সোসাইটিতে ক্ষমা চেয়ে আর নিদারুণ রক্তক্ষরণ নিয়ে বেঁচে আছি!
রুশ চলচ্চিত্র পরিচালক এবং চলচ্চিত্র তাত্ত্বিক সের্গেই আইজেনস্টাইনের মতো সিনেমাকে বিনোদন আর বিনোদিত আবিলতা আর কল্পনার সুড়সুড়ি আনন্দের জগত থেকে টেনে বাস্তব দুনিয়ায় নিয়ে আসার ক্ষমতা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী আর নুসরাত ইমরোজ তিশার আছে।
ওটিটি প্লাটফর্ম চরকিতে গতকাল দেখলাম মোস্তফা সরয়ার ফারুকীর পরিচালিত ‘সামথিং লাইক অ্যান অটোবায়োগ্রাফি’ (২০২৩) সিনেমাটি। তিন ঘন্টার লঞ্চ জার্নি চাঁদপুর টু ঢাকা মেঘনার আর্দ্র শীতল বাতাসে কেবিনের আরামের বিছানায় শুয়ে সিনেমাটি ১ ঘণ্টা ২৪ মিনিট ২৫ সেকেন্ডে দেখে শেষ করে মন স্থির রাখতে পারেনি। মনে হয়েছে চারপাশটা কেমন চিৎকার করছে।
সমাজ-রাষ্ট্রে মানুষের সাথে মানুষের যে অন্যায্য বরখেলাপ নীতি এবং চাপিয়ে দেওয়া শাসন চলছে সেটা কিন্তু রাষ্ট্র শুধুমাত্র একাই করে না। পাশের বিল্ডিংয়ের বাড়ির মালিকও করে কারণে-অকারণে। অফিস-আদালতের পাশের কর্মকর্তাও কিন্তু হর্তাকর্তা হয়ে উঠে। সেই হিসেব কিন্তু সোসাইটির কোনো অঙ্গন ফুটিয়ে তোলার সাহস করে না।
তিশার জীবনমর্মাহত অভিনয় আর মোস্তফা সরয়ার ফারুকীর উর্বর মস্তিষ্কের স্নায়ুকোষগুলো ব্রাহ্মণ্যবাদ দ্বারা আক্রান্ত নয় বলে জীবন ও জগতের কথা,মাটির কথা সিনেমাতে ফুটিয়ে তুলতে পেরেছেন। কিন্তু এটা কীভাবে করে দেখালেন? ফারুকীকে তার চারপাশের কাঠামো বদ্ধ ঝঞ্ঝাট কতটা ব্যথিত করে একটা মানুষ কতগুলো অসংগতিপূর্ণ অঙ্গন নিয়ে একটি জটিল জীবন ও ঘেরাটোপের পরিস্থিতি নিয়ে যাপিতজীবনকে বয়ে চলে তার উপর নির্ভর করে তিনি নির্বাণ থাকবেন নাকি অনির্বাণ হয়ে উঠবেন।
আচ্ছা আপনারা কি বাচ্চা ফুটাইতে চান? আমাদের দেশে একটা সভ্য পরিস্থিতিতে বাচ্চা ফুটানোটা কি এতটা সহজ কাজ মনে করেন? ফারুকী তো ঠিকই বলেছেন; বাংলা সিনেমা আমাদের বারোটা বাজিয়েছে। সেখানে দেখানো হতো; একজন ছেলের সাথে একজন মেয়ের পরিচয় হলো, প্রেম হলো, বিয়ে হলো তারপর বাচ্চা হলো? ব্যাস ওকে! কিন্তু রিয়েল ওয়ার্ল্ডে একটা বাচ্চা পয়দা করা এই দেশে কি আসলেই এতোটা সহজ! অনুভূতিহীন মানুষের কাছে হয়তো সহজ!
