Select Page

সর্বজনবিদিত কাহিনীর ফারুকীয় পরিবেশনা

সর্বজনবিদিত কাহিনীর ফারুকীয় পরিবেশনা

ডুব (No Bed of Roses): Not interesting enough. More a “style over substance”

WHY WATCHING:

“ডুব” এর সাথে প্রথিতযশা হুমায়ূন আহমেদের জীবনের কত মিল? যেভাবে চিল্লাপাল্লা হয়েছে আসলেই কি সেরকম মিল আছে? এই controversy আর সাথে ইরফান খান, পার্নো মিত্র = ২ ভারতীয় অভিনেতা-অভিনেত্রী আছেন দেখেই প্রথমদিনই দেখতে গেছি কোন রিভিউ বের হওয়ার আগেই। তাছাড়া ফারুকীই একমাত্র নির্মাতা যার সিনেমায় ধারাবাহিকভাবে সমসাময়িক বাংলাদেশের চিত্রটা পাওয়া যায়, আল্টিমেট প্রোডাক্ট ভালো হোক আর না হোক, প্রয়াসটা থাকে। তাই তার সিনেমা হলে মিস করিনি কখনও।

WHY HUMAYUN AHMED:

তবে ফারুকীর মুভি থেকে অমিতাভ রেজা/গিয়াসউদ্দিন সেলিম লেভেলের প্রত্যাশা করা যাবে না, কারণ উনি নিজের একটা স্টাইল তৈরি করেছেন সেটা যেই ঘরানার কাজই করুন না কেন, বজায় থাকবেই। ছোটপর্দা থেকে আগত নির্মাতাদের মাঝে উনিই একাধারে নিয়মিত সিনেমা বানাতে পারছেন আর দর্শক হলে হুমড়ি খেয়ে পড়ছে কারণ আসলেই উনি একজন দক্ষ Marketerও বটে। তিনি বিশ্বাস করেন উপন্যাস, অন্য সিনেমার চেয়ে আমাদের নিজেদের জীবনেই লুকিয়ে রয়েছে মজার মজার সব কাহিনী। তবু বাংলাদেশে বিখ্যাত কারো জীবনী নিয়ে কাজ হয়নি কারণ বাংলাদেশিদের অতিরিক্ত সেন্টিমেন্ট, যে জন্য শুরুতেই এত বিতর্ক এই ফিল্ম নিয়ে। ফারুকী হয়ত আগেই বুঝেছিলেন এটা হবে আর সেই জন্যই তিনি অফিশিয়ালি ঘোষণা না দিয়ে বস্তুত হুমায়ূন আহমেদের মোটা দাগে উঠে আসা ব্যক্তিগত জীবন নিয়েই “ডুব” নির্মাণ করেছেন।

WHY It amuses foreign audience more than the Bangladeshi?

ডুব নিয়ে রিভিউ দেয়া তাই সোজা, কারণ এখানে স্পয়লার এর কিছু নেই। থাকতে পারত যদি ফারুকী চেনাজানা গল্পটাকে আরও ইন্টারেস্টিংভাবে উপস্থাপন করতেন। আরে, অফিসিয়াল বায়োপিকেও তো গাঁজাখুরি কত কিছু ঢোকানো হয় আর এটাকে তো ফিকশান বলা হয়েছে। তাছাড়া হুমায়ূন আহমেদের জীবনের সমালোচিত অধ্যায়টার পেছনের গল্পও তো থাকতে পারত। “কেন করলেন?” – এর উত্তর তো আমরা অনেকেই এখনও খুঁজছি। ভেবেছি সেটা পাবো। না পেলাম… বরং কিভাবে হল… বাংলাদেশি কয়জন মানুষের তা অজানা আমার সন্দেহ আছে। তাই, বিদেশে এই মুভি সমাদৃত হতেই পারে – কারণ তারা তো হুমায়ূন আহমেদের এগুলা জানেন না। এজন্যই সবাই যে বলে ফারুকী ফেস্টিভালে পুরস্কারের জন্যও সিনেমা বানান, দর্শকের জন্য না – কথাটা মিথ্যা প্রমাণ হয়নি। হ্যাঁ, অনেকে এটা বলতে পারে এই গল্প আমরা জানি, আগামী প্রজন্ম তো নাও জানতে পারে। একটা রেকর্ড থাকল। আচ্ছা বুঝলাম।

How is it As A Fiction or A Standalone film?

