Select Page

স্টার সিনেপ্লেক্সকে কেউ বাধ্য করতে পারবে না

স্টার সিনেপ্লেক্সকে কেউ বাধ্য করতে পারবে না

সম্প্রতি আলোচনা-সমালোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে স্টার সিনেপ্লেক্স। প্রথমে রোজার ঈদের সিনেমা নামিয়ে দেয়া হয়। এরপর ‘শ্যামা কাব্য’ ও ‘ডেডবডি’ তিনদিনের মাথায় নামিয়ে নেওয়ার পরই বেশকিছু সুনির্দিষ্ট অভিযোগ তুলেছেন এই দুই ছবির পরিচালক-প্রযোজকরা। এর জবাবে সিনেপ্লেক্স কর্তৃপক্ষ জানায়, দর্শক না দেখলে সে সিনেমা চালাতে কেউ বাধ্য করতে পারবে না।

‘শ্যামা কাব্য’ নির্মাতা বদরুল আনাম সৌদের অভিযোগ, বারবার তাকে দর্শক না টানলে সিনেমা নামিয়ে দেওয়া হবে বলে হুঁশিয়ারি দেওয়া হচ্ছিল। এই অভিমান থেকেই শেষ অবধি সিনেমাটি নামিয়ে নেন তিনি। এ ছাড়া সিনেপ্লেক্সের বসুন্ধরা শাখায় হলের প্রজেকশন ব্যবস্থাপনায় সমস্যা, সেল রিপোর্টে গড়মিলসহ কয়েকটি অভিযোগ প্রকাশ্যে আনেন তিনি। এদিকে, দেশীয় সিনেমা নিয়ে স্টার সিনেপ্লেক্সের উদাসীনতায় ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার অভিযোগ এনে প্রতিবাদ সভা ও সংবাদ সম্মেলন করেছে ‘ডেডবডি’ চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্টরা।

এবার এসব বিষয় নিয়ে মুখ খুলেছে স্টার সিনেপ্লেক্স কর্তৃপক্ষ। সোমবার (১৩ মে) সন্ধ্যায় রাজধানীর ঢাকা ক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেন তাঁরা। সেখানে স্টার সিনেপ্লেক্সের চেয়ারম্যান মাহবুব রহমান রুহেল বলেন, ‘কোনো ছবি যদি আমার এখানে না চলে, এটা আমার দোষ না। এটা তাদের (পরিচালক-প্রযোজক) ব্যর্থতা। তারা দর্শক টানতে পারেননি, ঠিকমতো প্রমোশন করেননি, তারা হয়তো সিনেমাটি ঠিকমতো বানাননি। এই ব্যর্থতার দায় তারা আমার ওপর দিতে পারেন না। এবং তারা প্রেস কনফারেন্স করে বলছে যে এখানে কন্ট্রোল করতে হবে। কীসের কন্ট্রোল করবে? বিনিয়োগ করছি আমি, ঝুঁকিও আমিই নিচ্ছি।’  

 ‘শ্যামা কাব্য’ ও ‘ডেডবডি’ সিনেমা দুটি কেন সরিয়ে নেওয়া হলো—এ বিষয়ে জানতে চাইলে রুহেল বললেন, ‘অনেকে অনেক ধরনের ছবি করছেন। তারা টার্গেট মার্কেটের কথা চিন্তা করছেন না। নিজেরা নিজেদের মতো ছবি তৈরি করছেন। মানসম্মত ছবি করছেন না। এখন আমার ওপর প্রচুর চাপ আসে, ওই ছবিটা দেখাতেই হবে। এটা তো হতে পারে না। আমি মনে করি, স্টার সিনেপ্লেক্স হচ্ছে একটা শপ এবং মুভি একটা প্রোডাক্ট। এখন প্রোডাক্ট ভালো না হলে আমি কেন নিব? দর্শক এটা কিনবে কি কিনবে না—সেটা দর্শকের ব্যাপার। দর্শকরা সিদ্ধান্ত নেবেন। তারা যদি একটা প্রোডাক্ট খারিজ করে দেন, তাহলে এর ব্যর্থতা বা দায়বদ্ধতা আমি নেব না। এবং এ জন্য তারা (পরিচালক-প্রযোজক) অভিযোগ করতে পারেন না।’

