Select Page

শাকিবের বন্ধু কারা : ভক্ত না সমালোচক

শাকিবের বন্ধু কারা : ভক্ত না সমালোচক

শাকিবের বন্ধু ভক্ত না সমালোচক

শাকিব খান বিষয়ে কথা বলতে গেলে সত্যটা যখন সামনে চলে অাসে মান-সম্মান নিয়ে চিন্তাভাবনার অবকাশ থাকে। সম্ভবত এ বিষয়টা শাকিবের সব সমালোচকের মধ্যেই টেনশন হিশাবে কাজ করে। টেনশন না হলেও অন্তত বিষয়টা নিয়ে ভাবতে হয় তাদের।

শাকিব খানের ভক্ত অার সমালোচকের মধ্যে একটা বিরাট পার্থক্য অাছে। ভক্তরা তাকে যত বড় করে সমালোচকরা তত বড় করে না। সমালোচকদের শিক্ষা দেবার উদ্দেশ্যে তার ভক্তরা অনেককিছুর অাশ্রয় নেয়। সেগুলো ব্যবহারের দিক থেকে নীচু কিছু উপায় (যেমন – কমেন্টবক্সে বা ইনবক্সে গালিগালাজ) অার একটা হলো নিজেদের মনগড়া কথা একের পর এক বলার মাধ্যমে বিনোদনধর্মী পরিবেশ তৈরি করা। এর থেকে বের হওয়ার প্রয়োজন তারা বোধ করে না যেটা তাদের রোগের মতো হয়ে গেছে দিনকে দিন।

শাকিব খান বর্তমান ঢালিউডের অবধারিত নাম। তার পেছনের গল্পটা অবশ্যই সংগ্রামের। সে সংগ্রামের কিছু ইতিহাসকে অন্যভাবে ব্যাখ্যা করতে চায় তার ভক্তরা অার সেটাকে খণ্ডন করে তার সমালোচকরা। ভক্তদের থেকে সমালোচকদের অবদান সবচেয়ে বেশি শাকিব খানের ক্যারিয়ারে। সেটা কেন ও কীভাবে লেখাটি পড়তে পড়তে পরিষ্কার হওয়া যাবে।