এখন হুমায়ূন আহমেদকে রেখে শুধু ফিকশন হিসেবে যদি দেখি, ডুব work করে কিনা? – পুরোপুরি না। কারণ, একবার দেখে যতটুকু বুঝেছি, এখানে লেখকের দ্বিতীয় বিবাহের পেছনে যুক্তিযুক্ত কারণ স্থাপন হয়নি। একটা দৃশ্য ছিল, সেটা দিয়েই কিছুটা বুঝানোর চেষ্টা করা হয়েছে – যেমন ইরফান আর পার্নো একটা সিগারেট শেয়ার করে খাচ্ছে, সেটার সাথে রোকেয়া প্রাচীর সাথে ইরফানের বান্দরবনে বসে স্মৃতিচারণ করার দৃশ্যের contrast যদি করা হয় – মানতে পারিনা ঠিক কেন ইরফান সেখানেই থাকেননি, কেন মেয়ের বয়েসি একজনের সাথে জড়ালেন?!!? এগুলা তো ব্যাসিক স্টোরিটেলিং রুল। এটা মিস করেন কিভাবে??

তাছাড়া ফিল্মমেকার হলেও দেখানো হয়নি শুটিং এর কোন দৃশ্য, শুধু ভক্তের সাথে একটা দৃশ্য। i was never convinced that I am watching a filmmaker, not Humayun Ahmed.

Things to Like

পছন্দ হয়েছে নন-লিনিয়ার স্টাইলে গল্প বলিয়ে, সম্পাদনা, পরিচালনা। সম্পাদনায় যেমন – “একটা দৃশ্যে একজন গাড়ি থেকে দরজা খুলে বের হয়ে গেল” এরপরের শটেই খবরের কাগজে লেখা “তার জীবন থেকে তিনি বের হয়ে গেলেন”। চমৎকার। পরিচালনায় ফারুকী তার সিগনেচার ঢঙ রেখেছেন বরাবরই। যেমন একটা দৃশ্যে কয়েকজন মানুষের ধস্তাধস্তি দেখানো হয়েছে, ক্যামেরা ফ্রেম করা ছিল তাদের পায়ে। স্টাইলিশ এবং witty।

শুরুতে লঞ্চে বাবাকে নিয়ে ইরফানের তিশার পাশে বসা মনোলগটা ভালো লাগছিল। বাকি ফিল্মে সেটা আর পাইনি।

শেষে একটা turn of events দেখানো হয়েছে যা ইতিবাচক আহবানের ইঙ্গিত দেয়। শেষ হয় “পুরানো সেই দিনের কথা” দিয়ে। সবমিলিয়ে পেসিং slow but steady.

How was Irrfan:

৯০% সিরিয়াস এই ফিল্মে কমেডিক রিলিফে অতিরিক্ত স্ক্রিনটাইম দেয়া হয়েছে রোকেয়া প্রাচীর বাবাকে। মনে হয়নি লোকটা অভিনেতা, যেকারণে তার দিকে ক্যামেরা তাক করে রাখায় তার অভিব্যক্তিহীন one-note acting হাসায়নি, কাতুকুতু দিয়েছে। ইরফানের অভিনয়ে কানে লাগবে শুধু তার বাংলা বলা। তবু তাকে বেশ চাতুরতার সাথেই ব্যবহার করেছেন বলবো, কারণ বেশিরভাগ সময়েই ইংলিশে কথা বলেছেন তিনি, বিশেষ করে উত্তেজিত বড় বড় সংলাপগুলা। এটা বুদ্ধিদীপ্ত একটা সিদ্ধান্ত। তার সাথে পাল্লা দিয়ে বাকিরা কেমন করলেন? – ভালো।

Rest of The Cast:

বিশেষ করে রোকেয়া প্রাচী। আহা… সদাশান্ত আরামদায়ক কণ্ঠের এই মঞ্চের অভিনেত্রী stands out! অথচ তিশা পেলেন বেশি স্ক্রিনটাইম, কিন্তু বরাবরের মতই তিনি লাউড অভিনয় করে গেলেন। ভালো ছিল ব্যাকগ্রাউন্ডে রাখা গার্ড লেভেলের একজনের অভিনয়, শুনেছি তিনি মঞ্চের লোক। পুলিশের ভূমিকায় নাটকের পরিচিত মুখ হারুন ছোট দৃশ্যে ভালো করেছেন।

চেয়েছিলাম পার্নো মিত্রের অভিনয় দেখতে। তার আকর্ষণীয় রূপসজ্জা তার চরিত্রের জন্যও পারফেক্ট হলেও পার্শ্ব চরিত্রেই রাখা হল বেশি। মুভির সেরা দৃশ্যটিতেই আসলে পার্নোর। দেয়াল টপকানোর দৃশ্যটি মুভিতে দেখলেই বুঝবেন। দর্শক হোহো করে হেসে উঠেছিল।