এইসকল সামাজিক ক্রমোজমের জটিলতা কিন্তু কেউ আসলে এড়াতে পারে না। কালো গাড়ির তলে যারা থাকে আর সাদা বাড়ির তলে যারা বসবাস করে তারা যতোই আবরণী জীবন বেছে নেন না কেন তারাও কিন্তু অল মোস্ট সাফারার।
আবার এই একই দেশের মানুষ প্রতাপ-প্রতিপত্তি রক্ষা, অবৈধ সিন্ডিকেটের ব্যবসার চারদেয়ালে পৈশাচিক আনন্দ আর কতটা অনুভূতিহীন নীতিবিবর্জিত হয়ে উঠলে পাশের বাড়ির মানুষের একটা পারিবারিক ইমার্জেন্সি হেলথকে কতোটা ইনসিকিউরড করে ফেলতে পারে শুধুমাত্র অর্থের দাপট আর ভোগবাদী আয়েশকে জায়েজ করার জন্য। এই ঘটনা জীবন্ত করে তুলে ধরায় সিনেমাটিকে অনেকদিন রিমার্কেবল করে রাখবে।
এগুলোর সাথে প্রতাপশালীদের বিরুদ্ধে বিগত দিনের প্রতিবাদ যুক্ত হলে মানুষের ওপর ইচ্ছাকৃত টর্চার আরও বেড়ে যায়। আমাদের সমাজে হরহামেশাই মানুষের সুস্থ জীবনকে অস্বস্তিকর পরিস্থিতিতে ঠেলে দেয়! শব্দ দূষণ, বায়ু দূষণ, মাটি দূষণ, পানি দূষণ, আলো দূষণ থেকে শুরু করে খাদ্য দূষণ সবই মানুষের স্বাভাবিক জীবনকে পর্যুদস্তু করে। কিন্তু একজন ফিল্মমেকারও আক্রান্ত হয় এই দূষণ দিয়ে। সে শুধু লাইট-ক্যামেরা-অ্যাকশনের মধ্যেই থাকে না,সে একটি বিধিবদ্ধ রাষ্ট্রের ভেতরেও থাকে। সে এখানে যতোই সফিটিকেটেড জীবন যাপন করুক না কেন তাকে দূষণ আক্রান্ত করে!
একজন চলচ্চিত্রকারের স্বাধীন মতামত একটা ক্লাসিক বুরোক্রেসির কাছে কীভাবে ফিলোসোফিক্যালি ইনটলারেন্স পরিবেশ তৈরি করে, যেখানে রাষ্ট্র থেকে সমাজ সবাই মুক্তবাককে ভয়াবহভাবে ভয় পাওয়ার সংস্কৃতিতে আটকে থাকে। ক্ষমা চাইতে হয়! মুচলেকা দিতে হয়। এটাকেই পোস্ট মর্ডানিজমের প্রবক্তারা বলেন; ট্রাইবাল সোসাইটি। যেখানে সংখ্যালঘুরা ডমিনেট হয়। এক্সপ্লয়েট হয়।
রাষ্ট্রের সাথে মানুষের প্রাত্যহিক জীবন কখনো বিচ্ছিন্ন করতে পারে না। মানুষ নাগরিক না হলেও পারে না। মানুষ আপ্তবাক্যের ওপর ভর করে চলতে পারে। নিজস্ব একটি কল্পিত ইউনিভার্সেল ওয়ার্ল্ডে বিচরণ করে অবকাশ যাপন করতে পারে কিন্তু রাষ্ট্র যে নিশ্চিদ্র পথে মানুষকে ডমিনেট করে সেই পথ না মাড়ানো ব্যতীত একজন মানুষ তিল পরিমাণ চলতে পারে না।
রাষ্ট্রের সারকামস্ট্যান্সেসের বেড়াজালে সে আটকায়। কীভাবে আটকায় দেখুন; রাষ্ট্র নাগরিক অধিকার দিতে না পারলেও নাগরিক ভোগান্তি দিতে পারে। এটা ফিল্মমেকার হোক আর ইলেকট্রনিক মেকার হোক। তাকে আটকাতে হবেই।
আমরা কি মনে রাখছি আমাদের আব্বা-আম্মা কী করছে আমাদের জন্য… এটা যদিও একটা শক্তিশালী ডায়লগ কিন্তু এতে দীর্ঘশ্বাস ফেলে বেঁচে থাকার কষ্ট বৃদ্ধি পাওয়া ছাড়া কী করার থাকতে পারে একজন চলচ্চিত্রে নির্মাতার। যার আনন্দের অনুষঙ্গ কিছুই হাতের নাগালে থাকতে পারে না। তিনিই তো আসলে সত্যিকারের ফিল্মমেকার, তাই না! আসলে আমরা একটা সেডিস্ট নেশান। আনন্দ-উচ্ছাস আমরা জাতিগতভাবে জন্মলগ্ন থেকে দেখেনি।
