শপথের পরদিন জায়েদকে বয়কট, হলে মুক্তি পাবে না কোনো ছবি!
এর আগেও জায়েদ খানকে বয়কটের খবর শোনা গিয়েছিল। কিন্তু এ বিষয়ে কেউ নিশ্চিত করেননি। এবার আদালতের রায় পেয়ে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির সাধারণ সম্পাদক পদে শপথ গ্রহণের পরদিন তাকে বয়কটের ঘোষণা দিয়েছে ১৮টি সংগঠন। এটি বাস্তবায়ন হলে কোনো প্রদর্শকই জায়েদের ছবি প্রদর্শন করবে না।
শুক্রবার (৪ মার্চ) বিকেল সাড়ে ৪টায় জায়েদ খানকে শপথবাক্য পাঠ করান সভাপতি ইলিয়াস কাঞ্চন। জায়েদ খানের সঙ্গে মিশা-জায়েদ প্যানেল থেকে নির্বাচিত আরও চারজন শপথ নিয়েছেন। তারা হলেন সহসভাপতি ডিপজল, আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক জয় চৌধুরী, কার্যনির্বাহী সদস্য সুচরিতা ও অরুণা বিশ্বাস। এদেরও শপথবাক্য পাঠ করান সভাপতি।
শপথ পড়ানোর আগে সভাপতি ইলিয়াস কাঞ্চন সাংবাদিকদের বলেন, ‘গতকালই (বৃহস্পতিবার) জায়েদ খানের সঙ্গে আমার দেখা হয়েছে এবং কথাও হয়েছে। জায়েদ আমাকে ওর ল’ফার্মের একটা আদেশনামা দেখিয়েছিল। আমি তাকে বলেছিলাম এই ল’ফার্মের কাগজ দেখিয়ে হবে না। আমাকে কোর্টের সার্টিফাইড কপি দেখাতে হবে।
২৮ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত হয় চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির নির্বাচন। এতে প্রথমে সাধারণ সম্পাদক পদে জায়েদ খান নির্বাচিত হন। পরে অভিযোগের ভিত্তিতে জায়েদের পদ বাতিল হয় এবং নিপুণ হন সাধারণ সম্পাদক।
পরে ঘটনাটি হাইকোর্টে গড়ায়। সেখানে জায়েদকে সাধারণ সম্পাদক হিসেবে ঘোষণা করলে নিপুণ আপিল করেন এবং সাধারণ সম্পাদক পদটিতে স্ট্যাটাসকো বা স্থিতাদেশ দেয়া হয়।
একাধিকবার শুনানির পর বৃহস্পতিবার জায়েদকে আবারও বৈধ সাধারণ সম্পাদক হিসেবে ঘোষণা করেন হাইকোর্ট। এ রায়ের বিরুদ্ধেও আপিল করেছেন নিপুণ।
এ দিকে শনিবার (৫ মার্চ) চলচ্চিত্রের সব সংগঠনের কাছ থেকে জায়েদ খানকে বর্জনের ঘোষণা এল। শনিবার বিকেলে চলচ্চিত্রের ১৮ সংগঠনের এক যৌথ সভায় তাঁকে বর্জনের সিদ্ধান্ত হয়।
বাংলাদেশ চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতির প্যাডে ১৮ সংগঠনের আহ্বায়ক ও চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতির সভাপতি সোহানুর রহমান সোহান স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির নির্বাচনের দিন শিল্পী সমিতির সদস্য ছাড়া চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্ট অন্য সব সংগঠনের সদস্যরা এফডিসিতে ঢুকতে পারেননি। সেদিন অনেক নামী পরিচালক-প্রযোজক ও অন্যান্য কলাকুশলীরা গেটের সামনে দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করে ফিরে যান, যা ছিল চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সবার জন্য অশোভন ও অসম্মানজনক।
আর এ ঘটনার পেছনে শিল্পী সমিতির সদস্য জায়েদ খানের ভূমিকা প্রমাণিত হয়েছে বলে মনে করেন ১৮ সংগঠনের নেতারা। এ জন্য সব সংগঠন সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছে, জায়েদ খানের সঙ্গে কোনো কার্যক্রমে ১৮ সংগঠনের কোনো সদস্য অংশ নেবেন না। আজ থেকে জায়েদ খানকে আনুষ্ঠানিক বয়কট করা হলো।’
