মান্নার জন্যই ‘আম্মাজান’ পেয়েছিলাম
রুদ্র আরিফ : মান্নাকে মাথায় রেখেই আম্মাজানের কাহিনী লিখা হয়েছিল?
কাজী হায়াৎ : …হ্যাঁ। তখন সে ধাক্কা দিয়ে, রিলিজ ডে’তে ছবির, ইট ওয়াজ অ্যা রেকর্ড অফ মাই লাইফ, এবং ইট ওয়াজ অ্যা রেকর্ড অফ ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি অলসো, আরও একটা ছবির বেলায় ঘটেছে এটা, সেটি হলো– রিলিজ ডে’তে… এক কোটি দুই লক্ষ টাকা খরচা ছিল ছবিতে, সে এক কোটি চার লক্ষ টাকা বৃহষ্পতিবার-দিন রাতে পাজেরো ভরে নিয়ে গিয়েছিল। মানে, দুই লাখ টাকা রিলিজ ডে’তে প্রফিট ছিল তার। ইট ওয়াজ অ্যা রেকর্ড।
রুদ্র আরিফ : এই জায়গায় ‘আম্মাজান’-এর কথা যেহেতু আসলো, আমি একটা ব্যাপার বলতে চাই, সেটা হচ্ছে যে, আপনি অনেক সেন্সেটিভ ব্যাপারগুলা ফুটায়া তোলেন : ধরেন, যেমন ‘আম্মাজান’-এ বাচ্চা দেখতেছে– মা রেপড হচ্ছে। এইটা ঘটে। কিন্তু আমরা সিনেমায় সাধারণত এই ব্যাপারটা দেখি না। এবং এইটা খুব, মানে, যেটাকে চপটাঘাত বলেন, বা, চাবুকের বাড়ি বলেন, এই ব্যাপারটা ধরেন দর্শকরে দেয়। এইটা একটা রিস্কের ব্যাপার। এইটা আপনার বেশিরভাগ সিনেমাই দেয়…
কাজী হায়াৎ : …এটা এত রিস্কি ছিল যে, আমি বলি, আমি তখন বেশ কিছুটা নাম করেছি তো? আমাকে একবার ‘যমুনা ফিল্মস’– দেশের বিখ্যাত ফিল্মস– যমুনা কোম্পানি ডাকল একটা ছবি করার জন্যে। তাদের এই ‘আম্মাজান’ গল্পটা শোনালাম। ওনারা আসলেই চলচ্চিত্র বোঝেন। ‘পদ্মা’ সিনেমা-হলের মালিক… ঐ… শফি বিত্রক্রমপুরী– ওরা। ওরা তখন ফিল্মের জায়ান্ট। ঘর বন্ধ করে, ওনারা আমাকে দুপুরের খাবার দিয়ে, গল্পটি শুনলেন। [ফোনের জন্য মুহূর্তের বিরতি…] গল্পটি শুনলেন। শোনার পরে, সিদ্দিক সাহেব– ওনাদের বড়ভাই, তিনি সবচাইতে ফিল্মবোদ্ধা বলে পরিচিত, যে, কোন ছবি চলবে না, কোন ছবি চলবে– এ রকম একটা কিংবদন্তি আছে, মানে, বাজারে শ্রুত আছে যে, সিদ্দিক সাহেব বলে দিতে পারেন। তো, উনি আমাকে চোখ বন্ধ করে বললেন যে, ‘গল্পটা খুবই ভালো; আচ্ছা, ভাবী কিংবা বোন করা যায় না এই চরিত্রটাকে?’
আমি বললাম, ‘না’।
‘কেন?’
‘তাহলে আমার ঐ সেন্টিমেন্টটা থাকবে না। মূল সেন্টিমেন্ট যেটা, সেটা থাকবে না।’
‘আমরা তাহলে করব না ছবিটা।’
আচ্ছা! আমি বললাম, ‘কেন?’
