Select Page

যাদের নিয়ে পরামর্শক ও অনুদান কমিটির পুনর্গঠন চান মোস্তফা সরয়ার ফারুকী

যাদের নিয়ে পরামর্শক ও অনুদান কমিটির পুনর্গঠন চান মোস্তফা সরয়ার ফারুকী

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা ভারত পালিয়ে যাওয়ার পর দেশে বিভিন্ন ক্ষেত্রে সংস্কার চলছে। সে হিসেবে পুনর্গঠন হয়েছে চলচ্চিত্র বিষয়ক একাধিক কমিটি। সেখানে বাদ পড়েছেন আওয়ামী লীগ সরকারের ঘনিষ্ট ব্যক্তিরা। অবশ্য কেউ কেউ যে আপত্তির মুখে পড়েননি এমন না। সম্প্রতি প্রায় সবগুলো কমিটি পুনর্গঠনের পর কিছু বিষয়ে আপত্তি জানালেন নির্মাতা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী।

এর মধ্যে নির্দিষ্ট কমিটি নিয়ে তার আপত্তি প্রবল। সেখানে কিছু ব্যক্তিকে যোগ করে পুনর্গঠনের প্রস্তাব দেন। যার মধ্যে অনেকেই দুই-একটি সিনেমা নির্মাণ করলেও মূলত বিজ্ঞাপন জগতের নামি মুখ। আওয়ামী লীগ সরকারের প্রচারণামূলক নানা কর্মসূচিতে তাদের উল্লেখযোগ্য ভূমিকা ছিল। তবে তাদের কমিটিতে রাখার পক্ষে ‘পিঁপড়াবিদ্যা’ নির্মাতার যুক্তিও রয়েছে।

মোস্তফা সরয়ার ফারুকী ফেসবুকে লেখেন, ‘চলচ্চিত্র বিষয়ক যতগুলো কমিটি হয়েছে তার মধ্যে পরামর্শক কমিটিই আমার বিবেচনায় সবচেয়ে ভালো হয়েছে। বাকী কমিটিগুলোতে যোগ্য লোক যেমন আছে, কিছু বিস্ময়কর নামও আছে। এই সমালোচনাটা করে রাখা দরকার যাতে সরকার বুঝতে পারে। নাহলে আগের আমলের মতো “কর্তা যা করেছেন মাইরি” সিচুয়েশন বানিয়ে ফেলবো আমরা।

আমার বিবেচনায় এখানে আরো কিছু অংশীজন থাকা উচিত ছিলো। যেমন ফাহমিদুল হক, বিধান রিবেরু, অমিতাভ রেজা চৌধুরী, মেজবাউর রহমান সুমন, নুহাশ হুমায়ুন। স্বচ্ছতার জন্য বলে নেয়া ভালো আমাকে অনুরোধ করা হয়েছিলো পরামর্শক এবং আরেকটা কমিটিতে থাকার জন্য। আমি ব্যক্তিগত কারণে থাকতে চাইনি। এখন যাদের নাম উল্লেখ করলাম তারা থাকতে অপারগতা জানিয়েছে কিনা আমি জানিনা।

আমার বক্তব্য থাকবে- এই পরামর্শক কমিটি থেকে পরামর্শ যা যাবে তা যেনো অংশীজনরাই তৈরি করে দেন। সরকারী কর্মকর্তারা কেবল এক্সিকিউশনের দিকটা দেখা উচিত। নীতি প্রণয়নে তারা হাত না দেয়াই ভালো হবে কারন তারাতো আমাদের সমস্যা এবং প্রয়োজনটা জানেন না।’

চলচ্চিত্র ও শিল্পকলা নিয়ে প্রথম আলোর একটি প্রতিবেদন উল্লেখ করে এ নির্মাতা বলেন, ‘রেভিনিউ শেয়ার এবং ই-টিকেট নিয়ে কথা বলেছি। ফলে ওটা রিপিট করছিনা এখানে। এখানে আরেকটা কথা যোগ করতে চাই। শিল্পকলা একাডেমীর জমি আছে মোটামুটি দেশ জুড়েই। কমপক্ষে ৩০ জেলায় শিল্পকলার জায়গায় মাল্টিপ্লেক্স করে সেটা দরপত্রের ভিত্তিতে প্রাইভেট ব্যবস্থাপনায় ছেড়ে দেয়া যেতে পারে। যেহেতু আমাদের জাতিগত দুর্নাম “আমরা শুরু করি, অব্যাহত রাখি না”, সেহেতু এই সব মাল্টিপ্লেক্সকে মনিটরিংয়ে রাখতে হবে এর মেইনটেনেন্স ঠিকঠাক হচ্ছে কিনা। না হলে লিজ বাতিলের শর্ত থাকতে হবে। এখন ঝামেলা হলো শিল্পকলা সংস্কৃতি মন্ত্রনালয়ের অধীন। আর সিনেমা-টিভি-ওটিটি তথ্য ও সম্প্রচারে। এই দুই মন্ত্রনালয়ের সমন্বয় করে হলেও এটা করা দরকার।‘

