
শরিফুল রাজ পর্দায় থাকলে তাকে ছাড়া আর কিছু চোখে পড়ে না?
সঞ্জয় সমাদ্দার পরিচালিত ‘ইনসাফ’ সিনেমার রিভিউ করেছেন পরিচালক দীপংকর দীপন। সেখানে ঈদুল আজহার সিনেমাটির বিভিন্ন বিভাগ নিয়ে বিশ্লেষণ উঠে এসেছে, যার প্রায় পুরোটাই প্রশংসানির্ভর। বিশেষ করে অভিনেতা শরিফুল রাজকে নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছেন। হালের ঢাকাই সিনেমার অন্যতম এ তারকা সম্পর্কে বলতে গিয়ে লেখেন, ‘যতক্ষণ স্টার স্ক্রিনে থাকে- স্ক্রিনে তাকে ছাড়া আর কিছু চোখে পড়ে না।’ যার সাপেক্ষে দীপন কিছু যুক্তি ও উদাহরণ দেন।

পড়ুন ‘ঢাকা অ্যাটাক’ নির্মাতার পুরো রিভিউ—
ইনসাফ দেখলাম।
ইনসাফে একটি ভালো গল্প আছে- এবং গল্পের বেসিক লাইনটা খুব ইউনিক। আমি এর আগে কোন সিনেমায় এই গল্পের লাইনটা দেখেছি বলে মনে পড়ে না। ক্রাইম ও ইনভেস্টিগেশনকে লাভ অ্যাঙ্গেলের সাথে এভাবে আর কোন সিনেমায় ব্লেন্ড হয়েছে বলে আমার জানা নাই। হিরো আর হিরোইন দুজনের ভূমিকা খুব ভালোভাবে ব্যালেন্সড। ছবিটা এন্টারটেইনিং- চিত্রনাট্য ভালো- গড়গড় করে এগিয়ে যায়। মুল ক্যারেক্টারকে খোঁজায় জায়গা থেকে গল্পের শুরু – এই অ্যাপ্রোচটাও বেশ অভিনব।
তাসনিয়া ফারিণকে প্রথম এইভাবে দেখলাম- বেশ ভালো লেগেছে। গ্ল্যামারাস লেগেছে- তাসনিয়া ও অভিনয় ভালো করেই – এটা নতুন করে বলার কিছু নেই। তাসনিয়া তার অভিনয় থেকে বেরিয়ে একটু লার্জার দ্যান লাইফ অভিনয় করার চেষ্টা করেছে- সিনেমা বলে। সেটা দু-একটা জায়গায় একটু বেশি হয়েছে- আরেকটু টোন ডাউন রাখলেও চলতো। সিনেমায় লাউড অ্যাক্টিংও লেগে যায়- যদি ক্যারেক্টার সেটি ওভালো অল ক্যারি করে। তাসনিয়ার ক্যারেক্টারে সেই সাপোর্ট ছিল না – এছাড়া তাসনিয়া খুব ভালো। আমি যতটুকু তাসনিয়া কে চিনি পরের সিনেমায় ও এটা ফিক্স করে ফেলবে। কর্মাশিয়াল সিনেমায় তাসনিয়া ভালো করবে। তাসনিয়াকে কর্মাশিয়াল সিনেমায় চাই।
আমার রাজকে খুব ভালো লাগে— এটা আমি অনেক বার বলেছি। একজন স্টারের সবচেয়ে বড় গুন হচ্ছে তার স্ক্রিন প্রেজেন্স। যতক্ষণ স্টার স্ক্রিনে থাকে- স্ক্রিনে তাকে ছাড়া আর কিছু চোখে পড়ে না। এটাই স্টার আর ক্যারেক্টার আর্টিস্টের পার্থক্য। ক্যারেক্টার আর্টিস্ট সিনে মিশে যায়- তাদের আলাদা করা যায় না। যাদের মধ্যে স্ক্রিন পেজেন্স এর ম্যাজিকটা থাকে – তার স্ক্রিনে চুপচাপ বসে থাকলেও চোখ তোদের দিকে যায়। বলা হয় এই উপমহাদেশে সবচেয়ে বেশি এই স্ক্রিন প্রেজেন্স ম্যাজিকওয়ালা অ্যাক্টর শাহরুখ খান।
