সার্টিফিকেশন আইনের পরও সেন্সর বোর্ড পুনর্গঠন, যা জানা যাচ্ছে
শেখ হাসিনার পতনের পর সারা দেশের প্রতিষ্ঠানগুলোয় ব্যাপক সংস্কার দেখা যাচ্ছে। সে অনুসারে সম্প্রতি পুনর্গঠিত হয়েছে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সেন্সর বোর্ড। কিন্তু চলচ্চিত্র সার্টিফিকেশন আইন পাসের পরও সেন্সর বোর্ড পুনর্গঠন করা নিয়ে একাধিক তরফে সমালোচনা এসেছে। পরবর্তী সময়ে বিষয়টি আমলে নিয়ে ব্যাখ্যা দিয়েছে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়।
সেন্সর বোর্ডের চার সদস্য ড. জাকির হোসেন রাজু, খিজির হায়াত খান, কাজী নওশাবা আহমেদ ও তাসমিয়া আফরিন মৌ
গতকাল মঙ্গলবার (১৭ সেপ্টেম্বর) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, বিধিমালা প্রণয়ন করা যায়নি বিধায় সার্টিফিকেশন আইনটি কার্যকর করা সম্ভব হচ্ছে না। দ্রুততার সাথে বিধিমালা প্রণয়নের কাজ চলছে।
এর আগে ১৫ সেপ্টেম্বর সেন্সর বোর্ড পুনর্গঠন করে প্রজ্ঞাপন জারি করে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়। এ নিয়ে সমালোচকদের বক্তব্য ছিল, চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্টদের দীর্ঘদিনের দাবির পর গত বছর বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সার্টিফিকেশন আইন পাসের মাধ্যমে সেন্সর বোর্ডের প্রয়োজন ফুরিয়েছে।
১৯৬৩ সালের ‘সেন্সরশিপ অব ফিল্মস অ্যাক্ট’ রহিত করে গত নভেম্বরে ‘বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সার্টিফিকেশন আইন ২০২৩’ গেজেট আকারে প্রকাশ করে আওয়ামী সরকার। এর আগে ২৯ অক্টোবর সংসদে ‘বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সার্টিফিকেশন বিল, ২০২৩’ বিল পাস হয়।
নতুন সেন্সর বোর্ড সম্পর্কে মঙ্গলবার তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, “বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সার্টিফিকেশন আইন, ২০২৩ এর উপ-ধারা ৩(৫) এ ‘বোর্ডের কার্যপদ্ধতি বিধি দ্বারা নির্ধারিত হইবে’ এবং উপ-ধারা ৫(৬) এ ‘চলচ্চিত্র সার্টিফিকেশনের শ্রেণীবিন্যাস ও মূল্যায়ন প্রতীক বিধি দ্বারা নির্ধারিত হইবে’ মর্মে উল্লেখ রয়েছে।
“আইনটি গেজেট আকারে প্রকাশিত হলেও এ আইনের অধীনে এখনো বিধিমালা প্রণয়ন করা যায়নি বিধায় আইনটি কার্যকর করা সম্ভব হচ্ছে না। দ্রুততার সাথে বিধিমালা প্রণয়নের কাজ চলছে। বিধিমালা প্রণয়ন হলেই আইনের যথাযথ বাস্তবায়ন শুরু হবে।”
সেন্সর বোর্ড পুনর্গঠনের ব্যাখ্যায় বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, “চলচ্চিত্রের সেন্সর সনদ প্রদান সেন্সর বোর্ডের একটি নিয়মিত প্রক্রিয়া। সেন্সর সনদের জন্য কোনো চলচ্চিত্র জমাদানের পর সেন্সর বোর্ড কর্তৃক সেন্সর সনদ প্রদানের প্রক্রিয়া শুরু করতে হয় বিধায় Censoship of Films Act, 1963 (Act No. XVIII of 1963) ও The Bangladesh Censorship of Films Rules-1977 অনুযায়ী বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সেন্সর বোর্ড পুনর্গঠন করা হয়েছে।”
বর্তমান সেন্সর বোর্ডে সদস্য হিসেবে আছেন অধ্যাপক ড. জাকির হোসেন রাজু, নির্মাতা খিজির হায়াত খান, তাসমিয়া আফরিন মৌ, লেখক মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিন, নির্মাতা ও প্রযোজক রফিকুল আনোয়ার রাসেল এবং অভিনেত্রী কাজী নওশাবা আহমেদকে।
পুনর্গঠিত সেন্সর বোর্ডে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের সচিবকে চেয়ারম্যান এবং সেন্সর বোর্ডের ভাইস চেয়ারম্যানকে সদস্য সচিব করা হয়েছে।
এছাড়া পদাধিকারবলে আইন ও বিচার বিভাগের সচিব, প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব, তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (চলচ্চিত্র), স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের যুগ্মসচিব পদমর্যাদার একজন প্রতিনিধি, বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন করপোরেশন-বিএফডিসির বর্তমান ব্যবস্থাপনা পরিচালক, পরিচালক সমিতির সভাপতি বোর্ডের সদস্য হিসেবে আছেন।
এদিকে আওয়ামী সরকার ‘বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সার্টিফিকেশন বিল, ২০২৩’ পাস করলেও গত ১২ মে এক বছরের জন্য চলচ্চিত্র সেন্সরবোর্ড গঠন করে। পরে যা ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর বাতিল হয়।