কবরীর বিয়ের দৃশ্যে দর্শকের ‘ইশশ’! এহতেশাম বললেন, ‘ছবি হিট’
ঢাকার সিনে ইন্ডাস্ট্রিতে মাইলফলক একটি চলচ্চিত্র সুভাষ দত্ত পরিচালিত ‘সুতরাং’। কবরীর অভিষেক সিনেমাটিকে নানা কারণে স্মরণ করা হয়। মন ছুঁয়ে যাওয়া গান-গল্পের ছবিটি বিদেশের উৎসবেও আলো ছড়িয়েছে।
প্রচলিত আছে যে, সিনেমার নায়ক-নায়িকার বিচ্ছেদের কাহিনীর দর্শক নিতে পারে না। তাই অনেক নির্মাতা বাধ্য হয়ে ছবিরও পরিবর্তন এনেছেন, এমন দৃষ্টান্ত বিরল নয়। কিন্তু ‘সুতরাং’ সেই পরীক্ষায় পাশ করা ছবি।
১৯৬৪ সালে মুক্তি পাওয়া এ ছবিতে নায়িকরা কবরীর বিয়ের দৃশ্যে দর্শকের অভিব্যক্তি দেখে বিখ্যাত পরিচালক এহতেশাম বলেন, ছবি হিট।
‘সুতরাং’ পরিচালনার পাশাপাশি নায়ক চরিত্রে ছিলেন সুভাষ দত্ত। তার অবয়ব নায়কসুলভ না হওয়া সত্ত্বেও জহির রায়হানের রঙিন ছবি, যা পাকিস্তানের প্রথম রঙিন ছবি সেই ‘সঙ্গম’-এর পাশাপাশি লুফে নেয় দর্শক। বলা যায়, ‘সুতরাং’-ই এগিয়ে ছিল।
বিষয়টি সুভাষ দত্ত এভাবে বলেছিলেন, “সুতরাং’ ছবির রিলিজ নিয়েও অনেক ষড়যন্ত্র হয়েছে। আমি যাতে ছবিটি পরিচালনা না করতে পারি সে জন্য অনেকেই চেষ্টা করেছে। কিন্তু আমি সবকিছু মোকাবেলা করে ১৯৬৪ সালের ২৪ এপ্রিল গুলিস্তানে ছবিটি রিলিজ দিলাম। ওই সময় ছিল কোরবানির ঈদ। সঙ্গত কারণে আশা করিনি ম্যাটিনি শো-তে দর্শক সমাগম হবে। কিন্তু একটা আশ্চর্য ব্যাপার দেখা গেল, ম্যাটিনি শো-ই হাউজফুল হয়ে গেছে।
আমি যখন ছবিটি করছি তখন ইন্ড্রাস্ট্রির প্রায় সব পরিচালকই আমাকে হিংসার চোখে দেখেছেন। একমাত্র ক্যাপ্টেন এহতেশাম সাহেব ছাড়া। উনি সব সময়ই আমার প্রশংসা করেছেন। আমাকে নিয়ে হাইকোর্ট মাজারে গিয়েছিলেন। দোয়া করিয়ে নিয়ে এসেছেন। ‘সুতরাং’ রিলিজের দিন ম্যাটিনি শো-তে উনিই আমাকে গুলিস্তানে নিয়ে গেছেন। ছবিটি বিরতির আগ পর্যন্ত তিনি দেখেছেন। খুব খুশি হয়ে বলেছেন, ‘তুমি দাঁড়াও। ছবি দেখো। জহির রায়হানের কালার ছবি সঙ্গম রিলিজ হয়েছে। দেখে আসি ওটার কী অবস্থা।’
মুকুল হলে গিয়ে ‘সঙ্গম’ দেখে এলেন এতহেশাম সাহেব। আমাকে বললেন, ‘নাহ্, ওই ছবির চেয়ে তোমার ছবির রিসিভড অনেক ভালো। লোকে তোমার ছবি ভালোই নিয়েছে। আমি একটা জিনিস শুধু দেখব কবরীর যখন বিয়ে হয়ে যায়। আর সে ব্যাপারটা যদি লোকে অ্যাকসেপ্ট করে, তাহলে তোমার ছবি হিট।’
…কবরীর যখন বিয়ে হয়ে গেল এবং রানী সরকার সে কথা বলল, তখন সমস্ত প্রেক্ষাগৃহে ‘ইশশ!’ করে একটা আওয়াজ উঠল। তখন উনি আমাকে জড়িয়ে ধরে আমার গালে চুমু খেয়ে বললেন, ‘দত্ত তোমার ছবি হিট।”