মন্ত্রীর সঙ্গে দুই পক্ষের বৈঠক ও সংবাদ সম্মেলনে হল বন্ধের হুমকি
একদিকে চলছে যৌথ প্রযোজনার অনিয়ম নিয়ে আন্দোলন। অন্যদিক ‘বস-টু’ ও ‘নবাব’-এর কুলাকুশলীরাও সক্রিয় মুক্তি নিয়ে। আর বিষয়টি তুলে ধরতে রোববার (১৮ জুন) দুপুরে তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনুর সঙ্গে বৈঠক করেছে ছবি দুটির প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান জাজ মাল্টিমিডিয়া ও কলাকুশলীরা। এরপর রাতে সংবাদ সম্মেলন আয়োজন করা হয় প্রদর্শকদের নিয়ে। খবর বাংলা ট্রিবিউন।
তথ্যমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন শাকিব খান ও নুসরাত ফারিয়া। তারা ছাড়াও তথ্যমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনায় অংশ নেন প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান জাজের প্রধান আবদুল আজিজ।
বৈঠকের বিষয়ে আজিজ বলেন, ‘ছবি দুটি ঈদে মুক্তি নিয়ে আজ একটা ফল আসবে। আমাদের আলোচনা ইতিবাচক হয়েছে।’
এদিকে যখন আবদুল আজিজ ও শিল্পীসহ মিটিং চলছে তখন রাস্তায় আন্দোলন করছিল চলচ্চিত্র ঐক্যজোট।
যৌথ প্রযোজনার ছবির নামে অনিয়মের প্রতিবাদে অবস্থান ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে এই জোট। রোববার বেলা ১১টায় এ ধর্মঘট শুরু হয়। এসময় বিএফসিডির সামনে তারা অবস্থান নেন। এরপরই আন্দোলনকারীরা চলে যান রাজধানীরর ইস্কাটনে অবস্থিত চলচ্চিত্র সেন্সরবোর্ডের সামনে। বেলা ১টা ১০ মিনিটের তারা ঘেরাও কর্মসূচি দেন। বিষয়টি তথ্য মন্ত্রণালয় অবগত হওয়ার পর আলোচনার জন্য বসার কথা বলেন তথ্যমন্ত্রী।
আর সে অনুযায়ী আন্দোলনকারীরাও মন্ত্রণালয়ে বিকাল নাগাদ (১৮ জুন) বৈঠক করছেন।
তথ্যমন্ত্রীর সঙ্গে জরুরি সভায় বসেছেন ঐক্যজোটের প্রধান নায়ক ফরুক, চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির সভাপতি মিশা সওদাগর, সহ-সভাপতি চিত্রনায়ক রিয়াজ, সাধারণ সম্পাদক জায়েদ খান, চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতির সভাপতি মুশফিকুর রহমান গুলজার, মহাসচিব বদিউল আলক খোকন, যুগ্ন মহাসচিব শাহীন সুমন, প্রযোজক খোরশেদ আলম খসরু।
বিকাল সাড়ে ৪টায় বৈঠক থেকে বের হয়ে মিশা সওদাগর বলেন, ‘তথ্যমন্ত্রী আমাদের বলেছেন, ছবি দুটি (বস-টু ও নবাব) অভিযোগে দোষী। ছবিগুলোর বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ লিখিত আকারে জমা দেওয়ার কথা বলেছেন তিনি। আমরা আগামীকাল এগুলো মন্ত্রণালয়ে দেব। এরপর তিনি সিদ্ধান্ত নেবেন।’
একদিকে চলছে যৌথ প্রযোজনার নানা অনিয়ম নিয়ে চলচ্চিত্র ঐক্যজোটের আন্দোলন। অপরদিকে প্রযোজক, বুকিং এজেন্ট ও হল মালিকরা ‘গো’ ধরেছেন এই বলে- যৌথ প্রযোজনার ছবিই চালাবেন তারা, সেটা যেভাবেই হোক। কলকাতার সঙ্গে জাজের ‘বস-টু’ ও ‘নবাব’কে ঘিরেই মূলত চলমান বিতর্ক।
এরই মধ্যে ১৮ জুন রাতে এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে জাজ এর নেতৃত্বে। এ সম্মেলনে প্রযোজক, বুকিং এজেন্ট, হল মালিক ও শিল্পীরাও উপস্থিত ছিলেন।
এতে বক্তব্য রাখেন অমিত হাসান, শিবা শানু, আরিফিন শুভ, শাকিব খান, কাজীহায়াত, ইফতেখার নওশাদ, আব্দুল আজিজসহ আরও অনেকে। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন অভিনেতা-পরিচালক নাদের চৌধুরী।
অমিত হাসান বলেন, ‘সরকারি নিয়ম মেনেই ছবিগুলো নির্মিত হয়েছে। তারপরও কেন এটার বিরুদ্ধে আন্দোলন হচ্ছে তা বুঝতে পারছি না।’
এদিকে বুকিং এজেন্টদের পক্ষ থেকে এই সংবাদ সম্মেলনে সাফ জানিয়ে দেওয়া হয়, ছবি দুটি (বস-টু ও নবাব) মুক্তি না পেলে সারাদেশের হল মালিকরা তুমুল আন্দোলন করবে এবং যারা এই ছবি দুটির বিরুদ্ধে আন্দোলন করছেন তাদের ছবি হলে চালানো হবে না!
