Select Page

রাজ্জাকের স্মৃতিকথা/ ফেলে আসা দিন

রাজ্জাকের স্মৃতিকথা/ ফেলে আসা দিন

[রাজ্জাক। বাংলা সিনেমার ইতিহাস তাকে ছাড়া ভাবা যায় না। প্রায় ছয় দশক এ ইন্ডাস্ট্রিকে কাজ করেছেন। বলা যায়, যাদের অভিনয়ে বাংলা চলচ্চিত্র গড়ে উঠেছে, তাদের প্রধান ব্যক্তি। পেয়েছেন নায়করাজ উপাধি। প্রয়াত রাজ্জাকের এ স্মৃতিকথা ছাপা হয়েছিল সাপ্তাহিক বিচিত্রায়, ১৯৯২ সালের ঈদ সংখ্যায়। অনুলিখন করেছিলেন অনল রায়হান। মূল্যবান লেখাটি বিএমডিবি পাঠকদের সামনে উপস্থাপন করা হলো।]

ছেলেবেলার সেই সময়গুলি আমার ফুটবল হাতে নিয়েই কেটে গেছে। স্কুলে পড়তাম তখন। ফুটবলের মাঠে গোলকিপার হিসেবে আমার বেশ নাম ডাক ছিলো পাড়াতে। আমরা থাকতাম কলকাতার টালীগঞ্জে। পাড়ার নাম ছিল বাঁশদ্রনী। যে সময়ের কথা বলছি, সে সময়ে টালীগঞ্জ ছিল কলকাতার একটি বিখ্যাত জায়গা। এই এলাকাটা সংস্কৃতি চর্চার প্রাণকেন্দ্র ছিল। আমার মনে আছে। কলকাতার প্রায় প্রত্যেকেই টালীগঞ্জের মানুষদের কেন যেন বেশ ভয় করতো, খানিকটা অন্য চোখে দেখতো। এটা যে আসলে ঠিক কেন তো তা পরিষ্কারভাবে জানা নেই আমার। তবে সে সময়ে পঞ্চাশের দশকে গোটা কলকাতাতেই একটা ব্যাপার ছিলো লক্ষণীয়। তরুণ ছেলেদের মধ্যে সংস্কৃতি চর্চার একটা আগ্রহ ছিলো। ফলে প্রতি পাড়াতেই তরুণ বা যুবকদের উদ্যোগে নানা রকম সাংস্কৃতিক বলয় গড়ে উঠতো। এর একটি বিশেষ দিক ছিলো এই রকম, নিয়মিত মাঠে গিয়ে ফুটবল বা অন্য কোন খেলায় যারা অংশ নিতো, তাদেরই সাধারণত দেখা যেত পাড়ায় পাড়ায় নাটক বা এই ধরনের সাংস্কৃতিক কাজ কর্ম নিয়ে মেতে থাকতে। আজকের দিনে এমনটা দেখা যায় না। যারা খেলাধূলো নিয়ে যেতে থাকে, তাদেরকে সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে খুব কমই দেখা যায় না। কিন্তু তখনকার ব্যস্ততা ছিল অন্য রকম, বলতে কী প্রায় উল্টোটাই।

ফুটবল ছিল আমার খুব প্রিয় একটি বিষয়। ক্রমেই তার সঙ্গে এসে যুক্ত হলো নাটক। দুটো ক্ষেত্রেই সমান আগ্রহবোধ করতাম। নাটকটা আমার কাছে আসলে নেশাতেই পরিণত হয়েছিল।

আমি বোধহয় তখন ক্লাস এইটে। সেই সময়েই ঘটলো ঘটনাটা। আমাদের স্কুলে একটা নাটক হবে বলে শুনলাম। নাটকটি ছিলো আমাদের পাড়ারই এক ভদ্রলোক যতিময় ব্যানার্জীর লেখা ‘নতুন ইহুদি’। ইনি অভিনয়ও খুব ভালো করতেন। ‘নতুন ইহুদি’ নাটকে একটি কিশোর ছেলের চরিত্র ছিলো। ছেলেটি স্কুলে ক্লাস সেভেনে পড়ে। পাশাপাশি হকারি করে। এই চরিত্রটিতেই অভিনয় করি আমি। নাটকের দিন চিফ গেস্ট হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ছবি বিশ্বাস। সেদিনের একটি ঘটনার কথা মনে পড়ে। এমনিতে অভিনয়ের ব্যাপারে আমি খানিকটা ভীতই ছিলাম। কিন্তু মঞ্চে অভিনয় করার সময় হঠাৎ করেই ভয় কেটে যায় আমার। স্যাররা বলেছিলেন, আমার মধ্যে নাকি কোন জড়তা ছিল না। যাই হোক। নাটকে একটি দৃশ্য ছিলো। এরকম, যেখানে আমার বাবা মারা যায়। স্ক্রিপ্ট অনুযায়ী এখানে কাঁদতে হবে আমাকে। আমি কাঁদলাম ঠিকই কিন্তু সে কান্না দর্শকরা দেখতে পেলো না। অডিয়্যান্সের নিকে পিছন ফিরে উলটো দাঁড়িয়ে কান্নার অভিনয় করলাম আমি। নাটক শেষ হওয়ার পর ছবি বিশ্বাস আমাকে একটা চড় লাগালেন— আদরের চূড়। হাসতে হাসতে তিনি আমাকে বললেন, স্টেজ পারফরমেন্সের সময় কখনো দর্শকদের দিকে পিছন ফিরে দাঁড়াতে নেই— এটা ঠিক না…!

এই ঘটনাটি আমার জীবনে একটি মস্ত বড় স্মৃতি। এর কিছুদিন পর থেকেই ছবি বিশ্বাসের কাছে আবৃত্তি শিখতে শুরু করলাম আমি। আমি ছাড়াও আরো অনেক ছেলেই তাঁর কাছে আবৃত্তি শিখতো। ছবি বিশ্বাসের বাসা ছিলো আমাদের স্কুলের পাশেই। প্রতি রবিবার তার কাছে আবৃত্তি শিখতে যেতাম। উনাকে প্রচন্ড শ্রদ্ধা করতাম। যা শেখাতেন তা মনোযোগ দিয়ে বোঝার চেষ্টা করতাম। অভিনয়ের ওপরে, ঠিক অভিনয়ের স্টাইলে আবৃত্তি শেখাতেন তিনি। বেশ কিছুদিন উনার কাছে আবৃত্তি শিখেছি আমি। সে সময়ে আমার সঙ্গে আর যারা তার কাছে আবৃত্তি শিখতে যেতো, তাদের অনেকেই পরবর্তী সময়ে বিখ্যাত হয়েছেন। যেমন দিলীপ রায়। ইনি একজন বড় অভিনেতা হয়েছিলেন।

