হাওয়া: শালিকটি কী করেছিলেন সুমন?
‘হাওয়া’ সিনেমার সাফল্যের মাঝে কাটা হয়ে এলো মেজবাউর রহমান সুমনের মামলা। সিনেমায় দেখানো শালিক পাখির কারণে বন্য প্রাণী অপরাধ দমন ইউনিট তার নামে ২০ কোটি টাকার মামলা হয়েছে।
এ নিয়ে বৃহস্পতিবার এক ফেসবুক পোস্টে সুমন লিখেছেন, “পাখিটির দৃশ্য ধারণের পর আমরা তাকে প্রকৃতিতে মুক্ত করে দিয়েছিলাম। আর নৌকায় যে উড়িয়ে দেওয়ার দৃশ্য দেখিয়েছি, সেটা কম্পিউটার গ্রাফিক্সের মাধ্যমে নির্মাণ করা।”
সুমন আগেই বলেছিলেন, ওই পাখিটি মারা যায়নি, রান্নার দৃশ্যটিতে ব্যবহার করা হয়েছিল মুরগি।
গত ২৯ জুলাই ‘হাওয়া’ মুক্তির পর দর্শক মহলে বেশ সাড়া ফেলে। খরার মধ্যে চলচ্চিত্র অঙ্গনে সুবাতাস হিসেবেই দেখা হচ্ছিল সিনেমাটিকে। তবে সিনেমায় শালিক পাখিকে খাঁচায় বন্দি রাখা, মেরে খাওয়া কিংবা শাপলা পাতামাছ ধরার দৃশ্যগুলো আইন লঙ্ঘনের নজির বলে প্রাণী অধিকারকর্মীরা অভিযোগ তোলেন।
এর পরিপ্রিক্ষিতে সিনেমাটি দেখার পর বুধবারই মামলার আবেদন নিয়ে আদালতে যায় বন বিভাগের বন্যপ্রাণী অপরাধ দমন ইউনিট।
এই অবস্থায় আত্মপক্ষ সমর্থনে ফেইসবুকের শরণ নিয়ে সুমন লিখেছেন, “নির্মাতা হিসাবে আমি এটুকুই বলতে চাই, হাওয়া’র পাখিটি রূপক অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে। আর এই নির্মাণের জন্য যে সিনেমাটিক রিয়্যালিটি তৈরি করতে হয়েছে, সেটা সত্য নয়। ছবির শুরুতে ‘Disclaimer’-এ আমরা সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ করেছি।”
নির্মাতা সুমন উল্টো প্রশ্ন ছুড়েছেন, “চান মাঝি যে তার প্রিয় পাখিটিকে খেয়ে ফেলে, সেটা কি শুধু ভোগ? নাকি সমাজের ভেতর জমতে থাকা হিংস্রতা? আর আমি শুধু ওই বোধটাকেই ইঙ্গিত করেছি। আর সেটা নির্মাণ করেছি সিনেমার ভাষার ভেতর দিয়ে।”
নিজের আগের কাজের সূত্র ধেরে তিনি আরও বলেন, “পাঁচ বছর আগে আমার ব্যান্ড মেঘদল এর জন্য নির্মাণ করেছিলাম ‘এসো আমার শহরে’। সেখানে এই নেক্রপলিস সিটিতে কিছু প্রতীকী বন্যপ্রাণীকে দেখিয়েছিলাম। ওদের শহরের ভেতর নানা জায়গায় দেখা গিয়েছিল। কিন্তু এই মৃত নগরে মানুষহীন রাস্তাঘাটে বন্যপ্রাণী কেন ঘুরে বেড়াচ্ছে! তার উদ্দেশ্যই বা কি?
“আমি মনে করেছিলাম, এই নগর শুধু মানুষের নয়, অন্য প্রাণীর জন্যও আবাসস্থল হওয়ার কথা ছিল। প্রতিদিন এই শহরে অসংখ্য প্রাণীদের আমরা নিয়ে আসি শুধুমাত্র ভোগের জন্য। হয়ত মানুষের জীবনধারণের জন্য সেটা আমাদের করতেও হয়। কিন্তু মায়া তো নিঃশেষ হবার নয়। এই সর্বপ্রাণের মায়াই ওই মিউজিক ভিডিওতে দেখাতে চেয়েছিলাম।”
‘মামলার সাক্ষী শালিক পাখি’ শিরোনামে লেখা সুমন পোস্টের শেষ বাক্যে লিখেছেন, “পৃথিবী সর্বপ্রাণের হোক।”