
১২টি ফ্যাক্টরসালমান শাহ যেভাবে সবচেয়ে প্রিয় নায়ক
ব্যক্তিগতভাবে সালমান শাহ যেভাবে আমার সবচেয়ে প্রিয় নায়ক। যে ফ্যাক্টরগুলো এ পছন্দে কাজ করে সেগুলো তুলে ধরলাম।
ফ্যাক্টর – ১
মাত্র ২৭ টি ছবি এবং আড়াই বছরের ক্যারিয়ারে সাংঘাতিক প্রতিভার স্বাক্ষর এবং একইভাবে প্রভাব রেখে গেছে সালমান শাহ। এই প্রভাবটা এমন হয়ে গেছে যে এখন তাঁর রেখে যাওয়া কাজের মূল্যায়ন দিনকে দিন বাড়ছে একটা প্রজন্ম থেকে আরেকটা প্রজন্মে। এত কম কাজ দিয়ে বড় ধরনের প্রভাব আর কোনো তারকার ক্ষেত্রে ঘটেনি।

ফ্যাক্টর – ২
হ্যাঁ, দেশের চলচ্চিত্রে অনেক তারকা আছে কিন্তু সালমান শাহ অনেকের মধ্যে নিজ গুণে বিশেষ কেউ হয়ে উঠেছে। সেটা তাঁর কাজ এবং ব্যক্তিত্বের মাধ্যমে। ২৭ টি ছবির ভেরিয়েশনে তাঁর অপূর্ব অভিনয়দক্ষতা, ফ্যাশন আইকন বৈশিষ্ট্য, সুদর্শন, বাস্তব জীবনে মানুষের জন্য কাজ করা এসব ছিল। নিজের সময়ের চেয়ে অনেক বেশি এগিয়ে থাকার একটা বিরল গুণ ছিল তাঁর মধ্যে। এটা খু্ব আকর্ষণীয় বৈশিষ্ট্য।
ফ্যাক্টর – ৩
যখন একজন নায়ক নিজের সময়কে জয় করার পাশাপাশি নতুন নতুন সময়েও নিজের গুণে মানুষের আগ্রহের বিষয় হয়ে ওঠে তাঁর বিশেষত্ব বেড়ে যায়। সালমান শাহ এটা পেরেছে। নিজের সময় ছিল নব্বই দশক এখন শূন্যের তৃতীয় দশকে এসেও নতুনভাবে চর্চার বিষয় হয়ে উঠেছে, আগ্রহের বিষয় হয়ে উঠেছে সালমান। কালোত্তীর্ণ হওয়া যাকে বলে সেটাই হয়ে উঠেছে সালমান। কম কাজ দিয়ে এত প্রভাব বিস্তার করা আর কোনো নায়কের দ্বারা সম্ভব হয়নি।
ফ্যাক্টর – ৪
সালমান শাহ পরবর্তী যে নায়কেরা এসেছে তাঁদের বেশিরভাগ তাঁকে দেখে বা ফলো করে চলচ্চিত্রে এসেছে। একটা প্রজন্মের ভালো লাগায় পরিণত হয়ে সালমান নিজেকে পরবর্তী নায়কদের আইডল হতে পেরেছিল। তার পরবর্তী নায়কেরা সালমানের মধ্যে নিজেদের খুঁজে দেখার একটা আভাস পেয়েছিল কারণ তারুণ্যের নায়ক সবাই হতে পারে না। অন্য নায়কদের প্রতি সম্মান রেখেই কথাটা বলা কারণ এটা প্রমাণিত। সালমান পরবর্তী নায়কদের বিভিন্ন সময়ের স্টেটমেন্টে সালমানকে ফলো করে বা ভালোবেসে চলচ্চিত্রে আসার আগ্রহের কথাটা তারা জানিয়েছে। এই যে তারুণ্যের নায়ক হয়ে ওঠার একটা কাজ এটা সালমান করেছিল।
ফ্যাক্টর – ৫
