হলে গিয়ে কৃষ্ণপক্ষ দেখে আসুন। কেঁদে আসুন।
মেহের আফরোজ শাওন কৃষ্ণপক্ষ উপন্যাস থেকে চিত্রনাট্য করেছেন, সেই চিত্রনাট্য অবলম্বনে তিনি সিনেমা বানিয়েছেন। উপন্যাস থেকে তিনি কিছু বাদ দিয়েছেন, কিছু যোগ করেছেন। বর্তমান সময়ের উপযোগী করতে কিছু জিনিস এডাপ্টেশন করেছেন। হলে গিয়ে আপনি ‘কৃষ্ণপক্ষ’ সিনেমা দেখতে পাবেন। ‘কৃষ্ণপক্ষ’ উপন্যাস সিনেমা হলে দেখতে পাবেন না।
উপন্যাস পড়ার সময় পাঠক নিজের মত করে কল্পনা করে। নিজে নিজেই সব দৃশ্য আঁকে। চরিত্রগুলোরে নিজের মত করে রূপ দেয়। নিজেই একটা জগৎ তৈরি করে। একান্ত জগৎ। সব পাঠকের আলাদা আলাদা জগৎ হয় একই গল্প নিয়ে। হাজার-হাজার, লক্ষ-লক্ষ পাঠকের ভিন্ন ভিন্ন জগৎ।
কিন্তু সেই উপন্যাস বা গল্পই যখন সিনেমা আকারে হাজির হয়, প্রথমেই উপন্যাসের পাঠকেরা নিজেদের তৈরি করা জগতের সাথে সিনেমার মিল খুঁজে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে অমিল-ই বেশি। কারণ সব মানুষের কল্পিত জগৎ ইউনিক। এইসব দিক মাথায় রাখলে জনপ্রিয় উপন্যাস নিয়ে সিনেমা বানানো সাহসী ও ঝুঁকিপূর্ণ কাজ। হুমায়ুন আহমেদের উপন্যাস-গল্প নিয়ে সিনেমা বানানো আরো বেশি ঝুঁকিপূর্ণ। কারণ বাংলাদেশে সবাই হুমায়ুন আহমেদকে আপন মনে করে। তাঁর সৃষ্টিগুলোকে পাঠক নিজের বানানো জগতেই বাস করাতে চায়, পাঠকের মনে সব সময় ভয় কাজ করে সিনেমা-নাটকের নামে এই বুঝি তাদের প্রিয় চরিত্রগুলো বিকৃত হয়ে গেলো!
শাওনের প্রথম সিনেমার পরিচালনা ভাল, অনেক ভাল। পুরো সিনেমা কখনো গতি হারায় নাই। সবমিলিয়ে চমৎকার। তবে সিনেমায় শাওনের সবচেয়ে বড় এবং সম্ভবতা একমাত্র দূর্বলতা তিনি অরু-মুহিব, জেবা আপা আর শফিক সাহেব ছাড়া আর কারো চরিত্রকে কোন ধরণের গুরুত্ব দেননি, কোন চরিত্রকেই বিকশিত হওয়ার সুযোগ দেন নি। বলতে গেলে একটু পরেই হত্যা করেছেন। অথচ প্রায় সবগুলো চরিত্র অসম্ভব প্রমিজিং, চরিত্রগুলোর শুরুও দুর্দান্ত। অভিনয়ও ভাল ছিল।
মুহিব একটা হিমু চরিত্র। হিমু চরিত্রে পৃথিবীর কেউ সফল হবে না, হিমুভক্ত হিসাবে আমার এইটাই মনে হয়। রিয়াজ মুহিব চরিত্রে শুধু ব্যর্থ হন নি, তাঁর অভিনয়ও ভাল ছিল না। একটা এম. এ. পাশ করা বেকার হিমুর বয়সের তুলনায় রিয়াজ অনেক বয়স্ক এবং মোটা। তার হাব-ভাবে তাঁকে হিমু মনে হয় নি, একমাত্র হলুদ পাঞ্জাবি ছাড়া। অরু চরিত্রে বর্তমান সময়ের সবচেয়ে আকর্ষণীয় নায়িকা মাহিয়া মাহি যথেষ্ট পরিণত অভিনয় করেছেন। তাঁকে নিয়ে যারা ভয়ে ছিলেন, তারা হলে গিয়ে দেখে আসুন। মাহি বেশ যত্ন ও মনোযোগ দিয়ে চরিত্রের মধ্যে ঢুবে যেতে চেয়েছেন। বিশেষ করে বিরতির পর আবরারের সঙ্গে কথোপকথনে মাহির অভিনয়, লুক এবং এক্সপ্রেশন ছিল দুর্দান্ত। এই মাহি বাণিজ্যিক সিনেমায় ন্যাকামো করা মাহি না। এই মাহি হুমায়ুন আহমেদের নায়িকা। শাড়ি পড়া অসম্ভব সুন্দরী লম্বা মুখের ঠোঁটের নিচে তিল’অলা কৃষ্ণপক্ষের ‘অরু’।
তবে অভিনয়ে সবাইকে ছাড়িয়ে গেছেন জেবা চরিত্রে তানিয়া আহমেদ। শফিক সাহেব চরিত্রে আজাদ আবুল কালামও অনেক ভাল অভিনয় করেছেন। সিনেমায় তারা সবচেয়ে বেশি স্ক্রীন পেয়েছেন।
কৃষ্ণপক্ষ একটা নিখাঁদ ভালবাসার সিনেমা। কমেডি না। হলের মধ্যে শিষ বাজানোর সিনেমা না। আবারও বলি এইটা ভালবাসার সিনেমা। এই ভালবাসার পাত্র মুহিব। প্রেমিকা ও বউ অরুর ভালবাসা, জেবা আপার ভালবাসা, বন্ধুদের ভালবাসা। এই ভালবাসা ছড়িয়ে যাবে সবার মধ্যে। সংক্রমিত হবে। উপন্যাস পড়া থাকুন আর নাই থাকুন, আপনি কাঁদবেন। পাশের জনকে বুঝতে দিতে চাইবেন না। চোখ মুছতে মুছতে হল থেকে বের হবেন।
where this movie running now……….. near Dhaka city.??
শ্যামলি সহ অন্যান্য সিনেমাহলে চলছে বলে জানি।
স্টার সিনেপ্লেক্স (ঢাকা, তৃতীয় সপ্তাহ), যমুনা ব্লকবাস্টার সিনেমাস (ঢাকা, তৃতীয় সপ্তাহ), বলাকা সিনেওয়ার্ল্ড (ঢাকা, তৃতীয় সপ্তাহ), শ্যামলী ডিজিটাল সিনেমা (ঢাকা, তৃতীয় সপ্তাহ), ছায়াবানী (ময়মনসিংহ, দ্বিতীয় সপ্তাহ), শংখ (খুলনা, দ্বিতীয় সপ্তাহ), চন্দ্রিমা (শ্রীপুর, দ্বিতীয় সপ্তাহ), বর্ষা (জয়দেবপুর, দ্বিতীয় সপ্তাহ), সোনিয়া (বগুড়া) ও তাজ (গাইবান্ধা)।