Select Page

রিমেক করে চেপে যাওয়া এবং নকলের মধ্যে পার্থক্য কতটুকু?

রিমেক করে চেপে যাওয়া এবং নকলের মধ্যে পার্থক্য কতটুকু?

 ‘কেয়ামত থেকে কেয়ামত’, ‘হঠাৎ বৃষ্টি’, ‘মনের মাঝে তুমি’- এই ছবিগুলোর আগে বেশ কিছু বিশেষণ বাধাধরা। কালজয়ী, ব্যবসা সফল, সাড়াজাগানো— যার যা খুশি বসিয়ে নিতে পারে। ছবিগুলোর মানই অমন যে, যে কেউ প্রশংসা ছোটাতে পারে তুবড়ির মতো। গত দুই যুগে আমাদের ছবি দেখার অভিজ্ঞতায় ছবি তিনটির অবদান অসামান্য।

ছবি তিনটির একমাত্র বিতর্কিত দিক হচ্ছে- ওগুলো কোনো না কোনো ভারতীয় ছবির ‘রিমেক’। ‘হঠাৎ বৃষ্টি’ ও ‘মনের মাঝি তুমি’ দেখার সময় খুব কম দর্শকই এই তথ্য জানতেন। যে কারণে ছবি দুটির প্রশংসা করতে কেউ দ্বিধা করেনি। ‘মনের মাঝে তুমি’র বক্স অফিস রেকর্ড তো আজো কেউ ভাঙার সাহস করে না।

‘কেয়ামত থেকে কেয়ামত’ অনেকটা জেনেশুনে বিষপান করার সামিল। বোম্বে থেকে কপিরাইট এনে, ঢাকঢোল পিটিয়ে আনন্দমেলা প্রডাকশনস ওই ছবির নির্মাণ করে। ‘আমার ঘর আমার বেহেশত’, ‘স্বজন’, ‘বিয়ের ফুল’, ‘এই মন চায় যে’, ‘প্রিয় সাথী’— এই ব্যানারের সব ছবিই দর্শক দেখে আগে-ভাগে কপিরাইটের ব্যাপারটি জেনে নিয়েই।

কপিরাইটের বিরুদ্ধে এক সময় এফডিসিতে সফল আন্দোলন হয়েছে। অফিসিয়াল রিমেক বন্ধ করে দেয়া হয়েছিল। পরে সেটা চালু হলেও সাধারণ নির্মাতারা নকলের বৃত্তেই আটকে থাকেন একে ‘সুপ্রাচীন ঐতিহ্য’ মনে করে। কেউ কেউ পুরো হিন্দি ছবি নকল করেন। কেউ তিন-চারটা ছবি থেকে মারেন। ‘রিমেক’, ‘কপিরাইট’ এই শব্দগুলো হারিয়ে যায়। চৌর্যবৃত্তি টিকে থাকে বহাল তবিয়তে।

যৌথ প্রযোজনার ছবি ‘আমি শুধু চেয়েছি তোমায়’ রিলিজের পর থেকে রিমেক কথাটি আলোচনায় ফিরে আসে। কলকাতার প্রায় সব বাণিজ্যিক ছবি তামিল-তেলেগু ছবির রিমেক। ওরা রিমেক ছাড়া অচল। মৌলিক গল্পের ধার ধারে না ওরা। আর ঢালিউড তো আগে থেকেই নাচুনি বুড়ি। ঢোলের বাড়ি খেয়ে বছরের পর বছর ধরে চলা মৌলিক ছবির আন্দোলন ঝিমিয়ে পড়ে।

‘শিকারী’ ও ‘বাদশা দ্য ডন’ রিলিজের পর এখন রিমেকের পক্ষে সাফাই গাওয়ার লোকের অভাব নেই। ‘নকলের চেয়ে রিমেক ভালো’- এই শ্লোগান শুনছি এখানে-সেখানে কান পাতলেই। সন্দেহ নেই চুরি করে নির্মাণের চেয়ে অনুমতি নিয়ে নির্মাণ করা উত্তম। কিন্ত যারা দাবি করেন, তারা ‘অফিসিয়াল রিমেক’ করেছেন, তাদের দাবির সত্যতা কতটুকু?

১৯৯১ সালে দারাশিকো ‘বাদশা ভাই’ ছবিটি নির্মাণ করেছিলেন। প্রযোজক ছিলেন সম্ভবত ইলিয়াস কাঞ্চন। এটি গোবিন্দ অভিনীত হিন্দি ছবি ‘বিল্লু বাদশা’র (১৯৮৯) অফিসিয়াল রিমেক ছিল। একটি পুরনো পেপার কাটিং থেকে ‘বিল্লু বাদশা’ বাংলাদেশে রিমেকের চুক্তি অনুষ্ঠানের এই স্থিরচিত্রটি সংগ্রহ করলাম।

এখন আমাকে কেউ বলুন, অফিসিয়াল রিমেক হলে এরকম চুক্তি অনুষ্ঠান কিংবা চুক্তির কাগজপত্র পত্রিকায় কিংবা ফেসবুকে প্রকাশ করতে সমস্যা কোথায়? রিমেক করে সেটা চেপে যাওয়া আর নকল করার মধ্যে পার্থক্য রইলো কতটুকু?

আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দিয়ে রিমেক করে সাফল্যের ঘটনা তো বলিউডে অহরহ ঘটছে (বডিগার্ড, রেডি, দৃশ্যম, ভুলভুলাইয়া ইত্যাদি)। আমরা বাঙালিরা নকল করতে করতে এমনই হীনমন্যতায় ভুগছি যে, অনুমতি পেয়েও সে খবর চেপে যাই নাকি দুটো বেশি দর্শকের আশায় ভাবি- ‘কি লাভ জানিয়ে!’

এবার আমার চূড়ান্ত মতামত। আমি নকল, রিমেক কোনোটাই পছন্দ করি না। মৌলিকের উপরে কিছু নাই। তা দর্শক যতোই রিমেক আর নকলের জয়ধ্বনি দিক না কেন। আর এটাও বলি, দর্শক গল্পের, চিত্রনাট্যের উৎস নিয়ে ভাবে না- ছবিতে শুধুই বিনোদন খোঁজে। এমনকি আমিও। আর এজন্যই নকল ‘প্রিয়া আমার প্রিয়া’ ব্লকবাস্টার হয়। মৌলিক ‘মনপুরা’ সুপারহিট হয়। রিমেক ভারতীয় ছবি ‘বাদশা’ বাম্পারহিট রিসেপশন পায়।


লেখক সম্পর্কে বিস্তারিত

মাহফুজুর রহমান

চলচ্চিত্র বিষয়ক লেখক

মন্তব্য করুন