Select Page

স্বপ্ন গেল ‘জ্বীন’-এর বাড়ি, আবার!

স্বপ্ন গেল ‘জ্বীন’-এর বাড়ি, আবার!

মোনা: জ্বীন-২; পরিচালনায় কামরুজ্জামান রোমান; অভিনয়ে সুপ্রভাত, সামিনা বাসার, সাজ্জাদ হোসেন, আরিয়ানা জামান, ফজলে জাকারিয়া, বড়দা মিঠু, তারিক আনাম খান, দীপা খন্দকার, আহমেদ রুবেল, রেবেকা রউফ, কাজী নওশাবা আহমেদ (ক্যামিও) প্রমুখ; প্রযোজনা জাজ মাল্টিমিডিয়া; শুভমুক্তি ১১ এপ্রিল (ঈদুল ফিতর), ২০২৪

ঈদের দিন সকালে ‘রাজকুমার’ দেখার পর, ওইদিন রাতের শোয়ে বসুন্ধরা সিটির সিনেপ্লেক্সে দেখলাম ‘মোনা: জ্বীন-২’। এটা ছিল ২০২৩ সালের ঈদুল ফিতরে মুক্তি পাওয়া ‘জ্বীন’-এর সিক্যুয়েল। তবে দুটো সিনেমার মধ্যে সেরকম কোনো কানেকশন কিংবা গল্পের ধারাবাহিকতা নেই।

আলাদা গল্প হলেও, দুটি সিনেমায় জ্বীন দেখানোর প্যাটার্ন একই। এমনকি কিছু চরিত্র তো একদম হুবহু প্রথম কিস্তির কপিপেস্ট! যেমন বলা যায় সাজ্জাদ হোসেনের চরিত্রটি। মনোবিজ্ঞানের অধ্যাপকের এ চরিত্র হুবহু চরিত্র ‘জ্বীন’-এও ছিল। অভিনয় করেছিলেন জিয়াউল রোশান। দুজনের ইন্ট্রোডাকশন সিনটাও একই। কনশাস ও সাব-কনশাস মাইন্ড এ দুটো শব্দ নিয়ে বেহুদা কপচা-কপচি।

কিংবা বলা যায় তারিক আনাম খানের চরিত্রটি। এই চরিত্রটিও প্রথম সিনেমাতে ছিল; যেখানে আমরা একজন কুরআনের হাফেজকে আসতে দেখতে পাই, যিনি আবার একাধারে আমাদের বেকার মনোবিজ্ঞানীর থেকেও বড় প্রফেসর! দুই সিনেমাতে পাকনামো করে বিপদে পড়া বাচ্চাদের তারা এসে উদ্ধার করবে। জ্বীন বলতে আদৌ কিছু ছিল কিনা, থাকলে তার অতৃপ্ত বাসনা কী ছিল, সেগুলো সম্পর্কে পরিপূর্ণ ধারণা দিবে। ‘পাকনামো’ করা বলার পেছনে কারণ রয়েছে। দেশ-বিদেশের প্রায় সব ভৌতিক সিনেমাতে এরকম কিছু বাচ্চা-কাচ্চা থাকে, যারা খুব ভালো করেই জেনে-শুনে ভুতের মুখে পা দেয়। এ সিনেমাও তার থেকে ভিন্ন কিছু নয়। সবমিলিয়ে সেইম গল্পের প্যাটার্নে বানানো ‘মোনা: জ্বীন-২’ কীরকম হলো, সেটা নিয়েই একটু বলি…

২০২৩ সালে যখন ‘জ্বীন’ মুক্তি পায়, তখন এর উদ্ভট প্রমোশন ও সিনেমার উদ্ভট সব ভিএফএক্স নিয়ে প্রচুর সমালোচনা হয়। বাজে গ্রাফিক্স দিয়ে ইউনিকর্ন বানিয়ে, সেটাকে ‘আজাজিল’ বলে ভয় পাওয়ানোটা আমি এখনো ভুলতে পারিনি। আমিসহ শ্যামলী সিনেমাহলে ৩০০+ দর্শক সেসময় প্রচুর হেসেছি। সিরিয়াস সিনেমা ভুল করে কমেডি সিনেমা হয়ে গিয়েছিল। একবছর ঘুরে যখন আবার এর সিক্যুয়েল এলো, সবাই মূলত ভৌতিকের নামে কমেডি সিনেমা দেখবে, এরকম প্রত্যাশা নিয়ে সিনেমা হলে যাচ্ছে। আমিও এর বাইরের কেউ নই।

তবে এইবারের পরিচালক কামরুজ্জামান রোমান আগের সমালোচনাগুলোকে সিরিয়াসলি নিয়েছেন। তিনি সেরকম কোনো ভিএফএক্স শট রাখেননি। রাখলেও সেটা রাতে শ্যুট করায়, ততটা চোখে লাগেনি। এছাড়া সিনেমাতে একদম মিনিমাম ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক ব্যবহার করা হয়েছে, কোনো ফালতু গান রাখা হয়নি। এটা সিনেমার দ্বিতীয়ার্ধকে অনেক সাহায্য করেছে। এটা আবার প্রথমার্ধকে বোরিংও করেছে, সে ব্যাপারে পরে আসছি। এখানে আপাতত বলতে চাচ্ছি, ‘জ্বীন’-এর সমালোচনা দেখে এই সিনেমায় কিছু চেইঞ্জ আনা হয়েছে, যে চেইঞ্জগুলো আমার মতে সাধুবাদ পাওয়ার মতো।