কবরীর সঙ্গে নায়করাজ। বাংলা চলচ্চিত্রের অন্যতম আইকন জুটি তারা

মূলত এ সময় থেকেই একটু একটু করে অভিনয়ের সঙ্গে জড়াতে শুরু করি আমি। ‘৬২ সালে বিখ্যাত পরিচালক পীযূষ বোসের নাট্যদল রঙ্গসভাতে যোগ দিলাম। দিলীপ রায়ও এ দলে নিয়মিত কর্মী ছিলেন। এমনকি আমার শ্রদ্ধার পাত্র ছবি বিশ্বাস রঙ্গসভার প্রেসিডেন্ট ছিলেন এক সময়। রঙ্গসভাতে যুক্ত হওয়ার ফলে নাট্যচর্চার আগ্রহ আরো বেড়ে যায় আমার। ধীরে ধীরে নাটকই হয়ে ওঠে আমার সবকিছু। আমার চিন্তা-ভাবনা, উৎসাহ-উদ্দীপনা-ব্যস্ততা-সবটাই আবর্তিত হতে শুরু করে নাটককে ঘিরেই। রঙ্গসভার পাশাপাশি পাড়ায় আমরা কিছু বন্ধুবান্ধব মিলে তখন আরেকটি নাটকের দল গড়ে তুলি। এর প্রধান উদ্যোগটা আমিই নিয়েছিলাম।

অভিনয়ের প্রথম বীজটি বপন হয়েছিলো কিন্তু আমার একদম ছোট থাকতেই। তখন ফাইভে পড়ি। আমাদের স্কুলের নাম ছিলো কানপুড়া স্কুল। এখানে মর্নিং শিফটে মেয়েরা আর সকাল এগারটা থেকে ছেলেরা পড়তো। তবে স্কুলের বার্ষিক ফাংশন বা অন্যান্য অনুষ্ঠানে ছেলেমেয়ে সবাই এক সঙ্গেই অংশ নিতো। এমনি এক বার্ষিক অনুষ্ঠানে স্কুলে নাটক হলো, আমি অভিনয় করলাম এতে। সে সময়ে স্ত্রী চরিত্র বর্জিত ছাপানো নাটকের স্ক্রিপ্ট পাওয়া যেত। আমাদের স্কুলের স্পোর্টস টিচার যতীনময় মুখার্জীর নির্দেশনায় এ ধরনেরই একটি নাটক করার পরিকল্পনা করা হলো। স্যার আমাকে নাটকের মূল চরিত্রটিতে অভিনয় করার জন্য বললেন। এতটা আশ্চর্য বোধহয় সে সময় আর কারো কোন কথাতে হইনি আমি। স্যারকে সরাসরি জানিয়ে দিলাম, আমার দ্বারা অভিনয় হবে না। কিন্তু স্যার নাছোড়বান্দার মতোই আমাকে বোঝাতে লাগলেন এবং বললেন, ‘আমি জানি তুমি ঠিকই অভিনয় করতে পারবে।‘ শেষ পর্যন্ত স্টেজে উঠলাম আমি। ঘেমে নেয়ে আমার অবস্থা তখন যাচ্ছেতাই। এত লোকজনের সামনে অভিনয় করতে গিয়ে লজ্জায় আমি এতটুকু হয়ে গেলাম।

শেষ দিকে জুটি হিসেবে শাবানার সঙ্গে বেশি ছবি করেছেন রাজ্জাক

যাক। ভালোই উতড়ে গেলাম আমি। প্রত্যেকেই প্রশংসা করলো, বাহবা দিলো। প্রচন্ড তালির আওয়াজে আমি কেমন বিমূঢ় হয়ে পড়লাম। আর ঠিক তখনই অনেকটা নিজের অগোচরেই অভিনয়ের বীজ বপন হয়ে গেলো আমার মধ্যে। তাছাড়া সেদিনের সেই নাটকের পর থেকেই পাড়ায় কিংবা স্কুলে আমার ভাবমূর্তিই পাল্টে গেলো। খেয়াল করলাম আশপাশের সবাই আমাকে একটু যেন ভিন্ন চোখে দেখতে শুরু করলো। স্কুলের স্যারদের কাছে হঠাৎ করেই আমার আদর বেড়ে গেলো। বিপ্লব চরিত্রে অভিনয় করে আমার জীবনধারাতেই একটা বিপ্লব হয়ে গেলো যেন। এরপর থেকে পাড়ায় ছোটখাটো দু-একটা ফাংশনে আমার ডাক আসতে লাগলো। সেই প্রথম কৈশোরেই রবীন্দ্রনাথের ‘ডাকঘরে’ খোকাবাবুর বা শরতচন্দ্রের ‘মহেশ’ নাটকে আমিনের চরিত্রে অভিনয় করলাম। পঞ্চাশের দশকের শুরুর দিকের ঘটনা এগুলো। বলতে কী পাড়ার ছেলেদের কাছে আমার খাতির বেড়ে গেলো। পাড়াতে রাজা নামটা বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠলো (রাজা আমার ডাকনাম ছিলো)। ফলে চারপাশের পুরো পরিবেশটাই যেন আমাকে অভিনয়ের দিকে ঠেলে দিলো যা ক্লাস এইটে ‌‘নতুন ইহুদি’ নাটকে কাজ করার পর এক রকম চূড়ান্তই হয়ে গেলো। তবে, তখনো চলচ্চিত্রে অভিনয় করার ব্যাপারে কোন ভাবনা ছিল না আমার। তাছাড়া ‘ফিল্মে অভিনয়’— এ ব্যাপারটা আমার কাছে অসম্ভব মনে হতো। এই অসম্ভব ব্যাপারটি যে একদিন সম্ভব হবে এবং শুধু সম্ভবই নয়, চলচ্চিত্রে নায়ক হিসেবে আমার যে এই প্রতিষ্ঠা আসবে তা কি ভেবেছিলাম আমি?

যা হোক। রঙ্গসভার পাশাপাশি আমরা বন্ধু বান্ধব মিলে পাড়ায় আরেকটি নাটকের দল গড়লাম। এর প্রধান উদ্যোগটা আমিই নিয়েছিলাম। আমাদের দলে স্বভাবতই কোন মেয়ে ছিলো না। মনে আছে সেজন্য নাটক মঞ্চায়নের সময় নারী চরিত্রের জন্য মেয়ে পারফরমারের খোঁজ করতে হতো আমাদের এবং তাদেরকে নাটকে অভিনয়ের জন্য পারিশ্রমিক দিতে হতো। এটা সম্ভবত ঊনষাট-ষাট সালের দিকের কথা। সে সময় দুইশ, তিনশ, চারশ’ বা পাঁচশ’ টাকায় এইসব প্রফেশনাল অভিনেত্রীদের ভাড়া করতাম নাটকের জন্য। এতে অবশ্য আমাদের বাড়তি বেশ কিছু টাকা খরচ হতো। তবে তার জন্য দুঃখ ছিলো না আমাদের। বিশেষ করে এই সময়টাতে প্রচুর টাকা উড়িয়েছি আমি। কলকাতায় আমাদের পরিবারের আর্থিক অবস্থা বেশ স্বচ্ছলই ছিলো। ফলে আমার টাকা-পয়সার কোন সমস্যাতে পড়তে হয়নি কখনো। নাটকের জন্য নিশ্চিতে টাকা খরচ করতাম। এ ব্যাপারে আমার মেজো ভাই যথেষ্ট সাহায্য করতেন আমাকে। তার নাম ছিলো আবদুল গফুর। বড় ভায়ের নাম আবদুস শুকুর। এছাড়া তিন বোন শাবুরুন্নেসা, আশিরুন্নেসা এবং শাফিউন্নেসা। মেজ তাই ছাড়া বোনরা প্রত্যেকেই নাটকের ব্যাপারে উৎসাহ দিয়েছে আমাকে। আমার নাটক তারা দেখতে যেতো, আমার অভিনয় দেখে খুশি হতো এবং যতটুকু সম্ভব সব রকম সাহায্য করতো। এক্ষেত্রে আমার বড় ভাইই কেবল ব্যতিক্রম। তিনি এসব পছন্দ করতেন না। অন্যান্য আত্মীয় স্বজনরাও আমার নাটক করাটাকে খারাপ চোখে দেখতেন। এর কারণও অবশ্য ছিলো। ধর্মের দিক থেকে আমাদের পরিবার যথেষ্ট গোঁড়া ছিল। মোল্লা পরিবারের একটি ছেলে নাটক করে বেড়াবে তা আমার মুরুব্বী আত্মীয় স্বজনরা ভাবতেও পারতেন না। নানা রকম ধর্মীয় অনুশাষণ মেনে চলতেন তারা। বলতে কী অমন ধারা একটি গোঁড়া মুসলিম পরিবারের বলয়ে থেকে কিভাবে যে আমি নাটকের সঙ্গে জড়িয়ে গেলাম এবং পরবর্তীকালে ফিল্মে অভিনয় করতে শুরু করলাম— তা এখনো আমার কাছে একটা ধাঁধা।