১৯৯৯ সালে যখন শাকিবের অাগমন অামরা তখন স্কুলের ছেলেপেলেরা নতুন নায়কের অাগমনে খুশিই ছিলাম। তার লুক তখন স্মার্ট ছিল।অভিনয়টাও ভালো ছিল ‘অনন্ত ভালোবাসা‘-তে। পরিচালক সোহানুর রহমান সোহান সাহেব যাদেরকে ব্রেক দিয়েছেন তাদের মধ্যে শাকিব অন্যতম।শাকিবের অাগমনের সময় ইন্ডাস্ট্রিতে নায়কের অভাব ছিল না। জসিম, কাঞ্চনদের পরে লং টার্ম রাজত্ব করা নায়ক মান্না তখন শীর্ষে। মান্নার পাশাপাশি ইন্ডাস্ট্রিতে কাজ করছিল অামিন খান, রিয়াজ, ফেরদৌস, শাকিল খান-রা। তারা সবাই তখন ব্যস্ত তারকা।শাকিবকে স্ট্রাগলটা করতে হয়েছে ভালোমতোই। মান্নার সাথে ‘সিটি টেরর‘-এর মতো দুর্দান্ত অ্যাকশন সিনেমা করেছে অাবার রিয়াজের সাথে ‘স্বপ্নের বাসর, ও প্রিয়া তুমি কোথায়’ করেছে। অামিন খানের সাথে ‘ফুল নেব না অশ্রু নেব’ করেছে অাবার অন্যদিকে ফেরদৌসের সাথে ‘সবার উপরে প্রেম, অামার স্বপ্ন তুমি’ করেছে।অামিন খান, রিয়াজ, ফেরদৌস তাদের সিনেমাগুলোতে শাকিবের গুরুত্ব থাকলেও সেটা ছিল নিজেকে স্ট্রাগল পিরিয়ডে রেখে সারভাইভ করা।এককভাবে ‘খুনী শিকদার’ এর মতো সিনেমা করেছে নিজেকে প্রমাণ করার জন্য এবং সে তা পেরেছেও। এসবের মধ্য থেকে একজন তারকা তার ক্যারিয়ারে সবচেয়ে বড় অবদান রেখেছে বা সরাসরি বললে তাকে ফ্লোর বা প্ল্যাটফর্ম দিয়েছে সে তারকার নাম শাবনূর। হ্যাঁ, শাবনূরের সাথে ‘স্বপ্নের বাসর, ও প্রিয়া তুমি কোথায়, অামার স্বপ্ন তুমি, নাচনেওয়ালী, ফুল নেব না অশ্রু নেব, প্রেম সংঘাত, নয়ন ভরা জল’ এসব সিনেমায় নিজেকে মেলে ধরতে পেরেছে শাকিব কিন্তু শাবনূরের মতো বিগেস্ট সুপারস্টারের সামনে শাকিবকে বেগ পেতে হয়েছে প্রচণ্ড যেটি ঐ দর্শকরাই স্বাক্ষী যারা শাবনূর-শাকিব জুটির সিনেমা সিনেমাহলে বসে দেখেছে। যেখানে অন্য নায়ক যেমন রিয়াজের মতো পারফেক্ট অলরাউন্ডার নায়ককেও শাবনূরের সাথে সিনেমা না করার সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছিল প্রিন্ট মিডিয়ার লেখালেখির কারণে। রিয়াজ অসাম পারফর্মার ছিল তারপরেও বাস্তবটা ছিল অালাদা। সেখানে শাকিবকে বেগটা পেতেই হয়েছে এবং সেটা শাবনূরের সাথেই শুধু নয় হালনাগাদ মান্না, অামিন খান, রিয়াজ, ফেরদৌস-দের সাথে। শাকিব তাদের সাথে কমপিটিশন করে তার জায়গা পরবর্তীকালে তৈরি করেছে সেটার অালাদা ডিমান্ড অাছে কিন্তু তার পথটা এত সহজ ছিল না।

এই যে পটভূমিটা বলা হলো এর কারণ শাকিব খানের হাল অামলের সেইসব ভক্তদের জন্য যারা পটভূমিটা ঠিকমতো না জেনে তাদের মনমতো নানা নতুন ইতিহাসের জন্ম দিচ্ছে। বিষয়টাকে খেলো বানিয়ে তারা সবার থেকে বড় সুপারস্টার বানাচ্ছে শাকিবকে অথচ ভুলে যাচ্ছে শাকিবের পেছনের সুপারস্টার কারা ছিল। সে যাদের সাথে কমপিটিশন করে এসেছে তারা তার সময়েই অনেক বড় জায়গায় ছিল অন্তত মান্না, অামিন খান, রিয়াজ, ফেরদৌস-রা। অার শাবনূর তাকে যে স্পেস দিয়েছিল সেটার জন্য পরবর্তী সময়ে ইন্ডাস্ট্রি সারভাইভ করার দায়িত্বটা পালন করতে পেরেছে। অপু বিশ্বাসকে নিয়ে শাকিব খানের ভক্তদের কিছু অহেতুক উল্লাস চোখে পড়ে যেগুলো শাকিব খানের পেছনের ইতিহাসের তুলনায় কোয়ালিটিতে বেমানান।একজন অপু বিশ্বাস শাকিব খানের ক্যারিয়ারে শুধুমাত্র ইন্ডাস্ট্রি টিকিয়ে রাখার কাজটা ছাড়া (সেটাও বিতর্কিত) কোনো বিশেষত্ব দিতে পারেনি যেখানে শাকিবকে দাঁড় করাতে তার অাগে শাবনূরের মতো বিগেস্ট সুপারস্টার ছিল। ইতিহাস ব্যাখ্যা করার কাজটা তাই শাকিব খানের অামুদে, বিনোদনধর্মী (সবাই না) ভক্তরা বিকৃত করে প্রচার করে যেটি শাকিব খানের ইমেজকে নষ্ট করে। শাকিব নিজে সে বিনোদনে প্রায়ই অংশগ্রহণ করে তার সিনেমা সিলেকশনের সমস্যার কারণে। ‘অপারেশন অগ্নিপথ, শিকারী, নবাব‘ এসব সিনেমার কথাতে শাকিবকে সিনেমা সিলেকশনে অাপডেটেড ভাবা গেলেও এর পাশাপাশি অ্যাভারেজ ‘মেন্টাল, শ্যুটার, অহংকার’ এসবে অাবার পুরনো সমস্যার অাভাসে গোলমেলে লাগে তাই ট্রল, সার্কাজম তার জন্য বরাদ্দ থাকেই।

