রতনে রতন চিনে আর শুয়োর চিনে কচু
কথায় আছে রতনে রতন চিনে আর শুয়ার চিনে কচু।
ফটোর ডান পাশে স্বামী গওহর জামিলের সাথে বাংলাদেশের প্রখ্যাত অভিনেত্রী রওশন জামিল। গত ৮ই মে আমাদের সবার পরিচিত এই কুটনি বুড়িটার ৮৪ তম জন্মদিন গেল অনেকটা নিরবে কোন আয়োজন ছাড়াই। আমি জানতে চাই কেন? তার কি আমাদের চলচ্চিত্র বা নৃত্যে
কোন ভূমিকা ছিলনা? আজো তার অভিনীত কোন সিনেমা দেখলে ভয়ে থাকি কখন এই বুড়িটা সংসারে প্যাঁচ লাগিয়ে দেয়। নিম্নে দেখে নিন তিনি কি ছিলেন। এত পুরষ্কার, এত উপাধি যার নামের পাশে সেই তারাই আজ উপেক্ষিত আমাদের মিডিয়ায় তাদের জন্মদিন- মৃত্যুবার্ষিকীতে একটু যায়গা হয় না। মিডিয়া ব্যস্ত নায়লা,হ্যাপিরা কখন বাথরুমে হাগু করে কতটুকু করে সেদিকে মিডিয়া আরও ব্যাস্ত ভারতীয় দালালি করতে জাতি হিসাবে এত নিকৃষ্ট কেন আমরা ? এদেশে প্রতিভা জন্ম নেয় কিন্তু অবহেলায় মারা যায় প্রতিভা আছে কিন্তু মূল্য নেই।
আসুন জেনে নেই রওশন জামিল সম্পর্কে। বাংলাপিডিয়ায় তার সংক্ষিপ্ত জীবনী আছে, সেখানে বলা আছে রওশন জামিল একজন (১৯৩১-২০০২) নৃত্যশিল্পী, অভিনেত্রী। ১৯৩১ সালের ৮ মে ঢাকার রোকনপুরে এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর শিক্ষাজীবন শুরু হয় লক্ষ্মীবাজার সেন্ট ফ্রান্সিস মিশনারি স্কুলে। পরবর্তীতে তিনি ইডেন কলেজে পড়াশোনা করেন।
শৈশবেই রওশন নাচের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে নৃত্যানুশীলন শুরু করেন। ম্যাট্রিক পাসের পর ওয়ারী শিল্পকলা ভবনে নাচের প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা গ্রহণকালে প্রখ্যাত নৃত্যশিল্পী ও নৃত্যকলার শিক্ষক প্রয়াত গওহর জামিলের সঙ্গে তাঁর পরিচয় থেকে প্রেম ও পরিণয় (১৯৫২) হয়। গওহর জামিল তাঁর নৃত্যগুরু হলেও এক সময় রওশনই নৃত্যশিল্পী হিসেবে বিশেষ প্রতিষ্ঠা লাভ করেন। তাঁরা ১৯৫৯ সালে প্রতিষ্ঠা করেন নৃত্য প্রশিক্ষণ কেন্দ্র জাগো আর্ট সেন্টার। এদেশে নৃত্য শিল্পকে জনপ্রিয় করে তোলার ক্ষেত্রে এই শিল্পিযুগল অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন। স্বামীর মৃত্যুর পর রওশন জাগো আর্ট সেন্টারের সার্বিক দায়িত্ব গ্রহণ করেন।
১৯৬৫ সালে টেলিভিশনে রক্ত দিয়ে লেখা নাটকে অভিনয়ের মধ্য দিয়ে রওশন জামিলের অভিনয়জীবন শুরু হয়। বিটিভির ঢাকায় থাকি এবং সকাল সন্ধ্যা ধারাবাহিক নাটকের অভিনয় তাঁকে অবিস্মরণীয় করে রেখেছে। চলচ্চিত্রাভিনয়ে তাঁর যাত্রা শুরু ১৯৬৭ সালে আরব্য রূপকথা আলিবাবা চল্লিশ চোর ছবিতে অভিনয়ের মাধ্যমে। চলচ্চিত্রে জীবনঘনিষ্ঠ অভিনয়ের কারণে তিনি বিশেষভাবে খ্যাতি লাভ করেন।
