সীমানাহীন: প্রবাসী বাঙালিদের চলচ্চিত্র
অভিনয়ঃ রাহসান ইসলাম, ইসমাত আলমগীর।
পরিচালনাঃ কেভিন দালভি, রিয়া মাহতাব।
এই ছবিটি আমাদের প্রবাসী বাঙালি ভাই বোনেরা মিলে তৈরি করেছেন। ছবিটি পরিচালনা থেকে শুরু করে অভিনয় সহ সকল কিছুই প্রবাসী বাঙালিরা করেছেন।
কাহিনী সংক্ষেপঃ
অ্যামেরিকার শিকাগোতে একটি মুসলমান ছেলে (রাহসান ইসলাম) এবং হিন্দু মেয়ে (ইসমাত আলমগীর)র ভালবাসার টানাপোড়েন নিয়ে এগিয়ে চলা গল্প নিয়ে তৈরি হয়েছে “সীমানাহীন” ছবিটি। বাকি কাহিনী টুকু আপনারা হলে গিয়ে দেখতে হবে।
বিশ্লেষণ:
যা ভাল লেগেছেঃ
প্রথমেই বলে নেয়া ভাল ছবিটিতে যারা অভিনয় করেছেন তাদের মধ্যে অল্প বয়সী যারা আছেন তারা কেউই বাংলাদেশী নন। মানে বাংলাদেশের নাগরিক নন, তারা আমেরিকান নাগরিক এবং প্রবাসী বাঙালি। তাই তাদের জন্য চ্যালেঞ্জ ছিল বাংলায় কথা বলা, এবং তারা সেই চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করেছে এবং এটা রক্ষা করতে পেরেছেন এবং জয়ী হয়েছেন। তারা বেশ ভালই বাংলা বলেছেন। শুধু বাংলাই ভাল বলেনি তারা অভিনয়েও বেশ ভাল করেছে, তারা সকলেই প্রথম প্রথম অভিনয় করেছে এবং এতে তারা সফল হয়েছে। ভাষাগত সমস্যা হলে এক্সপ্রেশন দেয়া অনেক কঠিন হতো, এক্সপ্রেশন দিবেন কিন্তু সেটা ভাল হবে না। ভাল লাগার বিষয় হল তারা এখানেও ভাল করেছে।
ছবিটি বাংলাদেশে রিলিজ হওয়ার আগে পৃথিবীর বেশ কিছু দেশে রিলিজ হয়েছে। ছবির প্রোডিউসার একজন অ্যামেরিকান প্রবাসী, তিনি ইচ্ছে করলে ছবিটি ইংলিশে ডাবিং করাতে পারতেন, এতে যারা অভিনয় করেছে তাদের জন্য ভাল হত কারন তারা সবাই ইংলিশে কথা বলেন তাই তাদের জন্য অভিনয় করাটাও সহজ হতো। কিন্তু প্রোডিউসার তা করেন নি, হয়তো আমদের প্রাণের বাংলাদেশকে ভালবাসেন বলে। কারন একটি আন্তর্জাতিক মানের ছবি একটি দেশকে রিপ্রেজেন্ট করে।
আমদের দেশের চলচ্চিত্রে এরকম প্রেম ভালবাসার মধ্যে ধর্মের প্রভাব নিয়ে অনেক ছবি হয়েছে যেমনঃ “আজ গায়ে হলুদ”, “জীবনের চেয়ে দামি” এবং “প্রেমের তাজমহল” ইত্যাদি। কিন্তু এই ছবিটা অন্য ছবিগুলো থেকে কেন আলদা ????,তার কারন এই ছবিটি যুগের সাথে তাল মিলিয়ে তৈরি হয়েছে।
যেমন ডায়লগঃ আমি তোমাকে ছাড়া বাচবোনা, আমি তোমাকে না পেলে আত্মহত্যা করে মরে যাবো, এই প্রেম প্রত্যাখ্যান করলে বিষ খাব !!!!!, এই দেখো আমার হৃদয়ে তোমার নাম লিখেছি “জান দেখো গো চাহিয়া”,এই ধরনের গদবাদা হিচকি (!!!!) উঠানো টাইপ ডায়লগ এই ছবিতে একদম নেই।
ইমোশনের ক্ষেত্রে আমরা চির চেনা যেমন দেখি চোখের মধ্যে প্রশান্ত মহাসাগর স্থাপন করে কাঁদতে কাঁদতে প্রেমিক/প্রেমিকা গা ভাসিয়ে দিয়ে রাফ & টাফ লুক করে “আমারে ছারিয়ারে বন্ধু কই গেলারে” বলার দৃশ্য এই ছবিতে নেই। তার মানে কি এই ছবিতে ইমোশন নেই ??? আছে, যা আছে তা বাস্তব। যা নেই তাহলো অতি মাত্রায় ইমোশন ।
গান গুলা বেশ শ্রতিমধুর। জোর করে ধাক্কা দিয়ে কোন ধরনের গান প্রবেশ করানো হয়নি।
পরিচালনা বেশ ভাল হয়েছে, খুব সুন্দর করে এগিয়ে নিয়েছেন। ছবিটিতে দুটো পার্ট, একটি ১৯৪৭ সালের এবং অন্যটি ২০১৩ সালের। এই দুটি পার্ট খুবই সুন্দর করে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে শেষ করেছেন।
“রাশান ইসলাম” এবং “ইসমত আলমগীর” দুজনেই বেশ ভাল অভিনয় করেছেন এবং ভাল করতে চেষ্টা করেছেন যা ছবিটি দেখলেই বোঝা যায়।
১০০% সিনেমাস্কোপ কাকে বলে এই ছবিটা দেখলে বুঝা যাবে।
যা ভাল লাগেনিঃ
ভাষার ব্যাপারটা একটু কানে লাগে কিন্তু আমদের বুঝতে হবে ওরা কেউই বাংলা ভাষাটা আগে জানতেন না। কিন্তু চলচ্চিত্রে যেহেতু অভিনয়ের ব্যাপার তাই ভাষাটা ভাল হওয়া চাই। ছবি শুরু হওয়ার ৪৫-৫০ মিনিট পড়ে প্রায় ৭-১০ মিনিট পর্যন্ত ছবিটা একটু স্লো হয়ে যায় পরবর্তীতে আবার ওভারকাম করে।
টেকনিক্যাল দিক এবং পরিচালনা
ছবির ব্যাকগ্রাউণ্ড মিউজিক এবং কালার গ্রেডিং এক কোথায় অসাধারন, যা দেখে চোখে ভীষণ আরাম পাবেন এবং শুনেও ভাল লাগবে।
পরিচালনার কথা আগেই বলেছি তার প্রথম ছবি হিসেবে অনেক ভাল করেছে। ছবিতে তিনি যা বুঝাতে চেয়েছেন তা ভাল করে পেরেছেন।
চিত্রনাট্য এবং সংলাপ
কেবিন দালভি, রিয়া মাহতাব উনাদের দুইজনে লেখা এবং বেশ ভাল লিখেছেন উনারা। সংলাপগুলো কানে শুনতে বেশ ভাল লাগে।
[starrater tpl=44]