Select Page

চরিত্রের প্রাণ শাবনূর

চরিত্রের প্রাণ শাবনূর

শাবনূর বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের গর্বিত একটি নাম। যে অভিনয়শিল্পীদের নিয়ে বাংলাদেশের চলচ্চিত্র অনায়াসে গর্ব করতে পারে তাদের একজন শাবনূর। শাবনূরের ছবির মধ্যে ক্যারেক্টারাইজেশন নিয়ে আজকের এ আয়োজন।

শাবনূরের ছবির ভেরিয়েশন অনেক এবং তার ক্যারেক্টারাইজেশনও অনেক বেশি স্ট্রং। সহজাত বাই বর্ন অ্যাকটিং এর গুণ তাঁর মধ্যে থাকায় ছবির ক্যারেক্টারকে একটা লাইভ ফিল দিয়েই পর্দায় অভিনয় করত শাবনূর। তাঁর ছবি বিশেষ করে সিনেমাহলে যারা উপভোগ করেছে তারা এই লাইভ ফিলটি খুব ভালোভাবে পেয়ছে। তো শুরু করা যাক ক্যারেক্টারাইজেশন অফ শাবনূর…

শাবনূরের ছবি আগাগোড়া সবই কমার্শিয়াল। পুরোদস্তুর নাচে-গানে-ড্রামায় ভরপুর কমার্শিয়াল ছবির পাশাপাশি সাহিত্যভিত্তিক বা অন্য রকমের যাই বলি না কেন কমার্শিয়াল ধারাতেই নির্মিত হয়েছে। শাবনূরকেন্দ্রিক আবহ ছিল তাঁর ক্যারেক্টারাইজেশনে।

রোমান্টিক বা রোমান্টিক ড্রামার কথা বললে শাবনূরের জুটি যাদের সাথে হয়েছে যেমন সালমান শাহ, রিয়াজ, আমিন খান, অমিত হাসান, বাপ্পারাজ, ওমর সানী, শাকিল খান, ফেরদৌস, শাকিব খান তাদের সাথে শাবনূরের ছবিগুলো রোমান্টিক ড্রামায় ভরপুর। সালমান শাহর সাথে ১৪টি ছবির মধ্যে রোমান্টিক ড্রামায় ‘তোমাকে চাই, তুমি আমার, চাওয়া থেকে পাওয়া’ ছবিগুলো অসাধারণ। কমার্শিয়াল ছবির নায়িকার যে গুণগুলো থাকলে পর্দায় আকর্ষণ বিরাজ করে এ ছবিগুলোতে ছিল।

‘তোমাকে চাই’ ছবিতে সালমান শাহর সাথে শাবনূরের প্রেমের শুরুর দিকটা যেমন দারুণ রোমান্টিক তেমনি শাবনূরকে পাওয়ার জন্য সালমানের বাস্তবতার সাথে লড়াই করার সময় শাবনূর প্রেরণা হয়ে ওঠে। সালমানের রোজগারের টাকায় কেনা মালা যখন শাবনূর পরে সেই অনুভূতি অনস্ক্রিনে দেখানোর যে অভিনয় শাবনূরের সেটার কোনো তুলনা হয় না। ‘তুমি আমার’ ছবিতে ঠিক এর বিপরীত ছিল। শাবনূর জেদী হয়ে ওঠে তাই সালমানের জন্য শাবনূরকে জয় করার স্পৃহা আরো বেড়ে যায়। জেদী মেয়ের ভূমিকায় শাবনূরের অভিনয় অনবদ্য।

