সীমাবদ্ধতা পেরিয়ে সাহসী নির্মাণ ‘২২শে এপ্রিল’
গেল কয়েকমাস আগেই আমাদের দেশে ঘটে গেছে এক বিরাট অগ্নি দূর্ঘটনা,যার দরুণ হারিয়েছে অনেক তাজা প্রাণ। এই শোক কাটিয়ে উঠার আগে সেই অগ্নি দূর্ঘটনা থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে এই ঈদে নির্মিত হয়েছে টেলিফিল্ম ‘বাইশে এপ্রিল’।
ব্যস্ত ঢাকা শহরের এক বিরাট বিল্ডিং এর ফ্লোরে কয়েকটি গল্প মিলিত হয়েছে। বাবা-মেয়ের গল্প,পরিবারের গল্প,অভিমানের গল্প,প্রতিবাদের গল্প থেকে খুঁনসুটিময় ভালোবাসার গল্প। পরিচালক যখন এই টেলিফিল্মের ঘোষণা দিয়েছিলেন তখন থেকেই ছিল আলোচনার তুঙ্গে। একেতে অগ্নি দূর্ঘটনা অন্যদিকে অত্যন্ত তারকাবহুল অভিনয় শিল্পীর অভিনয়।
এই ধরনের গল্পের পরিনতি আমাদের জানা থাকে,তবে সেগুলো হৃদয়গ্রাহী করে তোলেন নির্মাতারা। এই টেলিফিল্মে যে কয়েকটি গল্প ফুটে উঠেছে তাঁর মধ্যে সবচেয়ে বেশি মন ছুঁয়েছে মা-ছেলে বা ভাই বোন তথা পরিবারের গল্প। অকালে বাবাকে হারিয়ে দুই ভাই বোন কে বড় করেছেন মা। ছেলে চাকরি করছেন,মা এখন অসুস্থ। বোন এখনো পড়ছে,সব দায়িত্ব মায়ের হাতে। আগুন লাগার পর ভাই ও বোনের যে কথোপকথন সেটার জন্য চোখ ভিজে আসে,সংলাপগুলোও ভীষণ বাস্তবিক। ভাইয়ের চরিত্রে ইরেশ যাকের নিজেকে দারুণ ভাবে মানিয়ে নিয়েছেন,মায়ের চরিত্রে দিলারা জামান সব সময় মায়াভরা মুখ। তবে এত এত জনপ্রিয় অভিনেত্রীদের মাঝেও আলো কেড়েছেন বোনের চরিত্রে অভিনয় কারী নবীন অভিনেত্রী মম।
অপূর্ব অভিনয় করেছেন মা হারা এক কন্যা সন্তানের পিতার চরিত্রে। নিম্নমধ্যবিত্ত এই বাবা এসেছিলেন নিজের সমস্যা সমাধানে আর আদুরে কন্যার পুতুল কিনতে। বাবা-মেয়ের গল্পটিও বেশ ভালো ভাবে ফুটে উঠেছে,আঞ্চলিক টানে বাবার চরিত্রে অপূর্ব বেশ। এই দুই গল্পের বাইরে ডিভোর্সি প্রতিবাদী নারী চরিত্রটি মনোযোগ কেড়েছে। এই চরিত্রে অভিনয় করেছেন নাবিলা,এই ধরনের চরিত্রতে তিনি সবচেয়ে বেশি সাবলীল। এই তিন গল্পের বাইরে আরো কয়েকটি গল্প আছে,তবে সেগুলা পূর্ণতা পায় নি। মেহজাবীনের চরিত্রটি নিয়ে আরো ভাবা যেত,মনোজ কুমার সাবলীল হলেও তানজিন তিশা বিরক্তির উদ্রেক ঘটিয়েছেন। শহিদুজ্জামান সেলিম আছেন বসের চরিত্রে,তাঁর স্ত্রীর চরিত্রে দীপা খন্দকার একেবারেই সুযোগ পান নি। সরকার দলীয় লোক হিসেবে সৈয়দ হাসান ইমামের ঐ পরিস্থিতিতে বাচনভঙ্গিটা ঠিকভাবে আসেনি। তামিম মৃধাও তেমনি বরং নাম না জানা মেহজাবীনের সহকর্মী প্রাণবন্ত ছিলেন। আফরান নিশো আছেন একেবারেই স্বল্প সময়ের জন্য,তবে সেটা মনে দাগ কেঁটেছে।
পরিচালক মিজানুর রহমান আরিয়ান সাম্প্রতিক প্রেক্ষাপটে গুরুত্ববহ ইস্যু নিয়ে এই টেলিফিল্মটি বানিয়েছেন। এই ধরনের কাজে নানা সীমাবদ্ধতা পেরিয়ে সাহসিকতার প্রয়োজন,সে জন্য ধন্যবাদ প্রাপ্য। আমাদের জীবনে এই গল্পগুলো চিরচেনা,সেটাই হয়তো দেখাতে চেয়েছেন। তবে এই স্বল্প সময়ে বেশ কয়েকটি গল্পের গভীরতা ফুটানো বেশ কষ্টসাধ্য। প্রতিটি গল্পেই তারকার আধিক্য থাকায় চরিত্রটিগুলো দর্শকদের মনে গেঁথেছে কম। এই ক্ষেত্রে তিনটি গল্প নিয়েই মূল ভাবনায় নিয়ে এগিয়ে যেতে পারেন,বাকিগুলো গৌন ভাবে আসতেন সেক্ষেত্রে এত তারকাবহুল কাস্টিং ও হতো না। আরেকটি দূর্বল দিক,শেষদিকে কিছুটা তাড়াহুড়ো হয়েছে। অবশ্য টিভি চ্যানেলে নির্মাতারা দিনদিন স্বাধীনতা হারাচ্ছেন এটা খুবই ভাবার দিক। আবহ সংগীতের দারুন আয়োজন ছিল, গানটা চলনসই।
মিজানুর রহমান আরিয়ান এই মুহুর্তে সবচেয়ে জনপ্রিয় নাট্য নির্মাতা। গত কয়েক ঈদেই উনার নাটক সবচেয়ে বেশি আলোচিত হয়,এই ঈদেও ছিল ‘বাইশে এপ্রিল’। নানা কারনে উচ্চাশা থাকার কারনে প্রত্যাশানুযায়ী না হলেও মোটামুটি ভালো কাজ। ইতিমধ্যেই দর্শকমহলে বেশ সাড়া ফেলেছে। আপাতত ইউটিউবে দেখার সুযোগ নেই,পরবর্তীতে একটি অনলাইন স্ট্রিমিং এ পাওয়া যাবে।