Select Page

‘লাইভ ফ্রম ঢাকা’ নিয়ে এত উচ্ছ্বাস কেন?

‘লাইভ ফ্রম ঢাকা’ নিয়ে এত উচ্ছ্বাস কেন?

মাত্র একটি হলে মুক্তি পেয়েছে আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ সাদ পরিচালিত ‘লাইভ ফ্রম ঢাকা’। এর আগে বিদেশে প্রশংসা পেলেও দেশে আসতে সময় লেগেছে তিন বছরের মতো। মুক্তির পরপরই পাচ্ছে প্রশংসা। আসুন সোশ্যাল মিডিয়া পোস্ট থেকে দর্শকের উচ্ছ্বাসের কিছু কারণ জেনে নিই।

সাঈদ জুবেরির ভাষ্যে, “পৃথিবীতে আপনি এর আগে প্রচারিত হন নাই সিনেমায়। হয়তো নিজের ঘরেই, এই ধরেন মোবাইলে যেমন ভিডিও কইরা ফেসবুকে ছড়াইয়া দিলেন, তেমন কইরা বা তার চেয়ে ছোট বড় কইরা যা যা প্রচারিত হইসে- তা একটা চাপ থেইকা তৈরি, আর তা কমবেশি ওই একই ধরনের চাপ থেইকা আপনিও হয়তো দেইখা আহা উঁহু করসেন।

নানারকম চাপ, বাংলা সিনেমার চাপ, দেশি সিনেমার চাপ, তরুণ নির্মাতার চাপ, সুস্থ বিনোদনের চাপ, দেশপ্রেমের চাপ, চেতনার চাপ, ক্রিয়েটিভ চাপ, মিডিয়া আর এজেন্সির চাপ, পুরস্কারের চাপ, স্বপ্নদোষের চাপ, আদর্শের চাপ… হা হা হা… তোর মায়েরে বাপ চাপ; এইসব চাপের নিস্পেষণে কি দেখাইল আর কি দেখলেন তাই হপ্তা হপ্তা দুই দিন পর বেমালুম আপনা থেইকা গায়েব হয়া যায়।

কিন্তু এই সিনেমায় সেই চাপ নাই, আর তা পৃথিবীর সিনেমার ভাষা রপ্ত কইরা দেখবেন কেমন পূর্ব বাংলার ভাষায় কথা কয়, তার ইমান, আকিদা আর বিচ্যুতি সহ। আর এই সিনেমা দেইখা প্রেক্ষাগৃহ হইতে বাইর হইয়া আপনি দেখবেন ক্ষণে ক্ষণে এই সিনেমা কিভাবে আপনার সময়, যাপনকে হল্ট করসে… দেখবেন লাইভ ফ্রম ঢাকা, পৃথিবীর বুকে।

তো, প্রিয় ঢাকাবাসী… পৃথিবীতে আপনি এর আগে প্রচারিত হন নাই সিনেমায়। দেখে আসতে পারেন নিজেকে, কারণ স্টার সিনেপ্লেক্সে দেখা যাইতেছে- ‘লাইভ ফ্রম ঢাকা’, সরাসরি নিজেকে পৃথিবীর সিনেমায় সম্প্রচারিত হতে দেখে ইতিহাসের সাক্ষ্য দেন, এইটা আপনার ইমানী পরীক্ষা। খুব সম্ভবত এইটা একটা- আইডেনটিটি সিনেমা।”

জুবায়েদ দীপ লেখেন, “লাইভ ফ্রম ঢাকা সুন্দর মুভি। রেকমেন্ড রাখলাম। বাংলা স্টাইলের সিনেমা এইটা না। যেমন ধরেন গান নাচ নাই। হাই পিচ ড্রামা। সাদা কালো। ইওরোপিও ধারার মুভি। Noir ঘরানার মুভি। যারা নোয়া ফ্যান তাদের জন্য এই মুভি রসগোল্লা। সাধারন যে ভুলগুলি বাংলা মুভি করে, যেসব আতলেমি আরোপ করে, সেইরকম সকল ক্লিশে এড়িয়ে একটা জমজমাট মুভি। আইকনিক কিছু শট আছে। সিনেমার যথেষ্ট্য গ্রাভিটিও আছে।”

এস রাব্বীর ভাষ্যে, “সাদের লাইভ ফ্রম ঢাকা থেকে সবচেয়ে বড় উপলব্ধি সিনেমা বানাতে চাওয়ার প্রচন্ড ইচ্ছে ই পারে এমন সফল কাজ উপহার দিতে, ইন্টারন্যাশনালি রিপ্রেজেন্ট করাতে। যারা সিনেমা বানাতে চান; লাইভ ফ্রম ঢাকা মিস্ করবেন না কোনভাবেই। স্বপ্নবাজ মেকারদের জন্যে লাইভ ফ্রম ঢাকা সত্যিকার অনুপ্রেরণা।