‘করব না এই হেতু, যে, মা রেপড হচ্ছে, ছেলে দেখছে– আমাদের দেশে এটা অ্যাপসেপ্টল্ট করবে না।’
এরপরে একদিন খলীলউল্লাহ সাহেব আমাকে নিয়ে গেলেন এক প্রডিউসার– শিকদার সাহেব– সেও জায়ান্ট; মানে, আমাদের দেলোয়ার জাহান ঝন্টুর ভগ্নিপতি… তখন সে বড় প্রডিউসার। আমাকে খলীলউল্লাহ সাহেব বলতেছে, ‘তুমি তো মাইনষেরে পয়সা বানায়া দিচ্ছো, তুমি নিজে কিছু করো। আমি তোমাকে টাকা দেবো।’… শিকদার সাহেবের ওখানে নিয়ে গেলেন। শিকদার সাহেবকে বললেন যে, ‘ও আর আপনি পার্টনার; ওর পার্টনারশিপের টাকাটা আমি দেবো।’ তো, শিকদার সাহেব বললেন যে, ‘ঠিক আছে! আপনার হাতে কী গল্প আছে?’ আমি ঠিক এই ‘আম্মাজান’-এর গল্পটা বললাম। উনিও চোখ বন্ধ করে শুনে-টুনে বললেন, ‘হায়াৎ সাহেব, আমি এই ছবি করব না।’
‘কেন?’
‘এই ছবি চলবে না।’
আমি– ‘কেন?’
‘মা রেপড হয়েছে, ছেলে দেখেছে, এবং সেই ঘটনাকে নিয়েই সিনেমা– এই সিনেমা চলবে না। আপনিও বানায়েন না!’
আমার আরও জিদ চাপতে লাগল। আর, আমি বুঝলাম না, ওদের… একটা কনসেপশন যদি থাকে মানুষের, তাহলে কি ওরাই বোঝে না? নাকি আমি বুঝি না? মানুষের মধ্যে কাজ করে না– সুপিয়রিটি-ইনফিউরিটি কমপ্লেক্স থাকে না? তো, আমার মধ্যে একটা কমপ্লেক্স এলো। যে, আমি দেখায়া দেবো যে, এই ছবি চলে; এই ছবিই চলবে।
ডিপজল আবার গল্প শোনার লোক না। ডিপজল একদিন ডেকে বলল, ‘কই? ছবি বানান একটা!’ আমি তারে একটু হিন্টস দিলাম ‘আম্মাজান’-এর। মান্নার সাথে তখন তার গণ্ডগোল : ‘মান্নাকে বাদ দিয়ে’!
আমি বললাম, ‘না! মান্নারে বাদ দিতে পারুম না। মান্নাকে চিন্তা করেই আমি এই ছবি করেছি। আর, মান্নাও স্টোরিটা জানে। মান্নাকে বলেছি।’
সে তখন বলল, ‘রুবেলরে নেন।’ রুবেলের সাথে সে আলাপ করল। হুমায়ুন ফরীদির সাথে আলাপ করল : ‘হুমায়ুন ফরীদি করবে’।
আমি বললাম, ‘না! মান্না।’
মান্নাকে তখন আমি বললাম, ‘মান্না, তোর সাথে ডিপজলের কী হয়েছে? যদি গণ্ডগোল থাকে, মিটায়া ফেল। একটা ভালো সাবজেক্ট চলে যাবে কিন্তু!’
‘কী ওস্তাদ?’
“‘আম্মাজান’ চলে যাবে! ডিপজল কিন্তু বানাবে; এবং ডিপজল কিন্তু খুঁজতেছে– বিকল্প।”
ও খুব চালাক ছেলে ছিল– মান্না। পরের দিন দেখি, সব ঠিকঠাক! এবং আমাকে ডিপজল ডেকে বলল যে, ‘হ, মান্নাই!’
ও [মান্না] রাত্রে গিয়ে ডিপজলকে কনভেন্স করে ফেলছে। মানে, সে ‘এশিয়া’ হলে গেছে; যাইয়া বলছে, ‘দোস্ত, কী হইছে? অমুক… তমুক…! ছবি বানাচ্ছ ওস্তাদরে দিয়া। আমি বাদ কেন?’ –এই-টেই বইলা…
এরও আবার হিস্ট্রি আছে! ও তো গল্প-টল্প জানে না– ডিপজল। ডিপজল আবার ছবি দেখত : রাশ। জামিন-টামিন হওয়ার পরে।
রুদ্র আরিফ : …রাশপ্রিন্ট?