যোগ করে তিনি বলেন, ‘কিছু কথা উঠছে এখন; অনেকে বলছেন—এখানে কন্ট্রোল করার মতো কোনো লোক নেই। আমরা কি মস্তানি কিংবা গডফাদার চাই? যে সিনেমা ইন্ডাস্ট্রি কন্ট্রোল করবে? মুক্ত বাজার অর্থনীতিতে সবকিছু সাপ্লাই-ডিমান্ডের ওপর চলে। এখন আমরা চাই ভালো ছবি বানান। আমি উন্মুক্ত, আমি দেখাতে চাই, আমি বাংলা ছবির পক্ষে।’

এ ছাড়া ঈদুল ফিতরে বিদেশি সব সিনেমা স্টার সিনেপ্লেক্স থেকে নামিয়ে নেওয়া হয়েছিল বলে উল্লেখ করে রুহেল বললেন, ‌‘আপনারা জানেন যে, এই ঈদে আমরা হলিউডের সমস্ত ছবি বন্ধ করে দিয়েছিলাম। আর বলিউড তো নেই-ই, কারণ নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। একটা বাদে বাকি সব হল বাংলা ছবির জন্য চালু রেখেছিলাম। সমস্যা যেটা হয় যে, ঈদে ৮-১০টা ছবি রিলিজ করবে। এটা আসলে বাস্তবসম্মত না। আমরা দেখেছি ঈদে মুক্তি পায়নি—এমন অনেক বাংলা ছবি ভালো করেছে। আমরা এমনও দেখেছি, ভালো বাংলা ছবি ৯০ শতাংশ হল দখল করে নিয়েছে। সেটা সকাল-রাত যখনই চালাই না কেন! ভালো ছবির জন্য মানুষ আসবে, দেখবে। আমাকে ফোন বন্ধ করে রাখতে হত, টিকিটের জন্য এত চাহিদা! মানুষ আমাকে ফোন করতেন, কারণ টিকিট পাচ্ছেন না তারা। এখন ভালো ছবি বানাবে না, মানুষ দেখবে না, আমরা যদি নামিয়ে দিই—এটার জন্য আমাকে দোষারোপ করে লাভ কী? অনেক বাংলা ছবি আছে, ভালো ইংলিশ ছবি আছে, আমাকে সেগুলো দিতে হবে।’

‌‘তৃতীয় দশকের স্বপ্ন’ শিরোনামে আয়োজিত ওই সংবাদ সম্মেলনে তিনি আরও বলেন, ‘আমার লক্ষ্য হচ্ছে দর্শক ধরে রাখা। দর্শককে সিনেমামুখী করা। এখন তা লোকাল ফিল্ম দিয়ে সম্ভব নয়, কারণ লোকাল যথেষ্ট ভালো ছবি হচ্ছে না। এখন আমাকে বিদেশি ছবির ওপর নির্ভর করতেই হবে। মানুষ একেকবার একেকটা ছবি দেখতে চায়। একবার হলমুখী হওয়ার অভ্যাস হলে তাদের মধ্যে এই অভ্যাস থেকে যাবে, যা প্রত্যক্ষ-পরোক্ষভাবে বাংলা ছবির জন্যই সহায়ক হবে।’

