Select Page

রিজু’র বায়স্কোপ

রিজু’র বায়স্কোপ

BapjanBG_865460876বাপজানের বায়স্কোপের গল্প এক চরকে ঘিরে-ভাগিনার চর। একাত্তরের যুদ্ধাপরাধী সেকান্দর বক্স তার আদরের ভাগিনা জীবন সরকার (শহীদুজ্জামান সেলিম)-কে একটা চর উপহার দিয়েছিলেন। জীবন এখন সেই চরের হর্তা-কর্তা। সেই চরের কৃষক হলো হাসেন মোল্ল্যা (শতাব্দী ওয়াদুদ)। তার বাবা একসময় বায়স্কোপের মেশিন নিয়ে বায়স্কোপ দেখাতো। শতাব্দীর মুক্তিযোদ্ধা চাচাকে একাত্তর সালে পাকিস্তানিদের হাতে তুলে দিয়েছিল সেলিমের মামা সেকান্দর। হাসেন তাই চাচার মৃত্যু আর বাপজানের বায়স্কোপ নিয়ে শুরু করলো এক নতুন গল্প বলা। যে গল্পে সরাসরি তুলে ধরা হয়েছে যুদ্ধাপরাধী সেকান্দরের কীর্তিকলাপ। সেকান্দর এখন সম্মানী মানুষ, সংসদ নির্বাচনেও দাঁড়াবেন। তার নামে যাতে কোন “মিথ্যা রটনা” না ছড়ানো হয়, তাই সেলিম বায়স্কোপ দেখানো বন্ধ করতে বললেন। কিন্তু শতাব্দী তার কথা না শোনায়, সেলিম এলাকায় লবণের সরবরাহ বন্ধ করে দিলেন। সবার রাগ গিয়ে পড়লো হাসেনের উপরে।

বাপজানের বায়স্কোপের গল্প ও সংলাপ লিখেছেন মাসুম রেজা। পরিচালনা করেছেন রিয়াজুল রিজু। রিজুর কাজ আমার খুব ভালো লেগেছে। পুরো ছবিটা দেখার সময় একবারও মনে হয়নি, নতুন কোন পরিচালকের কাজ দেখছি। অনেক ম্যাচিওরড ডিরেকশন ছিল। তবে কিছু কিছু ক্রেন শট দেখে মনে হলো, সেগুলো না থাকলে খুব একটা ক্ষতি হতো না। গানগুলো সুন্দর ছিল, একদম গ্রাম বাংলার ঘ্রাণ মেশানো। তবে, পুরোটা ব্যবহার না করে গানের একটা অন্তরা ব্যবহার করলে চরিত্রের গাম্ভীর্যটা থাকতো, আবার গানগুলো ক্লান্তিকরও লাগতো না। ক্লাইম্যাক্সের দৃশ্যটি ছাড়া ওভার অল কালার কারেকশনের কাজ অনেক ভালো। ক্যামেরায় মেহেদী রনি’র কাজ টপ নচ ছিলো।

সবার অভিনয় ভালো ছিল। শতাব্দী তো ভালো অভিনয়ই করেন। তাকে চরিত্রের মাঝে অনেক ইনভেস্টেড লেগেছে। ছবিটা দেখার সময় কখনো মনে হয়নি, ইনি শতাব্দী। বরং মনে হয়েছে চরে আটকে পড়া এক অচেনা কৃষক, বায়স্কোপ দেখানোটাই যার ধ্যান-জ্ঞান। কিছু দৃশ্যে তাকে বেশ বিরক্ত মনে হলো। মুখে এক্সপ্রেশন নেই, কপাল বা ভ্রু-কুঞ্চিত। এটাকি চরিত্রের অংশ নাকি শূটিঙ চলাকালীন কোন ঘটনার প্রভাব, ঠিক বুঝতে পারলাম না। নবাগত হিসেবে পানাই (সানজিদা তন্ময়) এর কাজ ভালো আর সোরাব (এই লোকের নাম জানি না। মনে হয় মিঠু) এর কাজ দুর্দান্ত লেগেছে। সেলিমের কথাও কিছু বলার নেই, জাত অভিনেতা। কিন্তু সেলিমের ডায়লগ ডেলেভারি চোরাবালির সেলিম অর্থাৎ ওসমান গণিকে মনে করিয়ে দিচ্ছিল। একজন শহুরে গডফাদার আর একজন গ্রাম্য চর মালিকের পোর্ট্রেয়াল একই রকম হওয়া কতটা যুক্তিসঙ্গত, সে প্রশ্নের উত্তর সেলিমই ভালো দিতে পারবেন।

এবার আসি যা ভালো লাগেনি, সে বিষয়ে। চরের সবার ঝাঁ চকচকে পোশাক দেখে অবাক হলাম। সেলিম ধনী, তার এবং তার স্ত্রীর সব পোশাক নতুন হতেও পারে। কিন্তু অন্য সবাই এত নতুন, শাদা, ঝকঝকে জামা পড়ে থাকলে, সেটা কিছুটা দৃষ্টিকটুই লাগে (সাম্প্রতিক কালের সব ছবি অবশ্য এই দোষে দুষ্ট। ব্যতিক্রম একমাত্র জালালের গল্প)। সব দেখে মনে হলো, চরে লবণের অভাব থাকতে পারে, বিত্তের অভাব থাকতে পারে, কিন্তু ডিটারজেন্টের কোন অভাব নেই। গল্পটা ভালো হলেও, লবণের অংশটা বাদে পুরোটাই প্রেডিক্টেবল। বেশ কিছু ড্রিম সিকোয়েন্স অবশ্য সাইকোলজিক্যাল ড্রামার সুবাস আনছিল। এটা বেশ প্রশংসাযোগ্য। এই অংশগুলোয় পরিচালকের দারুণ মুন্সিয়ানা দেখানো সুযোগ ছিল। আর ছবিটার এডিটিং আরো ভালো হতে পারতো। কিছু কিছু দৃশ্যে অযাচিত স্লো-মোশনের ব্যবহার জি-বাংলার টিভি সিরিয়ালকে মনে করিয়ে দিচ্ছিল। তারপরেও বলছি, ছবিটা বেশ কিছু জাতীয় পুরস্কার পাবে বলে আমার বিশ্বাস।

বাপজানের বায়স্কোপ কোন সময়ের গল্প এটা আমরা জানি না। টিভি দূরে থাক কারো কাছে মোবাইলও নেই। ছবি শেষে মনে হলো, আরে এটাইতো হবার কথা। একজন হাসেনের বাক স্বাধীনতার আকুতি আর জীবন সরকারের কন্ঠরোধের অপচেষ্টাকে তো কোন সময়কালে বেঁধে দেবার দরকার পড়ে না। বাংলার মাটিতে যে আজও সেকান্দর বক্সদের পায়ের আওয়াজ পাওয়া যায়।


Leave a reply