কাজী হায়াৎ : …রাশপ্রিন্ট।… ওর একটা, পেট্রোল পাম্পের পিছনে একটা স্টুডিও ছিল। সেই স্টুডিওতে চালাইয়া দেখত। ওর লোকজন নিয়ে, বহর-টহর সব মিলিয়ে, ও মদ-টদ খাইয়া দেখত। খাইয়া রাত দুইটার সময় শেষ হইল ছবি দেখা। আমারে কয়, ‘বড়ভাই, ছবি তো চলবে না!’
আমি বললাম, ‘কেন?’
কয়, ‘ফাইট নাই! অ্যাকশন নাই!’
আমি তখন বললাম যে, ‘অ্যাকশন বলতে কী বুঝো? মারামারি? ইজ ইট অ্যাকশন? এইটাই কি অ্যাকশন? যদি এইটা অ্যাকশন হয়, তাইলে অ্যাকশন নাই। নাহলে, অ্যাকশন যদি, মানে– জোশ ফিল করার ব্যাপার থাকে, তাহলে কিন্তু প্রচুর জায়গা আছে।’
‘কী কী জায়গা আছে?’
তখন আমি বললাম যে, “মান্না যে একটা ছেলেকে রেপ করার দায়ে কিল করল, কিল করার পরে তুমি আইসা তোমার মামাতো ভাই… তুমি আইসা তোমার খালুকে… অ… খালাতো ভাই… তোমার খালুকে জিজ্ঞেস করলা যে, ‘কে মারছে মনে হয়?’; কয়, ‘বাবা, বুঝতে তো পারতেছি না– কে মারছে!’; তখন যে খাটিয়া ধরে উঁচু করে [মান্না] বলল, ‘দোস্ত, আমি মারছি! মরা লাশ বেশি সময় রাখতে নাই। চল যাই; দাফন করা ঠিক। আমি মারছি।’… তুমি যে তাকাইলা, আর মান্না যে তাকাইল– এটা কি অ্যাকশন না? এটা বিগ-অ্যাকশন। এটা চারটি ফাইটের সমান।… যে ডিপজলকে আমি এনেছি অনেক ইয়ে করে… স্ক্রিনে আনলাম, স্টাবলিশ করলাম, হি ইজ অ্যা বিগ-শট; তার সামনে অকপটে মান্না বলে দিলো যে, ‘আমি খুন করছি। দোস্ত, আমি খুন করছি।’… তারপর, মান্না যে মৌসুমীকে বিয়ে করার জন্য পাগল-পাগল-পাগল, এবং তুমি যে মিজুর লোক, মিজু তোমাকে কমপ্লেইন করল তার সম্পর্কে; তারপর তুমি তাকে বলতে আসলে, যে, ‘দোস্ত, তুই অই মাইয়ার পিছনে ঘুরিস না’। তখন মান্না যে বলল, ‘না; আমি বিয়া করব!’ তখন বললে যে, ‘তাইলে তুই আমার কথা মানবি না?’ বলল, ‘না, মানব না।’ ‘তাইলে আমাদের দোস্তি?’ তখন সে যে পকেট থেকে… নবাবরে বলল, ‘নবাব, ছুরিটা দে তো!’… আর পকেট থেকে রুমালটা নিয়ে ঝাড়া দিলো, [ডিপজলকে] বলল যে, ‘ঐ কোণা ধর’; এবং এক পোঁচে কাইটা বলল যে, ‘তাইলে কাটাকাটি হইয়া গেল আইজকা থেকে’ –এটা কি বিগ-অ্যাকশন না? দিস ইজ অ্যাকশন।”
ও তখন কিছুটা বুঝতে পারল; তারপরেও সে বুঝে নাই। তারপরেও আমাকে একটা ফাইট জোর করে শুট করতে হয়েছিল, যে, ‘এই জায়গায় একটা ফাইট দেওয়া যায় না?’ তখন আমি শুট করলাম।
*ফিল্মফ্রি অনলাইন পোর্টালে কাজী হায়াতের একটি দীর্ঘ সাক্ষাৎকারের অংশবিশেষ।
…………………………………………………………………………………………………………………………….
