Select Page

রবিন ঘোষ … তোমারে লেগেছে এত যে ভালো

রবিন ঘোষ … তোমারে লেগেছে এত যে ভালো

তোমারে লেগেছে এত যে ভালো (রাজধানীর বুকে), আমি রূপনগরের রাজকন্যা (হারানো দিন), পীচঢালা এই পথটারে ভালবেসেছি, ফুলের কানে ভ্রমর এসে (পীচঢালা পথ), আয়নাতে ঐ মুখ দেখবে যখন (নাচের পুতুল), দুনিয়ারে বলে দে রে প্রিয়া কেন নিলি কেড়ে (শেষ উত্তর), যেদিন আকাশে উঠেছিল সুর্য প্রথমবার (মাটির কসম) – এ ধরনের অসংখ্য জনপ্রিয় গানের সুরকার ও সংগীত পরিচালক রবিন ঘোষ। তবে তার ক্যারিয়ারের বেশির ভাগ কেটেছে উর্দু চলচ্চিত্রের গানে।

বরেণ্য এ সুরকারের জন্ম রবিন ঘোষ ১৯৩৭ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর ইরাকের বাগদাদে, মৃত্যু ২০১৬ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি ঢাকায়।

রবিন ঘোষের বাবা আন্তর্জাতিক সাহায্য সংস্থা রেডক্রসে চাকরি করতেন। সে সূত্রেই তিনি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়ে বাগদাদে স্থানান্তরিত হন। সেখানেই খ্রিস্টান স্কুলে পড়াশোনা করেন।

ছোটবেলা থেকেই গানের প্রতি রবিন ঘোষের প্রবল আগ্রহ জন্মায়। তিনি গানের রেকর্ড সংগ্রহ করতেন। নিজে হারমোনিয়াম বাজিয়ে সেসব গান গাইতেন ও সুর তুলতেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর পরিবারের সঙ্গে ঢাকায় ফিরে আসেন। সেগুনবাগিচায় মিউজিক কলেজ থেকে তিনি সংগীত বিষয়ে গ্র্যাজুয়েশন করেন।

বিয়ের দিন শবনম ও শ্যালকের সঙ্গে রবিন ঘোষ

তার এক ভাই অশোক ঘোষ ছিলেন বিখ্যাত চিত্রপরিচালক। স্ত্রী শবনম বাংলাদেশ-পাকিস্তানে দুই দেশেরই তারকা।

রবিন ঘোষ এক বন্ধুর মাধ্যমে ঢাকা রেডিও স্টেশনে চাকরির সুযোগ পান। ওই বন্ধুর বোন ঝর্ণা বসাক (পরবর্তীতে শবনম) তখন চলচ্চিত্রে ছোটখাট চরিত্রে অভিনয় করতেন। দুই পরিবারের সম্মতিতেই ১৯৬৪ সালের ২৪ ডিসেম্বর রবিন-শবনম বিয়ে করেন। এ দম্পতির একমাত্র ছেলে সন্তান রনি ঘোষ।

প্রখ্যাত চলচ্চিত্র পরিচালক এহতেশাম রেডিও স্টেশনে এলে রবিন ঘোষের সঙ্গে পরিচিত হন এবং তার চলচ্চিত্রে সুরকার ও সংগীত পরিচালক হিসেবে কাজ করার আহ্বান জানান। এহতেশাম পরিচালিত ‘রাজধানীর বুকে’ (১৯৬০) ছবির মাধ্যমেই রবিনে চলচ্চিত্রে আগমন। এ ছবিতে সংগীত পরিচালক হিসেবে আরো ছিলেন ফেরদৌসী রহমান।

ঢাকা থেকে নির্মিত অন্য যে সিনেমায় রবিন কাজ করেছেন তার উল্লেখযোগ্য— হারানো দিন, চান্দা, নতুন সুর, তালাশ, পয়সে, কারওঁয়া, বন্ধন, বেগানা, চকোরী, তুম মেরে হো, কুলি, ভাইয়া, দরশন, পীচঢালা পথ, নাচের পুতুল, আয়না, শেষ উত্তর, আপোষ, জুলি ও মাটির কসম (একটি গান)।

ষাটের দশকের শেষের দিকে তিনি পাকিস্তানে চলে যান। ওখানে বেশকিছু ছবিতে সংগীত পরিচালক ও সুরকার হিসেবে কাজ করেন। উর্দু ছবিতে কাজ করেও তিনি বেশ জনপ্রিয়তা পান এবং পুরস্কৃত হন। পরবর্তীতে পাকিস্তানের চলচ্চিত্রের ইতিহাসের অন্যতম সফল সুরকারের মর্যাদা পান তিনি। তালাশ (১৯৬৩), চকোরি (১৯৬৭), চাহাত (১৯৭৪), আয়না (১৯৭৭), আম্বার (১৯৭৮) ও দরিয়ান (১৯৮৪) চলচ্চিত্রে শ্রেষ্ঠ সুরকার হিসেবে ‘নিগার পুরস্কার’ লাভ করেন।

রবিন ঘোষ কিছু ছবিতে কণ্ঠ দিয়েছেন, শখের বশে অভিনয়ও করেছেন।

তথ্য ঋণ: আজাদ আবুল কাশেম


মন্তব্য করুন