ক্যারিয়ারের শুরুতে ববিতার বাবার চরিত্রে অভিনয় করেন। পরে জুটি হিসেবে তুমুল জনপ্রিয়তা পান

তবে সংস্কৃতি চর্চার জন্য আমাদের পারিবারিক অনুশাষণ বা রীতিনীতিগুলো অনুকূলে না থাকলেও পরিবারের বাইরে পাড়ায় এবং আমার চারপাশ ঘিরে যে পরিবেশটা ছিলো, সেটাই আমাকে সাংস্কৃতিক অঙ্গনে উদ্বুদ্ধ ও ধরে রাখতে পেরেছিলো। সে সময়ে টালীগঞ্জে ফিল্মের স্টুডিওগুলো ছিলো। আমাদের বাড়ির আশপাশেই চলচ্চিত্রের সে কালের বিখ্যাত সব লোকজন থাকতেন যেমন, ছবি বিশ্বাস, মঞ্জু দে, পীযূষ বোস, সাবিত্রী চ্যাটার্জী, রবি ভট্টাচার্য এরা। আসলে আমার পারিপার্শ্বিক পরিবেশটাই ছিলো ফিল্মের বা নাটকের যা যে মাত্রাতেই হোক প্রভাবিত করেছে আমাকে।

রঙ্গসভায় থাকাকালীন সময়টাতেই চলচ্চিত্রের সঙ্গে অল্প অল্প করে যোগাযোগ ঘটতে শুরু করে আমার। পীযূষ দার সঙ্গে টালীগঞ্জে স্টুডিওতে গেলাম বেশ কয়েকবার। প্রচন্ড কৌতূহল নিয়ে ফিল্মের শ্যুটিং দেখতাম। সে সময়ে উত্তম কুমারের দারুণ ভক্ত ছিলাম। স্টুডিওতে সামনাসামনি তাকে দেখে কী আনন্দই না পেয়েছিলাম আমি। এমনিভাবে স্টুডিও পাড়ায় ঘুরতে গিয়ে তখনকার দিনের কলকাতার বাংলার ছবির সব অভিনেতা-অভিনেত্রীদেরই সামনাসামনি দেখার সৌভাগ্য হয়েছিলো আমার। উত্তম কুমারের ভাই তরুণ কুমারের সঙ্গেও পরিচয় হয়েছিল সে সময়। উত্তম কুমারের সঙ্গেও পীযূষ দাই পরিচয় করিয়ে দেয় আমাকে। আগেই বলেছি উত্তম কুমারের ভক্ত ছিলাম আমি। পরিচয় করিয়ে নেয়ার সময় পীযূষ দা তাকে সেভাবেই বললেন, ‘এই যে তোমার একজন গোঁড়া ভক্ত।’

পরবর্তী পর্যায়ে পীযূষ বোসের ছবিতে উত্তম কুমার যখন কাজ করছিলেন, সে সময় তাঁর সঙ্গে খুব ভালো সম্পর্ক গড়ে ওঠে আমার। তিনি আমাকে যথেষ্ট স্নেহ করতেন। আমি এখানে চলচ্চিত্রে প্রতিষ্ঠা পাওয়াতে প্রচন্ড খুশি হয়েছিলেন তিনি। তার ছেলের বিয়েতে দাওয়াত দিয়েছিলেন। আমি গিয়েছিলাম। আসলে খুবই অন্তরঙ্গ সম্পর্ক উঠেছিলো তার সঙ্গে আমার। এটাও আমার জীবনের একটি উল্লেখযোগ্য বিষয়।

উত্তম কুমারের মৃত্যুর পরে তার বাসায় গিয়েছিলাম। তার সঙ্গে সম্পর্কের কথা সুপ্রিয়া দেবীও জানতো। বলতে কী তার মৃত্যুতে একটা আঘাতই যেন পেয়েছিলাম আমি। উত্তম কুমার একজন শক্তিশালী অভিনেতা ছিলেন। অভিনয় দিয়ে দর্শকের হৃদয়কে অদ্ভূতভাবে জয় করতে পারতেন তিনি। সেই ছেলেবেলায় তার ছবিগুলি দেখে কিংবা স্টুডিও পাড়ায় সামনাসামনি তাকে দেখে যে অনুভূতি হতো আমার তা ব্যাখ্যা করা সম্ভব নয়।

ছেলে বাপ্পারাজের সঙ্গে নায়করাজ

বাষট্টি সাল থেকে বলা চলে চলচ্চিত্রে ঘোরাঘুরি শুরু হয় আমার। সে সময় বেশ কয়েকটি ছবিতে ছোট ছোট চরিত্রে অভিনয়ও করেছিলাম। ছবির নাম যতদূর মনে পড়ে— পঞ্চতিলক, এতটুকু আশা, রতনলাল বাঙালি, শিলালিপি এইসব। এসবের পেছনে পীযূষদার অবদান অবশ্য সবচেয়ে বেশি। তার সঙ্গে ছিলাম বলেই চলচ্চিত্রের সঙ্গে যোগাযোগ ঘটে আমার। অভিনয়ের ব্যাপারে তাঁর কাছ থেকে পরিপূর্ণ উৎসাহ পেয়েছি। শিক্ষাও নিয়েছি অনেক। উনি খুব যত্ন নিয়ে শেখাতেন আমাদের। অভিনয়, নাটক বা চলচ্চিত্রকে অপরিসীম ভালোবাসতেন তিনি। মূলতঃ পীযূষদার হাত ধরেই ফিল্মে আসি আমি। স্টুডিওতে দু-একদিন ঘোরাঘুরি করার ফলে চলচ্চিত্রে অভিনয়ের ব্যাপারে আগ্রহ জন্মাতে শুরু করে আমার। এক্ষেত্রে উত্তম কুমার একটি শক্তিশালী প্রেরণা।