অনুদান ও অন্য সহযোগিতামূলক কার্যকর সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলোর একটা হচ্ছে ফিল্ম ফান্ড এবং সাপোর্ট সিস্টেম। আমাদের সামনে বুসান, সানড্যান্স, বার্লিন, রটারডাম, ফিল্মবাজার স্ক্রিন রাইটার্স ল্যাবের উদাহরন আছে। আমি মনে করি পরামর্শক কমিটির উচিত অনুদান প্রথাতে আমূল পরিবর্তন আনা। ৫০ ভাগ ছবি ফার্স্ট এন্ড সেকেন্ড টাইম ফিল্মমেকারদের জন্য বরাদ্দ থাকা উচিত। এই ৫০ ভাগের মাঝে কমপক্ষে অর্ধেক নারী ফিল্মমেকারদের জন্য থাকা উচিত। তো এই নতুন পরিচালকদের স্রেফ ফান্ড দিয়েই হাত গুটিয়ে ফেলা যাবে না। স্ক্রিন ল্যাবের মতো ইনকিউবিটরে লোকাল এবং ইন্টারন্যাশনাল মেন্টর দিয়ে এদের সহায়তা করতে হবে।

পাশাপাশি আমাদের অনুদান পলিসি নিয়ে সিরিয়াসলি ভাবা উচিত। আমরা কোন ধরনের ছবিকে অনুদান দিবো? ইরানের মতো সোশ্যালি রিলেভ্যান্ট এবং ইমপ্যাক্টফুল স্টোরিটোলিং? নাকি কোলকাতা আর্টহাউজের দুর্বল ফটোকপি? নাকি বেলা তারের মতো ছবি? আমার বিবেচনা হচ্ছে আমাদের এখানকার মানুষ, তাদের সম্পর্ক, আবেগ, পাগলামো এসব মিলিয়ে আমাদের আশেপাশে নিজস্ব গল্প এবং চরিত্রেরা হেঁটে বেড়াচ্ছে। এইসব নিয়ে সোশ্যালি রিলেভ্যান্ট ছবির সংখ্যা বাড়লেই আমরা সত্যিকারের বাংলাদেশী নিউ ওয়েভ হতে পারবো।

আবার অন্য একটা প্রসঙ্গও আছে। লাতিন আমেরিকার স্বৈরশাসন এবং দুঃশাসন আপনি খুঁজে পাবেন তাদের সাহিত্যে-সিনেমায়। আমাদের গত ১৬ বছরের ফ্যাসিবাদের কাল তুলে ধরার কাজে এই অনুদান কাজে লাগানো যায় কিনা দেখতে হবে। তবে আওয়ামী যুগের মতো শ্লোগান সর্বস্ব যেনো না হয় খেয়াল রাখতে হবে।

একই সাথে পরামর্শক কমিটির উচিত অনুদান কমিটি পূনর্গঠন করা। নতুন পলিসির আলোকে যারা এটা এক্সিকিউট করতে পারবে তাদের রাখা উচিত। দেখেন ব্যক্তি খুব গুরুত্বপূর্ণ।

এখন যে অনুদান কমিটি করা হয়েছে সেখানে এক দুই জন যোগ্য লোক থাকলেও এটা অনেকটাই আওয়ামী লীগ আমলের মতোই ব্যাকডেটেড কমিটি। আর এই কমিটির কে কিভাবে ফ্যাসিবাদের কালচারাল উইংয়ের ফুটসোলজার ছিলো সেই আলাপে গেলাম না।