যাদের এই গুণটা নাই তাদের স্ক্রিনে চোখে পড়ার জন্য নানা কায়দা হয়। এফ জাতীয় শব্দ বারবার বলতে হয় – বা ডায়লগবাজি করতে হয় বা অন্য ক্যারেক্টার দিয়ে সেই ক্যারেস্টার আপলিফ্ট করতে হয়। যাদের এই স্ক্রিন প্রেজেন্স ম্যাজিকটা আছে- তারা স্ক্রিনে চুপচাপ বসে থাকলেও দর্শকের চোখ সরে না। শরীফুলের রাজের সেটা আছে। দেয়ালের দেশে দেখবেন- শরীফুল রাজ খুব পেইল একটা লুকে- মলিন জামাকাপড়ে অনেক জায়গায় ভীষণ আন্ডার টোনে কাজ করেছে- কিন্তু তারপরও পুরো স্ক্রিন জুড়ে শুধু তাকেই দেখা গেছে। শবনম বুবলিও দেয়ালের দেশে নায়িকা সুলভ অ্যাপ্রোচ থেকে অনেকটা সরে এসেছিল- কিন্তু তার রাজের মত সাদামাটা হতে পারেনি বা চায়নি। নায়িকার একটা গ্রেস বুবলির মধ্যে রয়ে গিয়েছিল। কিন্তু রাজের ভীষন গ্রেসলেস লুকও- দর্শককে আকৃষ্ট করে রেখেছিল। সেই রাজ ইনসাফের আরো অনেক বেশ স্পেস পেয়েছে ক্যারেক্টার লাইনের কারণে। রাজ হিরোইক কিছু করার চেষ্টা করে না। কিন্তু স্ক্রিন সে থাকলে আর কিছু চোখে পড়ে না। রাজকে ইনসাফেও আমার খুব ভালো লেগেছে।

সবশেষে একটা জরুরি কথা। ইনসাফের ভায়োলেন্স আছে কিন্তু তা নিয়ে আমার কোন আপত্তি নাই। ভায়োলেন্সকে এখানে সিচুয়েশনের ডিমান্ড হিসাবে দেখানো হয়েছে, জাস্টিফাই করা হয়নি। আমার কথাটা এই জায়গায়- ভায়োলেন্স-ড্রাগ- অ্যারোগেন্স- ব্রুটালিটি- মোট কথা সব নেগেটিভ জিনিষ সিনেমায় আসতেই পারে কিন্তু সেটা জাস্টিফাই কোন সেনসিবল মেকার করবে না। কোন সেনসিবল মেকার নারীদের ছোট করবে না – সেটা যত জনপ্রিয় হোক না কেন। সঞ্জয় সেটা করে নাই। তাই এ গ্রেড সার্টিফিকেশন পাবার পরেও ইনসাফকে আমার কাছে সেনসিবল সিনেমা মনে হয়েছে। শেষের ৩০ মিনিট নিয়ে কিছু কথা হতে পারে- কিন্তু সঞ্জয় ইনসাফ ২ এ সেগুলো জাস্টিফাই করে দেবে এই বিশ্বাস আমার আছে।
আরেকটা কথা ইনসাফের অনেকগুলো ভালো দিকের মধ্যে সিমিত দার এডিটিং আমার খুব ভালো গেছে। ইনসাফ ওয়েল এডিটেড ছবি- একটু ব্রিদিং স্পেস এর কথা আমার এক পরিচালক বন্ধু বলেছে- তারপরেও দেয়ালের দেশ এর পরে ইনসাফ আমার কাছে সিমিত রায় অন্তর এর সেরা কাজ হয়ে থাকবে।
খসরু ভাইকে ধন্যবাদ। সঞ্জয়কে সিনেমাটি প্রডিউস করার জন্য। এই ভাবে সিনেমাকে সাপোর্ট করে যান। দর্শককে বলবো, ইনসাফ সিনেমা হলে দেখুন। বানিজ্যিক সিনেমার একটা ভালো টেস্ট পাবেন। যেটা সিনেমা হল ছাড়া হয় না, মোবাইল বা টিভিতে এই ধরনের সিনেমা ম্যারম্যার লাগে। সিনেমা হলে দেখুন, জোশ পাবেন।