‘মানুষ পৃথিবীতে আসার পর থেকে মানুষ পৃথিবীকে ধ্বংস করেছে। এই যাবতকালের অবগাহনে মানুষ পৃথিবীর কোনো উপকারে আসেনি’— এটা অস্ট্রেলিয়ার ফিলোসফার দার্শনিক পিটার সিঙ্গার তার ‘অ্যাপ্লাইড এথিক্স’-এর একটা বিখ্যাত ডায়ালগ। পিটার সিঙ্গারের আর্টিক্যালই হয়তো মোস্তফা সরয়ার ফারুকী দেখাতে চেয়েছিলেন তিশাকে। আমি হয়তো জানি না। সমাজ-রাষ্ট্রের সমতাবাদী চিন্তা যারা যেখানেই বসে করুন না কেন মূল সূত্রগুলো গাণিতিক সূত্রের মতো হয়তো মিলে যাবে।
ফারুকীর একটা আত্মপ্রত্যয় ছিল;আমরা বেবি নিবো কেন? বেবি নিতে হবে কেন? এই প্রশ্নের সামনে তিশার ওপর সমাজের সকল অন্ধ মানুষের কদাকার চিত্রসমালোচকদের চাপ তার দুচোখ দিয়ে অশ্রুসিক্ত হয়ে বেয়ে পড়েছে। তখন তিশা সিদ্ধান্ত নিয়েছে অন্য উইমেনের ডিম্বাণু থেকেও বায়োলজিকাল মাদার হওয়া যায়। একটা জোরালো ট্যাবুকেও কিছুটা আঘাত করে এগিয়েছে সিনেমাটা।
তখন একটা জোরালো রাগেরও উদগীরণ হয়ে গেল;আমরা বাচ্চা নিচ্ছি আমাদের জন্য সোসাইটির ভ্যালিডেশন-বৈধতার জন্য নয়। অর্থাৎ কথা সাহিত্যিক শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের মতো করে বলতে হয়; ‘যে সমাজ দুঃখীর দুঃখ বুঝে না, বিপদে সাহস দেয় না, শুধু চোখ রাঙায় আর গলা চেপে ধরে সে সমাজ আমার নয়।’
মানুষ এবং প্রাণীর মধ্যে পার্থক্য টানার যে সংস্কৃতি তৈরি হয়েছে তাতে মানুষের জীবন বিষাক্ততায় পূর্ণ হয়েছে। এই পার্থক্য তৈরির সংস্কৃতি শুরু হয়েছে সেই আদিকাল থেকেই। বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই প্রকৃতিকে জীবিকার ‘উপায়’ রূপে পেতে চেয়েছে মানবগোষ্ঠী। প্রকৃতি কখনো মানুষের ‘লক্ষ্যে’ পরিণত হতে পারেনি। অথচ বর্তমান বৈজ্ঞানিক গবেষণা বলছে, মানুষের সাথে প্রাণীকূলের যতটুকু পার্থক্য রয়েছে তা শুধুই সংস্কৃতিগত এবং মাত্রাগত, গুণগতভাবে তেমন নয়। তাহলে একেবারেই বলা যাবে না মানুষ প্রাণী থেকে ভিত্তি কিছু।
তখন তারা নিজেরা নিজেদের মধ্যে মীমাংসায় উপনীত হয়েছিল, অন্যায় করা বা অন্যায় সহ্য করা কোনোটিতেই লিপ্ত হওয়া ঠিক নয়। আধুনিক রাষ্ট্রচিন্তা ও উচ্চতর গণতন্ত্র আমাদের এই শিক্ষাই দেয়, যা আইনসম্মত তা সর্বদা ন্যায়সম্মত নাও হতে পারে। অন্যায় কর্মকে ন্যায়সম্মত করা অন্যায় এবং এর ভয়াবহ দিক হচ্ছে অন্যায়কারীর শাস্তি ভোগ না করা। মানুষ এবং প্রকৃতির নিজস্ব বৈশিষ্ট্যে সামঞ্জস্যপূর্ণ অবস্থানই পৃথিবীর বৈচিত্র্য। এদের পার্থক্য নিরূপণে উঠেপড়ে লাগা মানেই হচ্ছে বৈচিত্র্য ধ্বংস করার পায়তারা করা। বৈচিত্র্যকে অস্বীকার করা মানুষ অন্য মানুষের জন্যও ভয়ংকর হতে পারে। কারণ অন্য মানুষের বৈচিত্র্যময় জীবন তার কাছে অসহ্য লাগতে পারে। প্রাণীর সামর্থ্য মানসিক ও শারীরিকভাবে অপরিণত বা সমপর্যায়ে নেই বলে তাদের সঙ্গে অসামঞ্জস্য আচার-আচরণ করা যদি নৈতিক হয়, তাহলে আমাদের নৈতিকতার মানদণ্ড নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যায়।
