Select Page

রিভিউ : হাঙর নদী গ্রেনেড

রিভিউ : হাঙর নদী গ্রেনেড

হাঙর নদী গ্রেনেড
পরিচালক : চাষী নজরুল ইসলাম
মূল গল্প : সেলিনা হোসেন
অভিনয় : সুচরিতা, সোহেল রানা, অরুনা বিশ্বাস, শর্মিলী আহমেদ, অন্তরা, ইমরান, দোদুল, আশিক আরো অনেকে।
ব্যাপ্তিকাল : ১১৩ মিনিট
মুক্তি : ২১ নভেম্বর ১৯৯৭
ব্যক্তিগত রেটিং : ১০/১০

বাংলাদেশ নামের মাঝেই শিহরণ কাজ করে। কেন না এ দেশের রয়েছে সমৃদ্ধ ইতিহাস, ভাষার জন্য প্রাণ দেওয়া মানুষের সংখ্যা নিতান্তই নগণ্য কিন্তু এদেশের রয়েছে ভাষার জন্য প্রাণ দেওয়ার ইতিহাস যার কারণেই আজ আমরা প্রাণ খুলে বলতে পারি এই আমার দেশ জয় বাংলাদেশ। ঠিক তেমনি এই সমৃদ্ধ ইতিহাস নিয়ে রয়েছে অনেক চলচ্চিত্র তাদের মধ্যে “হাঙর নদীর গ্রেনেড” অন্যতম। ১৯৯৭ সালে দেশের জনপ্রিয় পরিচালক চাষী নজরুল ইসলামের পরিচালনায় সেলিনা হোসেনের উপন্যাস অবলম্বনে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধভিত্তিক সিনেমাটি নির্মিত হয়। চলচ্চিত্রটির সবচেয়ে আকর্ষণীয় দিক হলো যুদ্ধের আগে-পরে দুটো স্বাদই পাওয়া যায়।

অভিনয় : এ সিনেমাতে অভিনয় যারা করেছেন তারা আমার মনে হয় যুদ্ধের সময় ভেবেই অভিনয় করেছেন, নতুবা এত বাস্তবিক অভিনয় আপনার সব সময় মানুষের চোখে ভেসে উঠত না। তবে কিছু চরিত্রের অভিনয় যার কথা না বললেই নয়।

সোহেল রানা (গফুর)
বাংলাদেশের একজন প্রখ্যাত অভিনেতা জনাব সোহেল রানা বা মাসুদ পারভেজ। তার ক্যারিয়ার ছিল বেশ দারুণ। ১৯৭৪ সালে মাসুদ রানা শিরোনামের সিনেমায় মাসুদ রানা নামেই তার আত্মপ্রকাশ। যাই হোক এই সিনেমায় “গফুর” চরিত্রে সে ছিলো সর্বেসর্বা এত নিখুঁত অভিনয় তার নামকে আরো মজবুত করে।ভাবতে ভালো লাগে উনি আমাদের দেশের নাগরিক।

অরুনা বিশ্বাস (বৈষ্ণবী)
আমার ছোটবেলার পছন্দ ? প্রথম যখন এই সিনেমাটি দেখি বেশি বয়স ছিল না, সি আর টি টিভিতে উনাকে দেখতাম হঠাৎ এমন বেশে দেখে অবাক! যদিও স্ক্রিনে উনার অবস্থান কম ছিল কিন্তু যতটুকুই ছিল দেখার মতো ছিল,বিশেষ করে তার এক্সপ্রেশনগুলো ?

সুচরিতা (বুড়ি)
টিভিতে যখন প্রথম এই নাম শুনি অবাক লাগে, ‘এ কেমন নাম’। কিন্তু পুরো ছবি দেখার পরে বুঝলাম সেলিনা হোসেনের এই নাম দিয়েও সুন্দর একটা গল্পের ধারা ছিল, সেই সাথে অভিজ্ঞ অভিনেত্রী সুচরিতার শক্ত-পোক্ত অভিনয় সব মিলিয়ে যুবতী বুড়ি থেকে শুরু করে বৃদ্ধা বুড়ি পর্যন্ত সুচরিতার সুন্দরতা দেখা মিলবে। এত দারুণ চাহনি এত দারুণ ডায়লগ ডেলিভারি যা আপনাকে একবার নিয়ে যাবে প্রেমের সাগরে আবার আপনাকে নিয়ে আসবে দুঃখের নদীর কিনারায়। ঠিক এই কারণেই ২২তম জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারের সেরা অভিনেত্রীর পুরস্কারটি সুচরিতার ঘরেই প্রবেশ করে।

কাহিনীসংক্ষেপ : হঠাৎ করেই চটপটে বুড়ির বিয়ে ঠিক হয়ে যায় তার থেকেই দ্বিগুণ বয়সী গফুরের সাথে, তার ঘরে আবার দুই ছেলে আগে থেকেই কিন্তু সেজন্য বুড়ির ভালোবাসার কমতি নেই। গ্রামের বদ আলাপে বুড়িরও নিজের সন্তানের ইচ্ছা জাগে, অনেক প্রত্যাশারর পরে জন্ম নেয় তাদের ঘরে রইস। কিন্তু হায় রইস স্বাভাবিক মানুষের মতো ছিল না।

ইতিমধ্যে গফুর মারা যায়। বড় ছেলে সলিমের বিয়ে হয়। ঘরে আসে নতুন বউ রমিজা। শুরু হয় যুদ্ধ। সলিম চলে যায় যুদ্ধে। বাড়িতে রেখে যায় কলিমকে মায়ের দেখাশুনার জন্য। কিন্তু রাজাকার মনসুরে সলিমের যুদ্ধে যাওয়ার খবর দিয়ে দেই পাকিস্তানি ক্যাম্পে আর মেজর ধরে নিয়ে যায় কলিমকে মারধরের পরেও কিছু না বলায় মায়ের সামনে গুলি করে হত্যা করা হয় তাকে এভাবেই আস্তে আস্তে সিনেমার গল্প এড়িয়ে যায়। যারা এখনো দেখেননি জলদি দেখে ফেলুন। এমন মাস্টারপিস মিস করাটাও বোকামি।

পরিশেষে একটা কথা বলব- এই কিছুদিন আগেই কয়েকটা পেইজে, কয়েকটা গ্রুপে রইসের বন্দুক হাতে নিয়ে একটা ছবি প্রকাশ পায়, আধুনিক ভাষায় মিমো নামের চিত্র প্রকাশ পায় যাতে অজস্র হা হা রিএক্ট পরে,! খুব অবাক লাগলো কেন এমন হলো! আসলেই কি তারা কেউ জানে না!

এ সকল মানুষের কাছে আমার অনুরোধ দয়া করে কোনো কিছুর ইতিহাস না জেনে সেগুলোকে হাস্যরসের বস্তু বানাবেন না। অনেক শ্রমের বিনিময়ে আপনার-আমার এই দেশ, দেশ আমার আমাদের সম্পদ তেমনি দেশ নিয়ে এই সিনেমাগুলো সম্পদের ভিতস্বরূপ অনুরোধ এগুলোকে ছোট করবেন না।


Leave a reply