হালদার ব্যর্থতা এবং জাজ-ককপিটের দায়
হালদা প্রথম সপ্তাহে ৮০ এর উপরে হল পেয়ে ২য় সপ্তাহে এসে ৭টি হলে নেমে গেল আর তাতেই সর্বত্র হায়হায় রব। হওয়াটাও স্বাভাবিক।আর তারপরই উঠছে প্রচুর অভিযোগ আর অভিযোগের তীর জাজ মাল্টিমিডিয়ার দিকে।তাদের ককপিট রিলিজ পাওয়ায় হালদা হল হারিয়েছে। আসলেই কি তাই?
Survival for the fittest – এর মানেই দাঁড়ায় টিকে থাকতে আপনার হিম্মত লাগবে। আজকে একজন হল মালিক সেই সব ছবিই চালাবে যেগুলো দর্শক দেখতে চায়। আর জাজকে যদি এতোই দোষ দিতে যান তাহলে বলুন “আয়নাবাজির” তোড়ে কেন হল থেকে নেমে যায় “প্রেম কি বুঝিনি”, কেন “ঢাকা অ্যাটাকের” কারনে ডুবে যায় “ডুব” ?আর জাজ মানেই যদি বেশী হল হয় তাহলে কেন তাদের রিসেন্ট দুইটা রিলিজ, ডুব আর ইয়েতি অভিযান কম হল পায় এবং সপ্তাহের মাঝেই অনেক হল থেকে নেমে যায়?
উত্তর একটাই ,ছবি চলবে দর্শক চাইলে। যখন আপনার ছবির ব্যবসার কথা আসবে তখনি দর্শক চাহিদার কথা আসবে। দর্শক কি চায় তা যদি আপনি দিতে পারেন তাহলে সেটা ব্যবসাসফল আর যদি না পারেন তাহলে ছবি চলবে না। সেই চাওয়াটা থাইল্যান্ডে যুক্তিহীন নাচগান হতে পারে, উদ্ভট মারামারি হতে পারে, আয়নার জেল পালানো হতে পারে, আশফাকের স্ত্রীর কপালে চুমু দেয়া হতে পারে বা মনপুরার সহজ-সরল চোখ ভেজানো গল্পও হতে পারে। মোদ্দাকথা, দর্শক আপনার ছবিতে কানেক্ট করতে হবে। আর যদি বলেন তার চেয়ে আমার কাছে নির্মাতার স্বাধীনতাই বড়, তাহলে আপনার “ ইন্ডিপেনডেন্ট ফিল্মমেকার” নামে একটা টার্ম জেনে রাখাই ভালো,যারা হলের ধার ধারে না। আর এতোকিছু দেয়ার পরও যদি দর্শক আপনার ফিল্ম না দেখে তাহলে সিমপ্লি বলতে হবে আপনি নির্মাতা হিসেবে দর্শক টানতে ব্যর্থ।
সবাই “অজ্ঞাতনামা” দেখে হায়হায় করেছেন আর ইমপ্রেসকে গালি দিয়েছেন, তাদের সেই রিঅ্যাকশান মানা যায়, কিন্তু ৮০ এর উপর হল পেয়েও ২য় সপ্তাহে ১০ পারসেন্টও ধরে না রাখতে পারাটা যে হালদার ব্যর্থতা সেটা কিভাবে আস্বীকার করবেন? হল মালিকদের দোষ দিতে যাবেন?, এটা তাদের পেট চলার প্রশ্ন। ছবি দর্শক চাইলে তারা মাসের পর মাস চালাবে আর দর্শক না দেখলে ছুঁড়ে ফেলে দিবে ,এটাই স্বাভাবিক। আর দর্শকদের রুচির দোষ দিবেন? তা তাদের এই রুচিহীনতার প্রশ্ন “আয়নাবাজী” বা “ঢাকা অ্যাটাকের “ সময় কই ছিল?