আমরা এমন এক নৈরাজ্যবাদী দেশে বসবাস করি যেখানে প্রতিটি মানুষ প্রথা প্রতিষ্ঠান দল সংগঠন রাজনীতি এবং রাষ্ট্র প্রকৃতির বৈচিত্র্যকে প্রতিনিয়ত ভক্ষণ করে প্রয়োজনে-অপ্রয়োজনে লাঘব করে। এমনই এক বিবেকহীন রাষ্ট্রে আমরা আছি যেখানে মানুষের জীবনের ব্যক্তিগত নিরাপত্তার জন্য হাইকোর্ট থেকে নির্দেশ আসতে হয়। হাইকোর্ট থেকে নির্দেশনা না আসা পর্যন্ত কেনো নিরীহ মানুষ রক্ষা পায় না।। সমাজবদ্ধতা বাদ দিয়েছে বৈষয়িক মানুষ, পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্র, একই সাথে বিভিন্ন দল মতের মতাদর্শ।
আমার নিজস্ব জীবনধারণের ইচ্ছার মধ্যে যেমন দীর্ঘদিন বেঁচে থাকার আকুল আকাঙ্ক্ষা আছে তেমনি বিলুপ্ত হয়ে যাবো এই ভেবে ভয়ও আছে। বেঁচে থাকার ইচ্ছে পোষণ করার মধ্যেই রয়েছে পরমানন্দ। আবার বেঁচে থাকার ইচ্ছার বিরুদ্ধে আঘাতই হল বেদনা। সুতরাং বিষয়টি পরিষ্কার, মানব জাতির বাইরে যে জীবজগৎ- তারা নিজেরা বেঁচে থাকার উপলব্ধি ব্যক্ত করতে পারুক বা না-ই পারুক, সকলের সমভাবে বেঁচে থাকার সার্বজনীন অধিকারকে আমি শ্রদ্ধা করি। এটাই নৈতিক মানদণ্ড হওয়া উচিত ছিলো ওপেন সোসাইটিতে।
সকল প্রকার জীবন ও প্রাণ প্রকৃতির প্রতিই শ্রদ্ধা- এই মতবাদটির সঙ্গে যাঁর নাম সম্ভবত সবচেয়ে বেশী জড়িত, তিনি হচ্ছেন আলবার্ট শোয়াইটজার। ‘সিভিলাইজেশন অব এথিক্স’ গ্রন্থে তিনি বলেন, ‘জীবনকে বাঁচিয়ে রাখা এবং সযত্নে লালন করাই ভালো; জীবনকে ধ্বংস করা এবং নিবৃত্ত করাই মন্দ…’ অর্থাৎ একজন মানুষ শুধু তখনই প্রকৃতভাবে নৈতিক যখন তিনি সব ধরনের জীবনকে সাহায্য করার জন্য তার ওপর অর্পিত দুর্বার চাপকে হাসিমুখে মেনে নিতে সক্ষম।
যখন সে নিয়মের বাইরে হলেও যেকোনো প্রাণ-প্রকৃতিকে আঘাত করা পরিহার করে চলে। সে দ্বিতীয়বার প্রশ্ন করে না ঐ মানুষটি, ঐ প্রাণীটি তার সহানুভূতি পাওয়ার যোগ্য কি না? তার কাছে জীবন মানেই পবিত্র। যদিও এই পবিত্রতা ধর্মীয় মানবতাবাদ দ্বারা আচ্ছন্ন নয়। এখানে পবিত্রতা মানেই সর্বত্র জীবন, অযথা হস্তক্ষেপবিহীন জীবন, অস্তিত্বশীল ইহজাগতিক জীবন।