বাংলা চলচ্চিত্রের বর্তমান প্রেক্ষাপট অনুযায়ি ইন্ডি ফিল্মগুলোর জন্যে মার্কেট তৈরি নয়। তবে আশার কথা হলো, প্রচুর দর্শক এই সিনেমা দেখতেও ভিড় করছে; বিকাল চারটার শো’টা অলমোস্ট হাউজফুল ছিলো; যারা এসেছেন নিজ আগ্রহেই, সিনেমার প্রতি নির্মল ভালোবাসা থেকেই এসেছেন। বিষয়টি অনুপ্রেরণার; অচিরেই এই সংকট কাটবে আশা রাখি। ‘লাইভ ফ্রম ঢাকা’ হয়ত সিনেমা হলে বেশিদিন সারভাইব করবে না; সুযোগ এবং সাধ্যের মধ্যে থাকলে অবশ্যই দেখার আমন্ত্রণ।”

সৈয়দ নাজমুস সাকিব লেখেন, “পরিচালক সাদের সবচেয়ে চমৎকার ব্যাপার হচ্ছে, তিনি জানেন তিনি আসলেই কী বলতে চান, কাদেরকে বলতে চান আর কীভাবে বলতে চান। এরপরে তিনি বলে ফেলসেন। এখন আপনি সেটাকে কীভাবে নিবেন এই ব্যাপারে তিনি আর কোন পরোয়া করতেসেন না। কারণ তার কাজই বলে দিচ্ছে, তিনি তার কাজে নিজের সেরাটা দিয়েছেন আর নিজের কাজের ব্যাপারে তিনি কনফিডেন্ট। এই জায়গাতে আমাদের দেশের বেশিরভাগ পরিচালক সমস্যায় আক্রান্ত বলে মনে করি।”

হাসিবুল হক ইমনের কথায়, “গত এক সপ্তাহের ঢাকার কথা ভাবুন। আগুন। মানুষ মারা যাচ্ছে। ১২ তলা থেকে লাফ দিতেছে, বেঁচে থাকার জন্য এটা জেনেও যে বেঁচে থাকার পসিবিলিটি অনেক কম তবুও রিস্ক তো নিতেই হবে। ভাবেন, মানুষ কতটা ডেস্পারেট হইতে পারে। এইবার এই সিনেমার কথা বলি। একটা ফ্রাস্ট্রেরেটেড লোক। খোঁড়ায়া খোঁড়ায়া হাঁটে, প্রচন্ড রকমের এ্যাগ্রেসিভ। প্রেমিকার সাথে তার কি দুর্ব্যবহার। ফেমিনিস্টদের গা ঘিনঘিন করবে। সাজ্জাদকে তারা কোনোভাবেই একটা রিজেনবল মানুষের কাতারে ফেলবে না, আমি শিওর। কিন্তু এইটাই তো অরিজিনাল। একটা ফ্রাস্ট্রেরেটেড বয়ফ্রেন্ডের থেকে রেহানা এর থেকে কি আর এক্সপেক্ট করবে? দিব্যি মেনে নিছে। এইটাই সত্যি, মেয়েরা এইভাবেই এ্যাডজাস্ট করে এইভাবেই সাপোর্ট করে। থাক, আমার পারসেপশান এখানে লিখছি না। এইবার আসি নামটায়। ‘লাইভ ফ্রম ঢাকা’ কি সাংঘাতিক সাহস পরিচালকের। এই ঢাকা ওই ড্রোন দিয়ে দেখানো একটা সুইট অথবা কমফোর্টেবল ঢাকা না। সত্যিকারের ঢাকা।”

আরও বলেন, “একটা খোঁড়া লোক, ফ্রাস্ট্রেরেটেড আবার তার কিছু এথিকস আছে। এরে আপনারা অনেকে হিপোক্রিট ভাববেন। ভাবলে ভাবেন। প্রেমিকারে মারে কিন্তু আবার স্যরি বলে। রিহ্যাভ থেকে পালায়া আসা ভাইটার সাথে তার কিরকম আন্ডারস্ট্যান্ডিং, ধাপ্পাবাজ লোকদের সাথে সে পারতেছে না। প্রচন্ড রাগ লাগে তার। ইনজাস্টিস দেখতেছে সে, ইনজাস্টিস করতেছে সে। কি লেভেলের সেন্স অভ গিল্ট। ঘুমায়া শান্তি পায় না। তার পাপ তার বিবেককে একটুও ছাড় দেয় না। কিন্তু তবুও সে মুভ অন করবে। এরকম একটা ঘাড়ত্যাড়া লোক যাকে আপনারা অনেকেই সহ্য করতে পারবেন না, কিন্তু তাতে কিছু যায় আসে না। এই সিনেমার স্বার্থকতা এইখানেই, পার্সোনাল অপিনিয়ন। এইবার রেহানার কথায় আসি। কি শক্তিশালী নারি অভিনয়। এতো মারে, বকে, সন্দেহ করে তাও সে সাজ্জাদকে ছাড়ে না। সাজ্জাদের পাগলামিতে সে ইউজড টু। ভাইবেন না এই ক্যারেক্টারকে সিম্প্যাথি দিচ্ছি বা বলতেছি মেয়েরা এমনই হোক। এইটা ভাবেন, রেহানা সাজ্জাদের জন্য আসলে কতটা ইম্পরট্যান্ট।”

