‘সত্তা’ ও শাকিব খান
শাকিব খানের টিপিক্যাল হিরোইজম দেখানো ছবির বাইরে একটা পদক্ষেপ ছিল ‘সত্তা‘ ছবি। সোহানী হোসেনের গল্পে এবং হাসিবুর রেজা কল্লোলের পরিচালনায় ছবিটি নির্মিত হয়েছিল।
ছবিটির প্রথম ও প্রধান দিক ছিল বহুদিন পরে একই ধারার হিরোইজম থেকে বের হয়ে অভিনয়ের জায়গা বেশি এমন ছবি করেছিল শাকিব খান। তার অভিনয়ের মধ্যেও একটা পরিবর্তন এসেছিল এ ছবিতে। যে পরিবর্তনের জন্য ‘প্রিয়তমা’ আলোচিত হয়েছিল তার প্রধান ভিত্তিই ছিল লুক আর অভিনয়ের পরিবর্তন। ‘সত্তা’ ছিল তার পুরনো একটি পদক্ষেপের উদাহরণ। শাকিব খান চাইলেই যে নিজেকে ভাঙতে পারে বা তাকে দিয়ে সম্ভব সেটারই উদাহরণ ছিল ‘সত্তা’। তার চাওয়ার সে মাত্রাটা যদিও সংখ্যায় কম হয়ে থাকে।
‘সত্তা’ তার পুরো ক্যারিয়ারে একটা সুনির্দিষ্ট অভিনয়সমৃদ্ধ ছবি হয়ে থাকবে। শাকিবের চরিত্রটি যার নাম ছিল সবুজ সেই সবুজ হচ্ছে গল্পে সোহানী হোসেন-এর সমাজকাঠামোর জীর্ণ সমস্যাগুলোকে সমাধানের একটা চাবিকাঠি। প্রথমদিকের নেশাগ্রস্ত শাকিব পরে নেশা ছাড়ার ও প্রাতিষ্ঠানিক আন্দোলনের মাধ্যমে নিজেই নিজের প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে ওঠে।
ছবিটিতে শাকিবের অভিনয়ের ক্রম পরিবর্তন হয়েছে এভাবে :
* নেশাখোর শাকিব থেকে নিজের পরিচয় খোঁজা শাকিব
* আমোদে মেতে থাকা শাকিব আর সিরিয়াস শাকিব
* প্রেমিক শাকিব থেকে বাবার স্বপ্নে বিভোর শাকিব
* সামাজিক অপরাধের প্রতিবাদী শাকিব থেকে সন্তানের বাবার দায়িত্বশীল শাকিব
এসব গুলোই হচ্ছে শাকিবের আগের ও পরের ‘সত্তা’। আগের থেকে পরের সত্তা-ই শাকিবের চরিত্রের শক্তিশালী জায়গা কিন্তু একজন শাকিব খান ছবিটিতে তার চরিত্রকে শক্তিশালী করতে আগের ও পরের দুই সত্তা-তেই মনোযোগী ছিল।
শাকিবের চরিত্রটিকে দাঁড় করাতে সবচেয়ে বড় ভূমিকা ছিল পাওলি দামের চরিত্রটির। পাওলি শাকিবের চরিত্রকে প্রভাবিত করেছে প্রেমিক ও বাবার সত্তাকে জাগাতে। শাকিব প্রথমত প্রেমিক সত্তাকে জাগিয়ে তুলেছে পাওলিকে বিপদের হাত থেকে রক্ষা করে এবং তাকে ভালোবেসে সন্তানের বাবা হয়ে সে সত্তাকে পূর্ণতা দিয়েছে। বাবা হবার পর মূলত শাকিব তার নতুন পরিচয়কে পায় এবং সে পরিচয়টিকে টিকিয়ে রাখতে অশুভ শক্তির বিরুদ্ধে দাঁড়ায়।
জেমসের ‘তোর প্রেমেতে অন্ধ হলাম’ গানটিতে শাকিব খানের অভিনয় তার পুরো ক্যারিয়ারে থাকা গানগুলোর চেয়ে তাকে ভিন্নভাবে উপস্থাপন করেছে। জেমসের কণ্ঠের যে ক্লাস তার সাথে শাকিব সদ্ব্যবহার করতে পেরেছে এবং পরিচালকের পক্ষেও সেটি প্রয়োগ হয়েছে।
একজন শাকিব খান তার দীর্ঘ ক্যারিয়ারের ফলশ্রুতিতে যে ধরনের চরিত্রকে ঘিরে স্টেরিওটাইপ থেকে বেরিয়ে চ্যালেঞ্জিং হবার মতো দক্ষতা দেখাতে পারে সেটাকেই বোঝার মতো ছবি ‘সত্তা’। সমস্যা হলো এ ছবির মতো চরিত্র তাকে নিয়মিত করতে দেখা যায় না যদি করত তাহলে তার ক্যারিয়ারে আরো ‘সত্তা’ যোগ হত। ভবিষ্যতে যোগ হবে কিনা সেটা সময়ই বলে দেবে।