রিয়াজের সাথে শাবনূরের এ ধরনের ছবি বেশি। ‘পৃথিবী তোমার আমার, নিঃশ্বাসে তুমি বিশ্বাসে তুমি, স্বপ্নের বাসর, স্বপ্নের পুরুষ, আমি তোমারি, মিলন হবে কত দিনে, নারীর মন, বিয়ের ফুল, মাটির ফুল, মন, স্বপ্নের ভালোবাসা, কাজের মেয়ে, প্রেমের তাজমহল, ও প্রিয়া তুমি কোথায়’ ছবিগুলোতে শাবনূরের ক্যারেক্টারাইজেশন দেখার মতো। ‘পৃথিবী তোমার আমার’ ছবিতে রিয়াজ যখন বাড়ির বাইরে আর পারিবারিক সিদ্ধান্তে রিয়াজের সাথে তার দেখা হওয়া বন্ধ। ছবির একটা সিকোয়েন্সে শাবনূর রিয়াজের খবর নিতে যায়। রিয়াজের বাবা রাজ্জাক তখন পেপার পড়ছিলেন শাবনূরকে তিনি দেখেননি। রাজ্জাকের কিছু কথায় শাবনূর কেঁদে ফেলে। রিয়াজের মা ডলি জহুর আসে আর রিয়াজের কথা জানায়। শাবনূরের তখন জবাব-’ও তো ভালো আছে ব্যাস আর কিছু চাই না আমি।’ কথাটা বলার সময় তার কান্নাজড়িত অভিনয় বাস্তবের প্রেমিকার একটা ফিলিং দেয়। ‘নারীর মন’ খুব ডিপ ক্যারেক্টার ছিল শাবনূরের জন্য। স্পেশালি ছবির শেষ সিকোয়েন্সে শাবনূরের অভিনয় বাহবা পাবে। ‘মিলন হবে কত দিনে’ ছবিতে নিঃসঙ্গ একটি মেয়ের চরিত্রে শাবনূর অনবদ্য। বিশেষ করে রিয়াজ যখন শাবনূরের কষ্ট বোঝার জন্য পাঁচিল টপকে তার সাথে দেখা করতে যায় ঐ সিকোয়েন্সে শাবনূরের অভিনয় সেরা ছিল। ‘স্বপ্নের পুরুষ’ কিছুটা ভিন্ন রিয়াজের সাথে। আদিবাসী সংস্কৃতির সাথে রিয়াজের সাথে তার বিয়ের অংশগুলো দারুণ ছিল। শাবনূর আদিবাসী মেকআপেও মিশে গিয়েছিল। ‘কাজের মেয়ে’ ছবিতে সহজাত চটপটে অভিনয়ের একটা বিশেষত্ব ছিল। শাকিল খান মূলত ত্রিভুজ প্রেমের ছবিগুলোতে শাবনূরের নায়ক থাকায় সেগুলোর আলোচনা এককভাবে হবে না। তবে তার সাথে ‘বিয়ের ফুল’ ছবিতে শাবনূরের ‘তোমায় দেখলে মনে হয়, ঘুমিয়ে থাকো গো সজনী, ঐ চাঁদ মুখে যেন লাগে না গ্রহণ’ গানগুলোতে শাবনূরের রসায়ন অনবদ্য। স্পেশালি ‘তোমায় দেখলে মনে হয়’ গানের শুরুতে শাবনূরের এন্ট্রি এবং গানের শেষে শাকিলকে ব্যতিক্রমীভাবে জানিয়ে দেয়া তার ভালোবাসার কথা অসাধারণ অভিনয়ে দেখিয়েছে। ‘সবার অজান্তে’ ছবিটিতেও ‘চোখে যার কাজল নেই’ গানটিতে শাবনূরের রূপ বর্ণনায় অভিনয় অসাধারণ।

আমিন খানের সাথে ‘হৃদয় আমার, ফুল নেবো না অশ্রু নেবো, হৃদয়ের বন্ধন’ ছবিগুলো উল্লেখযোগ্য। ‘হৃদয় আমার’-কে ইনোসেন্ট লাভ স্টোরি বলাই ভালো। বড়বেলার শাবনূর যখন পরিচিত জায়গায় ছোটবেলার খেলার সাথী আমিন খানকে খোঁজার জন্য যায় পাহাড়ির গায়ে ‘স্বর্ণালী’ লেখা দেখে আপ্লুত হয় এবং তার চেনা সুরে ডাকতে থাকে সাথীকে। আমিন খান চলে আসে ছুটে। ঐ সিকোয়েন্সে শাবনূর জাস্ট ইনোসেন্ট একটি মেয়ে ছিল যার মনে গভীর প্রেম। ‘হৃদয়ের বন্ধন’-এ ‘বধূ বেশে কন্যা যখন এলোরে’ গানে শাবনূরের চরিত্রচিত্রণে বাঙালি মেয়েদের একটা প্রতিনিধিত্ব ছিল। প্রতিটি মেয়ে বাবার বাড়ি ছেড়ে স্বামীর বাড়ি চলে যাওয়ার যে চিরন্তন নিয়ম সেটিকে শাবনূরের চরিত্রে ফিল করতে পারে।