Would Have Been Better If:

ফারুকী কী কী করতে পারতেন? নুহাশের কাস্টিং-এও অবিকল একিরকম অবয়বের একটা বালক, অথচ বাবার সাথে নুহাশের দৃশ্যটা জমেনি। তার কপালে চুমু খাওয়া/কাছে টেনে নেয়ার দৃশ্যটাও বিশ্বাসযোগ্য হয়নি। কারণ এই মুভির বড় সমস্যা এর সংলাপ, ভিজুয়াল স্টোরিটেলিং থাকলেও সংলাপ যুতসই না হলে গল্প জমে না। মায়ের জন্মদিনে তিশার ফোনালাপটার সংলাপ একদম সাদামাটা। আমি নিশ্চিত বাস্তব জীবনে এত হিউমারলেস সংলাপ কেউ বলে না। Monologue না হলেও সুন্দর করে লেখা কিছু কথোপকথন থাকতে পারত হৃদয়ছোঁয়া সংলাপসম্বলিত।

In A Nutshell:

সব মিলিয়ে একজন তারকার ব্যক্তিগত জীবনকেই তুলে ধরা হয়েছে, সামাজিক জীবন আসেনি। ১০৬ মিনিটে দক্ষতার সাথে পরিচালক দুঃখ আঁকলেও বাংলাদেশি দর্শক সুন্দর দৃশ্যপট আর সিনেমাটিক উপস্থাপন ছাড়া বিশেষ কিছু পাবে না, কারণ তিনি তার creative freedom-টাকে যথেষ্ট ব্যবহার করেননি। ক্যারেক্টার আর সম্পর্কের ভেতরের exploration-এর চেষ্টা যথেষ্ট মনে হয়নি, যে কারণে একটা বিশেষ প্রেক্ষাপট থেকে গল্প বলাই বেশি চোখে পড়েছে। একটা ফিল্ম ভালো লাগার জন্য কোন চরিত্রের প্রতি বিশেষ মমত্ববোধ তৈরি হওয়া দরকার হয়। সেটা হয়নি… “তিনি কেন করলেন” এর উত্তর পাইনি যেটার দরকার ছিল। তবু এটা পরিপূর্ণ একটা সিনেমা, যেটা সাধারণ বাংলাদেশি সিনেমার মত ঝুলে যায়নি। Highlight করার মত মনে দাগ কাটার মত আলাদা কোন দৃশ্য/কথোপকথন পাইনি যেটা খুব করে চাচ্ছিলাম বিশেষ করে যেখানে ইরফান খান আর রোকেয়া প্রাচীর মত অভিনেতা আছেন। সিনেমাটোগ্রাফি, আবহ সংগীত, পরিচালনা ভালো। আটপৌরে স্টাইলে সাজানো সব। which is actually signature Mostofa Sarwar Farooki. But I could not find that soul and connection enough with any of the character or the time.

আশা করি হুমায়ূন আহমেদকে নিয়ে তার পরিবারের কেউ আবারও কাজ করবেন একেবারে ঘোষণা দিয়ে, যেখানে আরও গভীরভাবে তার মনস্তত্ত্বে প্রবেশ করা হবে, যেখানে শিলা, শাওন, গুলতেকিন, নুহাশ সবার প্রেক্ষাপট আরও শক্তিশালীভাবে পরিবেশিত হবে।

বাংলাদেশি সিনেমা হিসেবে ১০ এ ৭ দেব।

বি.দ্র. সিনেমা হলের দর্শকরা কতটা অধৈর্য আর নিম্নরুচির তা আজকেও দেখলাম। বলাকায় আমার পেছনের রোতে ১০-১২ জনের কলেজ লেভেলের ছেলেমেয়ে মেশানো একটা গ্রুপ ছিল, পুরাটা সময় রো এর এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে কথা চালাচালি করছিল, অসংলগ্ন কমেন্ট করছিল ধুমায়, যেমন পার্নো মিত্রের পেছনে ইরফান এসে দাঁড়িয়েছে, আর বলে ওঠে “মার মার”। কবরের দৃশ্যে বলতে শুনি – “ওরে তাড়াতাড়ি কবর দে, বাইর হই। ঐ! ক না! হালারে তাড়াতাড়ি কবর দিয়ে বাসাত যাইতে। ঘুমাই।”


Leave a reply