Select Page

‘বেদের মেয়ে জোসনা’র কারণে অন্য ছবি দেখার টাকা ছিল না দর্শকের!

‘বেদের মেয়ে জোসনা’র কারণে অন্য ছবি দেখার টাকা ছিল না দর্শকের!

তোজাম্মেল হক বকুল পরিচালিত ‘বেদের মেয়ে জোসনা’র নেট কালেকশন নিয়ে সম্প্রতি বেশ বিতর্ক উঠেছে। এর পেছনে রয়েছে এক মাস বয়সী ‘প্রিয়তমা’কে উপরে তোলার উদ্দেশ্যে। আনুষ্ঠানিকভাবে জানা না গেলেও বিভিন্ন সময়ে প্রযোজক আব্বাস উল্লাহ ও মতিউর রহমান পানু জানিয়েছিলেন, ‘বেদের মেয়ে জোসনা’র আয় ছিল ২০ কোটি টাকা ছাড়িয়ে। ওই সময় প্রযোজকরা গ্রস ও নেট এ ধরনের হিসাব করতেন না। বরং নিজেদের ভাগের অংশটুকই জানাতেন। আলোচনা উঠেছে, ওই সময়ের টিকিটের দাম অনুসারে এত টাকা আয় সম্ভব কি না। ১৯৮০ এর দশকে সিনেমা ছিল বিনোদনের প্রধানমাধ্যম। আর হিট সিনেমাগুলো ১২শ’ হলে সারা বছর ঘুরে ঘুরে চলার পাশাপাশি রিপিট দর্শক টানত।

ওই সময় জনপ্রিয় সিনে সাপ্তাহিক চিত্রালীর এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘বেদের মেয়ে জোসনা’র ব্যবসার কারণে মুক্তির কয়েক মাস পরও অন্য সিনেমা মুখ থুবড়ে পড়ে। কারণ তখনও রিপিট দর্শকরা সিনেমাটি দেখছিল। আবার এই সিনেমাটি এতবার দেখা হয়েছে যে নতুন কিছু দেখার মতো টাকাও ছিল না তাদের!

সম্প্রতি সেই ১৯৮৯ সালের ২২ সে‌প্টেম্বর প্রকাশিত প্রতিবেদনটি ফেসবুকে পোস্ট করেছেন সাংবাদিক মাহফুজুর রহমান। পড়ুন তবে—

’জোসনা’ চল‌চ্চি‌ত্রের সাম‌গ্রিক ব্যবসা আট‌কে দি‌য়ে‌ছে

চিত্রালী রি‌পোর্ট

বেদের মেয়ে জোসনা চলচ্চিত্রশিল্পের ব্যবসা‌কে চাঙ্গা করলেও সমগ্র চলচ্চিত্র ব্যবসাকে আটকে দিয়েছে বলে চিত্রনির্মাতারা মনে করছেন। কারণ বেদের মেয়ে জোসনা’র জন্য অন্যান্য নতুন ছবি মুক্তি পেতে পারছে না। ছবির সিংহভাগ ব্যবসা হয় মফস্ব‌লে। মফজলের অধিকাংশ ষ্টেশনে বেসের মেয়ে জোসনার একচেটিয়া বাবসায়িক আধিপত্যের কারণে অন্যান নতুন ছবির প্রযোজক-পরিবেশকরা ছবি মুক্তি দিতে সাহস পাচ্ছেন না। তাছাড়া ‘জোসনা’র সাথে মুক্তি দিতে ভয় পাচ্ছেন।

বিশ্বস্তসূত্রে জানা গেছে মফঃস্বলের যে ষ্টেশনেই ঐ ছবি চলছে সে ছবি আর নাম‌ছে না, যার কার‌ণে কো‌ন নতুন ছবিও মু‌ক্তি পা‌চ্ছে না।

