হাওয়া! এ সিনেমা তো হলে বসে দেখার (ট্রেলার)
সাম্প্রতিক অতীতে এত গভীরতা নিয়ে হাজির হয়নি বাংলা কোনো ছবির ট্রেলার। হলবিমুখ দর্শককে আমন্ত্রণ জানাচ্ছে, এ সিনেমা তো হলে বসে দেখার। বলছিলাম, সদ্য প্রকাশিত মেজবাউর রহমান সুমনের ‘হাওয়া’ ট্রেলার নিয়ে। ভিডিওটি সে প্রত্যাশা তৈরি করেছে, মনে হচ্ছে, দর্শক যদি সাড়া দেয়; তবে আরেকটি ইতিহাস হতে যাচ্ছে ‘হাওয়া’।
এত চমৎকার দৃশ্য, রং ও অভিনয়। বারবার দেখতে ইচ্ছা করে ট্রেলারটি। কী আছে এতে?
গভীর সমুদ্রে মাছ ধরা ট্রলারে হুট করে ওঠে পড়েছে এক তরুণী। তাকে ঘিরে তৈরি হয়েছে রহস্য। সে দেবী নাকি ভূত! তার আবির্ভাবের পর মাছ কমে গেছে সমুদ্রে, মাঝিদের মাঝে শুরু হয় কোন্দল। বের হয় পড়ে মায়া-নিষ্ঠুরতা, একসঙ্গে।
ট্রলারের উত্তেজনা এক পর্যায়ে সংঘর্ষে রূপ নেয়। যা থেকে ঘটে রক্তারক্তি। টিকে থাকার এ লড়াইয়ে কেউ বাঁচে, কেউ বা মরে। আর এ লড়াই তাদের কাছে নতুন না, পুরানো। তাই তো একজন কণ্ঠে শোনা যায়, ‘এই দুনিয়ায় আমিও দুইবার মইরা গ্যাছিলাম। আমরা লগের গুলা মইরা ভূত হইয়া গ্যাছে। আমি শুধু বাঁইচা গ্যাছি।’
বঙ্গোপসাগরের গভীরে এ ছবির দৃশ্যায়ন হয়েছে। দৃশ্যে ওঠে এসেছে সেই সৌন্দর্য। সমুদ্রের ওপরের সঙ্গে আছে নিচের দৃশ্যও।
অফিসিয়াল এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে ‘হাওয়া’ ছবির প্রযোজনা সংস্থা থেকে এর কাহিনি নিয়ে বলা হয়েছে, মাঝ সমুদ্রে গন্তব্যহীন একটি ফিশিং ট্রলারে আটকে পরা আটজন মাঝি মাল্লা এবং এক রহস্যময় বেদেনীকে ঘিরে চলচ্চিত্রটি নির্মিত হয়েছে। মিস্ট্রি ড্রামা ঘরানার, হাওয়া চলচ্চিত্রটি মূলত একালের রূপকথা। বহুল প্রচলিত এই ফর্মটি সিনেমার পর্দায় নতুন আঙ্গিকে দেখতে পাবেন দর্শকেরা।
পরিচালক সুমন বলেন, ‘সম্পর্ক, প্রতিশোধ এবং মৃত্যুকে উপজীব্য করে এই গল্প নির্মাণ করা হয়েছে। এটি মাটির গল্প নয় বরং পানির গল্প। সমুদ্র পাড়ের মানুষ প্রধান উপজীব্য হলেও সমুদ্র পাড়ের গল্প নয় বরং সমুদ্রের গল্প। সমুদ্র এমন এক বিশালতার নাম যার পাড়ে বসে আমরা সাধারণ মানুষ এর সৌন্দর্য দেখি, রোমান্টিসিজমে ভুগি কিন্তু জানতে পারিনা সমুদ্রের ভেতরের গল্প। সমুদ্র পাড়ের মানুষগুলোর গল্প জানলেও সমুদ্রে চলাচলরত মানুষগুলোর সমুদ্রের ভেতরের গল্প জানিনা। সমুদ্র থেকে ফেরার গল্প আমরা জানি কিন্তু না ফেরার গল্প আমরা ক’টা জানি? এই না জানা মৌলিক গল্পটিই আমি আমার এই সিনেমার মাধ্যমে জানাতে চাই।’
মেজবাউর রহমান সুমনের কাহিনি এবং সংলাপে ‘হাওয়া’র চিত্রনাট্য লিখেছেন মেজবাউর রহমান সুমন, সুকর্ন সাহেদ ধীমান এবং জাহিন ফারুক আমিন। এতে অভিনয় করেছেন চঞ্চল চৌধুরী, নাজিফা তুষি, শরীফুল ইসলাম রাজ, সুমন আনোয়ার, নাসির উদ্দিন খান, সোহেল মণ্ডল, রিজভী রিজু, মাহমুদ হাসান এবং বাবলু বোস। চিত্রগ্রহণ করেছেন কামরুল হাসান খসরু, সম্পাদনা সজল অলক, আবহ সঙ্গীত রাশিদ শরীফ শোয়েব এবং গানের সঙ্গীতায়োজন করেছেন ইমন চৌধুরী।
‘হাওয়া’ নির্মাণ করেছে ফেইসকার্ড প্রোডাকশন এবং প্রযোজনা করেছে সান মিউজিক অ্যান্ড মোশন পিকচার্স লিমিটেড। ছবিটি কোরবানির ঈদের পর মুক্তির সম্ভাবনা রয়েছে।
মেজবাউর রহমান সুমন টেলিভিশন নাটক নির্মাণে এসেই করেছিলেন বাজিমাত। ২০০৬ সালে তার প্রথম নাটক ‘দখিণের জানালাটা খোলা, আলো আসে-আলো ফিরে যায়’। এরপর ‘তারপরও আঙ্গুরলতা নন্দকে ভালোবাসে’, ‘পারুলের দিন’, জ্যোৎস্না নদী ও রফিকের কিছু কল্পদৃশ’, ‘সুপারম্যান’, ‘কফি হাউজ’ নাটকগুলো মেজবাউর রহমান সুমনকে করে তুলেছে অনন্য ও ব্যাতিক্রম।
এরপর প্রায় দীর্ঘ নয় বছর তাকে নাটক নির্মাণে দেখা যায় নি, ২০১০ সালের পর থেকে নিজেকে গুটিয়ে নেন। থিতু হন বিজ্ঞাপন নির্মাণে।