Select Page

সাহস: নবীন পরিচালকের সাহসী কাজ

সাহস: নবীন পরিচালকের সাহসী কাজ

একটি পরিসংখ্যান দিয়ে লেখা শুরু করা যাক। ওয়ার্ল্ড পপুলেশন রিভিউ (২০২২) অনুসারে, বিশ্বে নিচের ১০টি দেশে ধর্ষণের হার সর্বাধিকঃ

১. বতসোয়ানা (৯২.৯৩)

২. অস্ট্রেলিয়া (৯১.৯২)

৩. লেসোথো (৮২.৬৮)

৪. দক্ষিণ আফ্রিকা (৭২.১০)

৫. বারমুডা (৬৭.২৯)

৬. সুইডেন (৬৩.৫৪)

৭. সুরিনাম (৪৫.২১)

৮. কোস্টারিকা (৩৬.৭০)

৯. নিকারাগুয়া (৩১.৬০)

১০. গ্রানাডা (৩০.৬৩)

এই পরিসংখ্যান অনুসারে ধর্ষণের হারের দিক থেকে বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান ৪৬তম (৮.২০)। তবে ধর্ষণের ঘটনা বিবেচনায় এই তালিকায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র (৮৪,৭৬৭), দক্ষিণ আফ্রিকা (৪২,২৮৯), ভারত (২২,১৭২), অস্ট্রেলিয়া (১৮,২৩৭), যুক্তরাজ্য (১৭,৩১৬) ও মেক্সিকো (১৪,৯৯৩) এর পরই বাংলাদেশের অবস্থান (১১,৬৮২)। এটা শুধু পুলিশি রিপোর্ট হওয়া ঘটনার সংখ্যা। ধর্ষক ও তাদের হোতাদের ভয়-ভীতি প্রদর্শন এবং লোক-লজ্জার কারণে এমন আরও অসংখ্য ধর্ষণের ঘটনার রিপোর্ট হয় না। তাহলে ভেবে দেখুন রিপোর্ট না হওয়া ঘটনাগুলো যোগ করলে কত দাঁড়াতে পারে!

এতক্ষণে হয়ত বুঝে গেছেন কেন এই পরিসংখ্যানের উল্লেখ। হ্যাঁ, ‘সাহস’ চলচ্চিত্রটি ধর্ষণের মত অপরাধের বিরুদ্ধে এক সাহসী প্রতিবাদ, যার আভাস হয়ত কিছুটা ট্রেইলারে পেয়েছেন।

‘সাহস’-এর গল্পের পটভূমি বাগেরহাটে। গল্প শুরু হয় বখাটে মেহেদীর (কুন্তল বিশ্বাস বুকি) বয়ানে। এলাকার ক্ষমতাবান ব্যক্তির ছত্রছায়ায় সে বিভিন্ন অপরাধে লিপ্ত। একদিকে মেহেদী ও তার গ্যাংয়ের অপরাধের কালো হাতে সমাজ রঙহীন হয়ে রয়েছে, অন্যদিকে প্রেমিক-প্রেমিকা যুগল নীলা (নাজিয়া হক অর্ষা) আর রায়হান (মোস্তাফিজুর নূর ইমরান) একে অপরের হাত ধরে রঙিন স্বপ্ন বুনছে। নীলা-রায়হানের দীর্ঘ সাত বছরের প্রেমে মেহেদী বাধ সাধলে তারা পরিবারের অমতে বিয়ে করে রায়হানের চাচার দেওয়া ছোট বাড়িতে ছোট সংসার সাজায়। কিন্তু তাদের নতুন সংসারে আবারও কালো ছায়া হয়ে আসে মেহেদী।

নবীন পরিচালক সাজ্জাদ খানের সামাজিক-বাস্তবতাধর্মী গল্প বয়ান তার নির্মাণের গুরুত্বপূর্ণ দিক। হাসানাত বিন মতিনের চিত্রনাট্যে তিনি ১০০% লোকাল একটি গল্প দেখাতে চেয়েছেন, এতে কোন প্রকার গিমিক নেই, নেই অতিরিক্ত বিজিএম। দৃশ্যপটে বাড়তি মেদ না রেখে যে গল্পটুকু বলা প্রয়োজন তাই বলেছেন। এলাকায় বখাটের ছোট-খাট উপদ্রব কখন সংঘবদ্ধ অপরাধে রূপ নেয় এবং এর ফলে সুন্দর সাজানো সংসার তছনছ হয়ে যায়, সেটাই দেখিয়েছেন পরিচালক। পাশাপাশি দেখিয়েছেন কীভাবে এইসব অপরাধের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর সাহস সঞ্চয় করে প্রতিবাদী হতে হয়।

