Select Page

মান্নার সেরা পনেরো

মান্নার সেরা পনেরো

১. আম্মাজান (১৯৯৯)

কাজী হায়াত পরিচালিত মান্নার সেরা ছবিগুলোর মধ্যে সবার উপরেই থাকবে। ছবির নামভূমিকা অনুযায়ী আম্মাজান চরিত্রে শবনম থাকলেও মান্না নিজের অভিনয়ক্ষমতায় দৃষ্টি নিজের দিকেই নিয়ে গেছে ছবিতে। তাঁর অনবদ্য অভিনয়শক্তিতেই ছবিটি দর্শকের কাছে স্মরণীয়। মাতৃভক্ত এক ছেলের অসাধারণ সমাজসচেতন, প্রতিবাদী ভূমিকা ছবিটির প্রাণ। ব্লকবাস্টার এ ছবিটি নির্মাণগুণে মাস্টারপিস।

২. যন্ত্রণা (১৯৮৮)

কাজী হায়াত পরিচালিত মান্নার প্রথমদিকের একটি অনবদ্য বাস্তবসম্মত ছবি। স্বাধীনতার পর সুবিধাবাদী শ্রেণির উত্থানে যেভাবে দেশে অরাজকতা তৈরি হয়েছিল, বেকারত্ব বেড়ে গিয়েছিল এবং এর প্রভাবে তরুণ সমাজ অপরাধের পথে পা বাড়িয়েছিল তারই একটি চিত্র ছিল এ ছবি। মান্না ও তার বন্ধুদের বাস্তবতার কাছে পরাজয় মানতে হয় অপরাধ করতে গিয়ে। ছবির শেষটা প্যাথেটিক।

৩. দাঙ্গা (১৯৯১)

কাজী হায়াত পরিচালিত এ ছবিটি ছিল স্বাধীনতাপরবর্তী বাংলাদেশের অবস্থা নিয়ে নির্মিত। সুবিধাবাদী নেতাদের রাজত্ব, সন্ত্রাসের করাল গ্রাস, স্বাধীন দেশে নিম্নবিত্তের পরাধীন জীবন, ধর্ষণ, খুন ইত্যাদি সামাজিক ব্যাধির বিরুদ্ধে একজন সৎ পুলিশের সংগ্রাম ছিল ছবির গল্প। এ ছবিতেও মান্না অনবদ্য অভিনয় করেছে। জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ভাস্কর্যের সামনে দাঁড়িয়ে ‘বিদ্রোহী’ কবিতার উপস্থাপনায় মান্নার মুখে ‘আর একটি কবিতা লিখতে পারো না কবি’ সংলাপটি ছিল সেরা এবং নির্মম বাস্তবতা। সুচরিতাকে জাতীয় পতাকা দিয়ে ঢেকে দেয়ার শটটি ছিল ছবির সেরা শট। এটিও মাস্টওয়াচ এবং মাস্টারপিস ছবি।

৪. ত্রাস (১৯৯২)

কাজী হায়াত পরিচালিত ‘ত্রাস’ ছবিটি ছিল শিক্ষাঙ্গনে সন্ত্রাস, কলুষিত ছাত্র-রাজনীতি, অসৎ নেতাদের সুবিধাবাদী আচরণ নিয়ে নির্মিত। এ অবস্থার বিপরীতে মান্না সাধারণ ছাত্র থেকে হয়ে ওঠে বিপ্লবী ছাত্রনেতা। একটা পরিবর্তন আসে। অসাধারণ ছবি।

৫. দেশদ্রোহী (১৯৯৭)

কাজী হায়াত পরিচালিত অসাধারণ ছবি। অসৎ নেতারা কীভাবে তাদের কাজে ক্যাডারদের ব্যবহার করে এবং সুবিধা শেষ হলে ছুঁড়ে ফেলে দেয় তার একটা নমুনা দেখানো হয়েছে এ ছবিতে। মান্না মাস্তানের চরিত্রে অভিনয় করেছে। সুবিধাবাদী নেতা রাজিবকে উচিত শিক্ষা দিতে গিয়ে দেশদ্রোহী বানানো হয় তাকে। ফাঁসির আসামী করা হয়। ফাঁসির মঞ্চে যাবার আগে জনগণের উদ্দেশে তার বক্তব্য ছিল পর্দা কাঁপানো। ছবির একটি গানে মানুষ ও কুকুরের তফাত দেখিয়ে বাস্তবতা তুলে ধরা হয়েছে। মাস্টওয়াচ ছবি।

