Select Page

শ্বাসরুদ্ধকর ‘লেডিস অ্যান্ড জেন্টলমেন’

শ্বাসরুদ্ধকর ‘লেডিস অ্যান্ড জেন্টলমেন’

লেডিস অ্যান্ড জেন্টলমেন’, রাতে প্রথম পর্ব দেখার পর নেশা চেপে গেলো। হিসাব করে দেখলাম পুরোটা দেখতে সকাল হয়ে যাবে। হলোও তাই। ফারুকী ভাই বানিয়েছেন, এজন্য না শুধু। আসলে গল্পে ঢুকে যাবার পর বের হওয়া অসম্ভব।

মধ্যবিত্ত মেয়েদের জন্য এটা দেখা অত্যাবশ্যক। যারা সংগ্রাম করে, যারা নিজেদের নিজের কাছে শক্ত অবস্থানে দাঁড় করায়। ঘাত-প্রতিঘাত তুচ্ছ করে একটা মেয়ে কীভাবে সামনে এগিয়ে যায় তার একটা তাজা পোস্টার ‘লেডিস অ্যান্ড জেন্টলমেন’।

সাবিলা নামের মেয়েটিকে মেয়ে না ভেবে মধ্যবিত্ত যেকোনো ছেলে তার নিজেকে ভাবতে পারে, যে তার সংসারের নিত্যকার টানাপড়েনের সাথে যুদ্ধ করে অভ্যস্ত। ঘরে অসুস্থ বাবা, চাকরি নিয়ে টানাটানি, এমন উপার্জনক্ষম একমাত্র সন্তানের অভাব নেই আমাদের সংসারে। এই সাবিলা এদেশের সেই মেয়েটি, যে অফিসের বসের কাছে সেক্সুয়াল হেরেসমেন্টের স্বীকার হয়ে অন্য মেয়েদের মতো হজম করতে জানে না। যে মেয়েটি আর কাউকে সাথে না পেয়ে একাই দাঁড়িয়ে যেতে পারে প্রতিবাদের পাহাড় হয়ে। এমন মেয়ে এদেশে ঘরে ঘরে বেড়ে ওঠা জরুরি। কারণ, এখনও মেয়েদের প্রতি পদক্ষেপে নোংরা দৃষ্টিভঙ্গির লোকের মুখোমুখি হওয়াটা পরিচিত দৃশ্য হয়ে আছে। একটা বিরাট অংশ এসব নিয়ে মুখ খোলে না। শুধু চাকরি বাঁচানোর জন্য কত মেয়ে যে কত প্রতিষ্ঠানের কত অত্যাচার সহ্য করে যাচ্ছে, এর একটা কমপ্লিট ছবি আমরা দেখতে পাই ‘লেডিস অ্যান্ড জেন্টলম্যান’এর প্রতিটা দৃশ্যে।

আমাদের সন্দেহ প্রবণ পুরুষেরা ভেতরে ভেতরে কতটা খুনী, সেই দৃশ্যের চুলচেরা বিশ্লেষণ আছে এর ভেতরে। যারা সুযোগ পেলে নিজের ক্ষোভকে জয়ী করতে ক্ষমতার অপব্যবহার করে ফেলতে জানে। পুরুষ শাসিত সমাজে একটা মেয়ের একা স্বাধীনভাবে বেড়ে ওঠায় কত বিপত্তি, তার চকচকে ছবি দেখা গেলো এই সিরিজে।

গল্পের প্রতিটা দৃশ্যে মোচড়। দমবন্ধ হয়ে যায়। গলা শুকিয়ে যায়। এ কী দেখলাম, এ কী দেখছি, এরপর কী হবে? এই শ্বাসরুদ্ধকর পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে এই সিরিজের শেষ পর্যন্ত যেতে হয়। কে আসল খুনি? এটা জানতে গিয়ে মনে হয় এই যে ধরা পড়ে গেলো। এই সন্দেহভাজন ব্যক্তিই খুন করেছে। কিন্তু একটা খুনের রহস্য এত প্রক্রিয়ার ভেতর দিয়ে শেষমেশ এইখানে এসে থামবে, সেটা অকল্পনীয়।

সিরিজে অভিনয় করেছেন কিংবদন্তি থেকে শুরু করে দেশের সব মেধাবী অভিনেতারা। তাদের প্রতিটা এক্সপ্রেশন মনে রাখতে হবে। প্রতিটা সংলাপ মনে থাকবে। প্রতিটা অভিব্যক্তিও যে চিহ্নিত হয়ে থাকে সেও পাওয়া যাবে।

সকলের অভিনয় হৃদয় কেড়ে নিলেও ব্যক্তিগতভাবে আমাকে গ্রাস করে রেখেছিল মারিয়া নূরের অভিনয়। চুপ থাকার ভেতর দিয়ে অজস্র কথা বলে যাবার এই কাজটা তিনি যেভাবে দেখালেন, ভুলতে পারব না।

এই প্রসঙ্গে সবশেষে হাসান মাসুদের মুখের এক সংলাপ বলে যাচ্ছি ‘আমি আসলে টমেটোর মতো, কেউ সবজি ভাবে, কেউ ভাবে ফল’। আর মদের দোকানে গিয়ে ফোনে যখন বলে ওষুধের দোকানে আছে, তারপর মদ বিক্রেতাকে বলে ‘এটা তো ওষুধেরই দোকান, তাই না? ’। এসব মনে থাকবে। মনে থাকে।

একদম শেষে বলতে চাই ‘ওস্তাদের মাইর শেষ রাতে’। একজন মোস্তফা সরয়ার ফারুকী যে সত্যিকারের গ্রেট, যারা হুদাই বিতর্ক করেন তার বিপক্ষ শিবিরে গিয়ে, তারা এটা দেখতে বসুন। ভাইকে ‘সরি’ বলবেন আগের হুজুগের জন্য। এটা বাংলাদেশের সিনেমা অঙ্গনের আন্তর্জাতিক অন্যতম সেরা পোস্টার হয়ে গেলো। ‘লেডিস অ্যান্ড জেন্টলমেন’ মূলত একটা দেশ, একটা সমাজ, অনেকগুলো জীবনের সমষ্টি। ‘লেডিস অ্যান্ড জেন্টলমেন’না দেখলে আজকেই দেখে নিন।

ফারুকী ভাই দীর্ঘ আয়ু পান, আমাদের আরও সমৃদ্ধ করতে থাকুন। ভালোবাসা।


Leave a reply