মুরাদকে পদত্যাগের নির্দেশ, মাহি-ইমন জানালেন সেদিন কী ঘটেছিল
নারীদের প্রতি অপমানজনক মন্তব্য ও ধর্ষণের হুমকি সম্বলিত অডিও ফাঁসের মাঝেই তথ্য প্রতিমন্ত্রী মুরাদ হাসানকে মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগের নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। মঙ্গলবারের মধ্যে তাকে পদত্যাগ করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের জানিয়েছেন।
খালেদা জিয়ার পরিবারের সদস্যদের নিয়ে মুরাদ হাসানের বক্তব্য–সংবলিত একটি ভিডিও সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। ভিডিওতে খালেদা জিয়ার নাতনি জাইমা রহমান সম্পর্কে ‘অশ্লীল ও কুরুচিপূর্ণ’ মন্তব্য করতে শোনা যায়। তার ওই বক্তব্যের সমালোচনায় সোচ্চার হয়েছিলেন নারী অধিকারকর্মীসহ বিভিন্ন শ্রেণি–পেশার মানুষ। প্রতিমন্ত্রীর পদ থেকে মুরাদ হাসানকে অব্যাহতি দেওয়ার দাবিও উঠেছিল।
এরমধ্যে মাহিয়া মাহির সঙ্গে প্রতিমন্ত্রী মুরাদের টেলিফোন কথোপকথনের একটি অডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। যা পরিস্থিতি আরও ঘোলাটে করে তোলে। সেখানে নায়িকার উদ্দেশ্যে তাকে ‘কুরুচিপূর্ণ’ কথা বলতে শোনা গেছে। এই কথোপকথন নিয়েও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক সমালোচনা চলছিল। ওই অডিওতে নায়ক ইমনও রয়েছেন।
রবিবার রাতে অডিও ভাইরাল হওয়ার পরদিন এ নিয়ে মুখ খুললেন দুই তারা।
ওমরা পালন করতে স্বামীর সঙ্গে সৌদি আরবের মক্কায় অবস্থান করছেন মাহি। সোমবার রাতে মক্কার হারাম শরীফ থেকে এক ভিডিওবার্তায় সেদিনের ঘটনা জানালেন এই অভিনেত্রী।
ভিডিও বার্তায় মাহিকে কালো ঘোমটা ও কালো মাস্কে মুখ ঢাকা অবস্থায় দেখা যায়। তিনি বলেন, ‘আমি মাহি মক্কার হারাম শরিফ থেকে বলছি। আপনারা জানেন, আমরা ওমরা পালন করতে এসেছি। এ জন্য ফোন রিসিভ করছি না। এবাদত করতে এসেছি, সেটাই ঠিক মতো করতে চাই। যেটা বলার জন্য ভিডিওটা করেছি সেটা হচ্ছে, আমি সেদিনও ভীষণ বিব্রত ছিলাম। নিজের আত্মসম্মানে সেদিন কতটা আঘাত লেগেছে সেটা আমি জানি আর আমার আল্লাহ জানে। এবং আজ আরও একবার আমি বিব্রত হলাম। নিজের কাছে ছোট হলাম, দেশবাসীর কাছে আরও একবার ছোট হলাম।’
ওই অশালীন ফোনালাপ প্রসঙ্গে মাহি জানান, ঘটনাটি দুই বছর আগের। সে প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আপনারা নিজে থেকে ভেবে দেখবেন, এ রকম ভাষা বা ব্যবহারের প্রতিউত্তর আমার আসলে কী দেওয়ার ছিল? সেদিন আমার কিছু বলার ভাষা ছিল না। আমি সে জন্য কোনো প্রতিবাদ করিনি। যেভাবে পেরেছি, পাশ কাটিয়ে যাওয়া উচিত বলে মনে হয়েছে, আমি পাশ কাটিয়ে গেছি। এটা দুই বছর আগের একটা ঘটনা। বরাবরের মতো আমি আল্লাহর কাছে বলেছি, আমি কষ্ট পেয়েছি। যে কষ্ট দিয়েছে, সেই ফল তিনি পেয়েছেন।’
পরিস্থিতির ব্যাখ্যা দিয়ে মাহি আরও বলেন, ‘এই বিষয় নিয়ে এখান থেকে কথা বলার মানসিকতা আমার নেই। আমি দোষী কি না আপনারা নিজের জায়গা থেকে চিন্তা করবেন। আমাদের জন্য সবাই দোয়া করবেন। আমাদের ওমরা যেন আল্লাহ কবুল করেন। আমার কোনো দোষ ছিল না। আমি একটা পরিস্থিতির শিকার ছিলাম।’