অ‌লৌ‌কিকভা‌বে বে‌দে‌র মে‌য়ে জোসনার রেকর্ড ভঙ্গকারী ব্যবসা সমগ্র চল‌চ্চিত্র ব্যবসার জন্য একটা হুম‌কি হ‌য়ে দাঁ‌ড়ি‌য়ে‌ছে বলে প্রযোজক-পরিবেশক মহল মনে করছেন।

এ প্রসঙ্গে পরিবেশক সমিতির সাধারণ সম্পাদক সানোয়ার আকন্দ মোর্শেদ চিত্রালীকে জানান, যশোরের মনিহার সিনেমা হলের মত একটা বড় প্রেক্ষাগৃহে এগার সপ্তাহ উত্তীর্ণ হবার পরেও বেদের মেয়ে জোসনা চলছে। ঐ ছবির বিপরীতে অন্যান্য হলে অন্য ছবিগুলো বেদম মার যাচ্ছে।

প্রযোজক-পরিবেশকদের মতে, যশোরের একটা বিরাট এবং গুরুত্বপূর্ণ ষ্টেশনে যেখানে সপ্তাহে দুটো নতুন ছবি মুক্তি পায় সেখানে জোসনা চলার কারণে প্রযোজক-পরিবেশকরা কোন নতুন ছবি মুক্তি দিতে সাহস পাচ্ছেন না।

বেদের মেয়ে জোসনার কারণে যশোরের মত একটি গুরুত্বপূর্ণ ষ্টেশনে এক মাসে আটটি নতুন ছবি ব্যবসা ফেঁসে গেছে বলে প্রযোজক-পরিবেশকরা উ‌দ্বেগ প্রকাশ করেছেন।

এ ছাড়া কোন ষ্টেশন থেকে বেদের মেয়ে জোসনার প্রিন্ট চলে আসার পর অন্য কোন নতুন ছবি মুক্তি পেলে সে ছবির মেরিট থাকা সত্ত্বেও খুব কম সংখ্যক দর্শক সে ছবি দেখছে। এর প্রধান কারণ হলো বেদের মেয়ে জোসনা একাধিকবার দেখার পর নতুন ছবি দেখার আর্থিক শক্তি দর্শক হারিয়ে ফেলেছে।

পর্যবেক্ষকমহল মনে করেন বেদের মেয়ে জোসনা’র স্মরণকালের এই ব্যবসায়িক বিস্ফোরণ সংগত কারণেই বর্তমানে চলচ্চিত্রের সামগ্রিক ব্যবসার ভারসাম্যকে বিঘ্নিত করেছে।

এদিকে এ ছবির ব্যাপক ব্যবসায়িক আলোড়নের ফলে কিছু ভিডিও ব্যবসায়ী মাঝখান থেকে অবৈধভাবে ফায়দা লুটছে বলে নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে।

বেদের মেয়ে জোসনার ভিডিও ক্যাসেটে দেশের অধিকাংশ স্থানে চলছে। বলাবাহুল্য এই ক্যাসেট বৈধ নয়।

সিনেমা হলে টিকেট না পেয়ে যে সব দর্শক ফিরে আসছে তারা ঐ ছবির ভিডিও ক্যাসেট যেখানে চলছে সেখানে ভীড় করছে। ঢাকার বাইরে মফঃস্বল অঞ্চলে বেদের মেয়ে জোসনার ভিডিও ক্যাসেটের ভাড়া প্রতি তিন ঘন্টার জন্য ১০০ থেকে ৩০০ টাকা পর্যন্ত চলে গেছে। ঢাকার কোন কোন এলাকার ৬০ থেকে ৭০ টাকায় আগে থেকে বুক করে লোকজন বেদের মেয়ে জোসনার ক্যাসেট ভাড়া নিচ্ছে। যে বাসায় ঐ ক্যাসেট দেখানো হয় সে বাসার মালিক উৎসাহী পাড়া-প্রতিবেশীর কাছ থেকে ১০ থেকে ২০ টাকা করে নিয়ে রীতিমত একটা প্রদর্শনীর আয়োজন করছে।”


মন্তব্য করুন