বিকল্প ধারার বহু চলচ্চিত্রেও তিনি অভিনয় করেন। তিনি বহুসংখ্যক টেলিভিশন নাটক ও চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন। তাঁর অভিনীত কয়েকটি উল্লেখযোগ্য পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র হলো: গোরী, গীত কাঁহি সঙ্গীত কাঁহি (উর্দু), মনের মত বউ, জীবন থেকে নেয়া, তিতাস একটি নদীর নাম, সূর্য সংগ্রাম, গোলাপী এখন ট্রেনে, আবার তোরা মানুষ হ, ওরা ১১ জন, মাটির ঘর, সূর্য দীঘল বাড়ী, দেবদাস, রামের সুমতি, জননী, নয়নমণি, জীবন মৃত্যু, মিস ললিতা, নদের চাঁদ, মাটির কোলে, বাঁধনহারা, দহন ইত্যাদি এবং স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র আগামী, পোকামাকড়ের ঘরবসতি ও লালসালু। এগুলির মধ্যে কয়েকটি চিত্রায়িত হয় জহির রায়হান, ঋত্বিক ঘটক, শেখ নিয়ামত আলী, আমজাদ হোসেন প্রমুখ বিশিষ্ট চলচ্চিত্রকার কর্তৃক। উল্লেখ্য যে, এদেশে যখন ছেলেদের মেয়ে সেজে মঞ্চে অভিনয় করতে হতো, সেই তখনই (১৯৫২ সালের দিকে) রওশন জামিল জগন্নাথ কলেজে মঞ্চায়িত শরৎচন্দ্রের দেবদাস নাটকে অভিনয় করেন। তিনি বেশ কয়েকটি বিজ্ঞাপনচিত্রেরও মডেল হন।
রওশন জামিল কোপনা বা কোমলমতি নারী সব ধরনের চরিত্রচিত্রণেই সমান পারদর্শী ছিলেন। অভিনেত্রী হিসেবে তিনি নতুন একটি স্টাইল নির্মাণ করেন। তাই সবার মধ্যে থেকেও তিনি ছিলেন ব্যতিক্রম। দেশের সাংস্কৃতিক অঙ্গনে বিশেষ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ তিনি জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার, টেনাশিনাস পদক, সিকোয়েন্স অ্যাওয়ার্ড, বাচসাস চলচ্চিত্র পুরস্কার, তারকালোক পুরস্কারসহ বহু পদক ও পুরস্কারে ভূষিত হন। নৃত্যে তিনি ১৯৯৫ সালে একুশে পদক লাভ করেন। ২০০২ সালের ১৪ মে তাঁর মৃত্যু হয়।
তথ্যসূত্র: বাংলাপিডিয়া
এই গুণী অভিনেত্রী আমার ভীষণ প্রিয় একজন।
জীবন থেকে নেয়া,তিতাস একটি নদীর নাম, গোলাপী এখন ট্রেনে, ওরা ১১ জন, সূর্য দীঘল বাড়ী, পোকামাকড়ের ঘরবসতি, লালসালু সহ বিখ্যাত বিখ্যাত সব চলচ্চিত্রে অভিনয় করে দর্শকদের মনে ঠাই করে নিয়েছেন। যদিও সিংহভাগ চরিত্রই নেতিবাচক,তবে ইতিবাচক ভূমিকাতেও খুব একটা খারাপ করেননি তিনি। সূর্য দীঘল বাড়ী ও চিত্রা নদীর পারে তার প্রমাণ।
তাঁর জন্ম ও মৃত্যু তারিখের মাঝে দিন সাতেকের ফারাক থাকলেও বাংলাদেশের চলচ্চিত্র থেকে তাঁকে ফারাক করা যাবে না কখনও। বিনম্র শ্রদ্ধা রইল অসামান্য একজন অভিনেত্রীর প্রতি.. ।