মুসাফির নির্মাতার অস্পষ্ট ক্ষোভ
২০১৬ সালে মুক্তি পাওয়া ‘মুসাফির’কে নিয়ে সংবাদমাধ্যমে যথাযথ তথ্য উপস্থাপন না হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন নির্মাতা আশিকুর রহমান। তার তথ্য অনুযায়ী— ‘সব মিলিয়ে মোটামুটি ২ মাসের মাথায় মুসাফিরের মোটামুটি বাজেট উঠে যায়।’ অবশ্য ‘মোটামুটি বাজেট উঠে যায়’-এর অর্থ তিনি স্পষ্ট করেননি। এর মাধ্যমে সাধারণ মানুষ ফ্লপ, অ্যাভারেজ, হিট বা সুপারহিট কোনটা বুঝবে?
টাকার অঙ্কে প্রকাশ না করায় পুরো বিষয়টি ধোয়াশাপূর্ণ। সে সাথে এটাও উল্লেখ করা যায়— নির্মাতারা মুখে মুখে নিজেদের সিনেমা হিট বললেও কেউই স্পষ্টভাবে কত খরচ হলো ও কত টাকা আয় হলো তার হিসেব দেন না। এমনকি সেল রিপোর্ট প্রকাশে সংবাদকর্মীদের শুনতে হয় কটু বাক্য!
আশিকুরের স্ট্যাটাসে আরো উঠে এসেছে মিডিয়া রাজনীতির কারণেও অনেকসময় ‘আলোচিত’ হয়েও অনেকে আলোচনায় থাকেন না। এবার দেখা যাক তিনি কী লিখেছেন—
প্রসঙ্গ :মুসাফিরের ফলাফল
গত কয়েকদিন ফেসবুকে বেশ কয়েকজন অনুরোধ করেছেন, মুসাফিরের চূড়ান্ত ফলাফল সম্পর্কে সবাইকে জানাতে। জুবায়ের ভাই দেশের বাইরে থাকায় ও আমি কিছু কাজে ব্যস্ত থাকায় এই সম্পর্কিত কোন পোস্ট দিতে পারিনি। মুসাফির সম্পর্কে কিছু কথা খোলামেলাভাবে বলতে চাই।
মুসাফিরের পুরো বাজেট ১ কোটির থেকে একটু কম/বেশি। মুসাফিরের টিভি রাইটস, ইউটিউব কনটেন্ট, গান ইত্যাদি থেকে মুল বাজেটের ২০% কাভার হয়েছে, মুসাফির রিলিজের আগেই। মুসাফির মুক্তির প্রথম সপ্তাহে খরচ বাদে মুল বাজেটের ৪৫% কাভার হয়ে যায়। পরবর্তীতে ২,৩,৪ সহ অন্যান্য সপ্তাহের আজ থেকে আরও ৪০% কাভার হয়ে যায়। সব মিলিয়ে মোটামুটি ২ মাসের মাথায় মুসাফিরের মোটামুটি বাজেট উঠে যায়। মুসাফির রিলিজ হয়েছিলো ২২ই এপ্রিল। গত মাসেও মুসাফির বেশ কয়েকটা হলে চলেছে। প্রতি মাসেই ৪-৫ টা হল এ মুসাফির চলে। সামনে আরও কয়েকটা হলে চলার সম্ভাবনা আছে।
উপরের হিসাব-নিকাশ থেকে যেকোনো সাধারণ মানুষ মুসাফিরের অবস্থান সম্পর্কে ধারণা করতে পারবেন আশা করি। বিজনেসের প্রতি আস্থা ও মানি রিকভারির প্ল্যান শক্ত রেখেই আমরা মুসাফির-২ এর ঘোষণা দিয়েছিলাম। খুব শীঘ্রই হয়তোবা কাজ শুরু করবো।
এখন কথা হল, বছরের শেষ দিকে অনেকেই নিজেদের স্বার্থ ঠিক রেখে নিজেদের মত মন্তব্য করেছেন, নিজেদের মত নিজেরা সিনেমার র্যাংঙ্কিং দিয়েছেন। সেটা তাদের ব্যক্তিগত স্বাধীনতা। একটা পত্রিকায় দেখলাম, ২০১৬ সালের আলোচিত নির্মাতার মধ্যে এমন একজনের নাম, যার কোন সিনেমাই মুক্তি পায়নি, তারপরও সে আলোচিত। কী কী কাজ করলে আসলে আলোচিত হওয়া যায় আমি জানি না। জানি না বলেই নিজের ঢোল নিজে বাজিয়ে বলতে পারি না, মুসাফির দর্শকদের মতে বছরের অন্যতম সেরা ছবি হওয়ার পর ও আলোচিত নির্মাতা আমি না কেন, বাণিজ্যিক বাংলা মুভি দেশের গণ্ডি পেরিয়ে বিদেশের মাটিতে এখন যাচ্ছে। আমাদের বানানো মুভি দেশের বাইরে রিলিজ হচ্ছে, বিভিন্ন দেশের ফিল্ম ক্রুরা বাংলা মুভিতে কাজ করছে, তার পর ও আমরা আলোচিত না। দেশের প্রথম মিউজিক্যাল ফিল্ম সেন্সর পেলো, প্রথম ইউটিউবে কোটি ঘর স্পর্শ করা নির্মাতা হয়েও আমি আলোচিত না। ৭ মিলিয়ন ভিউর একটা ভিডিওতে ডিরেক্টর হিসাবে সব কাজ করেও ডিরেক্টরের নাম আমার না। কারণ পার্শ্ববর্তী দেশের কোরিওগ্রাফারের নাম ডিরেক্টর হিসাবে দিলে নাকি আলোচিত বেশি হবে। এই অদ্ভুত আলোচিত হওয়ার পন্থাগুলো আমি আসলেই জানি না। আমার জানার আগ্রহও নেই। কারণ আলোচিত হয়ে নাম কামানো সেলিব্রিটি হতে আমি আসিনি। আমার স্বপ্ন অনেক ভিন্ন, অনেক বড়। রাত দিন চেষ্টা শুধু সেই স্বপ্ন টাকে সত্যি করার। রাস্তা ঘাটে হুট করে যখন অপরিচিত দুই একজন সেলফি তুলে তাদের ভালোবাসার কথা জানায়, মুসাফিরকে ভালো লাগার কথা জানায়, মার্কেটের ভিতর হঠাৎ করে ছুটে আসে মুসাফিরের গানের শব্দ, তখন অন্য কারো রিকগনিশরের দরকার পড়ে না। হলের ভিতর যখন মুসাফিরের ডায়লগ মানুষ বলতে থাকে, মুসাফিরের চরিত্রগুলো কে মানুষ আপন করে নেয়, হাজার দর্শক মুসাফির দেখে, তখন আর আলোচিত হওয়ার দরকার পরে না। অন্যের কাছে নিজের পরীক্ষা দেয়ার দরকার পরে না। দর্শকের ভালোবাসাই সব প্রশ্নের জবাব দিয়ে দেয়। জবাব দিলে আমি নিজের বিবেকের কাছেই দিবো, আর কারো কাছে না।
অচিরেই বক্স অফিশ দরকার ।