Select Page

সালমান শাহর মৃত্যুই কি সিনেমার ভরাডুবির কারণ?

সালমান শাহর মৃত্যুই কি সিনেমার ভরাডুবির কারণ?

নব্বইয়ের দশক শেষ হতে হতে যে বাঙলাদেশের সিনেমার বারোটা বেজে যাচ্ছিলো; এর কারণ কী? কেউ কেউ বলেন, সালমান শাহ‘র মৃত্যু একটা কারণ। সালমান শাহ অভিনয় করেছিলেন সাতাশটা সিনেমায়। এর মাঝে সাড়ে ছয়টা সিনেমায় ছিলেন আধেক আধেক। মানে অসম্পূর্ণ। তো একজন সালমান শাহ’র মৃত্যু কী করে চল্লিশ বছরের একটা ইন্ডাস্ট্রিকে ধুপ করে ফেলে দিতে পারে?

আসল কথা হলো, আপনি যদি নব্বই দশকের সিনেমাগুলো দেখেন বিশেষ করে সালমান শাহ ও হুমায়ুন ফরীদি অভিনীত সিনেমাগুলো, দেখবেন, এই দুইজন ছাড়া সিনেমাতে আর কিছু নেই। তো সালমান শাহ যখন ছিলেন, তখন সবাই সালমান শাহকে খেয়াল করেনি, কেউ কেউ খেয়াল করলেও পাত্তা দেয়নি। কিন্তু যখন সালমান শাহ মারা গেলেন, সবাই আগ্রহ নিয়ে দেখলেন সালমান শাহকে। দেখলেন যে, দারুণ ব্যাপার!

এরপর আর কারো অভিনয় সেই সময়কার মধ্যবিত্ত, নিম্ন মধ্যবিত্তরা নিতে পারলো না। আপনারা যদি সালমান শাহ’র মৃত্যুর পর শেষ ঠিকানা সিনেমায় সালমান শাহ’র স্থলাভিষিক্ত অমিত হাসানের অভিনয় ও পোশাক সেন্স দেখেন তাহলে বুঝতে পারবেন, ‘কোথায় আগরতলা আর কই উগারতলা’। এতো মেকি, ফালতু, আজাইরা লাগতে থাকলো সব নায়কদের, যে তারা ধীরে ধীরে সিনেমা দেখা ছেড়ে দিতে লাগলো।

এইখানে আরও একটা বিষয় আছে, নব্বই দশকের শেষ দিকে ডিশ অ্যান্টেনার ব্যবসা সম্প্রসারিত হলো। উপজেলা শহরগুলো থেকে ইউনিয়ন অবধি পৌঁছে গেলো। মানুষের ভারতীয় সিনেমা দেখার সুযোগ বাড়লো। ভারতীয় সিনেমার নির্মাণ অপেক্ষা আমাদের সিনেমার নির্মাণ দুর্বল। উচ্চতর স্বাদ পাওয়ার পর নিম্নতরের স্বাদ বরাবরই পানশে ঠেকে। ফলে দর্শক টানতে আমাদের সিনেমায় রগরগে বিষয়গুলো ঢুকতে শুরু করলো। সুশীল মানুষেরা সিনেমাহলে সিনেমা দেখা বন্ধ করে দিলো। মোট কথা নব্বই দশকের শেষ দিকে এসে বাঙলাদেশের সিনেমার দর্শকলেভেল পাল্টে গেলো।

আমরা দেখি যে, সেইসব দর্শকের জন্য এক সময় মান্নার সঙ্গে অভিনয়ে নারাজ মৌসুমীও ‘লুটতরাজ’ সিনেমায় মান্নার সাথে অভিনয় করতে রাজী হয়ে গেলেন, শুধু তাই না, ‘অনন্ত প্রেম তুমি দাও আমাকে’ গানের সাথে ঠোঁট মেলাতে মেলাতে মৌসুমী তার শাড়িকে পায়ের উপরের দিকে উড়তে দিলেন। ‘মধু মিলন‘ ছবিতে শাবনূর উরুসন্ধিতে সাপের ফনা তুলতে দিলেন। এইসব করে করে তারা মূলত আমাদের বাঙলাদেশের সিনেমার বারোটা বাজিয়ে দিলেন।

আশির দশকের পর থেকেই বাঙলাদেশের সিনেমার নষ্টকাল শুরু। অথচ স্বৈরাচার নিপাত যাওয়ার পর আমাদের চলচ্চিত্র হওয়ার কথা ছিলো স্বাধীন, সুন্দর, গঠনমূলক। কিন্তু আমাদের রাজনীতির মূল শক্তি রাষ্ট্র ক্ষমতা চলে যায় আন্ডারমেট্রিকের হাতে, আর আন্ডারমেট্রিককে টেক্কা দিতে আর আররাও সেই লেভেলে নেমে আসে। ফলে পঁচাত্তরে হারিয়ে ফেলা ‘মুক্তচিন্তায় রাষ্ট্র’ আদর্শের রাজনীতি আর ফিরে আসে না। নব্বইয়ের পর থেকে আমাদের যে রাজনীতি, সেখানে কোন আদর্শ নেই, বৃহত্তর স্বার্থের কল্যাণ চিন্তা নেই, আমাদের নষ্ট হয়ে যাওয়া রাজনীতির সাথে সাথে সব কিছুই আদতে নষ্ট হতে শুরু করে: কবিতা, উপন্যাস, চলচ্চিত্র, সমাজ, রাষ্ট্র ইত্যাদি।


Leave a reply