এ দিকে ইমনও জানান, ঘটনাটা দুই বছর আগের। একটি ছবির মহরত অনুষ্ঠানের আগের রাতে ফোন দেন প্রতিমন্ত্রী।
ইমন বলেন, ‘‘আমরা তখন একটা শুটিংয়ের প্রস্তুতিতে ছিলাম। ছবির নাম ‘ব্লাড’। ডিরেক্টর সুমন ভাইসহ (ওয়াজেদ আলী সুমন) আমরা মিটিং করছিলাম। তখন উনি (প্রতিমন্ত্রী) হঠাৎ ফোন দিয়েছেন। তিনি কিন্তু প্রথমেই বলেছেন, ‘তুই ফোন ধরস নাই কেন?’ পরে উনিই আবার ফোন দিয়েছেন। এটা ২০২০ সালের করোনারও আগের ঘটনা। একজন মন্ত্রী বারবার ফোন দিচ্ছেন, আমি কিন্তু বলেছি, ‘হ্যাঁ, ভাই আসতেছি। দেখছি ভাই’। খারাপ কিছু কিন্তু বলিনি। এরমধ্যে কিন্তু অনেক সময় পার হয়ে গেছে। আমি কিন্তু বারবার বলছি, ‘দুই মিনিট ভাইয়া, নামছি’।’’
ইমন কেন মন্ত্রীর কথায় কাউকে নিয়ে যাচ্ছেন অথবা মন্ত্রীকে প্রশ্রয় দিচ্ছেন—এমন অভিযোগ এসেছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলোতে। এর প্রত্যুত্তরে নায়ক বলেন, ‘আমি কি কোনও নায়িকাকে নিয়ে এভাবে যাবো? আপনার কী মনে হয়? এমন কোনও অভিযোগ কেউ আমার বিরুদ্ধে বলতে পারবেন? আমি যে তাকে (মাহি) নিয়ে গেছি, এমন কোনও কথা সেখানে নেই। আমি কিন্তু যাইনি। আমি শুধু সামাল দেওয়ার চেষ্টা করেছি।’
পরদিন কি মন্ত্রী আবারও যোগাযোগ করেছিলেন বা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন—এমন প্রশ্নে ইমন বলেন, “সত্যি বলতে, উনি এত উপরের জায়গায় যে আমি কি উনার সঙ্গে তর্ক-বিতর্কে যেতে পারবো? আর পরদিন ছিল আমাদের মহরত। আমরা ছবির কাজ নিয়ে ব্যস্ত ছিলাম। এরপর উনি আর বিষয়টি নিয়ে তেমন কথা বলেননি। তবে আরও একটা বিষয়, আমাদের মহরত হয়েছিল কিন্তু ২০২০ সালের মার্চের প্রথম সপ্তাহে। এরপরই তো করোনা শনাক্ত হলো (৮ মার্চ)। ঢাকা শহর লকডাউনে গেলো। আমরা কিন্তু যে যার মতো ঘরে ঢুকে গেলাম।’’
ইমন জানান, সেদিনের মিটিং হয়েছিল বনানীর একটি রেস্তোরাঁয়। এরপর রাতে তারা বাসায় চলে যান। মাহি কেমন প্রতিক্রিয়া দিয়েছিল জানতে চাইলে এই নায়ক বলেন, ‘মাহিকে যে এভাবে প্রতিমন্ত্রী গালিগালাজ করেছেন, আমি জানতাম না। মাহির হাতে ফোনটা দিয়ে আমি তখন ডিরেক্টরের সঙ্গে স্ক্রিপ্ট নিয়ে কথা বলছিলাম। প্রতিমন্ত্রীর ফোনটি আমার নম্বরে এলেও আমার সেটে রেকর্ডিং অপশনই নেই। আর মাহিও তো একজন আর্টিস্ট। নিশ্চয়ই তিনি সহজভাবে নিতে পারেননি। বিষয়টি নিয়ে আমার সঙ্গে তিনি ডিসকাস্টডও সেভাবে করেননি। এরপর আমি চেষ্টা করছিলাম, কাজ শেষ করে বাসায় যেতে। মাহিও বাসায় চলে যান।’
ইমন মনে করেন, তথ্য প্রতিমন্ত্রী হিসেবে তিনি যেকোনও আর্টিস্টকে ফোন দিতেই পারেন। কিন্তু এমন আচরণ অগ্রহণযোগ্য। তার দাবি, তিনি পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টা করেছেন মাত্র।
এ দিকে কয়েকদিন আগে এক সিনেমার মহরতে ভরা মজলিশে নায়িকা মৌসুমীকে নিয়ে অশালীন মন্তব্য করেন মুরাদ হাসান। একই অনুষ্ঠানে শাকিব খানের অভিনয় নিয়ে নেতিবাচক কথা বলেন।