সাইদুর বিপু লেখেন, “সিনেমায় কোন এক্সট্রা লাইট পাবেন না, না পাবেন কোন ওয়াইড লেন্সে কিংবা ড্রোনের শট। মাত্র একটা পঞ্চাশ এমএম লেন্স আর একটা ডিএসএলআর দিয়ে বানানো হয়েছে এই সিনেমা। সিনেমায় যে গান নেই সে তো ট্রেলার দেখেই বুঝেছিলেন কিন্তু জেনে অবাক হবেন, সিনেমায় নেই কোন ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিকও!! সিনেমার শ্যুটিং এর সময় আশেপাশে যে সাউন্ড ছিলো তাই দিয়েই বানানো এই সিনেমার শব্দশৈলী। তবে এতো দুর্দান্ত ভাবেই ফুটিয়ে তোলা হয়েছে যে মাঝে মাঝে আপনার মনে হবে এডিটিং করে বসানো ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিকও বোধহয় এতো ভালো হতে পারতো না।”

বেলায়াত হোসেন মামুনের কথায়, “… তাই অভিনন্দন জানাতে চাই চলচ্চিত্রটির নির্মাতাসহ চলচ্চিত্রটির সাথে যুক্ত সবাইকে… আপনারা বাংলাদেশকে নতুন ধরণের একটি চলচ্চিত্র উপহার দিলেন… যা হয়ত বাকি বিশ্বে বহু আগে থেকেই আছে, হচ্ছে কিন্তু বাংলাদেশে হচ্ছিল না… তা হলো… আপনারা সত্যিকারের নতুন ধরণের কাজের দিগন্ত উন্মোচন করলেন… অভিনন্দন আবারও!”

কল্লোল মুস্তাফা লেখেন, ‍“লাইভ ফ্রম ঢাকা’ চলচ্চিত্রের কেন্দ্রীয় চরিত্র সাজ্জাদ নায়কও না, ভিলেনও না- বেকার মধ্যবিত্ত তরুণের দ্যেদুল্যমানতা, হীনম্যনতা, স্বপ্ন বাসনা, পলায়নপরতা, দ্বায়িত্বশীলতা সব কিছু মিলেই তার জীবন। মাদকাসক্ত ভাইকে সে এড়িয়ে চলতে চায় আবার দ্বায়িত্বও নেয়, প্রেমিকাকে সন্দেহ করে এমনকি গায়ে হাত তুলে বসে আবার পরক্ষণে অনুতপ্ত হয়, চোখের সামনে ছিনতাই হতে দেখে এড়িয়ে যায়, পরক্ষণেই আবার ফিরে গিয়ে কিছু একটা করতে চায়। তার এই আপাত বিরোধপূর্ণ আচরণকে তার চারপাশের পরিপ্রেক্ষিতের মধ্যেই ধরবার চেষ্টা করেছেন পরিচালক।”

তিন বছর ধরে বিশ্বের বিভিন্ন চলচ্চিত্র উৎসবে প্রদর্শিত হয়েছে ‘লাইভ ফ্রম ঢাকা’। এর মধ্যে আছে সিঙ্গাপুর, লোকার্নো, রটারডাম ও সিনেইউরোপার মতো চলচ্চিত্র উৎসব।

২০১৬ সালে সিঙ্গাপুর আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে ‘লাইভ ফ্রম ঢাকা’র প্রিমিয়ার হয়। সেখানে সিলভার স্ক্রিন অ্যাওয়ার্ডে সেরা পরিচালক হিসেবে পুরস্কার পান আবদুল্লাহ মোহাম্মদ সাদ।

ছবিটির বিশ্ব পরিবেশনার দায়িত্ব নিয়েছে প্যারিসভিত্তিক স্বাধীন চলচ্চিত্রের বিপণন সংস্থা স্ট্রে ডগ।

‘লাইভ ফ্রম ঢাকা’র গল্পে দেখা যায়, নিজের জীবনযাত্রা বদলানোর জন্য ঢাকায় আসে সাজ্জাদ। শেয়ার ব্যবসার লোকসানে থমকে যায় তার জীবন। সাজ্জাদের ছোট ভাই মাদকাসক্ত হয়। বান্ধবী রেহানার সঙ্গেও সম্পর্কের অবনতি হয় তার। শুরু হয় সাজ্জাদের জীবনের নতুন সংগ্রাম।

সিনেমাটি দেখা যাচ্ছে রাজধানীর বসুন্ধরা সিটির স্টার সিনেপ্লেক্সে।

 


Leave a reply