কারও চাপে নিজেদের গুণমান ছেড়ে দিবে না বলেও জানান রুহেল। তিনি বলেন, ‘যা ইচ্ছে তাই মুভি বানাবে, আমাকে সেটা দেখাতে হবে—এটা তো হতে পারে না। মানসম্মত ছবি না হলে আমি সেটা এখানে রাখব কেন? এ জন্য আমাকে কেউ বাধ্য করতে পারবে না। দরকার হলে ব্যবসাই করব না। সিনেপ্লেক্স একটা ব্র্যান্ড হয়েছে, আমরা মানুষের কাছে একটা আস্থার জায়গা তৈরি করতে পেরেছি। দর্শক ট্রাফিক জ্যাম ঠেলে টাকা দিয়ে টিকিট কেটে ছবি দেখবে এবং ছবিটা মানসম্মত হবে, তারা হতাশ হবে না। এই জায়গাটা আমাকে বজায় রাখতেই হবে। এখন যদি একটা ছবি দেখে তারা আমাকে গালাগালি করে, তাহলে তো সমস্যা! এটা নিয়ে যতই প্রেস কনফারেন্স করুক, আমাদেরকে বিশ্বাস থেকে সরাতে পারবে না। আমি ভালো ছবির পক্ষে, ভালো বাংলা ছবির পক্ষে; আমি চাই আমাদের তরুণ মেধাবী পরিচালকরা নির্মাণে আসুক এবং ভালো ছবি হোক।’

প্রসঙ্গত, রোববার (১২ মে) বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন করপোরেশনের (বিএফডিসি) সামনে মানববন্ধন করেন ‘ডেডবডি’ ছবি সংশ্লিষ্টরা। সেখানে প্রযোজক-নির্মাতা মোহাম্মদ ইকবাল দাবি করেন, বাংলা ছবির বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র চলছে। সিনেপ্লেক্স তাঁর সিনেমাটি মেরে ফেলেছে!

এর আগে ৩ মে বদরুল আনাম সৌদ পরিচালিত ‘শ্যামা কাব্য’ নামে আরেক ছবি মুক্তি পায়। মুক্তির দিনেই নির্মাতা অভিযোগ করেন, সিনেপ্লেক্সের বসুন্ধরা সিটি ব্রাঞ্চে ৩ নং হলে যে স্ক্রিনে তার ছবি দেখাচ্ছে, সেখানে ছবি দেখে দর্শক বিভ্রান্ত হচ্ছেন। স্ক্রিন ঘোলাসহ নানা ধরনের সমস্যা রয়েছে। এ কারণে তিনি সিনেপ্লেক্স থেকে ছবি নামিয়ে নেন। এই অভিযোগটির প্রসঙ্গে উত্তর দিয়েছেন রুহেল।

‘ন ডরাই’ ছবির এই প্রযোজক বলেছেন, বসুন্ধরাতে পাঁচটি স্ক্রিন রয়েছে। রিসেন্ট ভাড়া বাড়ানো হয়েছে। এ কারণে যে স্ক্রিনে সমস্যা আছে, সেটা ঠিক করা সম্ভব হয়নি। অপেক্ষা করছি, নতুন চুক্তি হওয়ার পর স্ক্রিনসহ বাকি যা আছে সেগুলো ঠিক করবো। উনি (বদরুল আনাম সৌদ) ঠিক বলেছেন। ওই হলে আমাদের প্রজেকশনে একটু সমস্যা ছিল। ওনার ছবিটি যেহেতু ডার্ক, উনি স্ক্রিন চেইঞ্জ করতে আমাকে পার্সোনালি বলতে পারতেন। আমি রিপ্লেস করে দিতে পারতাম। কিন্তু তারা সিনেপ্লেক্সের লবিতে দাঁড়িয়ে আমাদের অপবাদ দিয়েছে, যা কাম্য নয়। তবে আমি পরিসংখ্যান দেখলাম তার ছবি দেখতে দর্শক কম এসেছিল। ছবি ভালো মন্দ তা বলবো না তবে দর্শক সেভাবে ছিল না। ভালো সিনেমা বলতে দর্শক ঈদের পর এখনো সিনেপ্লেক্সে ‘রাজকুমার’ চলছে এবং দর্শক পছন্দ করায় আমরা চালাচ্ছি। দর্শক কম থাকায় নামিয়ে দেয়ার পর আবার দর্শকরা চাচ্ছে বলে ‘কাজলরেখা’ দেখাচ্ছি। আমি সাপ্লাই ডিম্যান্ডে বিশ্বাস করি। দর্শক যেটা চাইবে আমি সেটা দেখাবো। এতে ব্লেম করলে মানবো না।


মন্তব্য করুন