Select Page

কাল্পনিক হলেও বাস্তবের সঙ্গে মিল, প্রদর্শন অযোগ্য ‘অমীমাংসিত’!

কাল্পনিক হলেও বাস্তবের সঙ্গে মিল, প্রদর্শন অযোগ্য ‘অমীমাংসিত’!

বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সেন্সর বোর্ড জানিয়েছে প্রদর্শনযোগ্য নয় জনপ্রিয় পরিচালক রায়হান রাফির নতুন ছবি ‘অমীমাংসিত’। গত ২৪ এপ্রিল বোর্ডের উপপরিচালক মো. মঈনউদ্দীন এক চিঠিতে জানান, ছাড়পত্র না দেয়ার পেছনে চারটি উল্লেখযোগ্য কারণ রয়েছে। এর মধ্যে অদ্ভুত একটি কারণ হলো, ‘কাল্পনিক কাহিনি, চিত্রনাট্য ও সংলাপের বিষয়বস্তু বাস্তবতার সাথে মিল রয়েছে’।

গত ১২ ফেব্রুয়ারি ‘অমীমাংসিত’-এর টিজার প্রকাশ করা হয়েছিল। সেটা দেখে অধিকাংশ দর্শক আঁচ করেছেন, এটি আলোচিত সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনির হত্যাকাণ্ড ঘিরে নির্মিত। যেই ঘটনার রহস্য এক যুগ পেরিয়ে এখনো খোলাসা হয়নি। শতবার পিছিয়ে মামলার তদন্ত প্রতিবেদন দেয়ার তারিখ।

ওটিটি কনটেন্টের ক্ষেত্রে এখনো সেন্সর কার্যকর হয়নি। তবু চিঠি দিয়ে নিজেদের আগ্রহে রায়হান রাফী নির্মিত ‘অমীমাংসিত’ দেখতে চায় বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সেন্সর বোর্ড।

সিনেমা সংশ্লিষ্টদের লম্বা সময় অপেক্ষা করানোর পর ২৪ এপ্রিল এই সিদ্ধান্ত জানান বোর্ডের উপপরিচালক মো. মঈনউদ্দীন। লিখিত চিঠিতে জানানো হয় ছাড়পত্র না দেয়ার পেছনে চারটি উল্লেখযোগ্য কারণ। সেগুলো হলো-

১. চলচ্চিত্রটিতে নৃশংস খুনের দৃশ্য রয়েছে

২. কাল্পনিক কাহিনি, চিত্রনাট্য ও সংলাপের বিষয়বস্তু বাস্তবতার সাথে মিল রয়েছে

৩. এ ধরনের কাহিনি বাস্তবে ঘটেছে এবং ঘটনা সংশ্লিষ্ট মামলা উচ্চ আদালতে বিচারাধীন

৪. চলচ্চিত্রটির কাহিনি/বিষয়বস্তু বিচারাধীন মামলার সাথে মিল থাকায় ভুল বার্তা দিতে পারে এবং তদন্তের বিঘ্ন ঘটাতে পারে।

এছাড়া সেন্সর বোর্ডের সদস্যগণ আরও মতামত দেন যে, ‘দ্য কোড ফর সেন্সরশিপ অব ফিল্মস ইন বাংলাদেশ, ১৯৮৫ এর ১-এর I, V, VII দফায় বর্ণিত উপাদানসমূহ চলচ্চিত্রটিতে বিদ্যমান থাকায় এটি জনসাধারণের মধ্যে প্রদর্শন উপযোগী নয়। তাই বাংলাদেশ সেন্সরশিপ আইনের বিধি ১৬(৫) মোতাবেক উক্ত চলচ্চিত্রের সেন্সর আবেদনপত্র নির্দেশক্রমে অগ্রাহ্য করা হলো।

তবে, এই সিদ্ধান্ত-পত্র প্রাপ্তির ৩০ দিনের মধ্যে সিনেমাটি প্রদর্শনের বিষয়টি বিবেচনা করার জন্য সরকার বরাবর আপিল আবেদন করার সুযোগ রয়েছে প্রযোজক-পরিচালকদের।

এমন সিদ্ধান্তের পর স্বাভাবিকভাবে ফুঁসে উঠেছেন নির্মাতাদের অনেকেই। বিশেষ করে সিনেমাটির পরিচালক রায়হান রাফী সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে জানিয়েছেন এক প্রতিক্রিয়া।

তিনি লিখেছেন, “সিনেমা বাস্তবের সাথে মিলে গেছে, তাই এটা মুক্তি দেওয়া যাবে না! সিনেমা হতে হবে অবাস্তব! ওয়েব ফিল্ম ‘অমীমাংসিত’ সেন্সর বোর্ডে আটকে দেওয়ার তীব্র প্রতিবাদ জানাই। বিষয়টা তাহলে এমন, কোনো সিনেমায় কোনো সাংবাদিক দম্পতি খুন হতে পারবে না? কাল্পনিক কাহিনি উল্লেখ করার পরেও যদি কোনো ঘটনার সাথে মিল খুঁজে পাওয়া যায়, তাহলে ব্যাপারটা এমন, ঠাকুর ঘরে কে রে? আমি কলা খাই না টাইপ।”

তিনি বেশ কয়েকটি ঘটনার কথা উল্লেখ করে বলেন, ‘তাহলে কি সিনেমায় কোনো মেয়ে গুম হয়ে খুন হলে তা কুমিল্লার তনুর সাথে মেলানো হবে? সিনেমায় কোনো কিশোরের লাশ নদীতে পাওয়া গেলে, তার সাথে নারায়ণগঞ্জের ত্বকী হত্যাকাণ্ড মেলানো হবে?’

সিনেমা আটকে দেওয়ার বিষয়টি যে দুঃখজনক সেটা জানিয়ে রাফী বলেন, ‘অমীমাংসিত’ সিনেমায় কোনো কিছুই প্রমাণ করা হয়নি, জাস্ট বিভিন্নজনের ধারণা দেখানো হয়েছিল, তার পরও এই সিনেমা আটকে দেওয়াটা সত্যি দুঃখজনক।

তিনি বলেন, ‘সিনেমায় কোনো খুন দেখানো যাবে না, কোনো ধর্ষণ দেখানো যাবে না, কোনো অপহরণ দেখানো যাবে না, কোনো গুম দেখানো যাবে না। আমরা সবাই ফেরেশতা, বাস করি বেহেশতে। এখানে কোনো খুন হয় না, কোনো গুম হয় না, কোনো ধর্ষণ হয় না। এভাবেই হাত-পা বেঁধে সাঁতার কাটতে হবে আমাদের দেশের সিনেমাকে।’

ছবিটির মুখ্য চরিত্রে আছেন ইমতিয়াজ বর্ষণ ও তানজিকা আমিন। এ ছাড়া আরো কয়েকজন অভিনয়শিল্পী আছেন, তবে পোস্টার ও টিজারে তাঁদের মুখ কালো কাপড়ে ঢেকে রাখা হয়েছে। এর মাধ্যমে যেন গল্পের রহস্য আরো ঘনীভূত করতে চেয়েছেন নির্মাতা।

ফজলুল হক ইনস্টিটিউট অব মিডিয়া স্ট্যাডিজের পক্ষে ছবিটির প্রযোজক শহিদুল আলম সাচ্চু। এটি ইমপ্রেস টেলিফিল্মের অঙ্গপ্রতিষ্ঠান ওটিটি প্ল্যাটফর্ম আইস্ক্রিনের জন্য নির্মিত হয়েছে।


মন্তব্য করুন