অমিত হাসানের সাথে ‘তুমি শুধু তুমি, রঙিন উজান ভাটি, শেষ ঠিকানা’ ছবিগুলো উল্লেখযোগ্য। সঙ্গত কারণেই এ ছবিগুলোতে শাবনূরের চরিত্র ও অভিনয় অমিতের থেকে বহুগুণ স্ট্রং কারণ অমিতের অভিনয় শাবনূরের মতো স্ট্রং ছিল না।

বাপ্পারাজের সাথে ত্রিভুজ প্রেমের ছবিগুলোতে বাপ্পারাজের একপাক্ষিক প্রেমের কারণে শাবনূরের চরিত্রের গুরুত্ব বেড়ে গিয়েছিল কারণ টানাপড়েনটা তাকে ঘিরেই থাকত বাপ্পার। এ জুটির সেরা গান ‘আমি তো একদিন চলে যাব’-তে বাপ্পারাজের বিরহের অভিনয় শাবনূরের জন্যই পূর্ণতা পায়।

ফেরদৌসের সাথের ছবিগুলোতেও শাবনূরের আধিপত্য বেশি ছিল। শাকিব খানের সাথে প্রথমদিকের ত্রিভুজ প্রেমের ছবি বাদে ‘কঠিন প্রেম’ উল্লেখ করার মতো ছবি। এ ছবিতে শাকিবের সাথে প্রেমের অভিনয় করা প্রতিশোধপরায়ণ শাবনূর ভয়ঙ্কর ছিল। শাকিবকে ছুরি মারার সময়টাতে শাবনূরের অভিনয় দুর্দান্ত ছিল। ‘আমার স্বপ্ন তুমি’ এ জুটির বেস্ট ছবি এবং শাবনূরের প্রথমদিকের ছেলেমানুষি এবং পরেরদিকের বদলে যাওয়া অভিনয় দারুণ।

ওমর সানী-র সাথে ‘রঙিন নয়নমনি, মধুর মিলন’ রোমান্টিক ড্রামায় উল্লেখযোগ্য। ‘মধুর মিলন’ ছবিটি একটু আলাদা থাকবে, এ ছবিতে শাবনূরের সৌন্দর্য ভিন্নভাবে ধরা পড়েছে। কস্টিউমের মধ্যেও রাজসিক একটা ব্যাপার ছিল আর চরিত্রটিও ভীষণ রোমান্টিক।

রোমান্টিক ফোকের মধ্যে প্রথমদিকের ‘প্রেম’ ছবিটি অত্যন্ত চমৎকার। ‘কে তুমি বাঁশরিয়া’ গানটিতে শাবনূরের হেয়ার স্টাইল, কস্টিউম, অভিনয় চোখে পড়ার মতো। প্রথম ছবি ‘চাঁদনী রাতে’-ও নায়ক সাব্বিরের দুর্বল অভিনয়ের বিপরীতে শাবনূর লম্বা ক্যারিয়ারের আভাস দিয়ে অভিনয় করেছে। ‘কথা যদি শুরু করি’ গানে তার পারফরম্যান্স অসাধারণ ছিল।

