মাস্টওয়াচ ‘মিস্টার কে’
টেলিফিল্ম – মিস্টার কে
উপন্যাস – মাহবুব মোর্শেদ
পরিচালনা – ওয়াহিদ তারেক
অভিনয় – পার্থ বড়ুয়া, অর্ষা, শাহেদ শরীফ খান, সুষমা সরকার
বঙ্গ বব-র সাম্প্রতিক সাহিত্য থেকে ফিকশন-এর এবারের পর্ব ‘মিস্টার কে।’ মাহবুব মোর্শেদের ‘নোভা স্কশিয়া’ উপন্যাস থেকে টেলিফিল্মটি নির্মাণ করেছেন ওয়াহিদ তারেক।
ওয়াহিদ তারেক সম্পর্কে বর্তমান দর্শকদের কতটুকু ধারণা আছে দেখার বিষয়। তিনি খুব কম কাজ করেন কিন্তু যেসব ফিকশন বানিয়েছেন তাঁর নিজস্ব একটা ক্লাস রেখে কাজ করেছেন। তাঁর ‘একটি যথাযথ মৃত্যু’, লিটল এঞ্জেল আই অ্যাম ডায়িং, আগস্টে লেখা গল্প সমগ্র, গল্পটা শেষ হয়ে গেল’ ফিকশনগুলো যারা দেখেছেন তাদের ধারণা থাকার কথা তাঁর সম্পর্কে। যারা দেখেননি দেখে নিলে ধারণা পাবে। বঙ্গ বব-এর ঈদ ফিকশন ‘মিস্টার কে’ ওয়াহিদ তারেকের নতুন ক্লাস ওয়ার্ক হয়ে থাকল।
টেলিফিল্মটি এমনভাবে নির্মিত হয়েছে যেখানে বলে নেয়া ভালো এটি টার্গেট অডিয়েন্স বেইজড কাজ। সবাই এ গল্পে ঢুকতে হয়তো পারবে না বা স্টোরি টেলিং বুঝতে পারবে না। সাইকোলজিক্যালি, ফিলোসফিক্যালি নির্মিত টেলিফিল্ম।
পার্থ বড়ুয়াকে কিডন্যাপ করা হয় যে পেশায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক। খুব মেধাবী, বিচক্ষণ। তাকে কিডন্যাপের পর খুব আয়েশী ভঙ্গিতে তাকে আপ্যায়ন করানো হয়। পার্থ তখনো জানে না কি ধরনের সারপ্রাইজিং কাজের জন্য তাকে অপহরণ করা হয়েছে। একটা পাসওয়ার্ড বের করতে হবে তাকে কিন্তু কিসের পাসওয়ার্ড? পারবে কি সেটা বের করতে? বের করতে গিয়ে তার সাথে যা ঘটবে পার্থ কি প্রস্তুত সেসব গ্রহণ করতে! আনাম থেকে কায়কোবাদ বা মিস্টার কে হয়ে ওঠার মিশনে সফল হবে কিনা।
এই গল্পকে উপস্থাপন করতে নির্মাণে এসেছে সাইকোলজিক্যাল ভঙ্গি। টেলিপ্যাথি, ইনট্যুশনের মাধ্যমে পার্থর জার্নি স্টার্ট হয়। অফিসিয়াল একটা চেইন সম্পূর্ণ পাল্টে যায় পার্থকে ঘিরে এবং তার কায়কোবাদ রোল প্লে করার সময়টাতে নিজের ক্ষমতায়নের সাথে সাইকোলজিক্যাল পেইনও তাকে নিতে হয়। একই স্পেসের মধ্যে দুটি গল্প চলতে থাকে যার দুটোই প্যারালালি চলে এবং পার্থের অ্যাডাপ্টেশন ঘটে দুই সময়ের সাথে। একটা মানবিক সম্পর্কের সাথে পার্থের পরিচয় ঘটে। এই সম্পর্কের উপর ভিত্তি করেই পাসওয়ার্ডের দিকে তাকে যেতে হবে এবং শেষ পর্যন্ত সে সেটা বের করতে পারবে কিনা সেটাই টেলিফিল্মের চূড়ান্ত গন্তব্য।
দর্শক সাধারণত যা ভাবে পরিচালক তাকে সব বুঝিয়ে দেবে বা একটা ফিকশন দেখার সাথে সাথে সব বুঝতে পারবে সে যদি তা না পারে তাহলে অনেক সময় পরিচালককে এক হাত নিতেও ছাড়ে না সেসব দর্শকেরা। কিন্তু ‘মিস্টার কে’ বলছে ভিন্ন কথা। আপনাকে আপনার সেন্স দিয়ে অনেককিছু বুঝতে হবে মানে হচ্ছে সহজে গল্পটা বুঝে যাবেন সে সুযোগ দিচ্ছেন না পরিচালক ওয়াহিদ তারেক। পুরো টেলিফিল্মের ল্যাংগুয়েজ প্যাটার্নে তাই সাংকেতিক ভাষা ব্যবহার করা হয়েছে। একটা আড়াল যেন কোথাও আছে কথা বলায়।
অভিনয়ে পার্থ বড়ুয়া টোটালি প্রফেশনাল ছিল। তার এক্সপ্রেশন, পার্সোনালিটি অসাধারণ সাথে ভয়েসের বলিষ্ঠতা তো আছেই। অ্যাডাপ্টেশনের চরিত্র এবং শিক্ষক চরিত্রে সমান স্বচ্ছন্দ পার্থ। শাহেদ-সুষমার চরিত্র দুটি ইমোশনাল। অর্ষার জন্যও পারফেক্ট রোল তাকে এ ধরনের রহস্য রহস্য চরিত্রে মানায়। মনির আহমেদের চরিত্রটিও তার অভিনয়ের সাথে মানানসই। লোকেশন, কস্টিউম, ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক সব মানসম্মত।
‘মিস্টার কে’ হাইলি রিকমেন্ডেড কাজ।
মাস্টওয়াচ।