লোকাল শাকিব খান ও ঢালিউড-টলিউড
আজকে ঢালিউডের যে ক্রান্তিকাল চলছে একসময় এই ক্রান্তিকাল ছিল টলিউডে। বাণিজ্যিক ছবির দিক থেকে তাদের মার্কেট ফল করা শুরু করেছিল নব্বই দশকে।
প্রসেনজিৎ একাই একটা সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছিল। তাদের বাণিজ্যিক ছবির সেট ছিল এঘর থেকে ওঘর পর্যন্ত। এই যখন পরিস্থিতি তারা ঝুঁকতে থাকে ঢালিউডের দিকে। লক্ষ্যটা ছিল নিজেদের ইনভলভমেন্ট বাড়ানো এবং আইডিয়া নেয়া। ঋতুপর্ণা থিতু হয়েছিল ঢালিউডে। প্রসেনজিৎ ছবি তেমন না করলেও ঢালিউডি ছবির অনুকরণে নিজে কিছু ছবিতে অভিনয় করেছিল তার ওখানে। এফডিসিতে কপিরাইট কেনার জন্য তাদের প্রযোজকরা আসত।
এসবের পাশাপাশি আমাদের অগ্রণী পরিচালক এ জে মিন্টু, দীলিপ বিশ্বাস, মতিউর রহমান পানু তাদেরকে নিয়ে যাওয়া হয় টলিউডে ছবি নির্মাণ করার জন্য। দীলিপ বিশ্বাস ওখানে অনেক ছবি নির্মাণ করেছেন। তারা উনাকে পছন্দ করেছিল তাঁর বাণিজ্যিক ছবির ভাষা বোঝার অসাধারণ দক্ষতা দেখে। নায়করাজ রাজ্জাককেও তাদের বেশকিছু ছবিতে অভিনয় করানো হয়েছিল। এভাবে আমাদের পরিচালকদের দিয়ে তারা তাদের বাণিজ্যিক ছবির একটা মোড় পরিবর্তন করেছিল। তারা বুঝেছিল তাদের জন্য খুব দরকার ছিল সেটা।
এই পটভূমি ছিল টলিউডি বাণিজ্যিক ছবির জেগে ওঠার জন্য। তারা তাদের স্বার্থের জন্য, ইন্ডাস্ট্রির চাঙ্গা ভাবের জন্য আমাদেরকে ঢাল হিশাবে ব্যবহার করেছিল। তাদের অ্যাসপেক্ট থেকে সেটা ঠিকও ছিল। বর্তমানে ঢালিউডের শীর্ষ নায়ক শাকিব খান টলিউডের কাছে সেই অতীতের নায়করাজ, এ জে মিন্টু, দীলিপ বিশ্বাস-দের মতো একটা হাতিয়ার যাকে দিয়ে তারা বাংলাদেশের মার্কেট থেকে তাদের লভ্যাংশ যেমন কামাই করছে তার পাশাপাশি তাদের ওখানকার দর্শক ধরারও চেষ্টা করছে। বলতে গেলে টলিউডের বর্তমান বাণিজ্যিক ছবির মার্কেট যে খুব ভালো তাও নয়। তারা হয়তো আমাদের মতো ক্রান্তিকাল পার করছে না তবে সীমাবদ্ধতা পার করছে। কয়েক বছর আগেও তাদের যে অবস্থান ছিল সেটা ফল করেছে।
ঢালিউডেও ডিজিটাল ছবির প্রথমদিকে যে অবস্থা ছিল এখন তা ফল করেছে। যৌথ প্রযোজনার চালাকিতে লোকাল প্রোডাকশন মুখ থুবড়ে পড়েছে যেখানে লভ্যাংশ টলিউডের বেশি। যে কোনো অ্যাঙ্গেল থেকেই তারা লাভবান হচ্ছে বেশি। মাঝখান থেকে টপ ইমেজে থাকা শাকিবকে তারা ব্যবহার করতে পারছে। শাকিব লোকাল প্রোডাকশনে কম ছবি করছে। কিন্তু একটা সময় যখন টলিউডে আবার তাদের ভালো সময়টা ফেরত আসবে শাকিব খানকে আর দরকার পড়বে না। তখন আশীষ বিদ্যার্থী, রজতাভ দত্ত, শ্রাবন্তী, পায়েল তাদের শাকিবকে নিয়ে বিশেষণ যোগ করাও থাকবে না আর। থাকবে না জয়দীপ মুখার্জী-র ছবিতে ঘন ঘন শাকিবকে নেয়ার আয়োজন।
শাকিব এখন নিজের হাই প্রোফাইল ইমেজে আছে তাই বিষয়টা বুঝতে পাচ্ছে না। তার যোগ্যতা দিয়ে সে কাজ করছে, জনপ্রিয়তাকে কাজে লাগাচ্ছে, ডেডিকেশন দিয়ে কাজ করছে সবই ঠিক আছে কিন্তু এগুলো লোকাল প্রোডাকশনে ব্যবহার করা উচিত তার। ‘সুপার হিরো’-র মতো ছবি দিয়ে সেটা হতে পারে। তার জনপ্রিয়তা ঢালিউডে বেশি তাই এখানকার দর্শকভক্তদের কথা তার ভাবা উচিত। তথাকথিত যৌথ প্রযোজনা বা টলিউডি লোকাল ছবিতে ঢালিউডি জনপ্রিয়তাকে কাজে লাগানো হচ্ছে এবং লভ্যাংশ বেশি পাচ্ছে তারা। তাদের অবস্থান আগের মতো পাকা হলে শাকিবকে আর তারা নেবে না শাকিব কি তা জানে বা বোঝে! না জানলে জানা উচিত অতীত ঘেঁটে, না বুঝলে বোঝা উচিত অতীত দেখে।
যে সময় প্রসেনজিৎ একা স্ট্রাগল করেছে টলিউডি ছবিকে দাঁড় করাতে সেরকম স্ট্রাগল শাকিবও করেছে মান্নার মৃত্যুর পর। তাদের খারাপ সময়ে আমাদের ব্যবহার করেছে কৌশলে আমরা আমাদের খারাপ সময়ে তাদের ব্যবহার করতে পারছি না। কৌশলটা তারাই উল্টো ব্যবহার করছে যেখানে লাভের অঙ্কে পাল্লাটা তাদেরই ভারি।
তাই স্ট্রাগল পিরিয়ডে যেসব ছবি শাকিব করেছে এবং নিজের অবস্থান পাকা করেছে সেগুলো লোকাল ছবি ছিল। আজকে অত পরিচালকও নেই তাকে ব্যবহার করার এটা সত্য তবে একদম যে নেই তা নয়। শোনা যায় লোকাল হলে তার ডেডিকেশন এখন টলিউডের মতো থাকে না এটা খুব হতাশাজনক। অথচ ডেডিকেশনটা থাকলে ‘সুপার হিরো, নোলক’ এগুলো আসতেই পারে। তার তো আর ছবি
ফ্লপের চিন্তা খুব বেশি নেই কারণ স্ট্রং ফ্যানবেজ আছে। সেটাকে কাজে লাগাতে লোকাল ছবিতে নজর দেয়া দরকার এতে করে ইন্ডাস্ট্রি লাভবান হবে।
শাকিব খান-এর মনে রাখা দরকার, ভারতবর্ষের নীতি হচ্ছে নিজেদের ভালোর জন্য অন্য জাতিকে কৌশলে ব্যবহার করা যাতে তাদের লাভ বেশি থাকে। এখন সময় থাকতে বুঝলে মঙ্গল নয়তো সময়টাই বেঁকে বসবে।