ট্র্যাজেডির ক্যারেক্টারাইজেশন শাবনূরের ক্যারিয়ারে বিশেষ কিছু ছিল। ‘আনন্দ অশ্রু, প্রেম পিয়াসী, কে অপরাধী, ভালোবাসা কারে কয়, শেষ ঠিকানা’ অসাধারণ সব ছবি। ‘আনন্দ অশ্রু’ বেস্ট ট্র্যাজেডিতে। সালমান শাহ-শাবনূরের প্রেমের করুণ পরিণতিতে ছবির গল্প। শাবনূরের প্রথমদিকের চপলতা এবং শেষেরদিকের ট্রাজিক বাস্তবতা ছবিতে তার চরিত্রকে পূর্ণতা দিয়েছিল। কাঞ্চির শেষ সংলাপে শাবনূরের কথা উঠে আসে-’বলিসনি কেন হতভাগী, তুই খসরুর দোলা!’ ‘তুমি মোর জীবনের ভাবনা’ গানে সালমান শাহ-র ডামির সাথে শাবনূরের মিশে গিয়ে অভিনয় করা সালমানের অভাব পূরণ করেছিল গানে কারণ গান শ্যুটের আগেই সালমান চলে গিয়েছিল আমাদের ছেড়ে। ‘প্রেম পিয়াসী’ ছবিতেও মর্মান্তিক বাস্তবতা থাকে প্রেম ও ধর্মের করুণ পরিণতিতে।

‘কে অপরাধী’ ছবিতে শাবনূরের করুণ পরিণতিতেই ওমর সানীর নতুন পরিচয় গড়ে ওঠে এবং তারও করুণ পরিণতি ঘটে। ‘ভালোবাসা কারে কয়’ ছবির শেষ সিকোয়েন্সটি ছিল চোখ ভিজিয়ে দেয়ার মতো। গুলিবিদ্ধ রিয়াজ, শাবনূর হাসপাতালের বেডে। রক্ত দেয়ার সময় শাবনূরের সাথে কথা বলতে বলতে রিয়াজ মারা যায়। শাবনূর বিস্মিত হয় কী ঘটল তার সামনে বিশ্বাস করতে না পেরে। এরপর শাবনূর নিজের জীবনটিও আর রাখতে চায় না, খুলে দেয় রক্তের লাইন। অভিনয় তখন অসাধারণ।

ফ্যামিলি ড্রামায় শাবনূরের অংশগ্রহণ দুর্দান্ত। সালমান শাহ-র সাথে ‘জীবন সংসার, সুজন সখি, স্বপ্নের পৃথিবী, মহামিলন, বিচার হবে’ ছবিগুলো উল্লেখযোগ্য। ‘জীবন সংসার’ ছবিতে বড়বোন ববিতার সাথে তার প্রথম সাক্ষাতে শাবনূর জানত না যে ববিতা তার বোন কিন্তু ববিতা জানত। ছোটবোন শাবনূরকে ববিতা অনেক আদর করে। শাবনূরের তখনকার ছোটবোনের সরল, শ্রদ্ধাপূর্ণ অভিনয় মনে দাগ কাটে। ‘সুজন সখি’ তো খুবই উল্লেখযোগ্য। ‘সখি’ চরিত্রে হালকা পাতলা গড়নের শাবনূর গ্রামীণ পরিবেশে সুজনের সাথে প্রেমের যে সামাজিক বাধা তাকে জয় করে। সালমানের ‘কথায় বলে গাছের ব্যাল পাকিলে তাতে কাকের কি’ এ গানটিতে আড়াল থেকে শাবনূরের মুচকি হাসি ও সুজনের প্রতি ভালো লাগার অনুভূতি প্রকাশে অসাধারণ এবং ছবির সেরা গান ‘সব সখিরে পার করিতে’-র অভিনয়েও দারুণ।

রিয়াজের বিপরীতে ‘ভালোবাসি তোমাকে’ সেরা ফ্যামিলি ড্রামা এবং ‘মন মানে না’ ছবিতেও খুব হৃদয়গ্রাহী। রিয়াজের ভাবী মুনীরা ইউসুফ মেমীর মৃত্যুর পর তার সন্তানকে কোলে তুলে নেয় শাবনূর। মাতৃত্বের একটা অনুভূতি যেন অবুঝ শিশুটিকে দেখে জেগে ওঠে শাবনূরের।