অার একটা সত্য বিষয় হচ্ছে মান্না, অামিন খান, রিয়াজ, ফেরদৌস, শাকিল খান তাদের কোয়ালিটিতে যে ধরনের কাজ লুক ও অভিনয় ছিল সেটা থেকে বেরিয়ে শাকিব দীর্ঘ ক্যারিয়ারে বর্তমানে অভিনয়টা ঠিকঠাক করলেও তাদের মতো সর্বমহলে গ্রহণযোগ্য হতে অনেক বড় সময় পার করেছে এবং বলতে গেলে তার প্রক্রিয়াটা এখনো চলছে যেটি অাগে হওয়া উচিত ছিল।

মোটের উপর শাকিব খান অনেক দেরিতে অনেক জরুরি কোয়ালিটিগুলো অর্জন করেছে যেগুলো তার পরে ইন্ডাস্ট্রিতে ইন করে কেউ না কেউ দেখিয়েছে। শাকিবের এই ভারসাম্যহীন স্টারডমকে তার ভক্তরা নিচের দিকে নিয়ে যাচ্ছে তাদের বোকামির মাধ্যমে অথচ তাদের সংযত থাকা উচিত।

শাকিব খানের যতটুকু পরিবর্তন হয়েছে নিকট অতীতে তার জন্য সমালোচকদের ট্রল, সার্কাজম এসবের কারণে হয়েছে তার ভক্তদের একঘেয়েমি অযৌক্তিক সর্বসেরা বানানোতে শাকিবের নাম ডুবেছে। ভক্তরা ভক্ত হতেই পারে, তাদের কাছে শাকিব খান সেরা হতেই পারে তবে সেটা অাবেগে যুক্তি, বাস্তবে নয়। কারণ শাকিব খানের অাগেও বাংলাদেশী ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি বড় সুপারস্টার ছিল যাদের কারণে অাজ পর্যন্ত টিকে অাছে ইন্ডাস্ট্রি। শাকিবের অবদানও সেখানে অাছে তবে সেটাকে সবার চেয়ে বেশি বা সেরা বলাটা অন্যায়। সচেতন না হলে শাকিবের ঐ পাঁড় ভক্তরাই অাগামী দিনেও তাকে ডোবানোর জন্য যথেষ্ট। শাকিবের বাকি ক্যারিয়ারটি সচেতনভাবে কোয়ালিটিফুল কাজে যেন শেষ হয় ভক্তদের সেদিকে দৃষ্টি দিতে হবে।ভক্ত হলেই সমালোচক হওয়া যাবে না এমন মানসিকতা ছাড়তে হবে। ভক্তের সমালোচনাই তারকাকে প্রপারলি গাইড করতে সক্ষম।তাই শাকিবভক্তদের প্রতি অনুরোধ গড্ডলিকা প্রবাহে গা না ভাসিয়ে সমালোচক হন। শাকিবকে ভালোবাসুন কিন্তু যেটা শাকিবকে এগিয়ে নেবে সেটাই বলুন যেটা তাকে ছোট করবে সেটাকে ‘না’ বলুন। এমন কিছু করবেন না যা শাকিবের নিজের কাছেই লজ্জার কারণ হয়।


Leave a reply