Select Page

‘হাইপ’ থাকলেও চলেনি ঈদের সিনেমা

‘হাইপ’ থাকলেও চলেনি ঈদের সিনেমা

গত বছরের তুলনায় এবারে হলগুলোয় ভিন্ন পরিস্থিতি দেখা গেছে। বেশিরভাগ হলে দর্শকদের উপচে পড়া ভিড় তো ছিলই না এবং কোনো কোনো সিনেমা একেবারেই দর্শক টানতে পারেনি।

এবারের ঈদুল ফিতরে ১১টি সিনেমা মুক্তি পেয়েছে। বড়-স্বল্প বাজেটের সব সিনেমায় ‘ভরাডুবি’ দেখেছে। অনেকেই বলছেন ডজন খানেক সিনেমার মুক্তিতে এই দুরবস্থা। কিন্তু শুধুই কি সংখ্যায় ভরাডুবির কারণ, নাকি অন্য কিছু। সম্প্রতি বিডি নিউজ টোয়েন্টিফোরের এক প্রতিবেদনে প্রেক্ষাগৃহ মালিকদের ভাষ্য উঠে এসেছে। তারা বলেছে, ভালো চিত্রনাট্য ও অভিনয়শিল্পী না হলে কেবল ‘হাইপ’ তুলে দর্শককে হলমুখী করা সম্ভব নয়। অবশ্য প্রেক্ষাগৃহ মালিকরা বললেও ‘হাইপ’ কতটা ছিল তাও তর্ক সাপেক্ষ। কারণ সিনেমাগুলো মুক্তির আগে প্রচারনায় ভীষণ অবহেলা করেছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ঈদের সিনেমাগুলোর মধ্যে ‘রাজকুমার’ ও ‘ওমর’ বেশি প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পেলেও তেমন দাপট দেখাতে পারেনি কোনোটিই। মুক্তি পাওয়া ১১টি সিনেমার মধ্যে বেশিরভাগই ঈদের চতুর্থ সপ্তাহে এসে হল থেকে নামিয়ে দেওয়া হয়েছে। তবে বেশির ভাগ হল মালিকই ‘রাজকুমার’-এর ব্যর্থতা নিয়ে হতাশ।

হলমালিক ও সিনেপ্লেক্স কর্তৃপক্ষ বলছে, গেলবার মুক্তি পাওয়া শাকিবের ‘প্রিয়তমা’র ধারেকাছে পৌঁছুতে পারেনি ‘রাজকুমার’। ‘প্রিয়তমা’র এক ভাগও আয় হয়নি ‘রাজকুমার’র। যে প্রত্যাশা নিয়ে তারা সিনেমাটি হলে তুলেছিলেন, সেটি পূরণে ব্যর্থ হয়েছে আরশাদ আদনান প্রযোজিত ও হিমেল আশরাফ পরিচালিত এই সিনেমাটি।

ঈদে মুক্তি পাওয়া সিনেমাগুলো হল-‘রাজকুমার’, ‘ওমর’, ‘কাজল রেখা’, ‘দেয়ালের দেশ’, ‘মোনা: জ্বীন-২’, ‘সোনার চর’, ‘লিপস্টিক’, ‘গ্রিনকার্ড’ ‘আহারে জীবন’,‘মায়া: দ্য লাভ’ ও ‘মেঘনা কন্যা’। এর মধ্যে কয়েকটি সিনেমা মুক্তির এক সপ্তাহও টেকেনি মাল্টিপ্লেক্সে।

মধুমিতার কর্ণধার ইফতেখার উদ্দিন নওশাদের ভাষ্য, “ঈদের ১১টি সিনেমার সবকটি সুইসাইড করেছে। আমরা শাকিবের

তিনি বলেন, “সব সিনেমাই ঈদে আসতে চায়, এসে কী লাভ হল, এবার যদি বোঝে। আমার মনে হয় আমাদের দেশের নির্মাতাদের ক্রিয়েটিভিটি শেষের দিকে তাই সিনেমা ভালো চলছে না। সামনের সপ্তাহ থেকে নতুন কিছু চালাব, না হয় এটাই থাকবে। আগে অনেক হিট সিনেমা আসত। এখন সিনেমা শুধু হাইপই তুলে দর্শক আর আনতে পারে না।”

শ্যামলী সিনেমা হলের ব্যবস্থাপক মোহাম্মদ হাসান বলেন, “অন্যান্য ঈদের তুলনায় এবার ঈদ আমাদের জন্য খারাপ ছিল। হল হাউজফুল এবার দেখিনি। ‘প্রিয়তমা’ সিনেমা যেমন একচেটিয়া ব্যবসা করেছে, ‘রাজকুমার’ সেটা করতে পারেনি। এই সিনেমা মানুষ কম দেখছে।”  

এদিকে চতুর্থ সপ্তাহে ঈদের সিনেমা না স্টার চালানোর সিদ্ধান্ত নিয়ে সমালোচনার মুখে পড়েছিল স্টার সিনেপ্লেক্স। পরে প্রতিবাদের মুখে ‘রাজকুমার’ ও ‘ওমর’কে নামমাত্র শো দেয়।

‘উপচে পড়া দর্শক যেটাকে বলে এই ঈদে আমরা পাইনি’ জানিয়ে স্টার সিনেপ্লেক্সের জ্যেষ্ঠ বিপণন ব্যবস্থাপক মেসবাহ উদ্দিন আহমেদ ওই প্রতিবেদনে বলেন, “দুই তিন দিন আগেই হাউজফুল শো, টিকিট বিক্রি হয়ে যাওয়ার যে দৃশ্য, তা এই ঈদে আমরা পাইনি। ২০২২, ২০২৩ সালে ঈদের সময় যে দর্শক পেয়েছি এই ঈদে আমরা সেটা খুব মিস করেছি।”