সে সময়ে নিয়মিত ছবি দেখতাম। তবে বরাবরই বাংলা ছবির প্রতিই টান আমার বেশি ছিল। হিন্দি ছবি দেখতাম না। যদিও দিলীপ কুমার বা রাজ কাপুরের ভক্ত ছিলাম। বাংলা ছবির ক্ষেত্রে উত্তম কুমারের কোনো ছবিই মিস করতাম না। আর সেই উত্তম কুমারকে প্রথম সামনাসামনি দেখা করেই অভিনয় করার ইচ্ছা জাগে আমার। তাকে দেখতে দেখতে মনে মনে ভাবছিলাম, আহা কোনদিন যদি আমি তার মত হতে পারি। একজন বিখ্যাত শিল্পী-একজন জনপ্রিয় নায়ক। পীযূষদা আমার ভেতরের এই সুপ্ত ইচ্ছা বা বাসনার ব্যাপারটা বুঝতে পারতেন। ফলে ফিল্মে আসার ব্যাপারে সাহায্য করেছিলেন তিনি। যদিও সে সময়টাতে পীযূষদা আমাকে বেশ কয়েকবারই বলেছিলেন, ‘এখনই ফিল্মে এত বেশি ঘেঁষার, জড়িয়ে পড়ার কোন দরকার নেই। বরং আরো বেশি করে নাটক করে যাও। এতে অভিনয়ের অনুশীলনটা তোমার আরো বেশি হবে, আর এটাই বেশি প্রয়োজন।’

অভিনয় জীবনের শুরুতেই পীযূষ বোসের যত এমন একজন শিল্পীর সান্নিধ্য পাওয়া আমার জন্য নিঃসন্দেহে একটা সৌভাগ্যের ব্যাপার। ঢাকায় আসার আগের গোটা সময়টাই বলতে কী তিনি আমাকে ক্রমাগত শিখিয়ে গেছেন। যাই হোক। যে সময়ের কথা বলছি,আমার বয়স তখন সতের-আঠারো এ রকমই হবে। অভিনয় তো ছেলেবেলা থেকেই নেশায় পরিণত হয়েছিলো, এবার তার আগে আরেকটি শব্দ জুড়ে গেলো— ফিল্মে অভিনয়। এই নেশার কারণেই ৬১ তে বোম্বে পালিয়েছিলাম আমি। ইচ্ছা একটাই, যে করে হোক ফিল্মে অভিনয় করতেই হবে এবং নায়ক হতে হবে। বোম্বেতে তখন একটাই ফিল্ম ইনস্টিটিউট ছিলো। পুণা তখনও হয়নি। মুখার্জীর স্টুডিওতে ছোটখাটো মোটামুটি এই ফিল্ম ইনস্টিটিউটে প্রায় নয় মাসের মতো ফিল্মের ওপর পড়ালেখা করেছিলাম আমি। অশোক কুমার বাবুর শালা নিখিল ব্যানার্জীর কথায় এখানে ক্লাস করতে শুরু করি আমি। মি. নয়ার শেখাতেন আমাদের। টাকা পয়সার ব্যাপারে কোন দুশ্চিন্তা ছিল না আমার। ভাইদের কাছ থেকে টাকা চেয়ে কোনদিন শূন্য হাতে ফিরতে হয়নি আমার। বোম্বেতে তারাই আমাকে টাকা পাঠাতো। তবে আর্থিক দিক থেকে তেমন সমস্যা না থাকলেও, অন্য সব রকম কষ্টই সেখানে করতে হয়েছে আমাকে। বোম্বে শহরের কেন্দ্রে দাদড়া নামের একটি জায়গায় বেশ কয়েকজন বাঙালি আমরা এক সঙ্গে মেস করে ছিলাম। কিন্তু সেখানে আট নয় মাসের বেশি থাকতে পারলাম না আমি। আসলে সেখানকার সিস্টেমগুলোর সঙ্গে সম্ভবত খাপ খাওয়াতে পারিনি আমি। তবে, পরবর্তী সময়ে এই আট মাসের শিক্ষা আমার কাজে লেগেছে।

ছোট ছেলে সম্রাটের সঙ্গে রাজ্জাক। তাকেও একাধিক সিনেমায় দেখা গেছে।

বোম্বে থেকে ফিরে এসে পুনরায় পীযূষদার রঙ্গশালায় যোগ নিলাম। ৫৯’ থেকে আমি মোটামুটি সিরিয়াসলি মঞ্চে পারফম করতে শুরু করি। ৬১’তে বোম্বে চলে যাওয়ায় নাটকের সঙ্গে বিচ্ছিন্নতার সৃষ্টি হলেও ফিরে আসার খুব কম সময়ের মধ্যেই আগের মতোই নাটক নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ি। সে সময় বাষট্টি সালে বিয়ে করলাম আমি লক্ষ্মীকে। এরপর চৌষট্টি সালে ঢাকা আসার আগে পুনরায় আমি বোম্বে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেই। মানসিকভাবে প্রস্তুত করলাম নিজেকে। যাওয়ার ব্যাপারে পুরোপুরি তৈরি হয়ে গেলাম। কিন্তু বোম্বে যাওয়ার ব্যাপারে বাধ সাধলেন সেই পীযূষদাই। আমাকে বললেন, ‘‌ফিল্মে যখন তোর এত বেশি আগ্রহ জমেছে তখন তাকে ঠিকমত কাজে লাগানো উচিত। বোম্বে না গিয়ে তুই বরং পাকিস্তান চলে যা।’ তার মতে বোম্বেতে প্রচন্ড প্রতিদ্বন্দ্বিতা। তাছাড়া সেখানে আমাকে সাহায্য করার মতো তেমন কোন লোক নেই। সুতরাং তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে চলে যাওয়াই যৌক্তিক। তিনি বললেন, ‘আর তাছাড়া পূর্ব পাকিস্তানে সবে মাত্র নতুন একটি ইন্ডাস্ট্রি গড়ে উঠছে। ফলে সেখানে তোর সুবিধা হবে অনেক বেশি।’

পীযূষদার কথা মতো তাই করলাম। চৌষট্টির এপ্রিলে বউ-বাচ্চাসহ মাইগ্রেশন করে চলে আসলাম এখানে— ঢাকায়। বাকী পুরো পরিবার আমার কলকাতাতেই থেকে গেলো। আমার ভাগের সমস্ত সম্পত্তি তাইদের দিয়ে দিলাম। তাদেরকে জানিয়ে নিলাম যে এগুলোর কোন কিছু আমার প্রয়োজন নেই। আসলে এই সমস্ত বিষয়-আশয়গুলোর চাইতে সে সময়ে চলচ্চিত্রে অভিনয়ের স্পৃহাই আমার মধ্যে কাজ করেছে বেশি। অনেকের কাছেই এটা বাড়াবাড়ি বলে মনে হতে পারে। হওয়াটা স্বাভাবিকও। কিন্তু তবু অর্থেই তখনকার দিনগুলোতে টাকা, বিষয়-সম্পত্তি এসবের প্রতি আমার কোন মোহ ছিল না। অভিনয়টাই ছিল আমার একমাত্র মোহ।

তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে চলে আসার পেছনে আরো একটি কারণও তখন আমার ছিল। আর তা হচ্ছে চৌষট্রি সালের সেই ভয়ংকর সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা। এই দাঙ্গা আমার ভেতরে গোটা জীবনের জন্য একটা স্থায়ী দাগ কেটে গেছে। কলকাতায় পরিচিত সবারই সঙ্গে মিশতাম আমি সমান আন্তরিকতা নিয়েই। ধর্ম বা জাত নিয়ে মাথা ঘামাতাম না। সত্যি বলতে কি আমাদের পাড়ায় বা আশপাশের সবাইকেই দেখেছি ধর্ম-বর্ণের ভেদাভেদ টানতেন না এবং আস্তরিকতা নিয়ে একজন আরেকজনের সঙ্গে মিলতো। মুসলমান বলে পাড়ায় বা স্কুলে নাটকে কিংবা ফুটবলের মাঠে আমাকে কোন রকম বিব্রত অবস্থার মধ্যে পড়তে হয়নি কখনো। কোনরূপ পক্ষপাত বা এ জাতীয় কোন কিছু চোখে পড়েনি আমার। তবে ফিল্মে কম-বেশি এ সমস্যা ছিলো বলে মনে হয়েছে আমার।

যাই হোক। সাম্প্রতিক দাঙ্গাটা আমার মধ্যে এক ধরনের বিতৃষ্ণার জন্ম দিয়েছিলো। ফলে অন্য কোথাও চলে যাবার জন্য আরো বেশি করেই আগ্রহী হয়ে উঠেছিলাম আমি।

তখন এখানে অর্থাৎ ঢাকার মনিবোস ছিলেন সাউন্ড রেকর্ডিস্ট। ফজলুল হক সাহেব ছিলেন একজন পরিচালক। পীযূষদা আমার জন্য তাদের চিঠি দিলেন। তাছাড়া আমার একটু পরিচয় ছিলো জব্বার খান সাহেবের সঙ্গে। তিনি কলকাতায় আসতেন। আমার মেজদার সঙ্গে তার খানিকটা জানাশোনা ছিলো। এই সূত্রটি কাজে লাগানো যাবে ভেবে ঢাকা চলে এলাম।

আমার জীবনের সবচেয়ে কষ্টের সময়টা ছিলো তখন। কলকাতায় ইচ্ছেমত বাপের টাকা উড়িয়েছিলাম। ফলে জীবনের সঙ্গে সংগ্রামটা যে কত কঠিন তা টের পাওয়ার সুযোগ হয়নি। ঢাকা এসে আষ্টেপৃষ্ঠে সেই জীবন সংগ্রামে জড়িয়ে গেলাম। আর আসার সময় কিছু টাকা সঙ্গে নিয়ে এসেছিলাম আমি। সেই টাকাই অল্প কিছুদিনের জন্য আমার পরিবারের ভরণ পোষণ করলো। আর আমি আপ্রাণ চেষ্টা করতে লাগলাম ইন্ডাস্ট্রিতে ঢোকার। যোগাযোগ করতে লাগলাম পরিচিত সবার সঙ্গেই। জব্বার সাহেবের কাছে গেলাম। মনিবোসের সঙ্গেও দেখা করলাম। কিন্তু ফল পেলাম না। জব্বার সাহেব অবশ্য বললেন, ‘দেখি কী করা যায়’– বুঝে নিতে তেমন কষ্ট হলো না যে আসলে ইনারা কেউই সাহায্য করবে না আমাকে। তবে শেষ পর্যন্ত জব্বার সাহেবের শালা আনিসের ইকবাল ফিল্মসের অফিসে অ্যাসিস্ট্যান্ট হিসেবে ঢুকলাম আমি এবং এখানে থেকেই অন্যান্যদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে লাগলাম। ইকবাল ফিল্মের এই চাকরিটিও ছিলো অবৈতনিক। শুধু কনভেন্স আর শুটিং হলে খাওয়া পেতাম। ইন্ডাস্ট্রির যাদের সঙ্গে দেখা করছিলাম তাদের কেউই ঠিক পাত্তা দিতে চাইছিলো না আমাকে। যেমন ক্যাপ্টেন এহতেশাম বা সুভাষ দত্ত কিংবা কামাল আহমেদ এরকম অনেকেই। আমি তো বটেই এমনকি যে আমাকে ইনাদের কাছে নিয়ে যাচ্ছিলেন তাকেও অপদস্থ হতে হচ্ছিলো। এরা প্রত্যেকেই তখন হিট ডিরেক্টর। সুতরাং আমার সম্পর্কে তাদের এই ভাবভঙ্গি হজম করা খুবই কষ্টকর ছিলো আমার জন্য। বার বার এই একই ব্যর্থতা আমার স্বপ্নকে নড়বড়ে করে তুলছিলো। নিজেকে পরাজিত মনে হচ্ছিলো। যাই হোক। কলকাতা থেকে যে টাকা নিয়ে এসেছিলাম তা থেকে কিছু টাকা খরচ করে একটা হোন্ডা কিনে ফেললাম আমি। তখন হোল্ডার দামও ছিলো কম। কনভেন্স বাঁচানোর জন্যই হোন্ডাটা কিনি আমি। তাছাড়া তেলের দামও ছিলো কম। তখন দুই টাকা, আড়াই টাকা বা দেড় টাকার মত ছিলো তেলের গ্যালন।

আশা ছাড়লাম না আমি। ছোটাছুটিও কমালাম না। যতই ব্যর্থ হচ্ছিলাম ফিল্মে অভিনয়ের জেদ ততই বেড়ে যাচ্ছিলো। কিন্তু আর্থিক অবস্থাটা ক্রমেই কোণঠাসা করে ফেলছিলো আমাকে। স্ত্রী, সন্তান নিয়ে কমলাপুরে থাকতাম তখন। কলকাতা থেকে নিয়ে আসা টাকা শেষ হয়ে এসেছিলো। সংসার চালানোটাই তখন আমার জন্য প্রচন্ড কঠিন একটা কাজে পরিণত হলো। না খেয়েও কাটাতে হয়েছে তখন। নায়কের চরিত্র পাওয়ার আশা আমি বলতে গেলে ছেড়েই নিয়েছিলাম। যেকোনো একটি চরিত্র পেলেই তখন আমি বর্তে যাই। কারণ মূল উদ্দেশ্যই ছিলো তখন সংসার চালানো। অথচ এখানে সেখানে ক্রমাগত চেষ্টা তদবির করেও একটা ছোটখাটো চরিত্রও জুটছিলো না আমার কপালে। হতাশ হয়ে ভেঙে পড়তে লাগলাম আমি। আর ঠিক ঐ সময়টাতেই জহির রায়হান সাহেবের সঙ্গে যোগাযোগ হলো আমার। অনেকেই তার সঙ্গে যোগাযোগ করতে বললো আমাকে। তিনি তখন এফডিসিতে এক নং ফ্লোরে ‘বাহানা’ ছবির শুটিং করছিলেন। সেখানে অবশ্য তার সঙ্গে কথা হলো না। তার পারমানেন্ট এডিটর এনাম সাহেব আমাকে রবিবার কায়েৎটুলী জহির রায়হানের বাসায় যেতে বললেন। আমি গেলাম। আমার সঙ্গে খুব নরমালি কথা বললেন তিনি। আমার ছবি দেখলেন, বললেন আগামী এক সপ্তাহ আমি যেন দাড়ি না কাটি এবং তার সঙ্গে দেখা করি।