৬. লুটতরাজ (১৯৯৭)

কাজী হায়াত পরিচালিত মাস্টওয়াচ আরেকটি ছবি। সন্ত্রাস, কালোবাজারি, আইনের বাস্তবতা, মেয়েদের বাস্তবতা এ বিষয়গুলোকে এত নিখুঁতভাবে দেখানো হয়েছে যে কমার্শিয়ালি অনেকে এ ছবিকেও মাস্টারপিস বলে থাকে। এ ছবিতেও নজরুলের ‘বিদ্রোহী’ কবিতার সাথে মান্নার অসাধারণ অভিনয় দেখা যায়। আইনের ফাঁকফোঁকর নিয়েও মান্নাকে মাথা উঁচু করে কথা বলতে দেখা যায়। অনবদ্য একটি ছবি।

৭. তেজী (১৯৯৮)

কাজী হায়াত পরিচালিত মাস্টওয়াচ আরেকটি ছবি। এ ছবিতেও কাজ না পাওয়া বেকার একটি ছেলেকে সামাজিক অপরাধের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে দেখা যায়। তার মনের মধ্যে যে সাহস সেটা ছিল ছবির নামের পরিপূরক। তেজী সাহসী সাধারণ ছেলেটিকে নেতারা কাজে লাগাতে চায়। বিভিন্ন বাস্তবতা ফেস করে ডিপজলের মোকাবেলা করে তাকে আবার নতুন জীবন শুরু করতে হয়।

৮. ধর (১৯৯৯)

কাজী হায়াত পরিচালিত আরেকটি মাস্টওয়াচ ছবি এবং অনেকের মতেই এটাও নির্মাণের জন্য মাস্টারপিস পর্যায়ের। সমাজে টোকাই পরিচয় থেকে উঠে আসা ভাসমান একটি ছেলে ঠোকর খেতে খেতে কীভাবে সন্ত্রাসের পথে পা বাড়ায় ছবিটি তুলে ধরেছে। ডিপজলের গ্রুপে ঢোকার পর মান্নার অপরাধী জীবন শুরু হয়। সৃষ্টিকর্তার কাছে নিজের আর্তনাদ তুলে ধরে। ঐ সময় মান্নার অভিনয় জাস্ট মাইন্ডব্লোয়িং। পুরো ছবিটিতে একটা জমজমাট আবহ আছে এবং মান্নাই তার কেন্দ্রবিন্দু।

৯. উত্তরের খেপ (২০০০)

শাহজাহান চৌধুরী পরিচালিত ছবি। শওকত আলী-র উপন্যাস থেকে নির্মিত সাহিত্যভিত্তিক ছবি। ডিভোর্সি দুজন মানুষ মান্না ও চম্পার বেদনাময় জীবনযাপনের করুণ ছবি। মান্না এ ছবিতে একটা ব্যক্তিত্ব বজায় রেখে অভিনয় করে গেছে। লাউড অ্যাকটিং-এ যার এত দখল সেই মান্নাকে এ ছবিতে শান্ত অভিনয় করতে দেখা গেছে এবং তা অসাধারণ ছিল।

১০. কষ্ট (২০০০)

কাজী হায়াত পরিচালিত ছবি। ছোটবেলায় করুণ বাস্তবতায় পড়ে মা-বাবা হারানো একটি ছেলে বড় হবার পর প্রতি মুহূর্তে একটা ভয়ের মধ্যে বাস করে। কিছুটা সাইকো ক্যারেক্টার ছিল মান্নার। মৌসুমীকে বিয়ের পর সবসময় আগলে রাখতে চায় পাগলামি করে। মৌসুমীর প্রেম ছিল ছোটভাই শাকিল খানের সাথে কিন্তু সেটা মান্না পরে জানতে পারে। মৃত্যুর আগে সে আক্ষেপটা বলে যায়। ছবির সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য অংশ ছিল মৌসুমী, শাকিলকে যখন নিজের ভেতরের কষ্টের কথা বলে মান্না। বাবার প্যারালাইসিস রোগের জন্য নিজে সন্তান নিত না কারণ সন্তান যদি তেমন হয়। ঐ অভিনয়টা করে দেখানোর সময় মান্না জাস্ট ম্যাজিক্যাল ছিল। এ ছবিটি মূলত তাঁর অভিনয়ের শক্তিতে মাস্টওয়াচ।

১১. মিনিস্টার (২০০৩)