নীলা চরিত্রে অর্ষা জেদী, খানিক সময়ের জন্য ভীত-সন্ত্রস্ত এবং প্রতিবাদী। তার কপট জেদের কারণে তাকে একটি ভয়াবহ অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হতে হয়। তার সাথে ঘটে যাওয়া দুর্বিষহ ঘটনার পর তার অভিব্যক্তিপূর্ণ চোখ এবং ভীত ও যন্ত্রণা-কাতর মুখাবয়ব, সেই ভঙ্গুর অবস্থা থেকে উত্তরণ এবং দৃঢ় সংকল্প ও প্রতিবাদী হয়ে ওঠার রূপান্তর তার অভিনয়কে শক্তিশালী করেছে। মোস্তাফিজুর নূর ইমরানের রায়হান চরিত্রটি সমাজের শোষিত ও নিপীড়িত শ্রেণির প্রতীক। তার গোবেচারা প্রেমিক ও অসহায় স্বামী রূপটিও শেষ পর্যায়ে সাহসী হয়ে ওঠে। সে প্রথাগত আইন ও বিচারের ঊর্ধ্বে গিয়ে নিজেই অপরাধীর শাস্তি দিতে মরিয়া হয়ে ওঠে।

প্রধান দুই চরিত্রের সাথে পাল্লা দিয়ে অভিনয় করেছেন খল চরিত্রে অভিনয় করা কুন্তল বিশ্বাস বুকি। বাগেরহাটের স্থানীয় এই অভিনয়শিল্পী শো-স্টিলার। মেহেদী চরিত্রে তার বখাটে ও বেপরোয়া রূপ, তার চঞ্চলতা, তার অপরাধ সংঘটন পুরোটা সময় তার পরবর্তী কার্যক্রমের প্রতি মনযোগ দিতে বাধ্য করে। তবে মেহেদী যেই গডফাদারের ছত্রছায়ায় এত অপরাধ করে আইনের চোখ ফাঁকি দিয়ে বের হয়ে যায় সেই চরিত্রটি এস্টাব্লিশ করতে পারেননি পরিচালক। তেমনই পোস্টারে গুরুত্বপূর্ণ অংশ হলেও পুলিশ চরিত্রে খায়রুল বাসারের ক্যামিও চরিত্রটিও এস্টাব্লিশ হওয়ার আগেই গল্প শেষ করে দিয়েছেন। অন্যদিকে, নারী উন্নয়ন কেন্দ্রের আপা চরিত্রটি যথেষ্ট দুর্বল হয়েছে।

সর্বোপরি, ‘সাহস’ নবীন পরিচালক সাজ্জাদ খানের একটি সাহসী প্রকল্প। সাহসের সংজ্ঞা একেক জনের কাছে একেক রকম হতে পারে। এই চলচ্চিত্রে নীলা চরিত্র তার সাথে ঘটে যাওয়া ঘটনার সত্য বয়ান দেওয়ার সাহস করেছে। পরিচালকও ধর্ষনের শিকার নারীর জবানবন্দী রেকর্ড করার দৃশ্যপট দেখানোর সাহস করেছেন। তবে, পরিচালক ‘সাহস’-এর মত সাহসী গল্প পর্দায় দেখানোর সাহস করলেও আমাদের সেন্সর বোর্ড এখনও ততটা সাহসী হয়ে ওঠতে পারেনি। তাইতো তারা এই রকম একটা কনটেন্টে কাটা-ছেড়া করতে নির্দেশ দিয়েছিল।

যাই হোক, সেন্সর বোর্ডের বাধা-বিপত্তির পর ছবিটি মুক্তি পেয়েছে চরকিতে। ভবিষ্যতেও পরিচালক সাজ্জাদ খানের এরকম ১০০% লোকাল গল্পের সাহসী ছবি আমাদের উপহার দিবে এই প্রত্যাশা রইল।

রেটিংঃ

Rating: 3.5 out of 5.


About The Author

Mahbubul Hoq Wakim

ব্লগার ও ডেটাবেজ এডিটর: বিএমডিবি

Leave a reply