‘সাহস’ রিভিউ: ক্রাইম অ্যান্ড পানিশমেন্ট
ফিউদর দস্তয়েভস্কি-র জগদ্বিখ্যাত উপন্যাস ‘ক্রাইম অ্যান্ড পানিশমেন্ট’। অপরাধ করলে শাস্তি পেতেই হবে হোক তা শারীরিক বা মানসিক। আমাদের সমাজে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা অপরাধীদের অনেকেই অপরাধ করেও পার পেয়ে যায় কিন্তু একেবারেই পায় কি? এই বাস্তবতা থেকে সুনির্দিষ্ট এক অপরাধের গল্পে নতুন নির্মাতা সাজ্জাদ খান নির্মাণ করেছেন তার প্রথম ছবি ‘সাহস’। ছবিটির ছাড়পত্র নিয়ে প্রথমে সমস্যা হয়েছিল তারপর সাড়া জাগানো ওটিটি প্ল্যাটফর্ম ‘চরকি’-তে মুক্তি পেল।
‘সাহস’ ছবির গল্প লোকাল ক্রাইম এবং তার পরিণতিতে এগিয়েছে এবং তার সাথে ভালোবাসারও গল্প। দেখা যায় একজোড়া প্রেমিক যুগল ইমরান ও অর্ষা তাদের সম্পর্কের পরিণতিতে বিয়ে করে। বিয়ের পর তাদের দিন ভালোই যাচ্ছিল। কিন্তু লোকাল গুণ্ডাদের নজর তাদের উপর পড়ে। কী হতে যাচ্ছে তাদের সাথে? টিজারে দেখা গিয়েছিল ইমরান ও অর্ষার ছবি তুলছিল এব বখাটে। তখন অর্ষা তাকে চড় মারে। চড়ের প্রতিক্রিয়ায় একটা অপরাধ সংঘটিত হয়। সে অপরাধের পর পরিস্থিতি খারাপ হতে থাকে এবং সাহসী পদক্ষেপ শুরু হয়।
ছবির শুরুটাই ছিল আকর্ষণীয়। বখাটের ইন্ট্রোডাকশন দিয়ে ছবির শুরু যেখানে সে নিজেকে বেপরোয়া হিসেবে তুলে ধরেছে এবং ছবির আকর্ষণ তৈরি করেছে। লোকাল গ্যাংয়ে বখাটেরা কীভাবে নিজেদের হিরো ভাবে তারই একটা ছাপ আছে। ছবির গল্প যত এগিয়েছে অপরাধ সংঘটনের পর শাস্তির একটা পদক্ষেপ এগিয়েছে এবং সেখানে ভালো মেসেজ ছিল।
ছবির প্রধান দুই চরিত্রে মোস্তাফিজুর নূর ইমরান ও অর্ষা চমৎকার অভিনয় করেছে। নূর ইমরান তার গেটআপ এবং অভিনয়ের সমন্বয় করতে পেরেছে। তার চরিত্রটির ট্রান্সফরমেশন ছিল এবং সেটা ছবির এক্সাইটমেন্টকে তৈরি করতে সাহায্য করেছে। অর্ষার চরিত্রটি ছিল প্রেম ও বাস্তবতার মিশেলে গড়া। তার হাসি, কান্না, রাগ সবকিছুই ন্যাচারাল এবং অভিনয়ের গভীরতা সহজেই বোঝা যায়। ছবিতে তার চরিত্রের এস্টাব্লিশমেন্ট প্রত্যাশা অনুযায়ী না হলেও তার অভিনয়ে কোনো কমতি নেই। খায়রুল বাশারের অভিনয়দক্ষতার বিষয়টি মাথায় রাখলে তার চরিত্রটিও যথেষ্ট ব্যাপ্তি পায়নি এবং আরো দরকার ছিল। কুনাল বিশ্বাস বাকী নেগেটিভ রোলে খুবই সম্ভাবনার কথা বলছে, তার অভিনয় দুর্দান্ত।
ছবির গানগুলো স্পর্শকাতর। জেমসের ‘লিখতে পারি না কোনো গান’ এবং ‘নোঙ্গর তোলো তোলো’-র ব্যবহার ছিল সময়োপযোগী। চমৎকার বিজিএম ছবিটিকে উপভোগ করতে সাহায্য করেছে। সংলাপের মধ্যে ‘মেশিনরর কাম মেশিন দিয়াই করতে হয়, সাইকেলের রড দিয়ে হয় না’ এটা বেস্ট।
‘চরকি’-র ‘শাটিকাপ’ সিরিজের মতোই একটা ভাইব প্রথমদিকে ছবিটিতে পাওয়া যাবে। ক্লাইমেক্সে মনে হবে হুট করে শেষ হলো এবং সেজন্য আরো কিছু সংযোজনের দাবি রয়ে যায় গল্পে বিশেষ করে অর্ষার চরিত্রের আরো ব্যাপ্তির জন্য সেটা জরুরি ছিল।
সব মিলিয়ে ‘সাহস’ এ সময়ের সাহসী ছবি এবং নতুন একজন নির্মাতা সাজ্জাদ খানেরও সম্ভাবনার বার্তা দেয়া ছবি।
রেটিং – ৭/১০