Select Page

ভালো হয়ে যাও, মাসুদ?

ভালো হয়ে যাও, মাসুদ?

মাসুদ কি খারাপ ছিল?

মাসুদের স্বপ্ন তো খুব বেশি ছিল না। সৎ জীবনযাপন করা আর সুস্থভাবে বেঁচে থাকা। পেরেছে কি?

মাসুদের স্বপ্ন ছিল ভালো একটা মেয়ে দেখে সংসার করা। বিয়েও করেছিল। সংসারও ভালো কাটছিলো।

‘এই গা ছুঁয়ে বলো  ছেড়ে যাবে না কখনো

তোমার মতো কে আছে বলো?

তারপর?

তারপর জীবনানন্দ দাশ নারীর রহস্যময়তার যে কথা কবিতায় বলেন-

‘নারীর হৃদয় প্রেম, শিশু, গৃহ নয় সবখানি

আরও এক বিপন্ন বিস্ময়

আমাদের অন্তর্গত রক্তে খেলা করে

আমাদের ক্লান্ত করে’

সেই বিপন্ন বিস্ময়ে মাসুদের বউ আর তার থাকে না। তার কাছে মাসুদ হয়ে যায় টাকার গাছ, নিজের স্বার্থ চরিতার্থ করার এক অমোঘ উৎস। নারী হয়ে যায় আরেকজনের। শারীরিক, মানসিক দুইদিক থেকেই সে পরের হয়ে যায় আর টাকাও নিতে থাকে মাসুদের থেকে। মাসুদ তো ততক্ষণ অব্দিও ভালো।

মাসুদ কি আসলেই খারাপ ছিল?

প্রতিশোধপরায়ণতাই বলি কিংবা আত্মসম্মানবোধই বলি সব মানুষেরই আছে মাসুদেরও আছে। মাসুদ তাই মানসিকভাবে প্রস্তুতি নিতে শুরু করে নিজের হারানো বলয়কে অন্যভাবে পুনরুদ্ধার করার জন্য এবং তার লক্ষ্য অর্জনে এগিয়ে যায়।

মাসুদ ততক্ষণ পর্যন্ত ভালোই ছিল। ব্যাংকের টাকা চুরির জন্য সুড়ঙ্গ কাটার মতো ঝুঁকি নিয়ে অসম্ভবকে সম্ভব করে ফেলে। সুড়ঙ্গ কাটে মাসুদ নাকি মাসুদের ভেতরের রাগ, ক্রোধ, প্রতিশোধের আগুন? সে তার লক্ষ্য পূরণ করে তারপর টাকার মধ্যে শুয়ে বুনো উল্লাস করতে থাকে। টাকার প্রেমে অন্ধ সেই নারী আবার মাসুদের কাছে ফিরে আসে ব্যাংক লুটের টাকায় নতুন সংসার গড়তে। সংসার তার কাছে তখন অব্দি ছেলেখেলাই।

মাসুদ কিন্তু সেই নারীর কাছে ভালো..

মাসুদ যে তার জন্য খুন পর্যন্ত করে, ব্যাংক লুটের টাকা হারিয়ে গেলে তা উদ্ধারও করে সব জীবন বাজি রেখে। সবই সেই নারীর জন্য। মাসুদ তখনও লক্ষ্যচ্যুত নয়।

মাসুদ কি খারাপ হয়েই গেল শেষ পর্যন্ত?

তার একসময়ের স্ত্রী, ভালোবাসার সেই নারীকে নিয়ে মাসুদ অন্য গন্তব্যে যায়। সেখানে নতুন সুড়ঙ্গ কেটে নারীকে সহ টাকা সাজিয়ে রাখে। মই বেয়ে ওঠার পর মইটা সরিয়ে নেয়। নারী বলে-‘মই দাও, আমি উঠব’ কিন্তু মাসুদ শোনে না। মাসুদ তখন তার ভালোবাসাকে হত্যা করে রক্তচক্ষু নিয়ে শেষ কথাটা নারীকে বলে দেয়-‘তুমি তো টাকা ভালোবাসো টাকার মধ্যেই থাকো’। ক্ষমাপ্রার্থনা করেও আর শেষরক্ষা হয় না। এরপর লেলিহান শিখায় নারীর মৃত্যুর চিৎকার ভেসে আসে আর মাসুদ স্বাভাবিক ভঙ্গিতে হেঁটে চলে যায়। ভালোবাসা উড়িয়ে দিয়ে আকাশে-বাতাসে তা না পাওয়া আর ঘৃণায় পরিণত হয়। মাসুদের অন্তর্গত রক্তক্ষরণ আগুন হয়ে জ্বলতে থাকে।

মাসুদরূপী আফরান নিশো-র অসাধারণ বাস্তবসম্মত অভিনয়ে ‘সুড়ঙ্গ’-রূপী হৃদয়ের রক্তক্ষরণ যেন সমস্ত বঞ্চিত মানুষেরই প্রতীকী রূপ।

ভালো হয়ে যাও, মাসুদ?

মাসুদ কি খারাপ ছিল?

দর্শক কি বলে?


লেখক সম্পর্কে বিস্তারিত

বাংলাদেশের চলচ্চিত্র গত শতকে যেভাবে সমৃদ্ধ ছিল সেই সমৃদ্ধির দিকে আবারও যেতে প্রতিদিনই স্বপ্ন দেখি। সেকালের সিনেমা থেকে গ্রহণ বর্জন করে আগামী দিনের চলচ্চিত্রের প্ল্যাটফর্ম গড়ে উঠুক। আমি প্রথমত একজন চলচ্চিত্র দর্শক তারপর সমালোচক হিশেবে প্রতিষ্ঠিত হবার স্বপ্ন দেখি। দেশের সিনেমার সোনালি দিনের উৎকর্ষ জানাতে গবেষণামূলক কাজ করে আগামী প্রজন্মকে দেশের সিনেমাপ্রেমী করার সাধনা করে যেতে চাই।

মন্তব্য করুন