হালদা আসলে যতটা দর্শক টানতে পারতো তা দিয়ে ১ম সপ্তাহে ৩-৪ দিন হল ভরানো যায়, তাই হয়েছে। আর দর্শক চাইছে বলেই “আলমাসে” ২য় সপ্তাহেও হাউজফুল আছে। মোটকথা, লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড পেয়েও হালদা হলে ২য় সপ্তাহে চলতে পারবে না বলেই হল হারিয়েছে।
ভারতে সমসাময়িক দুইজন পরিচালক সত্যজিত রায় এবং ঋত্বিক ঘটক। রায়বাবু যেখানে জীবনের শেষদিন পর্যন্ত একের পর এক ব্যবসাসফল ছবি বানিয়েছেন এবং একই সাথে শ্রেষ্ঠ পরিচালকের ৬ টা ন্যাশনাল অ্যাওয়ার্ড এবং অস্কার পেয়েছেন সেখানে ঘটকবাবুর ক্যারিয়ারএ “মেঘে ঢাকা তারা” ছাড়া কোন হিট নেই। তাই প্রডিউসারের অভাবে ভুগেছেন, মদ খেতে খেতে পাড় মাতাল হয়েছেন এমনকি মানসিক হাসপাতালেও গেছেন। এখানে ঋত্বিক ঘটক কি বাজে পরিচালক? একদমই না,তার ফিল্মমেকিং এবিলিটি নিয়ে কোন সন্দেহ নেই, কিন্তু তিনি দর্শক টানতে ব্যর্থ পরিচালক। তার প্রডিউসার জোগাড় করতে হত নিজের যোগ্যতায়। তেমনি “তৌকীর আহমেদকে হারাবো” টাইপ মায়াকান্না অর্থহীন।তৌকীরকে টিকে থাকতে হবে নিজ যোগ্যতায়। এতে সাধারন দর্শকের কোন দায় নেই। আর হালদা চালিয়ে ১ম সারির কয়েকটা হল ছাড়া বাকিদের যে অবস্থা,তাতে ককপিট না আসলেও ৪-৫ টা হল ছাড়া কেউই ২য় সপ্তাহ চালানোর সাহস করতো না। সাফটা আমাদের জন্য ক্ষতিকর তাতে কোন সন্দেহ নেই, কিন্তু ককপিটের নিয়ে আক্ষেপ দেবুবাবুর মুখেই মানায়, তৌকীর সাহেবের ককপিট নিয়ে আফসোসটা আসলে ব্যর্থতা ঢাকতে চাওয়ার চেষ্টা মাত্র।
চলুন একটা হিসেব দেই, হালদা ৮০ এর অধিক হলে রিলিজ করেছে। বাংলাদেশে ডিস্ট্রিবিউশনের তিনটা সিস্টেম। এর মধ্যে ২০ টার মত প্রথম সারির হলে শেয়ারে ছবি চলে। বাকি যদি ৬০টা হলেও বাকি দুইটা সিস্টেম ধরি তাহলে হলপ্রতি গড়ে ১ লাখ হলে ৬০ লাখ,গড়ে ৭৫ হাজার হলে ৪৫ লাখ টাকা প্রডিউসারের পকেটে ঢুকে গেছে তা ডিস্ট্রিবিউশন সিস্টেম যেমনই হোক। প্রথম সারির যেসব হলে ভালো ব্যবসা করেছে সেগুলো শেয়ারে বলে নেটের ৫০% ঢুকে যাবে পকেটে। এরপর মিউজিক রাইটস , টেলিভিশান রাইটস, বিশাল ফরেন রিলিজতো আছেই।বাজেট কিন্তু ৬৫ লাখ। সো , প্রডিউসারও মরেননি আর তৌকীর সাহেবও না। কিন্তু যেসব হলমালিক আয়নাবাজীকে স্মরন করে কিংবা ঢাকা অ্যাটাকের গরম গরম আবহাওয়ার মাঝে হালদা নিয়েছেন এবং লস দিয়েছেন তারা কি আর এই টাইপ ফিল্ম নিতে চাইবেন? এখন কালকে যদি ছোট হলগুলোর মালিকরা হালদার ভয়াবহ দুঃস্বপ্নএ ভীত থেকে যদি নতুন আরেকজন স্বপ্নবাজ পরিচালকের ছবি যদি না নেন তখন আমি যদি তৌকীরকে দায়ী করতে চাই তাহলে তৌকিরের জন্য মায়াকান্না করা মানুষজনকি আমাকে মেনে নেবেন?