ঈদের সিনেমার সংখ্যা নিয়ে মুক্তির আগেই ‘সুইসাইড’ বলে মন্তব্য করেছিলেন লায়ন সিনেমা হলের কর্ণধার মির্জা আব্দুল খালেক। তিনি বলেন, “এক কথায় সব সিনেমাই আমাদের আশাহত করেছে। আমরা হল মালিকরা হতাশ হয়ে গেছি। আমার এখানে দশটা সিনেমার শিডিউল ছিল। কোনোটাই বলার মতো ব্যবসা করতে পারেনি। এমনকি ‘রাজকুমার’ যা আশা করেছিলাম তার ১০ শতাংশও আয় করতে পারেনি। ‘প্রিয়তমার’ এক ভাগও আয় হয়নি রাজকুমারের। বাকি সব সিনেমা থেকে রাজকুমারের বিক্রিই একটু ভালো ছিল। কিন্তু যা আশা করেছিলাম তার ১০ শতাংশ দর্শকও আমরা পাইনি।”

এদিকে গ্র্যান্ড সিলেট সিনেপ্লেক্সের আইটি ম্যানেজার মেহেদী হাসান বলেন, “গত তিন দিন ধরে আমাদের কোনো সিনেমার শো চলছে না। একদমই দর্শক নেই। গত সপ্তাহে আমরা ‘দেয়ালের দেশ’ ও ‘কাজলরেখা’ চালিয়েছিলাম। দর্শক না থাকায় শো একদম বন্ধ। ঈদের সময় ‘রাজকুমার’ চালিয়েছিলাম। ঈদের দুই তিন দিনই সিনেমাটি একটু ভালো চলেছিল। এরপর থেকে ১০ শতাংশ, ২০ শতাংশ টিকেট বিক্রি করছি। যেটা আমাদের জন্য হতাশাজনক।

“‘রাজকুমার’ নিয়ে যেরকম হাইপ ছিল, সব জায়গায় যেরকম আলোচনা হয়েছিল, সিনেমা কিন্তু তেমন ভালো চলেনি। রমজান মাসে আমরা সিনেমা হল বন্ধ রাখি। ঈদের জন্য খোলার পর আমরা যেরকমভাবে পরিকল্পনা করেছিলাম, একদমই প্রত্যাশিত সাড়া পাইনি। তিনদিন ধরে দর্শক একদমই নেই। এমন অবস্থা চললে হল বন্ধ রাখাই ভালো হবে।”

ঈদের সিনেমা দিয়ে খুব একটা ব্যবসা করতে পারেনি দেশের সবচেয়ে বড় সিনেমা হল যশোরের মণিহার। চাহিদা অনুযায়ী যথেষ্ট দর্শক হয়নি জানিয়ে এই হলের ম্যানেজিং ডিরেক্টর জিয়াউল ইসলাম বলেন, “গতবারের মত এবার এত ভালো ব্যবসা হয়নি। আমাদের চাহিদা অনুযায়ী যথেষ্ট দর্শক হয়নি। খরচ মিটিয়ে কিছুটা লাভ হয়েছে। কিন্তু যতটা আমরা আশা করেছি ততটা হয়নি। ‘রাজকুমার’ নামিয়ে ফেলেছি।”

তবে ভিন্ন কথা বলছেন সিরাজগঞ্জের সিনেমা হল রুটস সিনেক্লাবের কর্ণধার সামিনা ইসলাম। তিনি জানান এই সিনেপ্লেক্সের আসন সংখ্যা ২২টি। এই ঈদে সিনেমা চালিয়ে অনেকটাই সন্তুষ্ট বলে জানান তিনি।

“মোটামুটি আয় করেছে, খুব বেশি লাভও হয়নি, আবার ক্ষতিও হয়নি। আমাদের খরচ উঠেছে। আমরা আসলে সন্তুষ্ট। আমরা যে অনেক প্রত্যাশা নিয়ে ছিলাম অনেক টাকা দিয়ে সিনেমা এনেছি তেমনটা নয়। আমরা খুশি। আমরা মুক্তির আগে টাকা লগ্নি করে সিনেমা আনিনি, বক্স অফিসের নিয়ম অনুযায়ী সিনেমা এনেছি।”

রোজগারের টাকার ভাগাভাগির বিষয়টা নিয়ে সামিনা বলেন, “প্রথম সপ্তাহে আমরা যেটা বিক্রি করি নেট সেলস হিসেবে সেটার ৫০ শতাংশ হল মালিক নিই, ৫০ শতাংশ প্রযোজক নেয়। দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে সেটা ৬০ শতাংশ, ৪০ শতাংশ হয়ে যায়। রাজকুমার আমাদের এখানে ১৪ দিন চলেছে। সেক্ষেত্রে ৫০ শতাংশ গিয়েছে। আর তাতে আমরা সন্তুষ্ট। রাজকুমার আরও চালাতে পারতাম, দর্শকের একটা চাহিদা ছিল। তবে এই ঈদে যেহেতু ১১টি সিনেমা মুক্তি পেয়েছে, সবই চালাতে হবে। তাই আমরা রাজকুমার নামিয়ে অন্য সিনেমাকেও সুযোগ দিচ্ছি।”


Leave a reply