স্ত্রী লক্ষীর সঙ্গে রাজ্জাক

উত্তেজনায় কাটলো আমার পরের কয়েকটা দিন। তখনো জানি না আমি আমাকে নিয়ে পরিকল্পনাটা কী তার। নির্দিষ্ট দিনে তার সঙ্গে দ্বিতীয়বারের মতো দেখা করলাম। তিনি আমাকে প্রচন্ড অবাক করে দিয়ে জানালেন, তার নিজেরই লেখা একটি উপন্যাস থেকে ছবি করবেন তিনি এবং সে ছবিতে নায়কের চরিত্রেই আমাকে নেবেন। লেখাটি আমাকে পড়তে আর তার সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখতে বললেন জহির রায়হান সাহেব। আমার কাছে পুরো ব্যাপারটাই অবিশ্বাস্য মনে হচ্ছিলো। এত বড় একজন পরিচালক আমাকে শুরুতেই নায়কের চরিত্রে নিতে চাচ্ছেন- ভেবে কোনো কিনারা করতে পারলাম না আমি।

‘হাজার বছর ধরে’ হলো সেই উপন্যাস। কিন্তু সেটাতে তার হাত দেয়া হলো না। ‘বাহানা’ তেমন না ব্যবসা করায় তিনি সম্ভবত তখুনি চাইছিলেন না নতুন ছবির কাজ শুরু করতে। এদিকে বেশ কিছুদিন ধরে তার সঙ্গে কোনো যোগাযোগ ছিল না আমার। এদিকে আমার আর্থিক অবস্থা শোচনীয় হয়ে উঠল। কী করবো ভেবে পাচ্ছিলাম না। পঁয়ষট্টি সালের শুরুতে- তখন চলার মতো কোসো অবস্থাই নেই আমার। এদিকে এ সময়টাতেই টিভিতে সংবাদ পাঠকের জন্য অডিশন দিয়েছিলাম আনি। সংসার চালানোর জন্যই এটা করেছিলাম। অভিশনে পাশ করলাম আমি। এই সময় জামাল আলী খান সাহেব আমাকে ডেকে বললেন, তুমি না অভিনয় কর?- সংবাদ পাঠক হিসেবে অডিশন দিলে কেন?- আমি তাকে জানালাম যে এই মুহূর্তে আমার চলার মতো কোনো অবস্থাও নেই। ফলে কিছু টাকা অন্তত পাওয়া যাবে সংবাদ পাঠক হলে।

সে সময় টিভির প্রধান কর্মকর্তা ছিলেন কলিম শরাফী। জামাল আলী খান সাহেব আমার ব্যাপারে তার সঙ্গে আলাপ করেন। তখন টিভিতে ‘ঘরোয়া’ নামে একটি সাপ্তাহিক কমার্শিয়াল নাটক হতো। আমার সেখানে সুযোগ হয়ে গেলো। বলতে কী, তখন এটাই আমাকে অনেকটা সেইভ করলো। প্রতি সপ্তায় সত্তর টাকা করে পেতাম আমি এই নাটকের জন্য। তখনকার দিনে প্রতি সপ্তায় সত্তর টাকা করা মানে অনেকটা নিশ্চিন্ত থাকা যায়।

সপরিবারে রাজ্জাক

টেলিভিশনের এই নাটকটি আমি নায়ক হয়ে যাবার পরও দু’বছর করেছি। পঁয়ষট্টি থেকে সাতষট্টি পর্যন্ত। এর মধ্যেই একদিন শুনলাম, জহির সাহেব নাকি আমাকে খুঁজছেন। সঙ্গে সঙ্গেই দেখা করলাম আমি। তিনি জানালেন, আমাকে তার পরবর্তী ছবি ‘বেহুলা’র নায়কের চরিত্রে কাস্ট করেছেন। আগের বারের মতো বিমুঢ় হয়ে গেলাম আমি। বেশ কিছুদিন আমি কোনে যোগাযোগ রাখিনি। অথচ এই ফাঁকে তিনি ‌‘বেহুলা’র পরিকল্পনা, চিত্রনাট্য বা সংশ্লিষ্ট কাজগুলো করে ফেলেছেন এবং এতসব ব্যস্ততার মধ্যেও আমার কথা মনে রেখেছেন দেখে অবাক হয়েছি। এর মধ্যে তিনি নিপ্পন নামে একটি সংস্থা করেছিলেন। এই সংস্থায় আমি ছিলাম। স্টাফ হিসেবে নিপ্পনে নাদিমও ছিলেন। আসলে আমি আর নাদিম এক সঙ্গেই চলচ্চিত্রের ক্যারিয়ার গড়ে তুলতে শুরু করি। একই বছরে দুজনে ফিল্মে ইন করি। সে স্ট্রাগল করছে আমার মতোই। পার্থক্য একটাই, সে তখন ব্যাচেলর। আর আমি তখন এক বাচ্চার পিতা। আর একই সময়েই আমাদের দুজনের প্রথম ছবি মুক্তি পায়। তার ‘চকোরী’, আমার ‘বেহুলা’।

পয়ঁষট্টির মারামারি সময়ে ‘বেহুলা’ ছবির জন্য চুক্তিবদ্ধ হলাম। শুটিং শুরু হলো ঐ বছরেই শেষের দিকে। নায়ক হিসেবে আমার প্রথম সাইনিং মানি পাঁচশ টাকা। ‘বেহুলা’য় অভিনয়ের জন্য বলতে কী কোনো টাকা না পেলেও আপত্তি থাকতো না আমার। শুরুতেই নায়ক হিসেবে পর্দায় আসার সুযোগ পেয়েছি আমি। উপরন্তু জহির রায়হানের মতো একজন বড় মাপের চলচ্চিত্রকারের ছবিতে— এটাই ছিলো আমার জন্য যথেষ্ট পাওয়া।

‘বেহুলা’ রিলিজ হলো ছেষট্টিতে এবং বাম্পার হলো। ফলে সামনের রাস্তা আমার জন্য উন্মুক্ত হয়ে গেলো। কষ্টের দিনগুলি অতীতে পরিণত হতে লাগলো। আমি আর আটকালাম না।