কাজী হায়াত পরিচালিত এ ছবিটি ছিল বলিউডের ‘নায়ক’ সিনেমার কপি। বাংলা ভার্সনে মান্না ছিল পারফেক্ট চয়েজ। দুর্নীতিগ্রস্ত দেশের বিভিন্ন সেক্টরে পরিবর্তন আনার জন্য মান্নাকে অল্প কিছুদিনের জন্য মন্ত্রীর দায়িত্ব দেয়া হয়। তারপর তাকে বাস্তবতার মুখোমুখি হতে হয়। অসাধারণ অভিনয় করেছিল।

১২. বীর সৈনিক (২০০৩)

দেলোয়ার জাহান ঝন্টু পরিচালিত ছবি। এ ছবিতে মান্না জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছিল। ডাবল রোলের এ ছবিতে দেশপ্রেমিক ও দেশবিরোধী পিতাপুত্রের ভূমিকায় মান্না অন্যরকম চরিত্রে ভিন্নধর্মী অভিনয় করেছিল। ছবিটি তাঁর ক্যারিয়ারে একদম আলাদা।

১৩. আমি জেল থেকে বলছি (২০০৪)

মালেক আফসারী পরিচালিত ছবি। এ ছবিতে একটা সাধারণ ছেলে থেকে বাস্তবতার চাপে সন্ত্রাসীদের অত্যাচারে মান্না হয়ে যায় আসামী। বিচারকার্যের আগে তার জীবনে নতুন আরো ঘটনা ঘটতে থাকে। ভয়েস কন্ট্রোল করে পুরো ছবিতে মান্না অন্যরকম অভিনয় করেছে। ব্যক্তিত্ব ছিল চরিত্রটিতে। অভিনয়সমৃদ্ধ ছবি।

১৪. রাজধানী (২০০৫)

মোহাম্মদ হোসেন জেমী পরিচালিত ছবি। একদম ঠাণ্ডা মাথার থ্রিলার যাকে বলে এ ছবিটি তাই। আন্ডারওয়ার্ল্ডের গল্প হবার পরেও ছবির নির্মাণটি ছিল সাদামাটা তাই দেখতে আলাদা লাগে। মান্না আন্ডারওয়ার্ল্ডের হয়ে কাজ করে এবং নিজের ব্যক্তিজীবন থেকে আবিষ্কার করে ভয়াবহ বাস্তবতা। অপরাধীর জীবনের ছায়া সন্তানের উপর কত নির্মম হতে পারে ছবির ফিনিশিং বলে দেয়। রাজধানী শহর ঢাকার অপরাধজগতের একটা ছাপ ছবিতে আছে। মান্না নেগেটিভ রোলে কুল অভিনয় করে গেছে পুরো ছবিতে।

১৫. কাবুলিওয়ালা (২০০৫)

কাজী হায়াত পরিচালিত ছবি। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের গল্প থেকে নির্মিত সাহিত্যভিত্তিক ছবি। মান্নার টোটাল ক্যারিয়ারে সবচেয়ে আলাদা ছবি যে ছবিটিকে অনায়াসে আলাদা করা যায়। একজন কাবুলিওয়ালার জীবনের বাস্তবতা তুলে ধরা হয়েছে ছবিতে। পাওনা টাকা আদায় করতে গিয়ে খুন করে জেলে যায় মান্না। এর আগে একটি ছোট্ট মেয়ে দিঘির সাথে তার চমৎকার বন্ধুত্ব হয়। জেল থেকে বের হয় মেয়েটির বিয়ের দিন ততদিনে নিজের মেয়েও বড় হয়ে গেছে। সময়ের ব্যবধানে জীবন থেকে হারানো সময়ের জন্য তাঁর মন কেঁদে ওঠে। নতুন একটি চরিত্র ছিল মান্নার জন্য এবং সুন্দরভাবে করে দেখিয়েছে।

মান্নার ছবির ক্যাটাগরিতে দেখার মতো অসাধারণ ছবি রয়েছে। এর মধ্য থেকে কোয়ালিটির দিক থেকে তাঁর সেরা পনেরো ছবি বাছাই করা হয়েছে সচেতনভাবে। অনেকের কাছে আরো অপশন থাকতে পারে কিন্তু কোয়ালিটি বিচারে এ ছবিগুলো সিলেক্টিভ। মান্না ঢালিউড ইন্ডাস্ট্রির কালজয়ী অভিনেতাদের একজন। তাঁর স্মরণীয় ছবিগুলোই তাঁকে বাঁচিয়ে রাখবে।

মান্না নামটি অমর হোক।


Leave a reply