ফেরদৌসের সাথে ‘ঘরজামাই’ ছবিটি মজার। এ ছবিতে শাবনূরকে যখন ফেরদৌস জোর করে বাপের বাড়ি থেকে নিয়ে যায় তাকে বশে আনার জন্য শাবনূর যেতে চায় না কিন্তু পরিবেশ-পরিস্থিতির কারণে তার মনোজগতে পরিবর্তন আসে। শেষের দিকে তার ভাই শহীদুল আলম সাচ্চু যখন জোর করে তাকে স্বামীর বাড়ি থেকে নিয়ে যেতে চায় এবং ফেরদৌস বাধা দিলে লাশ পড়ে যাবে বলে তখন শাবনূরের জবাব ছিল চমৎকার-’তুমি আমার ঘর ভাঙতে চাও? যারে স্বামী বইলা মানছি পরান থাকতে তারে ছাড়া যামু না।’

মান্নার বিপরীতে ‘স্বামী স্ত্রীর যুদ্ধ’-তে শাবনূরের অভিনয় ছিল সেয়ানে সেয়ানে টক্কর। ‘ভাইয়া’ ছবিতে বোবা মান্নার বিপরীতে শাবনূরের গান ‘তুমি যার ছবি এঁকেছ’ অসাধারণ। ‘চার সতীনের ঘর’ এক্ষেত্রে বিশেষ পারফরম্যান্সের ছবি।

নারী জাগরণের চরিত্রে শাবনূর অসাধারণত্ব দেখিয়েছে ‘দুই নয়নের আলো, বস্তির মেয়ে, মোল্লাবাড়ির বউ, বউ শ্বাশুড়ির যুদ্ধ, ফুলের মতো বউ, মৌমাছি’ ছবিগুলোতে। নিঃসন্দেহে ‘দুই নয়নের আলো’ সেরা এ ক্যাটাগরিতে। মাস্টারপিস ছবি। শাবনূরকে কেন্দ্র করে ছবির সবকিছুই এগিয়েছে। ছবির তিন নায়কের তিন ধরনের ভূমিকাও শাবনূরকে ঘিরে আবর্তিত। ছবির টাইটেল ট্র্যাকে গানের কথাতে ‘তুমি খু্ব সাধারণ একটি মেয়ে’ এ কথার ভেতরেই সাধারণ একটি মেয়ের চরিত্রকে বাঙালি মেয়ের চিরন্তন বৈশিষ্ট্যে সেন্টিমেন্ট যোগ করে তুলে ধরা হয়েছে। শাবনূর তাঁর ন্যাচারাল অভিনয়ে সেন্টিমেন্টকে পূর্ণতা দিয়েছে। প্রথমত মা-বাবা-ভাই-বোনকে ঘিরে তার স্বাভাবিক একটি মেয়ের অভিনয় তারপর ফেরদৌসের স্ত্রীর চরিত্রে অভিনয় করার সময় ভিন্ন একটি ভূমিকা আবার শেষের দিকে ফেরদৌসের ভালোবাসার মানুষ হয়ে ওঠার সময় অন্যরকম ভূমিকা। তিন ভূমিকাতেই শাবনূর অসাধারণ ছিল। ছবির শেষে ভালোবাসার মানুষকে ‘তুমি’ বলার যে দাবি করে ফেরদৌস সেখানেও খুব সাদামাটা করে ‘তুমি’ বলে শাবনূর। এভাবে সাধারণ একটি মেয়ের অসাধারণ হয়ে ওঠার অভিনয় ছিল সেরা এ ছবিতে। নারীর জাগরণের পারিবারিক আবহ এবং পুরুষের অপরিহার্য হয়ে ওঠার মেসেজ ছিল শাবনূরের চরিত্রটি।

‘মোল্লাবাড়ির বউ’ ছবিতে মৌসুমীর অবহেলিত, নির্যাতিত চরিত্রের বিপরীতে প্রতিবাদী চরিত্রে শাবনূর ছিল ছবির চমক। একদিকে এটিএম শামসুজ্জামান অন্যদিকে রিয়াজ দুইদিকে ছিল তার কর্তৃত্ব। হাস্যরসে ভরিয়ে রাখার পরও শেষের দিকে রিয়াজকে সতীন মৌসুমীর জন্য বলা শাবনূরের সংলাপ-’বুবু চিরকাল তোমার ভালোবাসার কাঙাল, তুমি তারে বুক ভইরা ভালোবাইসো’ অসাধারণ।