প্রথম নায়িকা হিসেবে ‘বেহুলা’তে পান সুচন্দাকে। এ ছবি ‘জীবন থেকে নেয়া’র

আসলে চলচ্চিত্রে আমার এই প্রতিষ্ঠা, সাফল্য— এর পিছে যে মানুষটার অবদান অনস্বীকার্য, সেই জহির রায়হানকে আজ প্রার সঙ্গে স্মরণ করছি আমি। চলচ্চিত্রের সেই শুরুর সময়টায় তিনি আমাকে যেভাবে সাহায্য এবং সুযোগ দিয়েছেন তা সাধারণত কোনো মানুষ করে না। যেকোনো উপদেশের প্রয়োজন হলেই তার কাছে চলে যেতাম আমি। তার কাছ থেকে কোনো ভুল সাজেশন পাইনি আমি কখনো। আমার জন্য তার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকাটা ছিল গাইডের। একজন বিচক্ষণ গাইডের মতোই আমাকে চালিয়েছেন তিনি। আমার সঙ্গে একেবারে সেই প্রথম দিন থেকে চমৎকার ব্যবহার করে এসেছেন তিনি। আমার সঙ্গে তিনি শিক্ষকের মতো ব্যবহার করেননি। করেছেন বন্ধুর মতো। তিনি আমার শিক্ষকই ছিলেন। যত্ন নিয়ে তিনি আমার অভিনয় পর্যবেক্ষণ করেছেন। মতামত দিয়েছেন। ভুল শুধরে দিয়েছেন। ইন্ডাস্ট্রির সবাই যখন আমাকে খারিজ করে নিতে চাইলো, সাক্ষাতেই তিনি তখন আমাকে টেনে নিলেন।

জহির রায়হানকে আমার কাছে ফেরেশতার মতোই মনে হতো। আমার দ্বিতীয় ছবি ছিলো ‘আনোয়ারা’। তবে আগে মুক্তি পায় ‘আগুন নিয়ে খেলা’। ধীরে ধীরে জীবনের সঙ্গে সংগ্রামে জিততে শুরু করেছিলাম আমি। পুরোপুরি সফল অবস্থায় তখনো না এলেও, অন্তত বাড়ি ভাড়াটা আমি সময় মতো দিতে পারতাম। আমার এই একটা অভ্যাস ছিলো। না খেয়ে হলেও বাড়ি তাড়া আমি ঠিক সময়ে দিতাম। নিজেকে একজন শিল্পী হিসেবেই গড়ে তোলার চেষ্টা করেছি আমি। তাই বাড়ি ভাড়াকে কেন্দ্র করে কোনরকম হৈচৈ পছন্দ করতাম না আমি। টাকার জন্য বাড়িওয়ালা আমাকে অপমান করবে আমার সম্মানে আঘাত করবে, তা ভাবতেও পারতাম না। এতে শিল্পী হিসেবে আমার মর্যাদাটুকু ধূলিসাৎ হয়ে যাবে বলে মনে করতাম। ফলে এই জিনিস পরিষ্কার রাখার চেষ্টা করতাম আমি।

‘আগুন নিয়ে খেলা’ মুক্তি পাওয়ার পর থেকে আমার সেই কঠিন জীবনের অবসান ঘটে এবং হঠাৎ করেই অভাবিত সাফল্য আসে। আসলে ‘বেহুলা’ হিট করার পরও ইন্ডাস্ট্রির অন্যান্য নির্মাতারা আমার ব্যাপারে উৎসাহ দেখাতে চাননি। তাদের ধারণা ছিলো এ ধরনের ম্যায়থোলোজি কিংবা ফোক ছবিতেই দর্শকরা আমাকে দেখতে চাইবে, স্যোশাল ছবিতে নয়। জহির ভাই অবশ্য চ্যালেঞ্জ করেছিলো, ‘এই শিল্পী স্যোশাল ছবিরই শিল্পী।’

‘আগুন নিয়ে খেলা’ রিলিজ হওয়ার পর পর জহির ভাইয়ের কথা সঠিক প্রমাণিত হলো। ফলে, দ্রুত ইন্ডাস্ট্রিতে আমার চাহিদা সৃষ্টি হলো। আসলে ‘আগুন নিয়ে খেলা’ ছিলো আমার ফিল্ম ক্যারিয়ারের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মাইলস্টোন। সে সময় স্টার হলে ‘বেহুলা’ একনাগাড়ে ছাব্বিশ সপ্তাহ আর ‘আগুন নিয়ে খেলা’ আটাশ সপ্তাহ চলেছিলো। দীর্ঘ কষ্টের পর সচ্ছলতা আসলো আমার তখন থেকেই। সাতষট্টি সাল থেকেই এই সময়ের শুরু।

জীবনের সেই কষ্টের দিনগুলোয় আমার স্ত্রী লক্ষ্মীর ভূমিকা ছিলো শক্তিশালী প্রেরণার মতো। সব ধরনের কষ্টই সয়েছে সে হাসতে হাসতেই। অনেক জ্বালা সহ্য করেছে সে। তার সহযোগিতা ছাড়া আমার পক্ষে সে সময়টা অতিক্রম করা সম্ভব ছিলো না। হাজারটা সমস্যার মধ্যেও সে ভেঙে পড়তো না। বরং আমি যেন ভেঙে না পড়ি তার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করতো। আশার কথা শোনাতো আমাকে, খুশি রাখার চেষ্টা করতো। স্ত্রী হিসেবে অনেক কিছুই তার চাওয়ার বা পাওয়ার ছিলো। অথচ সে সব আকাঙ্ক্ষা পূর্ণ না হলেও তাকে দেখাতো একজন সুখী মানুষের মতই। আমার জানা মতে আর কোনো স্ত্রীকে এরকম কষ্ট ত্যাগ স্বীকার করতে দেখিনি আমি।

স্বাধীনতার পর ‘রংবাজ’, ‘বেঈমান’, ‘বাদী থেকে বেগম’ ইত্যাদি ছবির সাফল্য আমার অবস্থানকে আরো সুদৃঢ় করে। স্যোশাল ছাড়াও এ ধরনের স্যোশাল অ্যাকশানধর্মী ছবিতেও সাফল্য এলো আমার। ফলে পেছন ফিরে তাকাতে হলো না আমাকে আর।

শাবানা-রাজ্জাক

বাহাত্তর সালেই আমার একশ ছবি পূর্ণ হয়। খুব অল্প সময়ের মধ্যেই ছবির সংখ্যা একশ’র ঘরে গিয়ে দাঁড়িয়েছে আমার। সেদিনের সেই ‘বেহুলা’ থেকে শুরু করে বিরানব্বই সালের ‘প্রফেসর’ পর্যন্ত প্রায় আড়াইশ’র মতো ছবি মুক্তি পেয়েছে আমার। ছবির সংখ্যার এই বিশাল অংকটাই আমার সাফল্যের ইঙ্গিত বহন করে। পর পর তিন প্রজন্ম ধরে আমি জনপ্রিয় তারকা রয়েছি। স্বাধীনতার পর পর রাজলক্ষ্মী প্রোডাকশন শুরু করেছি। আরো অনেক পরে রাজলক্ষ্মী কমপ্লেক্স বানিয়েছি। কমলাপুরের সেই কষ্টের বাড়ি ছেড়ে এলিফ্যান্ট রোডে ভাড়া বাসায় থেকে অতঃপর গুলশানে নিজের বাড়ি করেছি। জীবনের এই সমস্ত সফলতার পেছনে কাজ করেছে একটি জিনিসই। তা হচ্ছে পরিশ্রম। আমি বিশ্বাস করি যথাযথ পরিশ্রম করলে উন্নতি অবধারিত। নিজের জীবনেই আমি তার প্রমাণ পেয়েছি। তাছাড়া নানা রকম বিরূপ অবস্থার সৃষ্টি হলেও কখনও মনোবল ভেঙে যায়নি। সাফল্য এসেছে ঠিকই কিন্তু মাথা ঘুরে যায়নি আমার। প্রচন্ড সফলতায় আর প্রাপ্তিতে, গা ভাসিয়ে দিইনি আমি। সেই সাফল্যকে ধরে রাখার জন্য আগের মতোই পরিশ্রম করে যাচ্ছি আমি।

