শাকিব যখন ‘আমদানি পণ্য’
সার্কভুক্ত দেশগুলো তাদের ব্যবসার স্বার্থে ২০০৪ সালে একটি মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি করে যেটি ‘সাফটা’ চুক্তি নামে পরিচিত। ২০০৬ সালের ১ জানুয়ারি থেকে সাফটা কার্যকর হয়। এ চুক্তির মাধ্যমে সম্প্রতি চলচ্চিত্র বিনিময় শুরু করেছে বাংলাদেশ ও ভারত।
চুক্তি অনুযায়ী বাংলাদেশে একটি ভারতীয় ছবি আমদানির বিপরীতে একটি বাংলাদেশি ছবি ভারতে রপ্তানি করতে হবে। বাংলাদেশ সরকারের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ সালের গেজেটে ষষ্ঠ অধ্যায়ের ২৬ অনুচ্ছেদের ৪৯(গ)-তে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে নির্মিত চলচ্চিত্র রপ্তানির বিপরীতে সাফটাভুক্ত দেশগুলো থেকে সমানসংখ্যক চলচ্চিত্র তথ্য মন্ত্রণালয়ের অনাপত্তি সাপেক্ষে আমদানি করা যাবে।
কিন্তু বিপত্তি অন্য জায়গায়। সাফটা চুক্তির মাধ্যমে বাংলাদেশে আমদানি করা ছবিগুলো বাংলাদেশের উল্লেখযোগ্য সংখ্যক হলে মুক্তি পেলেও বাংলাদেশ থেকে রপ্তানি করা ছবিগুলো ভারতের অজপাড়া, মফস্বলের হাতে গোনা কয়েকটি হলে প্রদর্শিত হচ্ছে।
তবে এবার সেই চিত্রপট পাল্টেছে কিছু ক্ষেত্রে ।
প্রথমত, এর আগে যৌথ প্রযোজনায় নির্মিত ‘শিকারি’ আর ‘নবাব’ ছবিতে শাকিব খান থাকলেও শুধুমাত্র কলকাতার প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান এসকে মুভিজের একক প্রযোজনায় নির্মিত ‘চালবাজ’-এ এবারই প্রথম তিনি অভিনয় করছেন ।
দ্বিতীয়ত, এর আগে সাফটা চুক্তিতে বাংলাদেশে মুক্তিপ্রাপ্ত ছবিগুলো ছিল কলকাতার কাস্টিংয়ে ভরপুর। ‘ককপিট’ ‘ইন্সপেক্টর নটি কে’ কিংবা ‘জিও পাগলা’ ছিল পুরোপুরি কলকাতা প্যাকেজ ।
আর জাজ মাল্টিমিডিয়া বা অন্যান্য আমদানিকারকের ডিস্ট্রিবিউশনে হল পেলেও দর্শক সমাদৃত হয়নি ছবিগুলো। যদিও হল মালিকদের ধারণী, মুক্তিহীন সপ্তাহ যাবার থেকে এই আকালে আমদানিকৃত ছবি এলেও তারা খুশি। তবে, শাকিব খান দেশীয় চলচ্চিত্রে বর্তমান সময়ের ‘হট কেক’ হওয়ায় ‘চালবাজ’ এর ক্ষেত্রে দৃশ্যপট ভিন্ন হবেই। ইতিমধ্যে ছবিটি এন ইউ আহামেদ ট্রেডার্সের ডিস্ট্রিবিউশনে শতাধিক হলে ছবিটি মুক্তি পেয়েছে। আর দুপুরের শোগুলোতে হাউজফুল গেছে।
তবে, শাকিব খান এভাবে পুরোপুরি কলকাতার প্রোডাক্ট হওয়ায় চলচ্চিত্র মহলে অনেকেই নাখোশ। যদিও এর আগে বিদ্যা সিনহা মিম কিংবা নুসরাত ফারিয়া নায়িকা হিসেবে ইতিমধ্যে এই দলে ভিড়েছেন, তবে নায়ক হিসেবে শাকিবই প্রথম। জয়া আহসান ওপার বাংলায় জনপ্রিয় ও নন্দিত হলেও তার উদাহরণ শাকিবের জন্য দূর্বল ছিল কেননা জয়ার কলকাতার কোন ছবি এখনো সাফটায় আমদানি হয়নি।
‘চালবাজ’ মুক্তি পাবার কথা ছিল ১৩ এপ্রিল কলকাতা ও বাংলাদেশে একই দিনে। কিন্তু সেন্সর আর আমদানি বিতর্কে তা হতে হতে ২৭ এপ্রিল আলাদাভাবে মুক্তি পেল বাংলাদেশে। বাংলাদেশি শাকিব বাদে নুসরাত পাপিয়া, রেবেকা, সুব্রত অভিনয় করলেও বলাই যায় এটি পুরোদস্তুর ভারতীয় ছবি। কেননা, এটি তেলেগু ‘সুব্রামানিয়াম ফর সেল’ এর বাংলা রিমেক তা আগেই জানান দিয়েছেন পরিচালক জয়দীপ মুখার্জী । জয়দীপ ব্যবসাসফলতার ব্যাপার টি মাথায় রেখে ‘শিকারি’ আর ‘নবাব’ এর পর ‘চালবাজ’ও রেখেছেন শাকিবকে। জুটি হিসেবে শুভশ্রী গাঙ্গুলি।
মন্দভাগ্য শুধু এটাই, শেষ অব্দি শাকিবের ছবি দর্শকরা হলে দেখতে যাচ্ছেন তাকে ‘আমদানি পণ্য’ হিসেবেই। আকালের সময়ে হয়তো হল মালিকেরা মন দিয়েছেন সপ্তাহ পার করতেই। কেননা, রমজানের আগে আর হাউসফুল করার মত ছবি নেই।