লোকাল পলেটিক্যাল থ্রিলার
লিডার
পরিচালক – দিলশাদুল হক শিমুল
শ্রেষ্ঠাংশে – মৌসুমী, ফেরদৌস, ওমর সানী, নিঝুম রুবিনা, বাপ্পারাজ, সোহেল খান, শহীদুল আলম সাচ্চু, আহমেদ শরীফ, মতিন রহমান, নাদের চৌধুরী প্রমুখ।
উল্লেখযোগ্য গান – আসছে লিডার
রেটিং – ৬.৫/১০
সব ছবি সব দর্শকের জন্য হয় না। সাধারণ দর্শকের মধ্যে একটা শ্রেণি আছে যারা নাচে-গানে-মারপিটে রমরমা ছবি দেখতে অভ্যস্ত এবং সেটাতেই স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে। কিছু দর্শক আছে একটা ভালো গল্প দেখতে চায় ছবিতে তার সাথে ভালো নির্মাণও। নির্মাণটা সবসময় যুৎসই হয় না বা সব নির্মাতারা দর্শক চাহিদায় নির্মাণ করতে পারে না। এসব বাস্তবতার ভেতর দিয়েই আমাদেরকে যেতে হয়। তারপরেও কিছু ছবি সাহসী উদ্যোগের মধ্যে পড়ে বিশেষভাবে পলেটিক্যাল স্টোরির ছবি। বর্তমান কালচারে অনেক নির্মাতারা যখন হরহামেশাই রোমান্টিক স্টোরির বাইরে গল্প দেখে না ‘লিডার’ ছবিটি সেখানে ভিন্ন কিছু।
দিলশাদুল হক শিমুল ‘লিডার’ ছবিটি অনেকটা লম্বা সময়ের জার্নিতেই নির্মাণ করেছেন। তাকে বেশকিছু সমস্যার মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে। যা হয় আমাদের ইন্ডাস্ট্রিতে পলেটিক্যাল স্টোরি বলতে গেলে সেন্সরের ছুরি-কাঁচির ভয় থাকেই। সে ধরনের বাস্তবতা হয়তো তাকে ফেস করতে হয়েছে। তথ্য মন্ত্রণালয়ের সার্টিফিকেট প্রাপ্ত হয়ে তবেই ছবিটি মুক্তি দিতে পেরেছেন তিনি। নতুন নির্মাতা হিসেবে তার এ বাস্তব লড়াই শ্রদ্ধা করার মতো বিষয়।
‘লিডার’ ছবিটি লোকাল পলেটিক্যাল থ্রিলার। একটি নির্দিষ্ট লোকাল এরিয়ার মধ্যে ক্ষমতা ও আধিপত্যের লড়াইয়ে নোংরা রাজনীতি ও সাধারণ জনগণের ভোটাধিকার প্রয়োগের মাধ্যমে যোগ্য লিডার খুঁজে নেয়ার পূর্ণাঙ্গ একটি গল্পের ছবি। ‘মানুষ রাজনৈতিক জীব’ এরিস্টটলের এ বাণী দিয়ে ছবির ব্যাকগ্রাউন্ড ডেসক্রিপশন শুরু হয়েছে এবং তা বিরতির পরও চলেছে। স্টোরি টেলিং-এর জন্য ব্যাকগ্রাউন্ড ভয়েসের ব্যবহার কাজে লেগেছে।
সুন্দরগাঁও এলাকার এক পাতি মাস্তান ক্ষমতার চর্চা করতে করতে একসময় এলাকায় নির্বাচন করার মতো পজিশনে চলে যায়। তার আধিপত্য বিস্তারের রাজত্বে যা খুশি তাই করতে থাকে এমনকি ….। অতপর বাস্তবতার দিকে যেতে থাকে নতুন করে।
