Select Page

লাল মোরগের ঝুঁটি: মুক্তিযুদ্ধের এক আখ্যান!

লাল মোরগের ঝুঁটি: মুক্তিযুদ্ধের এক আখ্যান!

১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি আর্মি নিজেদের সুবিধার জন্য নির্মাণ করে সৈয়দপুর বিমানবন্দর। এই বিমানবন্দর তৈরির পেছনে রয়েছে এই দেশের সাধারণ মানুষের অক্লান্ত পরিশ্রম। বিহারী অধ্যুষিত ঐ এলাকায় সাধারণ বাঙালিকে জোর করে ধরে এনে কাজ করানো হতো, আর চলতো পাকিস্তানি আর্মি ও তার দোসরদের বর্বরতা। আর এইসব নিকৃষ্ট কাজের নীরব সাক্ষী হিসেবে দাঁড়িয়ে আছে সৈয়দপুর বিমানবন্দর!

এই ঘটনাকে উপজীব্য করে নুরুল আলম আতিক বানালেন মুক্তিযুদ্ধের ছবি ‘লাল মোরগের ঝুঁটি’। পাশাপাশি গল্পে এসেছে মদ বিক্রি করা পদ্ম নামের এক আদিবাসী মেয়ের কথা, যে এক বড় মোরগ লালন-পালন করে। এসেছে গ্রামের এক হিন্দু পরিবারের কথা, যাদের ওপর নেমে আসে নির্মমতা। তাদের বন্ধু সাহাব আলী, যে এই ছবির অন্যতম মুখ্য চরিত্র। এই নির্মমতা সহ্য করতে না পেরে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েন। বড় করে ধরা পড়েছে মুক্তিযুদ্ধে নারীদের ওপর বয়ে যাওয়া বর্বরতা!

গল্প হিসেবে এই ছবির কাহিনী বেশ আগ্রহ জাগানিয়া, বিশেষ করে অনেকের কাছেই এই ঘটনা অজানা। আতিক সাহেব নির্মাতা হিসেবে সব সময় উঁচুমানের এবং অন্যদের থেকে আলাদা, সেই চতুর্থমাত্রা থেকেই। অভিনয়শিল্পী নির্বাচনও সচেতনভাবে করেছেন। যেহেতু মুক্তিযুদ্ধকালীন বর্বরতার গল্পই বেশি এনেছেন, তাই খল চরিত্রগুলোই বেশি আলো ফেলেছে। রাজাকারের চরিত্রে জয়রাজের অভিনয় ছিল অন্যতম প্রাপ্তি, এমনকি এত সুপরিচিত অভিনয়শিল্পীর মাঝেও পাকিস্তানি আর্মির চরিত্রে থাকা শাহজাহান সম্রাট নামের একজন অভিনেতা অনেকটাই সুযোগ পেয়েছেন এবং ভালো করেছেন। শিল্পী সরকার অপু ও দিলরুবা দোয়েল যতটুকু ছিলেন বেশ ভালো, দাগ কেটেছেন দুজনই। এই চারজনই জাতীয় পুরস্কার পাবার যোগ্যতা রাখেন। নীরব অভিব্যক্তিতেও একেবারেই স্বল্প উপস্থিতিতে হৃদয়গ্রাহী অভিনয় করেছেন স্বাগতা।

ভালো লাগেনি চিত্রনাট্য সাজানো। বিশেষ করে দুই অংশেরই প্রথম ভাগ ধারাবাহিকতাহীন হয়ে এসেছে, যার জন্য মনোযোগ হারায়। তবে প্রথম অংশের শেষ ভাগ ছবিটিকে যেমন অন্যমাত্রা এনে দিয়েছে, তেমনি আগ্রহ বাড়িয়েছিল। আহমেদ রুবেল অত্যন্ত দক্ষ একজন অভিনেতা, তিনি তার চরিত্রে নিজের নাম রেখেছেন। কিন্তু যেন মনে হল তার চরিত্রের গভীরতা কম, হয়তো আমারই ভুল হতে পারে। পদ্ম চরিত্রে আহামরি কিছু না করলেও ভাবনা চলনসই। লায়লা হাসান, অশোক বেপারি, জ্যোতিকা জ্যোতিসহ বাকি চরিত্রগুলো ভালো অভিনয় করেছে ঠিক, কিন্তু ছাপ ফেলতে পেরেছে কম। আশীষ খন্দকারের মতো দাপুটে অভিনেতার ভালো ব্যবহার হয়নি, ইলোরা গওহরকেও মানায়নি। কিছু অসামঞ্জস্যতা আছে। সম্ভবত বাজেটের অপ্রতুলতার কারণে বিমানবন্দর দেখানো হয়নি।

চিত্রগ্রাহকের দায়িত্বে সুমন সরকারসহ ছিলেন তিনজন। সম্পাদনায় সামির আহমেদ। খুব ভালো না হলেও চলনসই। তবে ভালো দিক হলো রঙিন ক্যামেরায় পুরো ছবিটা সাদাকালো ফরম্যাটে নিয়ে যাওয়া। এটা ভালো লেগেছে। আরো ভালো লেগেছে মোরগের মধ্য দিয়ে পূর্ববঙ্গকে বোঝানোটা। আরো কিছু রূপক অর্থে ভালো ছিল, যেমন ভাঙা রেডিওতে চিৎকার।

এই ছবিতে মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বের গল্প নেই, আছে শুধু পাকিস্তানের আর্মিদের গল্প। পর্দা জুড়ে শুধু দুঃখময়তার ছাপ, আর তাই দর্শকদের মধ্যেও ছিল নিরানন্দ। সেইজন্য যখন যেই আচমকা আকাঙ্ক্ষিত দৃশ্য এসে পড়ে তখন হল জুড়ে ছিল দর্শকদের হাততালি, কিন্তু সেটার রেশ কাটার আগেই সমাপ্তি টানা হয় ছবিটির।

নুরুল আলম আতিক মুক্তিযুদ্ধের একটি অধ্যায় বলতে চেয়েছেন। তার জন্য সাধুবাদ। সরকারি অনুদানের এই ছবি অনেকদিন আটকে ছিল, ছবিটি মুক্তি পেয়েছে এটাই স্বস্থির। চলচ্চিত্র নির্মাণে নিয়মিত হবেন এটাই আশা করি। আটকে থাকা বাকি ছবি দুটিও মুক্তি পাক খুব শিগগিরই, এই আশা রইলো।


Leave a reply