উপরের পরিচালক কাজী হায়াতের ” আম্মাজান ” সিনেমাটি সম্পর্কে তো পেছনের গল্পটি শুনলেন এবার সেই সময়কার একজন দর্শক হিসেবে আমার কেমন অভিজ্ঞতা হয়েছিলো তা বলছি নিচে।
সময়ের দাপুটে দুই অভিনেতার বিরোধ মিটিয়ে একটি মেগা হিট সিনেমার নাম ‘আম্মাজান’। ‘আম্মাজান’ সিনেমাটি মুক্তির পর সেই সময়ে নিয়মিত সিনেমাহলে গিয়ে সিনেমা দেখা এমন কোন দর্শক খুঁজে পাবেন না যে যিনি দেখেন নাই। ‘আম্মাজান’ সিনেমাটির নাম শুনলেই আজো সেইসব দর্শকদের চোখ টলমল করে উঠে অনেক স্মৃতি মনে করে।
বাংলাদেশের আধুনিক বাণিজ্যিক চলচ্চিত্রের সম্পূর্ণ বিনোদনধর্মী মৌলিক গল্পের সিনেমার ইতিহাসের সেরা সিনেমাগুলোর তালিকায় বহুকাল ধরে শীর্ষস্থান ধরে রাখবে যে সিনেমাটি তার নাম ‘’আম্মাজান’’। সোনালি প্রজন্মের শেষ মহানায়ক প্রয়াত মান্নাকে শতবর্ষ পরের সিনেমা দর্শকরাও যে সিনেমার জন্য মনে রাখবে তার নাম ‘আম্মাজান’। আম্মাজান হচ্ছে এমন একটি বাণিজ্যিক সিনেমা যে সিনেমাটির আবেদন আরও বহুকাল বহুযুগ ধরে থাকবে।
‘আম্মাজান’ সিনেমার প্রান হলো গল্প, চিত্রনাট্য, পরিচালকের মুন্সিয়ানা আর মান্না। আম্মাজান সিনেমাটি যারা দেখেছে আর আগামীতে দেখবে সবার কাছে বিস্ময় হয়ে ধরা দিবে মান্না। মনে হবে মান্না ছাড়া আম্মাজান সিনেমা নির্মাণ সম্ভব হতো না কিংবা মান্নার জন্যই নির্মিত হয়েছে ‘আম্মাজান’ যেখানে শুরু থেকে শেষ দৃশ্য পর্যন্ত ওয়ান এন্ড অনলি মান্না মান্না এবং মান্না দর্শকদের বিমোহিত করে রেখেছিলেন। মান্নার জন্যই যে আম্মাজান সিনেমা নির্মিত হয়েছিলো সেই ধারনাটা সত্য। কারণ, ‘আম্মাজান’ সিনেমার নির্মাণের কিছুদিন আগেও মান্না ডিপজলের দ্বন্দ্ব ছিলো চরমে এবং একজন আরেকজনের ছায়াও মাড়াতেন না।সেই দ্বন্দ্বের সূত্র ধরেই আম্মাজান সিনেমার প্রযোজক ডিপজল কাজী হায়াতকে অনুরোধ করেছিলেন মান্নার বদলে রুবেল’কে নিতে কিন্তু কাজী হায়াৎ সিদ্ধান্তে অনড়। ডিপজলকে সাফ জানিয়ে দিলেন ‘ মান্নার বদলে অন্য কাউকে তিনি নিতে পারবেন না, কারণ গল্পটা মান্নাকে মাথায় রেখেই লিখেছিলেন তিনি’’।কাজী হায়াতের অনুরোধে সেদিন মান্না ডিপজল বিরোধ মিটিয়ে ফেলেন এবং আম্মাজান সিনেমায় দুজন চুক্তিবদ্ধ হোন যার পরের গল্পটা একটা …ইতিহাস। স্বাধীন বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত নির্মিত বাম্পারহিট বা ব্যবসা সফল সেরা সিনেমাগুলোর তালিকায় শীর্ষসারিতে ‘আম্মাজান’ ঠাই করে নিয়েছে।
সেইসময় হলে দেখেছিলেন তাদের নিশ্চয়ই মনে আছে কী পরিমান ভিড় ঠেলে চড়া দামে টিকেট কেটে সিনেমাটি দেখতে দর্শক হলে গিয়েছিলেন । প্রশ্ন জাগতে পারে কী ছিল সেই ছবিতে ? কেন ‘আম্মাজান’ ছবির কথা উঠলেই আজো দর্শকরা মান্নাকে বারবার মনে করেন? …… সিনেমা হলে ঢুকার সময় আমার মনেও কিছু প্রশ্ন জেগেছিল যা ছবিটি দেখে জবাব পেয়েছিলাম ।