আমি মনে করি এই কমিটিতে থাকা উচিত ছিলো তাদের যাদের সারা দুনিয়ায় এই কাজগুলো কিভাবে হচ্ছে সেটার ফার্স্ট হ্যান্ড অভিজ্ঞতা আছে। বিদ্যমান কমিটির যোগ্য দুয়েকজনের পাশাপাশি আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ সাদ, নুহাশ হুমায়ুন, আরিফুর রহমান, তানভীর হোসেন, সালেহ সোবহান অনীম, আদনান আল রাজীব, কামার আহমেদ সায়মন, হোমায়রা বিলকিস এদের মধ্য থেকে কেউ কেউ থাকলে আমরা একটা ফরওয়ার্ড লুকিং ভিশন পেতাম।

অনেকে ভাবতে পারেন আমি ব্যক্তির উপর কেনো গুরুত্ব দিচ্ছি। দিচ্ছি কারণ ব্যক্তির কারণেই আকাশ পাতাল পার্থক্য রচিত হয়। মোহাম্মদ আযম আর মিডিওকার কোনো রাম-শ্যাম এক জিনিস না। সৈয়দ জামিল আহমেদ আর লাকী এক জিনিস না।’

২ অক্টোবর তথ্য মন্ত্রণালয়ের উপসচিব সাইফুল ইসলামের স্বাক্ষরে এক প্রজ্ঞাপনে জাতীয় পরামর্শক কমিটির ২৩ জন সদস্যের তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে। এর মধ্যে সভাপতি হিসেবে আছেন তথ্য উপদেষ্টা এবং সদস্য সচিব হিসেবে আছেন অতিরিক্ত সচিব (চলচ্চিত্র), তথ্য মন্ত্রণালয়।

কমিটিতে সদস্য হিসেবে আছেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সচিব, শিল্প মন্ত্রণালয় সচিব, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সচিব, সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয় সচিব, আইন ও বিচার বিভাগ সচিব, লেজিসলেটিভ ও সংসদ বিষয়ক বিভাগ সচিব, এফডিসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক, চলচ্চিত্র ও টেলিভিশন ইনস্টিটিউটের প্রধান নির্বাহী, ফিল্ম আর্কাইভের মহাপরিচালক, সার্টিফিকেশন বোর্ডের ভাইস চেয়ারম্যান। এছাড়া এফবিসিসিআই, চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতি, প্রযোজক ও পরিবেশক সমিতি, প্রদর্শক সমিতির একজন করে সদস্য থাকবে।

নিজ পরিচয়ে সদস্য হিসেবে আরও যারা থাকছেন তারা হলেন, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক আল মামুন, চলচ্চিত্র নির্মাতা ও প্রযোজক আরিফুর রহমান, চলচ্চিত্র নির্মাতা ও প্রযোজক তানিম নূর, বঙ্গ অ্যাপের চিফ কনটেন্ট অফিসার মুশফিকুর রহমান, সাংবাদিক ও চলচ্চিত্র সমালোচক সাদিয়া খালিদ ঋতি, চলচ্চিত্র সংসদ কর্মী, সমালোচক ও নির্মাতা আহমেদ সালেকীন।

এছাড়া তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মো. নাহিদ ইসলামকে সভাপতি করে মোট ১০ জন সদস্যকে নিয়ে পুনর্গঠিত হয়েছে পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র অনুদান কমিটিসহ এ বিষয়ে একাধিক কমিটি।

৭ অক্টোবর তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের উপসচিব মো. সাইফুল ইসলাম স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনে জানানো হয় পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র অনুদান কমিটির সদস্য সচিব হিসেবে আছেন তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (চলচ্চিত্র)।

কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন- তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের সচিব, বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নায়ন কর্পোরেশনের (বিএফডিসি) ব্যবস্থাপনা পরিচালক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের থিয়েটার এন্ড পারফরম্যান্স স্টাডিস বিভাগের শিক্ষক ও অভিনেতা-নির্দেশক ড. আবুল বাশার মো. জিয়াউল হক (তিতাস জিয়া), চলচ্চিত্র নির্মাতা ও প্রযোজক খান শারফুদ্দীন মোহাম্মদ আকরাম (আকরাম খান), চলচ্চিত্র নির্মাতা ও চিত্রনাট্যকার নার্গিস আখতার, রেইনবো চলচ্চিত্র সংসদের সভাপতি আহমেদ মুজতবা জামাল, নির্মাতা ও সম্পাদক সামির আহমেদ, অভিনেত্রী জাকিয়া বারী মম।


মন্তব্য করুন