ভার্চুয়াল লেখালেখিতে নায়কদের বিশ্লেষণে বা দর্শকভক্তদের অনুভূতির প্রকাশে অন্য নায়কদের চেয়ে সালমান বিষয়ক টপিকে আগ্রহ যেকোনোভভাবেই আগ্রহ অনেক থাকে। তাঁর গ্রহণযোগ্যতার মাত্রাটা অন্য লেভেলের।
ফ্যাক্টর – ৬
সালমান শাহ সর্বশ্রেণির কাছে সমানভাবে গ্রহণযোগ্য হওয়া নায়ক। একজন রিকশাচালক যে সালমানের ছবি দেখেছে তার থেকে শুরু করে বহুতল ভবনের কর্পোরেট কর্মকর্তা বা চাকরিজীবী পর্যন্ত সালমান শাহ বিষয়ে ভালো অবজারভেশন দেয়। নামটা শুনলেই বলে দেবে সালমান শাহ কি ছিল। এই গ্রহণযোগ্যতা সর্বজনীন। যে প্রজন্ম বর্তমানে তৈরি হচ্ছে তাদের মধ্যেও রুচিশীল নায়কের কাতারে সালমানকে নিয়ে নতুনভাবে আগ্রহ তৈরি হচ্ছে যা রেয়ার কিছু।

ফ্যাক্টর – ৭
সালমান শাহর পারিবারিক ব্যাকগ্রাউন্ডে শিক্ষিত একটা বিষয় আছে। শিক্ষিত পরিবারের সন্তান। চলচ্চিত্রে এ ধরনের পরিবারের প্রোডাক্ট খুব জরুরি। এক্ষেত্রে যেটা হয় রুচি গড়ে ওঠে ভালোভাবে। সালমান সেটাই করেছে। তাঁর অভিনয়, ফ্যাশন সচেতনতা, ব্যক্তিত্ব, বাচনভঙ্গি সবকিছুর মধ্যে একটা নিট অ্যান্ড ক্লিন ইমেজ আছে এটা সম্ভব হয়েছে শিক্ষিত ছেলে হবার কারণে। তাঁর পরবর্তী নায়কদের ক্ষেত্রে এ ধারাবাহিকতা বেশি তৈরি হয়েছে এবং এটা সালমানের প্রভাব।
ফ্যাক্টর – ৮
সালমান সম্পর্কে যে স্মৃতিচারণ চলচ্চিত্রজনেরা করেন সেখানে তাঁকে ভালো মনের মানুষ হিসেবে দর্শক চিনেছে। নিজে দায়িত্ব নিয়ে অনেকের জন্য কাজ করেছে বাস্তবে। সাধারণ মানুষ এবং চলচ্চিত্রের অবহেলিত অনেকের জন্য অবদান রেখেছে। পর্দার স্মার্ট নায়কের পাশাপাশি বাস্তবের নায়কের একটা দারুণ ভারসাম্য আছে সালমানের মধ্যে।
ফ্যাক্টর – ৯
নায়িকাদের ক্ষেত্রে যারা অতটা আলোচনা তৈরি করতে পারেনি যেমন শাহনাজ, লিমা, কাঞ্চি, শিল্পী তাঁদের সালমান শাহর সাথে যেসব ছবি আছে সেগুলো বিশেষভাবে জনপ্রিয়। দর্শক সেভাবেই ট্রিট করে তাদের সালমানের সাথে ছবি আছে বলে। সালমানের নায়িকা হিসেবে ট্রিট করা হয় তাদেরকে এটা একটা বিশেষত্ব।
ফ্যাক্টর – ১০
সালমান শাহ নামটি এখন এমন হয়ে গেছে প্রতি বছর এ নামটি বিশেষভাবে উচ্চারিত হয় চলচ্চিত্রপাড়ায়। চলচ্চিত্রপ্রেমী, চলচ্চিত্রজন বা মিডিয়া যাই বলি না কেন সবখানেই সালমান শাহ নামটি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। তাঁর মৃত্যুবার্ষিকী সবচেয়ে গুরুত্বের সাথে উচ্চারিত হয় এমনকি চর্চাও হয়। অন্য তারকাদের মৃত্যুবার্ষিকীতেও তাঁদের স্মরণ করা হয় কিন্তু সালমানের ক্ষেত্রে একেবারে আলাদা একটা ভাইব। আর কারো ক্ষেত্রে সেভাবে হয়নি এদেশে। ভার্চুয়াল লেখালেখি, প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়া এসবেও তাঁর মৃত্যুবার্ষিকী পালিত হয় নিয়ম করে প্রতি বছর। সবার মাঝে যে আফসোস বা বার্তাটা প্রকাশ পায় সেটার মাধ্যমে সালমান শাহ-কে হারানোর দুঃখের পাশিাপাশি তাঁকে চলচ্চিত্রে যে বিশেষভাবে প্রয়োজন ছিল সেটাও প্রকাশ পায়। এর থেকে বোঝা যায় সালমান কেন এত গুরুত্বপূর্ণ, কেন এত বিশেষ কেউ।
ফ্যাক্টর – ১১
অভিনেতা এবং নায়কের যে ক্রাইটেরিয়া সালমান দুটোই পূরণ করেছে। অল্প ক্যারিয়ারেই চলচ্চিত্র ও টেলিভিশন দুই প্ল্যাটফর্মেই সফল হয়েছে ঈর্ষণীয়ভাবে। তাঁর চলচ্চিত্রগুলোতে সাবলীল অভিনয়ের যে ঈর্ষণীয় গুণ দেখা যায় সেটাই তাঁর নায়ক ও অভিনেতার পাশাপাশি গুণকে তুলে ধরে। কমার্শিয়াল ছবির পাশাপাশি তাঁর ‘ইতিকথা’ নাটকের অভিনয় দেখলে অভিনেতার দিকটি আরও স্পষ্ট হয়ে ওঠে। বেঁচে থাকলে অফট্র্যাক ছবিতেও তাঁকে কাজ করতে দেখা যেত চ্যালেঞ্জিং নানা চরিত্রে।
ফ্যাক্টর – ১২
সালমান শাহ-র অসমাপ্ত ছবিগুলোতে যে নায়কেরা কাজ করেছে তারা বাড়তি একটা অ্যাটেনশন পেয়েছে এটা সালমানের প্রভাবে হয়েছে। যেমন ‘কে অপরাধী’ ছবিতে ওমর সানী নিজেও অসাধারণ অভিনয় করলেও তাঁকে সালমানের স্টাইলে ছবিটিতে তুলে ধরা হয়েছে সেজন্য ছবিটি বাড়তি প্রচারণা পেয়েছিল এবং সানীর ক্যারিয়ারের অন্যতম সেরা ছবি হয়ে উঠেছিল। অমিত হাসানকে ‘শেষ ঠিকানা, তুমি শুধু তুমি’ ছবিতে দেখা গেছে কিংবা আমিন খানকে ‘স্বপ্নের নায়ক’, ফেরদৌসকে ‘বুকের ভিতর আগুন’ ছবিতে। দর্শকের মধ্যে এ আফসোসটা প্রকটভাবে দেখা যায় যে সালমান ছবিগুলো করে যেতে পারলে তাঁর ক্যারিয়ারে আরও অসাধারণ সব ছবি যুক্ত হত এবং তাঁকে আরও বিভিন্নভাবে আমরা পেতাম স্মরণ করার জন্য। এই আফসোসটাই প্রমাণ করে সালমানের ছবির জন্য সালমানই কতটা প্রযোজ্য ছিল।
যে ফ্যাক্টরগুলো বললাম দেশের চলচ্চিত্রে যত নায়ক আছে সবার প্রতি পূর্ণ সম্মান বজায় রেখে বলা। সালমান শাহ নামটি এবং তাঁর রেখে যাওয়া কাজ বিশেষত্ব পেয়েছে এমনকি দিন দিন এটা বাড়ছে। এই বিরল ঘটনার জন্যই সালমান শাহ ব্যক্তিগতভাবে আমার সবচেয়ে প্রিয় নায়ক। কারো সাথে মিলে গেলে সেটা আরও বিশেষ কিছু হবে বলে মনে করি।
সালমান শাহ…♥