দার্শনিক পিটার সিঙ্গার তার ‘অ্যাপ্লাইড এথিক্স’ গ্রন্থে যথার্থই বলেছেন, ‘যে বরফ স্ফটিক সূর্য আলোতে ঝলমল করে সে তা চূর্ণবিচূর্ণ করে না,কোন গাছের পাতা সে ছিঁড়ে না, কোনো ফুল বিচ্ছিন্ন করে না এবং চলার সময় কোনো কীট-পতঙ্গ যাতে পায়ের নিচে পড়ে চূর্ণবিচূর্ণ না হয়, সে দিকে সে যত্নবান। গ্রীষ্মের কোনো সন্ধ্যায় সে যদি দীপালোক দ্বারা কাজ করে তাহলে বরং সে তার টেবিলের ওপর ঝলমলে এবং পাখাসহ নির্জীব পতঙ্গের পর পতঙ্গ উড়ে এসে পড়া দেখার চেয়ে জানালা বন্ধ করে দূষিত বাতাস গ্রহণ করতে অধিকতর পছন্দ করে’। (অনুবাদকঃ ড. প্রদীপ কুমার রায়)
পৃথিবীতে আনন্দ বৃদ্ধি করার দুটি পদ্ধতি রয়েছে; একটি হচ্ছে বর্তমানে অস্তিত্বশীল ব্যক্তিদের আনন্দ বৃদ্ধি করা: অন্যটি হচ্ছে আনন্দপূর্ণ জীবন অতিবাহিত করবে এমন সত্তার সংখ্যা বৃদ্ধি করা। আনন্দের পরিমাণ কমে যাওয়ার কারণে যদি আনন্দপূর্ণ জীবন অতিবাহিতকারীদের হত্যা করা মন্দ হয়, তাহলে আনন্দপূর্ণ জীবন অতিবাহিত করছে এমন সত্তার সংখ্যা বৃদ্ধি করাই শ্রেয়। অধিকতর সন্তানের জন্ম দিয়ে যদি আমরা আনন্দে জীবন অতিবাহিত করতে পারতাম তাহলে আমরা এ কাজটি ভালোভাবে করতাম! যদিও অর্থনৈতিক বৈষম্যমূলক সমাজ এ কাজটিকে জটিল পরিস্থিতির দিকে নিয়ে গেছে তাই একটা পরিবার সন্তান জন্মদানে হাজারবার চিন্তা করে। ভয় পায়। ঠিক তেমনি অধিক আনন্দ সৃষ্টি করতে পারে এমনতর মানবতাবাদী মানুষ এবং মানবেতর প্রাণীর সংখ্যা বৃদ্ধি করাও আনন্দের ব্যাপার।
এই দৃষ্টিভঙ্গি অনুৎপাদনশীল বধির বাকপ্রতিবন্ধী বিকলাঙ্গ একটি মানুষ হত্যার বিরুদ্ধে যেমন আদালতের সমস্ত আইন ঐ নৃশংস হত্যার বিরুদ্ধে অবস্থান নিবে ঠিক তেমনি উৎপাদনশীল এবং জীববৈচিত্র্য ভারসাম্য রক্ষাকারী নিরীহ মানুষ এবং মানবেতর প্রাণীটি যার শারীরিক এবং মানসিক শক্তি মনুষ্য জগতের কোনরকম ক্ষতির কারণ নয়, তাকে হত্যা করা কত বড় অন্যায় সেই যুক্তিকেই সবচেয়ে বেশী শক্তিশালী করে।
সকল জীব ও জগতের বাঁচার পরিবেশ তৈরি করে দিতে আমাদের মানসিক বৃত্তি প্রবৃত্তির যথেষ্ট উন্নয়ন উৎকর্ষ সাধন করতে হবে।
সিনেমাটি যতবার দেখছি ততবারই প্রখ্যাত চলচ্চিত্রকার জহির রায়হানের ‘কাঁচের দেয়াল’ সিনেমায় খান আতার একটা ডায়ালগ মনে পড়ছে; ‘তোরা বাড়িটাকে একটা ঝঞ্ঝাট বানিয়ে রেখেছিস,আমি হাজার খানেক সিনেমা দেখেছি,সেখানে তোদের পরিণতি কী হবে? তাই বলা আছে। তা আমি চাক্ষুষ বলে দিতে পারি, আলবাত বলে দিতে পারি! তোরা যদি ঝঞ্ঝাট না মিলমিশ করিস, তাহলে কী ঘটবে? মেয়েটা মাঝখানে শুধু বিষ খেয়ে মরবে, আর তোদের বাড়ির মাঝখানের দেয়াল চিরদিনের জন্য বন্ধ থাকবে! তোদের যেকোনো এক পক্ষকে সেক্রিফাইস করতে হবে। এ ছাড়া সমস্যা সমাধান হয় না।
দেখ ভাই, তোরা সিনেমা দেখোস না বলেই তোদের এতো দুর্দশা। সিনেমার শেষে কী হবে তা তো আগেই বলে দিতে পারি,আরে ভাই জীবনটা একটা গৎবাঁধা ফরমুলা মুখস্থ বলে দিতে পারি।’
০২ ডিসেম্বর ২০২৩, ঢাকা