‘বউ শ্বাশুড়ির যুদ্ধ’ ছবিতে চিরন্তন দ্বান্দ্বিক সম্পর্কে বউ ও শ্বাশুড়ির প্রতিদ্বন্দ্বিতায় শাবনূর রীনা খানের বিরুদ্ধে ছিল একটা প্রতিবাদ। এ প্রতিবাদ বউ শ্বাশুড়ির সম্পর্কে জটিল নয় বরং শ্রদ্ধাপূর্ণ করতেই মেসেজ দিয়েছে শাবনূর। ‘বস্তির মেয়ে’ ছবিতেও ডাবল রোলে নির্যাতিত শাবনূর ও প্রতিবাদী শাবনূর উঠে এসেছে। নির্যাতিত শাবনূরের চরিত্রটি কোনোভাবেই প্রতিবাদী শাবনূরের সাথে খাপ খায় না এত নিখুঁত অভিনয়। এটিএম শামসুজ্জামানকে চাবুকপেটা করার সময় শাবনূরের সংলাপ ছিল নারী জাগরণের-’নামে কিবা আসে যায়! হতে পারি বীরাঙ্গনা সখিনা বা সুলতানা রাজিয়া কিংবা ঝাঁসির রাণী।’ ‘মৌমাছি’ ছবিটি ছিল অ্যাকশনে নারী জাগরণ তুলে ধরা।

সাহিত্যভিত্তিক ছবির শাবনূর একদম আলাদা বাকি শাবনূরের থেকে। কমার্শিয়াল নাচে-গানে-ড্রামায় ভরপুর শাবনূরের থেকে এটি সম্পূর্ণ ভিন্ন। সাহিত্যভিত্তিক ছবিগুলোও কমার্শিয়ালি নির্মিত কিন্তু শাবনূরের চরিত্রের শক্তি অন্য ছবিগুলো থেকে সহজে আলাদা করার মতো। এ ধারায় প্রথমেই আসে ‘নিরন্তর’ছবি। হুমায়ূন আহমেদের ‘জনম জনম’ উপন্যাস থেকে নেয়া। নিজেকে বিসর্জন দিয়ে পরিবারেরর কথা ভাবা একটি মেয়ের করুণ গল্প এ ছবি। ‘গায়ে হাত দিও না তো, মা। গায়ে হাত দিলেই পুরুষের হাত বলে মনে হয়’ এ সংলাপ প্রক্ষেপণে শাবনূরের অভিনয় তুলনাহীন। আমজাদ হোসেনের ‘কাল সকালে’ ছবিতে মানসিকভাবে বেড়ে না ওঠা শাবনূরের চরিত্রটি সেরা ছিল ছবিতে। ছবির শেষ দৃশ্য অব্দি তার চরিত্রের গুরুত্ব বজায় থেকেছে। ‘দাঁড়াও বন্ধু বহুদিনে পাইছি তোমার লাগ’ গানটিতে শাবনূরের অভিনয় মায়ায় ভরা। আহমদ ছফা-র নামকরা উপন্যাস ‘ওঙ্কার’ অবলম্বনে ‘বাঙলা’ ছবিতে বোবা মেয়ের চরিত্রে শাবনূর ছিল মারাত্মক। জানালার কাছে মিছিল দেখে কথা বলার চেষ্টা এবং সেই চেষ্টায় ছবির শেষ পর্যন্ত গিয়ে মাতৃভাষা ‘বাঙলা’-র উচ্চারণ ঔপন্যাসিকের শীর্ষবিন্দুতে পৌঁছায় শাবনূরের মাধ্যমে। পাওয়ারফুল পারফরম্যান্স। এছাড়া ছবিতে ‘কথার ভিতরে কথা থাকে’ গানে শাবনূরের সাইলেন্ট অ্যাকটিং দেখার মতো।

শাবনূর তাঁর স্বাভাবিক বাই বর্ন অ্যাকটিং-এর গুণ দিয়েই তাঁর ছবির ক্যারেক্টারাইজেশন করেছে। তাঁর চরিত্রায়ণে, অভিনয়ে চলচ্চিত্র যেমন সমৃদ্ধ হয়েছে তেমনি শাবনূরও পেয়েছে চলচ্চিত্রে আলোচিত থাকার চিরস্থায়ী আসন।


Leave a reply