আমার সন্তানদেরও বড় করেছি ঠিক এই আদশেই। তেষট্টিতে বাপ্পা, পয়ঁষট্টিতে শম্পা, ছেষট্টিতে বাপী, ঊনসত্তরে ময়না এবং বিরাশিতে সম্রাটের জন্ম। এদের মধ্যে বাপ্পা ইতিমধ্যেই চলচ্চিত্রের সঙ্গে নিজেকে জড়িয়ে ফেলেছে। তার আজকের এই অবস্থানে আমি খুশি। আমি তার জন্য প্রাউড ফিল করি। যদিও ফিল্মে এসেছে সে অনেক স্বচ্ছলভাবেই। আমার মতো পরিশ্রম করতে বা অনিশ্চয়তার মধ্যে সময় কাটাতে হয়নি তাকে। কিন্তু তাই বলে অলস হয়ে বেড়ে ওঠেনি সে। আমার এবং তার মার সেই সব পরিশ্রমের দিনগুলির কথা তাকে আমরা বলেছি। শুধু বাপ্পাই নয়, সন্তানদের প্রত্যেকেই সে সব দিনের কথা জানে এবং বোঝে। ফলে রাজ্জাকের ছেলেমেয়ে বলে তারা বিলাসে গা ডোবায়নি। বেড়ে উঠেছে আমাদের আদর্শেই— আর এটাই আমার সবচেয়ে বড় তৃপ্তি। বাপ্পা হয়তো আমার জনপ্রিয়তাকে ছাড়িয়ে যাবে কিংবা তা পারবে না। কোনটাতেই আমার কোনো দুঃখ থাকবে না। আমি শুধু চাই সে সিরিয়াসলি কাজ করে যাক। আমি আরেকটা কারণে খুশি, আমার সন্তানরা প্রত্যেকেই আমার পেশাটাকে শ্রদ্ধা করে।

আমার প্রথম নায়িকা ছিল সুচন্দা ‘বেহুলা’ ছবিতে। তিনি অনেক ভালো শিল্পী হলেও তার সিনসিরিয়াটি কম ছিলো মনে হয় আমার। ইন্ডাস্ট্রিতে থাকতে ব্যক্তিগত অনেক সুখ-সাচ্ছন্দ্য বিসর্জন দিতে হয়- এ বিষয়টির অভাব ছিলো তার মধ্যে।

কবরীর সঙ্গে আমার খুব একটি সফল জুটি হয়েছিলো। দর্শকরা ভালোভাবে গ্রহণ করেছিলো আমাদের। কবরী একজন গুণী শিল্পী নিঃসন্দেহে। অভিনয়ে চমৎকার দক্ষতা ছিলো তার। কিন্তু ক্যারিয়ারের প্রশ্নে যথেষ্ট ক্যালকুলেটিভ ছিলেন না তিনি। যার কারণে কম সময়ের মধ্যেই তাকে সরে দাঁড়াতে হয়েছে। ক্যারিয়ারের ব্যাপারে ভুল হিসাবের মাশুল তাকে দিতে হয়েছে।

সুজাতার মধ্যেও যথেষ্ট সম্ভাবনা ছিলো। ষাটের দশকে একটা সময়ে যখন টপে ছিলেন, ঠিক তখনই বিয়ে করলেন। নায়িকা হিসেবে তার ক্যারিয়ারের ইতি ঘটল সেখানেই।

একটি ছবির শুটিংয়ে রাজ্জাক-ববিতা। সঙ্গের শিশুটি পরবরতীকালে নায়িকা গুলশান আর চম্পা

তারপর তো এলো ববিতা, শাবানা এরা। ববিতাও নিঃসন্দেহে ভালো শিল্পী। ‘সংসার’ ছবিতে সুচন্দা আর আমার মেয়ের চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন। কিন্তু তিন বছর পরেই অমার বিপরীতে নায়িকা হয়ে এলেন তিনি।

শাবানা আমি কিংবা সুচন্দা একই সময়ের শিল্পী। পয়ঁষট্টি সালের শিল্পী বলা যায় বোধহয়। পরবর্তী সময়ে তার সঙ্গে অনেক ছবি করেছি। শাবানাও একজন সফল শিল্পী। পর্দার রোমান্টিক জুটি হিসেবে কবরীর সঙ্গেই আমার ভালো অ্যাডজাস্টমেন্ট হয়েছিলো। আমাদের অভিনীত ছবিগুলো ব্যবসাও করেছিলো ভালো। প্রত্যেককেই আমি শ্রদ্ধা করি। প্রত্যেকেই আমার ভালো বন্ধু। আমি যেভাবে তাদেরকে ভালোবাসি, তারা আমাকে সেভাবেই ভালোবাসে।

আমাদের ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির অনেক বয়স হলো। যে সময়টাতে এখানে এসেছিলাম, সেই সময়ের সঙ্গে আজকের চিত্রপুরীর অনেক পার্থক্য। এর খারাপ এবং ভালো দুই দিকই আছে। সে প্রসঙ্গে আমি আর যাচ্ছি না। নানা রকম ঘাত-প্রতিঘাত সয়ে সয়ে আজকের এই অবস্থানে এসেছি। একই রকম ইন্ডাস্ট্রিকেও বিচিত্র সব বাধা-বিপত্তি ডিঙ্গিয়ে এগিয়ে যেতে হয়েছে। আমাদের সময় শেষ হয়ে এসেছে। নতুন নতুন ছেলে মেয়েদের নিয়েই এই ইন্ডাস্ট্রি আরো এগিয়ে যাবে। প্রার্থনা একটাই, আমাদের যে শ্রম-ঘামে একটু একটু করে বেড়ে উঠেছে এই ইন্ডাস্ট্রি, সে আরো যত দূরেই যাক— সেই শ্রম-ঘামের চিহ্ন যেন মুছে না যায়। নতুন শিল্পীদের প্রতিও এই একটিই চাওয়া— আমাদের মর্যাদাটুকু যেন তারা দেয়।

আমি একজন ভাগ্যবান শিল্পী। একজন সুখি মানুষ। যা কিছু পাওয়ার ইচ্ছা ছিলো বা স্বপ্ন ছিলো, তা আমার এই পঞ্চাশ বছরের জীবনেই পরিপূর্ণভাবে পেয়েছি। কারো প্রতি কোনো রকম ক্ষোভও নেই। এই মুহূর্তে কোনো কিছু চাওয়ার নেই আমার। আপাতত আমার ইচ্ছা সামাজিক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে যাওয়ার। সমাজের জন্য কিছু ভালো কাজ করতে চাই আমি।


মন্তব্য করুন