকে ভালো গল্পের ছবিতে কাজ করার পাশাপাশি ফিগার মেইনটেইন করতে হবে। তার পরে গোয়েন্দা চরিত্রে সাচ্চু-র চরিত্রটি ভালো ছিল। সবচেয়ে চোখে লাগার দিক হচ্ছে অপ্রয়োজনীয় ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক। অকারণে দীর্ঘসময় টিপিক্যালি ব্যবহার হয়েছে। এটিএমের সাথে ছেলে মিলনের প্লেটো-র ‘রিপাবলিক’ গ্রন্থের অনর্থক বয়ান ছিল হাস্যকর। এমনকি মৌসুমীকে ছেলের জন্য দেখতে গিয়ে হবু শ্বশুর তাকে দেখে বলে ‘sweet baby girl’ এটা দৃষ্টিকটু ছিল। কোনোভাবেই হবু শ্বশুর এটা বলতে পারে না তাছাড়া তাকে দিয়ে ওভারঅ্যাকটিং করিয়ে নেয়া হয়েছে।
পুরো ছবিতে রংপুরের আঞ্চলিক ভাষা অন্যান্য চরিত্রে পারফেক্টলি ব্যবহৃত হয়নি।

একটা ভালো গল্পে মেকানিজম দিতে পারেননি ছবির পরিচালক। দিলে গল্পটা ছবিটা দারুণ হতে পারত। বিশেষ করে রাতের শহুরে জীবনকে দেখাতে টলিউডে নির্মিত ‘রাতপরীর রূপকথা’ ছবির মতো একটা ভালো নির্মাণের ছবি হতে পারত ‘রাত্রির যাত্রী।’

ছবির একটা সংলাপ সবচেয়ে মনে ধরে অরুণা বিশ্বাসের মুখে-‘এই ঢাকা শহর আমি ঝাড়ু দিছি, আমার নানী ঝাড়ু দিছে মাগার এই ঢাকা শহর তো পরিষ্কার হইতাছে না।’


Leave a reply