সিনেমার দ্বিতীয়ার্ধ যতটা ভালোলাগে, প্রথমার্ধ ততটা ভালোলাগার মতো না। প্রধান সমস্যা রাইটিংয়ে। এ অংশ বেশ দুর্বল হাত দিয়ে লেখা হয়েছে। আমি হিসাব করলাম, প্রায় ছয়টি খাওয়া-দাওয়ার সিকোয়েন্স রাখা হয়েছে প্রথমার্ধে। কিছুক্ষণ পরপরই দেখা যাচ্ছে, চরিত্রগুলো রাতের খাবার খাচ্ছে, সকালের নাস্তা করছে, আহমেদ রুবেল তার বাড়িতে হুজুর ও মাদ্রাসার ছাত্রদের এনে তাদের খাওয়াচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া শিক্ষার্থীগুলো আহমেদ রুবেলের বাড়িতে আসলো, তাদের আপ্যায়ন করা হচ্ছে, তারা আবার ‘জ্বীন’ দেখার বাহানা করে বারবিকিউ পার্টি করছে… আরো কত কি! মানে কিছু মাথায় না আসলে খাওয়ার সিন বসিয়ে দাও! এরকমই ছিল অনেকটা।

মোস্তাকিম সুজনের এডিটিংয়ে বেশ কিছু সমস্যা আছে। এক সিন থেকে আরেক সিনে যাওয়ার ট্রানজিশনগুলো মোটেও ভালো হয়নি। ভিএফএক্স ইউজ না করাতে, এইটুক কাজ ঠিকভাবে করা ছাড়া সেরকম স্পেশাল কোনো কাজ ছিল না। সিনেমাটোগ্রাফি করেছেন ফরহাদ হোসেন, মোটামুটি চলনসই ছিল। এছাড়া লাইটিং, সেট এরেঞ্জমেন্ট, মেকআপ… এগুলো মোটামুটি ঠিকঠাক ছিল।

‘মোনা’ নামক মেয়েটার চরিত্রে অভিনয় করেছেন সুপ্রভাত। তাকে আমি এর আগে অন্য কোনো চরিত্রে দেখিনি। বয়স-অভিজ্ঞতার বিচারে তিনি বেশ ভালো করেছেন। এছাড়া বড়দা মিঠু, আহমেদ রুবেল, দীপা খন্দকার ও তারিক আনাম খানের মতো সিনিয়র অভিনেতারা বেশ গ্রহণযোগ্য একটা পারফরম্যান্স দিয়েছেন। একটা ছোট ক্যামিও চরিত্রে কাজী নওশাবা আহমেদকে দেখা গিয়েছে। তার সেরকম বিশেষ কিছু করার ছিল না।

অন্যদিকে সেই পাকনামো করা ছেলে-মেয়েগুলোর অভিনয় ছিল খুবই বিরক্তিকর। সাজ্জাদ হোসেন দেখতে খুবই হ্যান্ডসাম। কিন্তু সত্যি কথা বলতে তার অভিনয় দেখে যা মনে হলো, তার থেকে বাপ্পী-সাইমন-নীরব-ইমন… এমনকি রোশানও বেটার চয়েজ। এরকম দুর্বল এনার্জিবিহীন অবতার নিয়ে বেশিদুর এগোনো সম্ভব হবে না। অন্যদিকে বাকি যারা ছিলেন, বিশেষ করে সামিনা বাসার ও আরিয়ানা জামান, এদের আসলে ক্যামেরার সামনে কিউটনেস প্রদর্শন করা ছাড়া সেরকম বিশেষ কিছু করতে দেখা যায়নি। বাকি থাকা ছেলেটার কথা আর নাই-বা বলি…

সব মিলিয়ে বলবো ‘মোনা: জ্বীন-২’ প্রথমার্ধে চমকে উঠার মতো সেরকম কিছু দেখাতে পারে না, যার কারণে সিনেমাটা প্রথমার্ধেই মারা যায়। দ্বিতীয়ার্ধ বেশি ভালো, কিন্তু ততক্ষণে দর্শক হিসেবে আপনার সমস্ত আগ্রহ নস্যাৎ হয়ে যাবে। সিনেমাটা এতো এতো নেগেটিভ রিয়েকশন পাওয়ার পরও সিনেপ্লেক্সে ভালোই চলছে। হয়তো প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান জাজ মাল্টিমিডিয়া পরের বছর ‘জ্বীন-৩’ নিয়ে আসার পরিকল্পনা করে ফেলেছে। আমার সাজেশন থাকবে, বাইরের দেশের কিছু ভৌতিক সিনেমা দেখে তারপর এ সিনেমার চিত্রনাট্য সাজানো। আমরা গল্প বলার ধরনে অনেক পিছিয়ে আছি, এখানে বাজেট কোনো সমস্যা না।

রেটিং: ৪/১০


About The Author

চলচ্চিত্র বিষয়ক ব্লগার ও ইউটিউবার

Leave a reply