Select Page

সিনেমার গুণগত ও ব্যবসায়িক মানদণ্ড মিলিয়ে ফেলবেন না

সিনেমার গুণগত ও ব্যবসায়িক মানদণ্ড মিলিয়ে ফেলবেন না

একটি চলচ্চিত্রের ব্যবসায়িক মানদণ্ড ও গুণগত মানদণ্ড, দুটি সম্পূর্ণ আলাদা হয়। একটির নিরিখে আরেকটির ব্যাপারে রায় দেয়া যায় না, যে দিতে চায় বুঝতে হবে তার মধ্যে বিচক্ষণতার যথেষ্ট অভাব আছে।

একটি চলচ্চিত্র ব্যবসায়িকভাবে খারাপ করতেই পারে। এটার জন্য আপনি চাইলে সম্পূর্ণ মেকার্স বা মুভি টিমকেই দোষ দিতে পারেন। সেই অধিকার দর্শক হিসেবে আপনার আছে, প্রদর্শক হিসেবেও আপনার আছে। কারণ সিনেমা একটি কালেকটিভ ওয়ার্ক। ভালো চললে বা মান ভালো হলে যেমন ক্রেডিট সবাই পায়, খারাপ চললে সেটারও দায়ভার সবার কাঁধে পড়ে। কারো একটু কম কারো একটু বেশি। এ আলাপের প্রসঙ্গ ‘প্রিয় মালতী’।

ব্যবসায়িক ব্যর্থতার জন্য একদম নির্দিষ্ট করে দোষারোপ করতে চাইলে উক্ত চলচ্চিত্রের প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানকে দোষ দিতে পারেন। তারা উক্ত চলচ্চিত্রের সিনেমাহল ব্যবসা নিয়ে সিরিয়াস ছিল না। পরিবেশককে দেয়া যেতে পারে কারণ তারা সিনেমাটার পোটেনশিয়াল বা মেরিট বুঝেনি। সিনেমার পিআর/মার্কেটিং টিমকেও আপনি গালাগাল দিতে পারেন কারণ তারা কোনো স্মার্ট এপ্রোচে চলচ্চিত্রটি প্রচার-প্রসার করতে পারেনি। উল্টো যে অকাজ করেছেন তাতে কিছুটা ‘নেতিবাচক প্রচারই মোক্ষম প্রসার’ এই ধ্যান-ধারণা পাওয়া গেছে। এরপর আপনি পরিচালক শঙ্খ দাশগুপ্তকে দোষ দিতে পারেন।

এতোকিছু বলার পর তাকে দোষ দেয়া যায়, কারণ সে ওটিটিতে যখন কাজ করেছেন তখন বেশ সম্ভাবনাময় মনে হয়েছিল, কিন্তু ‘বলি’ ও ‘গুটি’ নামক দুটি সিরিজে কেন জানি তিনি তার সামর্থ্য অনুযায়ী ঠিকঠাক কাজ উপহার দিতে পারেনি। হয়তো এবারও তিনি বাংলার লিটন দাসের মতো প্রতিভা থাকা সত্ত্বেও ভালো পারফর্ম করতে পারেননি।

এতোকিছুর পরে আসে প্রধান অভিনেত্রী মেহজাবীন চৌধুরীকে দোষ। অনেক গাফিলতি পার হয়ে আপনি এ সিনেমার প্রধান অভিনেত্রীকে, আমি মনে করি দোষ দিতে পারেন। উনি ফিল্মস্টারদের মতন অধরা নন, ওনাকে দর্শক টিভিতেও দেখে, ওটিটিতেও দেখে। তাই সিনেমাহলে দেখতে যায়নি। এটি একটি কারণ হতে পারে দর্শক অনাগ্রহের, তবে এটি মোটেও মুখ্য কারণ নয়। অনেক কারণ পার হয়ে আপনি এই কারণটা দর্শাতে পারেন। কিন্তু দুঃখের বিষয় হলো, এই কারণটাই সবচেয়প বেশি হাইলাইট হচ্ছে। যেন কিছুটা ‘সফট টার্গেট’ বানানোর চেষ্টা।

এক সপ্তাহ আগে মুক্তি পাওয়া ‘৮৪০’ও বাজে ব্যবসাই করেছে। ওটাও একটা ওটিটি কনটেন্ট ছিল। আবার একটু জোর করে নিয়ম ভঙ্গ করা রিলিজও ছিল। কারণ ইতোমধ্যেই ঔইদিন রিলিজের জন্য দুটি সিনেমা নিবন্ধন করাই ছিল, মান যত খারাপ হোক বা ভালো। এটি ছিল ওই সপ্তাহের তৃতীয় চলচ্চিত্র। তখন খুব কম মানুষকে দেখলাম এটা নিয়ে একটু আলাপ করতে। বৈষম্যবিরোধী সরকারের আমলে সিনেমা নিয়ে এমন আলাপের বৈষম্য দেখতে হলো কেন?

আরেকটি ঘটনা দিয়ে আলোচনাটা শেষ করি। এ বছরটা একমাত্র শাকিব খানের কাছেই স্মরণীয় হয়ে থাকবে। কারণ ২০২৪ সালে উনি মোটামুটি যেখানে পা রেখেছেন সেখানেই সফল হয়েছেন। ‘তুফান’ দারুণভাবে ব্যবসাসফল হয়েছে। এই এক চলচ্চিত্র যা কামিয়েছে, বছরের বাকি সব চলচ্চিত্রের টাকা একত্র করলেও ‘তুফান’-এর সমান হবে না। এই সিনেমা সাফল্য পেয়েছে, তাই এই ক্রেডিট ওনার। আবার ‘রাজকুমার’ একটু কম ব্যবসা করেছে, ‘দরদ’ একদম ভালো চলেনি। এই দোষ আবার তার নয়, এই দোষ হলো পরিচালকের। অনেকেই এভাবে আলোচনা করে থাকেন। বৈষম্য।


About The Author

চলচ্চিত্র বিষয়ক ব্লগার ও ইউটিউবার

Leave a reply