
শাকিব খানের পারিশ্রমিক কোটি ওপরে না নিচে, পাওয়া যাচ্ছে পরস্পরবিরোধী তথ্য
ঢাকাই চলচ্চিত্রের তারকাদের পারিশ্রমিক নিয়ে খুব বেশি তথ্য পাওয়া যায় না। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে তা অনুমাননির্ভর ও এজেন্ডাভিত্তিক তথ্য প্রকাশ হয়। এমনকি তাদের আয়করের অংকও জানা যায় না। মাঝে মাঝে এমন কিছু খবর এলেও তা সরাসরি যাচাইয়ের উপায় থাকে না। সম্প্রতি নায়িকাদের পারিশ্রমিক প্রকাশ করেছে প্রথম আলো, সেখানে কিছু অবিশ্বাস্য অংক দেখা গেছে। যেমন কোনো সিনেমা হিট করেনি এমন নায়িকাই পাচ্ছেন সবোর্চ্চ অঙ্ক। আবার একই পত্রিকা যখন শাকিব খান ও অন্য নায়কদের পারিশ্রমিক প্রকাশ করে, তখনও বিতর্কে অবকাশ থেকে যাচ্ছে। এরই মধ্যে বিপরীত প্রতিক্রিয়া জানিয়ে খবর প্রকাশ করেছে কালের কণ্ঠ। এতে প্রধান বিতর্ক হলো শাকিব খানের পারিশ্রমিক কোটির ওপরে না নিচে? তবে একটা বিষয়, প্রথম আলোর প্রতিবেদনটি তুলনামূলক সুসংগঠিত।

প্রথম আলো বলছে, ১৯৯৯ সালে অভিষেক সিনেমা ‘অনন্ত ভালোবাসা’য় শাকিবের পারিশ্রমিক ছিল লাখ টাকার কম। ২০০৬ সালে ‘কোটি টাকার কাবিন’ দিয়ে প্রথম ব্লকবাস্টারের দেখা পান শাকিব। একই বছর সুপারহিট হয় ‘চাচ্চু’, ‘দাদীমা’, ‘পিতার আসন’। আগের বছরই অবশ্য ‘আমার স্বপ্ন তুমি’ দিয়ে নজর কাড়েন শাকিব। ধীরে ধীরে ঢালিউডের সফল ও জনপ্রিয় অভিনেতা হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেন। ২০০৮ সালের শেষে হঠাৎ করেই পারিশ্রমিক বাড়িয়ে দেন শাকিব। ছবিপ্রতি ৪০ লাখ টাকা নেন। আর ‘প্রিয়তমা’ ব্লকবাস্টার হওয়ার পর থেকে লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়তে থাকে এই পারিশ্রমিক। গেল কয়েক বছরে ‘প্রিয়তমা’, ‘রাজকুমার’, ‘তুফান’, ‘দরদ’-এ দফায় দফায় দর বাড়িয়েছেন শাকিব। এ বছরের ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহায় মুক্তি পাবে শাকিবের ‘বরবাদ’ ও ‘তাণ্ডব’। বছর শেষে শাকিবের আরেকটি ছবি মুক্তি পেতে পারে। ছবি তিনটির প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানের একাধিক সূত্র জানিয়েছে, এখন সিনেমাপ্রতি তার পারিশ্রমিক দেড় কোটি টাকা।
অন্যদিকে কালের কণ্ঠ বলছে, শাকিব খান এখন পর্যন্ত কোনো সিনেমার জন্য কোটি টাকা পারিশ্রমিক নেননি। সূত্র জানাচ্ছে, ‘প্রিয়তমা’ সিনেমায় ৩৫ লাখ টাকা পারিশ্রমিক নেন শাকিব। এরপর সিনেমা তুমুল হিট করায় তার পরবর্তী সিনেমা ‘রাজকুমার’-এ তিনি নেন ৬৫ লাখ টাকা। ‘দরদ’ সিনেমায় নেন বরাবর ৭০ লাখ, এবং ‘তুফান’-এ এই নায়ক হাঁকান ৮০ লাখ টাকা। এরপর ‘বরবাদ’ সিনেমায় শাকিব খান প্রাথমিকভাবে চুক্তি হন ৮০ লাখে। এরপর শুটিং শেষে সিনেমাটি ঈদে মুক্তি দেওয়ার চুক্তিতে তিনি কৌশলে পারিশ্রমিক আরো বাড়িয়ে নেন, যা মোট প্রায় ৯৫ লাখ টাকা। এখন পর্যন্ত তিনি সর্বোচ্চ নিচ্ছেন ‘তাণ্ডব’ সিনেমায়। এই সিনেমার জন্য তিনি নিচ্ছেন ৯০ থেকে ৯৫ লাখের মধ্যে।
