Select Page

মৃত্যুর পাঁচ দিন আগে দর্শক শোনে, ‘আজিমপুর যাওয়ার রাস্তাটা কোনদিকে?’

মৃত্যুর পাঁচ দিন আগে দর্শক শোনে, ‘আজিমপুর যাওয়ার রাস্তাটা কোনদিকে?’

কোন পরিচিত কাউকে মৃত্যুর আগে যদি আপনি দেখেন, তিনি আজিমপুর যাওয়ার রাস্তা খুঁজছেন; আর ঠিক দুদিন পর আজিমপুরের গোরস্থানে সেই ব্যক্তিটিকে কবর দেওয়া হয়েছে তখন আপনার কেমন লাগবে বলুন তো?

‘এই যে ভাই, আজিমপুর যাওয়ার রাস্তাটা কোন দিকে বলে দেবেন? আমার বড় ভাই আজিমপুর থাকে।’

… এভাবেই আজিমপুর যাওয়ার রাস্তা খুঁজছিলেন মডার্ন হিরো-খ্যাত জাফর ইকবাল আর ঠিক ৫ দিন পরেই তিনি চিরদিনের জন্য আজিমপুর গোরস্থানে শায়িত হলেন।

এর ৫ দিন আগে ৩ জানুয়ারি ১৯৯২ সালে সারা দেশে মুক্তি পেয়েছিল ‘লক্ষ্মীর সংসার’। বাংলাদেশের হাজার হাজার সিনেমাপ্রেমী দর্শকেরা পর্দায় দেখলেন তাদের প্রিয় নায়ক জাফর ইকবাল আজিমপুর যাওয়ার রাস্তা খুঁজছেন। আর ৫ দিন পরই চিরদিনের জন্য আজিমপুর গোরস্থানে শায়িত হলেন তখন প্রতিটি দর্শকদের হৃদয় কষ্টে দুমড়ে মুচড়ে গিয়েছিল।

চলচ্চিত্রটি পরিচালনা করেন মাস্টারমেকার এ জে মিন্টুর ছাত্র মনোয়ার খোকন, তার প্রথম মুক্তিপ্রাপ্ত চলচ্চিত্র এটি।

শুরুর দিকে মনোয়ার খোকন নিজেকে মোহাম্মদ মনোয়ার হোসেন নামে পরিচিত করেন, পরে তিনি সংক্ষেপে মনোয়ার খোকন নামেই পরিচিত হয়েছিলেন।

‘লক্ষ্মীর সংসার’-এর আরেকটি বিশেষত্ব হলো তৎকালীন সময়ের চলচ্চিত্রের সেরা তিন খলনায়ক হ‌ুমায়ূন ফরীদি, রাজীব ও আহমেদ শরীফ সর্বপ্রথম একই চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছিলেন।

মোতালেব হোসেনের লেখা কাহিনি ছিল পারিবারিক সেন্টিমেন্টের জমজমাট একটি গল্প, যা মুক্তির পরপরেই সিলেটের নন্দিতা সিনেমা হলে উপভোগ করেছিলাম। প্রযোজনাও করেছিলেন মোতালেব হোসেন তার মেরিনা মুভিজের ব্যানারে। এই ছবিটি চিরসবুজ নায়ক জাফর ইকবালের জীবিতাবস্থায় শেষ মুক্তিপ্রাপ্ত ছবি।

জাফর ইকবালের মৃত্যু সংবাদের পর ছবিটি দেখার জন্য দর্শকদের চাহিদা দ্বিগুণ বেড়ে গিয়েছিল।

একই দিন মুক্তি পেয়েছিল শিবলী সাদিকের ‘মা মাটি দেশ’, যেখানে অভিনয় করেছিলেন ইলিয়াস কাঞ্চন, চম্পা, রুবেল, রোজী আফসারী, রাজীবের মতো তারকারা। ওই দিন থেকে সিলেটের নন্দিতা সিনেমা হলে ‘লক্ষ্মীর সংসার’ ও মনিকা সিনেমা হলে ‘মা মাটি দেশ’ প্রদর্শিত হতে লাগলো। তাহলে বুঝুন দর্শকদের অবস্থাটা কেমন হয়েছিল তখন? দর্শক কোনটা রেখে কোনটা আগে দেখবে সেটা নিয়েই মধুর সমস্যায় পড়ে যেতো।

দুটো চলচ্চিত্রই ব্যবসাসফল হয়েছিল; কারণ তখনকার সিনেমা দর্শকেরা বাংলাদেশের সিনেমার পাগল ছিল যা আজ শুধুই ‘ঠাকুরমার ঝুলি’র কল্পকাহিনির মতো হয়ে গেছে, নিজের চোখে না দেখলে অবিশ্বাস্য লাগে।


Leave a reply