‘আম্মাজান’ অশ্লীল ছবির রমরমা সময়ে কাজী হায়াতের সম্পূর্ণ পরিছন্ন একটি বিনোদনধর্মী ছবি যার গল্পটি ছিল সম্পূর্ণ মৌলিক। গল্প, চিত্রনাট্য , নির্মাণ আর ৩/৪ চরিত্রের পাল্লা দিয়ে অভিনয় পুরো ছবিটিকে দর্শকদের কাছে করেছিল এক পশলা বৃষ্টির মতো । সাথে আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুল ও আইয়ুব বাচ্চু’র ‘আম্মাজান ,আম্মাজান ” গানটি ছিল বারুদ ।
টাইটেলের পর বড় হওয়া মান্না’র খুন করার একটি দৃশ্য ছিল। সেই খুনের পর মান্না যখন রক্ত মাখা ছুরি পানি দিয়ে ধুচ্ছিল তখন মান্নার সহযোগী নবাব মান্নাকে জিজ্ঞেস করছিল ‘আর কতদিন?’ মান্না প্রশ্নটি না বুঝে আবার জিজ্ঞেস করে ‘কী কতদিন?’ জবাবে নবাব আবার প্রশ্ন করে ‘বলি , এভাবে আর কতদিন?’ যার উত্তরে মান্না আকাশের দিকে তাকিয়ে বিধাতার দিকে প্রশ্নটি ছুঁড়ে দিয়ে যে সংলাপগুলো বলেছিল তা দেখে পুরো বিস্মিত হয়ে গিয়েছিলাম যে শুরুতেই চরিত্রের এতো গভীরে পৌঁছে যাওয়া অভিনয় সর্বশেষ কোন ছবিতে কোন নায়কের দেখেছিলাম মনে করতে পারিনি। এরপর অপেক্ষায় থাকলাম পুরো ছবিতে মান্না’র অভিনয় দেখার জন্য।
প্রতিটি দৃশ্য সেই শুরুর দৃশ্যর মতো বারবার চরিত্রের গভীরে পৌঁছে গিয়ে মান্না পুরো ছবিতে অনবদ্য যে অভিনয়টা করেছিলেন সেটা দেখে বুঝলাম এই আম্মাজান ছবির ‘বাদশা’ চরিত্রটি বুঝি মান্না’র জন্যই কাহিনিকার ,পরিচালক সৃষ্টি করেছিলেন। হলে ছবির দেখার অভিজ্ঞতায় সেইদিন প্রথম দেখলাম আমার সামনের ও পেছনের সারির বেশ কয়েকজন দর্শক সিনেমা শেষ হওয়ার ১০ মিনিট আগে গিয়ে পরের শো দেখার জন্য টিকেট কেটে নিয়ে আসলেন যেন ছবি শেষে ভিড়ের মধ্য টিকেট কাটতে ঝামেলা না হয়। ছবি শেষে সিঁড়ি দিয়ে নামার সময় দেখলাম বেশ কয়েকজন বলাবলি করছেন এখন আবার টিকেট কেটে পরের শো দেখবেন। অর্থাৎ ‘আম্মাজান’ এর মান্না দর্শকদের এমন বিমোহিত করেছিলেন যে দর্শক বারবার দেখতে চাচ্ছে মান্নাকে। অর্থাৎ’আম্মাজান’ মানেই মান্না, মান্না মানেই ‘আম্মাজান’ ছবির বাদশা নামের পাগল ছেলেটি। কাজী হায়াতের মতো পরিচালক ছিলেন বলেই মান্না’র কাছ থেকে অভিনয় জীবনের সেরা কাজটি আদায় করে নিতে পেরেছিলেন আর মান্নাও চরিত্রটি বুঝে এমন ভাবে মিশে গিয়েছিলেন যে আম্মাজান ছবির জন্য হলেও অন্তত যুগ যুগ ধরে দর্শকরা মান্নাকে মনে রাখতে বাধ্য । আম্মাজান ছবির জন্য কাজী হায়াত শ্রেষ্ঠ চিত্রনাট্যকার শাখায় জাতীয় পুরস্কার পেয়েছিলেন । আজ মান্না নেই তাই তো নির্মিত হবেনা নতুন আরেকটি ‘আম্মাজান’ সিনেমা।