মুক্তিযুদ্ধের স্মার্ট বয়ান ‘ওরা ৭ জন’
রণক্ষেত্রের গল্প নিয়ে স্মার্ট সিনেমা ‘ওরা ৭ জন’। খিজির হায়াত খান স্বাধীনতা যুদ্ধের এমন গল্প আমাদের দেখালেন তেমনটা আমরা স্ক্রিনে দেখিনি এর আগে। মুক্তিযুদ্ধের সিনেমা বলতে সাধারণত যে ধারা বা প্রথাগত নির্মাণের সঙ্গে পরিচিত সেই ধারা থেকে বের হয়ে পুরোপুরি অন্য এক গল্প।
স্বাধীনতার ৫২ বছরে অর্ধ শতাধিক মুক্তিযুদ্ধের সিনেমা নির্মাণ হয়েছে। এর মধ্যে অনেক কালজয়ী সিনেমার দেখা আমরা যেমন পেয়েছি তেমনি আছে দায়সারা মুক্তিযুদ্ধের গল্প। বিশেষ করে রণক্ষেত্রের ফাইট বলি অথবা মুক্তিযোদ্ধা এবং পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর মধ্যকার সম্মুখ যুদ্ধের সিন এড়িয়ে বা পাশ কাটিয়ে যেতে দেখেছি এসব সিনেমায়। অবশ্য বাজেট সীমাবদ্ধতা, সব উপকরণ নিয়ে এসব সিনেমা নির্মাণে বাধা-বিপত্তিও ছিল। সেই সকল প্রতিবন্ধকতা পেরিয়ে ‘ওরা ৭ জন’-এ খিজির হায়াত খান নিজ ক্যারিয়ারের এখন পর্যন্ত সেরা সিনেমাটি বানিয়েছেন।
সত্য ঘটনা অবলম্বন করে নির্মিত এই সিনেমায় আছে সিলেটের অসাধারণ সুন্দর রিয়েল লোকশন, সংলাপ, সিনেমাটোগ্রাফি, ব্যাকগ্রাউন্ড স্কোর, কস্টিউম ও শ্রুতিমধুর গান। সঙ্গে আছে মুল চরিত্রের পাশপাশি পার্শ্বচরিত্রের সাবলীল উপস্থাপন।
পরিচালনার পাশপাশি মেজর লুৎফরের চরিত্রে খিজির হায়াত খান আহামরি না হলেও মানিয়ে গেছেন। ডাক্তার চরিত্রে ইন্তেখাব দিনার, ভারতীয় নারী ডাক্তার অর্পণা সেন চরিত্রে জাকিয়া বারী মম, মসজিদের মুয়াজ্জিন সোলাইমান কাজী চরিত্রে ইমতিয়াজ বর্ষণ, সুমিত চরিত্রে নাফিস আহমেদ, শাফি চরিত্রে সাইফ খান, মুক্তাদির চরিত্রে শাহরিয়ার ফেরদৌস সজীব, নজরুল চরিত্রে খালিদ মাহবুব তূর্য, মুক্তিযুদ্ধের কমান্ডার চরিত্রে শিবা শানু, চেয়ারম্যান চরিত্রে জয়রাজ, পাকিস্তানি মেজর চরিত্রে হামিদুর রহমান বা স্নিগ্ধা চরিত্রে তাসফি সবাই যার যার জায়গা থেকে নিজেদের সেরাটাই দিয়েছেন।
যুদ্ধের ময়দানেও ধর্মের প্রতি আস্থা রাখা সোলাইমান চরিত্রের বর্ষণ যদি ছাপ রেখে থাকেন, ময়দানেই নিজের প্রিয়তমাকে হারানোর বেদনা নিয়েও দেশ স্বাধীন করার প্রত্যয় ধারণ করা সুমিত চরিত্রে নাফিস অথবা সিলেটের আঞ্চলিক ভাষায় পুরোটা সময় স্ক্রিনে কমিক রিলিফ দেবার পাশাপাশি শেষদিকে ইমোশনাল সিনেও শাফি চরিত্রে সাইফ খান এই সিনেমার সারপ্রাইজ হিসেবে মুগ্ধতা ছড়িয়েছেন।
পাহাড়, খাল, চা বাগানের মনোরম লোকেশনে যুদ্ধের বিভীষিকা একদম নতুন অনুভূতি। মুক্তিবাহিনী বা পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর ক্যাম্পগুলো বিশ্বাসযোগ্য ছিল, যা স্বস্তির। সিনেমার গানগুলি মোবাইল বা ল্যাপটপে শোনার পর অতোটা ভালো না লাগলেও ‘মন নৌকাতে ছেদ হয়েছে ভাই’ হলের ভেতর আলাদা একটা ভালোলাগা নিয়ে এসেছে। পাশাপাশি ‘যাও দিলাম যেতে’ অদ্ভুত নিস্তব্ধতাও নিয়ে এসেছে প্রেক্ষাগৃহে। যুদ্ধের দৃশ্যে ব্যাকগ্রাউন্ড আলাদা মাত্রা দিয়েছে ও বিশ্বাসযোগ্য ছিল।
কালারগ্রেডিং নিয়ে কাজ করা উচিত ছিলো; বিশেষ করে রাতের দৃশ্যগুলোতে। ২ ঘন্টা ৪৫ মিনিটের ব্যপ্তি কিছুটা কমানো যেতো, তাতে দর্শকদের কানেক্ট করাটা আরো ভালোভাবে সম্ভব হতো। বিশেষ করে শেষের দিকের হ্যান্ড টু হ্যান্ড কমব্যাট সিকোয়েন্স আরো একটু কমানো যেতো। তবে এই কমতি বা খামতি একপাশে সরিয়ে মুক্তিযুদ্ধের সিনেমা হিসেবে বড় ক্যানভাসের ‘ওরা ৭ জন’ নিঃসন্দেহে মুগ্ধকর।
খিজির হায়াত খান ও তার টিমের প্রতিটি সদস্য সততা, পরিশ্রম ও নিজ নিজ বিভাগে ভালো করার নিরলস চেষ্টা করছেন, তা বলার অপেক্ষা রাখেনা। এবং স্বাতন্ত্রতা বিবেচনায় ‘ওরা ৭ জন’ সফল।