লোকেশন বেশ ভালো। মফস্বল এলাকার সাথে সামুদ্রিক পরিবেশ দেখতে ভালো লেগেছে। ক্যামেরার কাজে ফারুকী যেমন ‘objectify treatment’-এ পর্দা কাঁপা সিন ব্যবহার করেন ঠিক সেই ব্যবহার ছিল। সম্ভবত প্রভাবিত ব্যাপার হতে পারে। গানের ব্যবহারে টাইটেল ট্র্যাকটি পুরো ছবিতে বিচ্ছিন্নভাবে ছিল সিচুয়েশন ডিমান্ডে ততটা হয়নি। তবে পরিচালক সাধারণ মানুষকে তুলে ধরতে, জনসভার দৃশ্য ফুটিয়ে তুলতে পরিশ্রম করেছেন বোঝা যায়। এ ধরনের দৃশ্য ধারণ করাটা বেশ চ্যালেঞ্জের কারণ আমাদের দেশের সাধারণ মানুষকে ক্যামেরায় অভিনয় করানোটা খুব কঠিন।
ছবির সবচেয়ে বেশি স্ক্রিনটাইম ফেরদৌসের। লোকাল পলিটিক্সে তার বেড়ে ওঠা, আধিপত্য, হত্যা, পরিণতি সবকিছু মিলিয়ে গল্পের প্রাণ। অভিনয় ভালো তবে প্রথমদিকে কিছু সমস্যা ছিল। সোহেল খান, শহীদুল আলম সাচ্চু, নাদের চৌধুরী, আহমেদ শরীফ এ তিনজন ভিন্নভাবে নেতার ভূমিকায় চমৎকার। মতিন রহমান চমক ছিল যদিও তাঁকে এর আগে তাঁর নিজের ছবিতে অভিনয় করতে দেখা গেছে। বাপ্পারাজ ক্যামিওতে ছিল। নিঝুম রুবিনা ফেরদৌসের শিকারের ভূমিকায় থাকলেও শেষে তাকে অন্যভাবে দেখা গেছে এবং অভিনয় মোটামুটি।
ছবির প্রধান আকর্ষণ মৌসুমী। সাম্প্রতিক সময়ে কিছু দুর্বল গল্পের ছবিতে তাকে দেখা গেছে এবং সমালোচিত হয়েছে। ‘লিডার’ এর গল্পে উপযুক্ত চরিত্রে দেখা গেল। পার্সোনালিটি বজায় রেখে কম কথায় কমপ্যাক্ট অভিনয় করে গেছে। তাকে দেখে মনে হয়েছে সত্যিই নির্বাচনে জনপ্রতিনিধি হয়েছে। চরিত্রে মিশে গিয়েছে। স্ক্রিনটাইম কম হলেও যতক্ষণ ছিল নিজের সহজাত চমৎকার অভিনয় করেছে। লাস্ট সিকোয়েন্সে সংবাদ সম্মেলনে মৌসুমীর কিছু এক্সপ্রেশন অসাধারণ ছিল। তবে পরিচালক তাকে আরো গভীরতা রেখে কাজে লাগাতে পারতেন। মৌসুমীসহ অন্যান্য তারকা মিলিয়ে ছবি মাল্টিস্টারার হয়ে গেছে। অনেকদিন পর এমনটা দেখা গেল।
পলেটিক্যাল থ্রিলারের ছবি আজকের সময়ে দেখা যায় না। ‘লিডার’ বাস্তবসম্মত ছবি। আমাদের ইন্ডাস্ট্রির বাস্তবতায় পলিটিক্সকে ছবির বিষষয়বস্তু করাটা সাহসের কাজ। সেদিক থেকে ‘লিডার’ ভালো পদক্ষেপ। থিম অনুযায়ী আরো ভালো নির্মাণ হলে ছবিটি বছরের অন্যতম সেরা কাজ হতে পারত। তারপরেও পদক্ষেপের জন্য সাধুবাদ থাকবে।
বি দ্র : ‘বাংলা চলচ্চিত্র’ গ্রুপের প্রধান অ্যাডমিন এবং কয়েকজন সক্রিয় সদস্যকে ছবির কৃতজ্ঞতা স্বীকারের নামের তালিকায় দেখা গেছে। গ্রুপের জন্য এটা একটা অর্জন। মৌসুমী ফ্যান ক্লাবের কয়েকজন সদস্যের নামও আছে যারা ছবিটির প্রচারণায় ভূমিকা রেখেছে। পরিচালকের প্রতি এজন্য কৃতজ্ঞতা।