যৌথ প্রযোজনার ছবির বিরুদ্ধে যারা আন্দোলন করছে তাদের লক্ষ্য করে দেশের এক নম্বর নায়ক শাকিব খান বলেন, ‘আন্দোলন করুক আর যাই করুক না কেন সবাই ব্যক্তিস্বার্থ চরিতার্থ করছে।’ শাকিব উত্তেজিত কণ্ঠে আরও বলেন, ‘যারা বলছে আমি যৌথ প্রযোজনার ছবির বিরুদ্ধ আন্দোলন করে আমিই যৌথ ছবি করছি তাদের উদ্দেশ্যে বলছি, আমি ভারতীয় হিন্দি-উর্দু ছবির বিরুদ্ধে আন্দোলন করেছি যৌথ প্রযোজনার বাংলা ছবির বিরুদ্ধ নয়।’
শাকিব আরও বলেন, ‘নবাব ছবিতে যৌথ প্রতারণা আছে কিনা সেটা দেখেন। আর সেইসব মুর্খদের বলছি আমরা সবসময় বাংলাদেশের ছবির পক্ষেই থেকেছি এখনও আছি। ভবিষ্যতেও থাকব। সরকারের নিকট অনুরোধ করবো আমরা যারা ভালো কাজ করছি তারা যেন নির্বিঘ্নে কাজ করতে পারি, সেই সুযোগ দেয়।’
এদিকে একই অনুষ্ঠানে অনেকটা শাকিব খানকে উদ্দেশ্য করে নায়ক ফেরদৌস বলেন, ‘কাফনের কাপড় পরে যারা আন্দোলন করেছিলেন তারা ক্ষুদ্র স্বার্থেই আন্দোলন করেছেন। আমার কাজ অভিনয় করা, যৌথ প্রযোজনা কিনা সেটা দেখা সরকারেরর কাজ। আমি যৌথ প্রযোজনার ছবির পক্ষে ছিলাম, ভবিষ্যতেও থাকব।’
প্রযোজক আবদুল আজিজ বলেন, ‘যাদের কাজ নেই তারাই আন্দোলন করছে। মিশা সওদাগরসহ আরও যারা আছে তাদেরকে ডাক দিলেই আন্দোলন ছেড়ে যৌথ প্রযোজনার ছবি করতে চলে আসবে। আমরা আস্তে আস্তে কলকাতায় আমাদের শিল্পীদের ঢোকানোর কাজ করছি। আমাদের সিনেমা হল বাঁচাতে হলে বড় বাজেটের সিনেমা বানাতে হবে।’
আজিজ আরও বলেন, ‘যারা ছবি বানাচ্ছে না, হল বানাচ্ছে না, ছবি প্রযোজনা করছে না তারাই এখন আন্দোলন করছেন। আমি মনে করি আন্দোলন ছেড়ে কাজে নামুন।’
তিনি আরও বলেন, ‘‘বস-টু’ ও ‘নবাব’ মুক্তি না পেলে জাজের অধীনের হলগুলো বন্ধ করে দেওয়া হবে।’
চলচ্চিত্র প্রদর্শক সমিতির সভাপতি ইফতেখার উদ্দিন নওশাদ হুমকির সুরে সাংবাদিকদের বলেন, ‘এ ছবি দুটি মুক্তি না পেলে আমাদের সিনেমা হলগুলো ঈদে বন্ধ করে রাখব। কারণ এ ছবিগুলোর সঙ্গে আমাদের ব্যবসায়িক ইনভলবমেন্ট আছে।’
এদিকে সংবাদ সম্মেলনের শেষদিকে সাংবাদিকরা প্রশ্ন তোলেন- ঈদে মুক্তিপ্রতিক্ষীত দেশের অন্য দুটি ছবির ভবিষ্যত তাহলে কী হবে? বিতর্কিত যৌথ প্রযোজনার দুই ছবির জন্য কি দেশের দুটি ছবি দর্শক দেখবে না? সাংবাদিকদের এমন প্রশ্ন এড়িয়ে যান বক্তারা। এর সূত্র ধরে বিশৃঙ্খল পরিবেশেরও সৃষ্টি হয়।