ময়ুরীর সিনেমা নিয়ে মেয়েকে প্রশ্ন, শিল্পীদের হামলায় ১০ সাংবাদিক আহত
বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির ২০২৪–২৬ মেয়াদের বিজয়ী কমিটির শপথ অনুষ্ঠান শেষে ঘটে গেল তুলকালামকাণ্ড। গত মঙ্গলবার (২৩ এপ্রিল) বিকালের এই অনুষ্ঠান শেষ হতে না হতে শিল্পী সমিতির সদস্য ও সাংবাদিক–ইউটিউবারদের মধ্যে হাতাহাতির ঘটনা ঘটেছে। এমনকি চেয়ার ছোড়ার মতো ঘটনাও ঘটেছে। এ ঘটনায় ১০ জন সাংবাদিক আহত হওয়ার খবরও পাওয়া গেছে।
জানা গেছে, শপথগ্রহণ শেষে সমিতির অফিসে খবরের কাগজ পত্রিকার বিনোদন প্রতিবেদক মিঠুন আল মামুন সাক্ষাৎকার নিচ্ছিলেন ময়ূরীর মেয়ের। সেখানে তাকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল, মায়ের কোনো সিনেমা দেখেছে কিনা? অবশ্য কেউ কেউ সিনেমার সঙ্গে ‘অশ্লীল’ ও ‘আইটেম সং’ শব্দ দুটি জুড়ে দিলেও নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
এসময় অভিনেতা শিবা শানু এই সাংবাদিককে বেরিয়ে যেতে বলেন। না যেতে চাইলে তাকে ধাক্কাতে ধাক্কাতে অফিস থেকে বের করে দেন শানু। এর মধ্যে সেটি থামাতে এগিয়ে আসেন উপস্থিত অন্য সাংবাদিকরা। এসময় সমিতির আরেক নেতা জয় চৌধুরী ‘মার মার’ বলে তেড়ে যান সাংবাদিকদের দিকে। তার সঙ্গে ছিলেন আলেকজান্ডার বো। শুরু হয় সাংবাদিক ও শিল্পীদের মধ্যে তুমুল মারামারি। এরপরই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। পুরো এফডিসি পরিণত হয় রণক্ষেত্রে।
যার প্রশ্ন নিয়ে এত ঘটনা বলে অভিযোগ সেই মিঠুন আল মামুন বলেন, বাংলাভিশনের ক্যামেরাপারসনসহ ১০ জনের মতো সংবাদকর্মী ও ইউটিউবার আহত হয়েছেন। আহত ব্যক্তিদের প্রাথমিক চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। আহত মিঠুন আল মামুন বলেন, ‘কোনো কারণ ছাড়াই আমাদের ওপর হামলা হয়েছে। শিবা শানু ও জয় চৌধুরী অশ্লীল ভাষায় বলে, (প্রকাশের অযোগ্য শব্দ) ধর, তারপরই মারামারি শুরু হয়। হামলাকারী আমাদের ক্যামেরা ভেঙে দিয়েছে। ঘটনাস্থল থেকে ব্যবহৃত ফোনও চুরি হয়ে গেছে।’
এদিকে মারামারি ও হাতাহাতির ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতি। এমনকি যত দ্রুত সম্ভব এ ঘটনায় দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের অঙ্গীকারও করেছে সংগঠনটি। সংগঠনের সভাপতি মিশা সওদাগরের পাঠানো লিখিত বক্তব্যে এমনটি জানানো হয়েছে।
চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির সভাপতি মিশা সওদাগর ও সাধারণ সম্পাদক মনোয়ার হোসেন ডিপজলের পক্ষ থেকে পাঠানো এই চিঠিতে জানানো হয়েছে, ‘আজ মঙ্গলবার বিকেল পাঁচটায় বিএফডিসির বাগানে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির সদ্য নির্বাচিত কমিটির বিজয় উপলক্ষে অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। সেখানে আমাদের আমন্ত্রণে বিভিন্ন গণমাধ্যমের সাংবাদিক ভাইবোনেরা সংবাদ গ্রহণ করতে এসেছিলেন।
তখন অনাহূত পরিস্থিতিতে সাংবাদিকদের সঙ্গে শিল্পী সমিতির কার্যনির্বাহী কমিটির কতিপয় নির্বাচিত সদস্য ও সাধারণ সদস্যদের হাতাহাতি হয়। আমরা জানতে পেরেছি, এ ঘটনায় বেশ কজন সাংবাদিক আহত হয়েছেন, যা আমাদের ব্যথিত করেছে। আমরা এ ঘটনার জন্য সব গণমাধ্যমের সাংবাদিক ভাইবোনদের কাছে আন্তরিকভাবে দুঃখ প্রকাশ করছি। পাশাপাশি যত দ্রুত সম্ভব এ ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে যাচ্ছি।’
মিশা ও ডিপজলের পাঠানো লিখিত বক্তব্যে এ–ও জানানো হয়, এরই মধ্যে শিল্পী সমিতির নেতা ও সাংবাদিক নেতাদের যৌথ আলোচনায় প্রযোজক আরশাদ আদনানকে প্রধান উপদেষ্টা করে ১১ সদস্যবিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। এখানে সাংবাদিকদের পক্ষ থেকে লিমন আহমেদ, রাহাত সাইফুল, আহমেদ তাওকীর, বুলবুল আহমেদ ও আবুল কালাম এবং শিল্পী সমিতির পক্ষ থেকে মিশা সওদাগর, ডি এ তায়েব, নানাশাহ, রুবেল ও রত্না রয়েছেন। সূত্র: প্রত্যক্ষদর্শীদের সোশ্যাল মিডিয়া পোস্ট, প্রথম আলো ও বাংলা ট্রিবিউন।