প্রথম আলোর প্রতিবেদন অনুসারে, ছবিপ্রতি বর্তমানে ১৫-২০ লাখ টাকা পারিশ্রমিক নিয়ে থাকেন শুভ। এই পারিশ্রমিকের হার ওঠানামাও করে বলে জানালেন সংশ্লিষ্ট প্রযোজক-পরিচালকেরা। অন্যদিকে ছবিপ্রতি এখন ১৫-২০ লাখ টাকা নিচ্ছেন শরিফুল রাজ। কখনো তা ২৫ লাখও হয়, এমনটাই জানিয়েছেন তাঁর সঙ্গে কাজ করা প্রযোজক-পরিচালকেরা।
কালের কণ্ঠ বলছে, আরিফিন শুভ সিনেমাপ্রতি নেন ১৫ লাখ টাকা। ঠিক একই পারিশ্রমিক নেন চিত্রনায়ক শরিফুল রাজও। ‘ওমর’ সিনেমার জন্য তিনি ১৫ লাখ নিয়েছেন বলেই খবর।
এদিকে দুই পত্রিকার দেয়া তথ্য অনুসারে, শাকিব খানের পর সর্বোচ্চ পারিশ্রমিক নেন টিভির জনপ্রিয় মুখ ও সিনেমায় নবাগত আফরান নিশো। বিশ্বস্ত একাধিক সূত্রের বরাত দিয়ে প্রথম আলো জানিয়েছে, প্রথম ছবি ‘সুড়ঙ্গ’-এ আফরান নিশোর পারিশ্রমিক ছিল ২০-২৫ লাখের ঘরে। দ্বিতীয় ছবি ‘দাগি’তেও নিশোর পারিশ্রমিক ২০-২৫ লাখের ঘরে। তবে কালের কণ্ঠ বলছে, ‘সুড়ঙ্গ’ ও ‘দাগি’ দুই সিনেমার জন্যই নিশো নিয়েছেন ৩০ লাখ টাকা করে।
প্রথম আলোর প্রতিবেদন অনুসারে, অভিষেক সিনেমা ‘পোড়ামন ২’ এ সিয়াম আহমেদের পারিশ্রমিক ছিল পাঁচ লাখের ঘরে। ঈদে মুক্তি পেতে যাওয়া ‘জংলি’ ছবিতে সিয়ামের পারিশ্রমিক ৮-১২ লাখ টাকার মধ্যে। অন্যদিকে কালের কণ্ঠ বলছে, ‘জংলি’ সিনেমার জন্য কোনো পারিশ্রমিক নেননি সিয়াম আহমেদ। একাধিক সূত্র জানিয়েছে, সিনেমাটি থেকে এই নায়ক পারসেন্টেজ অর্থাৎ লভ্যাংশ নেবেন। তবে এই নায়ক সিনেমাপ্রতি ১৫-২০ লাখ টাকা নিয়ে থাকেন।
প্রথম আলোর প্রতিবেদন থেকে জানা যাচ্ছে, ছবিপ্রতি জিয়াউল রোশানের বর্তমান পারিশ্রমিক ৮-১০ লাখ টাকা। ইমনের ছবিপ্রতি পারিশ্রমিক ৫-৭ লাখ টাকা। দীর্ঘ অভিনয়জীবনে মালয়েশিয়ার ‘বাংলাশিয়া’ ছবিতে সর্বোচ্চ ১৫ লাখ টাকা নেন নিরব। তবে এখন তিনি ছবিপ্রতি নিচ্ছেন ৭-১০ লাখ টাকা। তুলনামূলক নবীব আদর আজাদ নেন ৩-৫ লাখ টাকা। এক সময় ছবিপ্রতি ১০-১২ লাখ টাকা পারিশ্রমিক নিতেন বাপ্পী চৌধুরী, সাইমন সাদিক নিতে ৭-১০ লাখ টাকা। এছাড়া জায়েদ খানের পারিশ্রমিক ছিল ৩ লাখের ঘরে। এদিকে কালের কণ্ঠ জানাচ্ছে, চিত্রনায়ক বাপ্পী চৌধুরী নেন ৫-১০ লাখের মধ্যে এবং সাইমন সাদিকের পারিশ্রমিক ৩ থেকে ৫ লাখের ঘরে। এ ছাড়া চিত্রনায়ক নিরব ও ইমন সিনেমাপ্রতি ৩-৫ লাখ টাকা পারিশ্রমিক পেয়ে থাকেন। এদিকে আদর আজাদ এবং জিয়াউল রোশান দুজনেই নেন সিনেমাপ্রতি ৫ লাখ টাকা।