এ ব্যাপারে সোহানুর রহমান সোহান বলেন, ‘ইলেকশনের দিন এফডিসির ভেতরে ঢুকতে না দিয়ে আমাদের চরম অপমান–অপদস্থ তো করেছেনই, এ ছাড়া ফেসবুকে ঢুকলে দেখা যায়, তাঁকে নিয়ে যে পরিমাণ গালাগালি, ট্রল হয়, তাতে পুরো চলচ্চিত্র ইন্ডাষ্ট্রিকে সাধারণ মানুষের কাছে ঘৃণিত করেছেন এই জায়েদ খান।’ তিনি আরও বলেন, ‘এফডিসিতে আবার সেই পুলিশ পুলিশ খেলা শুরু করেছেন জায়েদ খান। গত পরশু এফডিসিতে পুলিশ ঢুকিয়ে শিল্পী, টেকনিশিয়ানদের বিরক্ত করেছেন। এসব আর মেনে নেওয়া যাবে না। সবদিক বিবেচনা করেই, সব সংগঠনের সঙ্গে আলোচনা করে তাঁকে বয়কট করা হয়েছে।’
এ নিয়ে জায়েদ তার প্রতিক্রিয়ায় বলেন, ‘যে কারণটা বলা হয়েছে সেটা অন্যায়। এটা এখন হাস্যকর বিষয় হয়ে গেছে, এই বয়কট, ওই বয়কট। সমস্যার সমাধান না করে সমস্যার দিকে ছুটে চলা।
‘এটা তো আমি আগেই বলেছিলাম, কোর্টের রায় যদি হয়, আমি যদি জয়লাভ করি, তাহলে কিছু লোক এটা করবে। এ পরিকল্পনা আগে থেকেই চলছে, এটা আসলে প্রি-প্ল্যানড।
‘যে কারণ দেয়া হয়েছে, শিল্পী সমিতির নির্বাচনের দিন আমি ঢুকতে দিইনি, সেটা এতদিন পর কেন এলো? সেখানে তো আমার কোনো দায়ভার নেই।’
‘যে চিঠিতে আমাকে বয়কটের আদেশ দেয়া হয়েছে, সে চিঠিতে যার স্বাক্ষর আছে, সেই সোহানুর রহমান সোহানই তো এফিডিসির এমডির কাছে বলে এসেছেন যে, কেউ আসবেন না, আপনি নির্বাচনের ডেটটা দেন। আমি আপিল বোর্ডের চেয়ারম্যান দায়িত্ব নিলাম, আমরা কেউ আসব না।
‘তারপর তেজগাঁও বিভাগের যিনি উপ-পুলিশ কমিশনার, তার কাছে দুই প্যানেলের পাঁচজন পাঁচজন ১০ জন মিলে নির্বাচন কমিশনারসহ মিটিং করে এসেছি যে এফডিসির এমডি, নির্বাচন কমিশনার মিলে যে সিদ্ধান্ত নেন, আমরা মেনে নেব।’
‘তার পরও আমার ওপর কেন দোষ চাপানো হবে। এতগুলো মানুষকে ঢুকতে না দেয়ার আমি কে, আমি তো একজন প্রার্থীমাত্র। এটা কোনো কারণই হতে পারে না।’
‘১৮ সংগঠনের মধ্যে তো শিল্পী সমিতিও আছে। ওনারা কি শিল্পী সমিতির প্রতিনিধির সঙ্গে আলাপ করেছেন? শিল্পী সমিতির কেবিনেট আছে, কাঞ্চন সাহেব, ডিপজল সাহেব, রুবেল সাহেব, কারও সঙ্গে কি আলাপ করেছেন।’
‘আমি কাউকে ঢুকতে দিইনি- এ অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে আমাকে তো তারা কোনো কিছু জিজ্ঞেস করেনি। তাদের কাছে তথ্য-প্রমাণ কিছুই নেই। মুখে মুখে যা মনে হলো পাঁচ-সাতজন মিলে তাই করছে তারা।’
‘প্রযোজক সমিতির বর্তমান নেতৃত্ব নেই। বর্তমানে প্রশাসক দিয়ে চলছে, কীভাবে ১৮ সংগঠন হলো? বিষয়গুলো খুবই হাস্যকর। সিনেমাকে আরও সার্কাসে পরিণত করা হচ্ছে।’
‘সোহান ভাই ভুল করেছে, অন্যায় করেছে, এখন সেগুলো ঢাকার জন্য অনেক কিছু করবে। কাউকে বয়কট করতে চাইলে তো সমিতির অভ্যন্তরীণ মিটিং লাগে। আমি পরিচালক সমিতির সাধারণ সম্পাদককে ফোন করলাম, তিনি বললেন কিছুই জানেন না। তাহলে এগুলো কীভাবে হয়।’